Select Page

আমাদের বাণিজ্যিক ছবির মাস্টারমেকার এ জে মিন্টু

আমাদের বাণিজ্যিক ছবির মাস্টারমেকার এ জে মিন্টু

আমাদের বাণিজ্যিক ছবির ‘মাস্টারমেকার’-খ্যাত পরিচালক এ জে মিন্টুকে আজকের কয়জন দর্শক তাঁকে চেনেন! কিংবা তাঁকে চেনার বা জানার আগ্রহই বা কতজনের আছে! অথচ আজকের ইন্ডাস্ট্রি যতটুকুই আছে, যারাই কাজ করে যাচ্ছে তার ফাউন্ডেশন তৈরিতে যাদের অবদান চিরস্মরণীয় একজন এ জে মিন্টু তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান।

এখন অনেককেই অনেক বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় বিশেষ কোনো কোয়ালিটি থাকুক বা না থাকুক বিশেষণ যেন বসাতেই হবে। এ জে মিন্টুকে তখনকার চলচ্চিত্র মিডিয়া ‘মাস্টারমেকার’ উপাধি দিয়েছিল তাঁর কাজ দেখে। তিনি বাণিজ্যিক ছবি এমনভাবে নির্মাণ করতেন যে সব বয়সী দর্শকের জন্য তা দেখার উপযোগী করে বানাতেন, উপভোগ করার মতো ফুলফিল উপাদান দিয়েই করতেন। তাই তাঁর ছবি সব ধরনের দর্শক পছন্দ করত।

জন্ম ১৬ জুলাই ১৯৪৯, পাবনা।

প্রথম ছবি – মিন্টু আমার নাম।

পরিচালিত ছবি : প্রতিজ্ঞা, মিন্টু আমার নাম, বাঁধনহারা, চ্যালেঞ্জ, মান-সম্মান, সত্য মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, লালু মাস্তান, অশান্তি, বিশ্বাসঘাতক, প্রতিহিংসা, পিতা মাতা সন্তান, বাপের টাকা, প্রথম প্রেম, বাংলার বধূ।

ঋত্বিক ঘটকের সহকারী পরিচালক ছিলেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে।

এ জে মিন্টুর ছবির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল বড় ক্যানভাসে ছবির এক্সিকিউশন করা। ছবিতে অনেক আর্টিস্ট যেমন থাকবে, সবার পরিমিত ভূমিকা থাকবে, নাচগান থাকবে, গল্পকে দাঁড় করানোর জন্য যা করা দরকার সব থাকবে, বিজিএম হবে দুর্দান্ত, ক্লাইমেক্স হবে জমজমাট যাতে ছবি দেখতে গিয়ে বিরক্তি না আসে। তিনি এগুলো খুব সচেতনভাবে মেইনটেইন করতেন।

‘ঐ প্রেমের দরজা খোলো না

কাল কি হবে জানি না

আরে আজকে না হয় ভালোবাসো

আর কোনোদিন নয়’

খুরশীদ আলমের সুপারহিট এ গানটি ছিল এ জে মিন্টু-র ‘মিন্টু আমার নাম’ ছবির। সোহেল রানা-ববিতা জুটির ছবি।

‘প্রতিজ্ঞা’ ছবির ক্যানভাস যদি দেখি অনেক আর্টিস্ট একসাথে কাজ করেছে। ছবির গল্পে দ্বন্দ্ব যেমন ভরপুর রোমাঞ্চ, অ্যাকশন সবকিছুই আছে। ‘এক চোর যায় চলে এ মন চুরি করে’ গানটি ছিল এ ছবির। এন্ড্রু কিশোরের প্রথম সুপারহিট গান ছিল এটি।

‘সত্য মিথ্যা’ ছবিও একইভাবে নির্মিত। জমজমাট গল্প, গান, ক্লাইমেক্স আর সব আর্টিস্টের পরিমিত অভিনয়। ব্লকবাস্টার হিট ছবি ছিল।

‘লালু মাস্তান’ ছবিতে জসিমের গেটআপই আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন এ জে মিন্টু। অসাধারণ নির্মাণের ছবি।

শাবানার লেডি অ্যাকশন ছবির মধ্যে স্টাইলিশ গেটআপের ছবি ছিল ‘মান-সম্মান’ ও ‘অশান্তি’। শাবানার শাবানা হয়ে ওঠার পেছনে যে বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে প্রমাণের ধারাবাহিকতা ছিল সেটির অন্যতম কারিগর ছিলেন এ জে মিন্টু। তিনি শাবানাকে নিখুঁতভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন।

‘পিতা মাতার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত

এই কথাটি যে বুঝেছে সেই তো সুখী হয়েছে’

এ গানটি রেডিওতে নব্বই দশকীয় প্রজন্ম অবশ্যই শুনেছে। এই কালজয়ী গানের ছবি ‘পিতা মাতা সন্তান’ এ জে মিন্টুর ছিল। শাবানা-আলমগীর জুটির অন্যতম সেরা ছবি। কমার্শিয়াল ছবিতে শিক্ষণীয় বার্তাও যে দেয়া যায় এ ছবি তার প্রমাণ।

‘বাংলার বধূ’ ছবিটিও অসাধারণ নির্মাণের ছিল। পারিবারিক অত্যাচারের বিপরীতে একজন বাঙালি বধূর যে দায়িত্বশীল ভূমিকা শাবানার চরিত্রে সেটাই দেখানো হয়েছে।

‘বাপের টাকা’ ছবিটিও শিক্ষণীয় ছিল। একজন বখে যাওয়া সন্তানের ভুলের খেসারত এবং বাবার সাহায্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে এ জে মিন্টু তখনকার তরুণ প্রজন্মকেও শিক্ষণীয় বার্তা দিয়েছেন।

‘প্রথম প্রেম’ ছবিতে প্যারালালি রোমান্টিক ও ড্রামাটিক আবহ বজায় রেখে ছবি হাইপে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রেজেন্টেশনে। ছবির কালজয়ী গান ‘মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে’ আজও মুগ্ধ করে মানুষকে।

এ জে মিন্টু কতটা সচেতন পরিচালক ছিলেন তিনি নব্বই দশকের শেষের দিকে অবসর নেন চলচ্চিত্র থেকে। একদম সঠিক সময়ে সরে গিয়েছেন যখন তাঁর মনে হয়েছে এখন তার যাওয়াটা উচিত। সেন্সিবল একজন পরিচালক ছিলেন তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কখন থামতে হবে।

সর্বোপরি আজকের পরিচালকদের জন্য একজন এ জে মিন্টু স্টাডি পার্ট। তাঁর ছবিগুলো থেকে এটা শেখা যাবে বাণিজ্যিক ছবির ভাষা কেমন হতে হয়। এ জে মিন্টুকে চিনুক এ প্রজন্ম, তাঁকে চর্চা করুক।


About The Author

রহমান মতি

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply