Select Page

আর্কাইভ নিয়ে কোনো দলেরই হেলাফেলা করা উচিত নয়- মো. আখতারুজ্জামান

আর্কাইভ নিয়ে কোনো দলেরই হেলাফেলা করা উচিত নয়- মো. আখতারুজ্জামান

Captureবাংলাদেশি চলচ্চিত্র সংরক্ষণ ও গবেষণার উদ্দেশ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবন। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গত বছর সেপ্টেম্বরে। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আখতারুজ্জামান। প্রকল্পের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে বিএমডিবি-র পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছিল শোয়াইব সৈনিক। সাক্ষাতকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

ফিল্ম আর্কাইভের বর্তমান অবস্থা কি?

-১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ফিল্ম আর্কাইভের সৃষ্টি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত কখনো ভাড়া বাড়িতে আবার কখনো সরকারের দেয়া কোনো ঘরে কাজ চলে আসছে। এটা মোটেও শোভন ছিলোনা। যারা এই সংস্থার প্রধান ছিলো তার শুরু থেকেই একটি নিজস্ব ভবনের জন্য চেষ্টা করে আসছিলো। পরে সরকার উদ্যোগ নিলো, যা ২০১১ সালের জুন থেকে শুরু হবার কথা ছিলো। ২০১১ সালের জুন মাসে কাজ শুরুর কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা শুরু হয়েছে ছয় মাস পর ডিসেম্বরে। তথ্যমন্ত্রণালয় থেকে এ কাজ করা হবে। আমি এর মনিটরিং এর দায়িত্বে আছি। ২০১৪ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও এখন সেটা ২০১৪তে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি ২০১৫ সাল নাগাদ আমরা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারবো।

২০১৫ এর আগে রাজনৈতিক কোন পরিবর্তন হলে প্রজেক্ট থেমে যাবার ঝুঁকি আছে কি?

-এ ব্যপার নিয়ে আমি ভাবছি না, কারন সামগ্রিকভাবে এদেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বা চলচ্চিত্র অঙ্গনে যারা কাজ করে গেছে এবং করছে তাদের তথ্যগুলো এখানে সংগ্রহ করা হবে, দেশের নির্মিত চলচ্চিত্রকে সংরক্ষন করা হবে এতে কারো আপত্তি থাকার কথা না। সে কারনে আমি মনে করি, ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন আর্কাইভ গড়ে তুলতে কেউ বাঁধা দিবে না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজম্ম তাদের জন্মের ১০০-২০০ বছর পূর্বের বাংলাদেশের ছবি কেমন ছিলো তা জানতে পারবে, আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে। আর্কাইভ কোনো দলেরই হেলাফেলা করা উচিত নয়।

আমাদের যে ফিল্ম আর্কাইভ ভবনটি তৈরি হচ্ছে এতে কেমন সুয়োগ সুবিধা থাকতে পারে?

Archive Design (1) copy

নির্মানাধীন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবন (পাশ থেকে)

-বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এর নতুন য়ে ভবন তৈরি হচ্ছে সেখানে একক ভাবে পাঁচটি ইউনিট গড়ে তুলার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি ফিল্ম লাইব্রেরী, রিসার্চ সেন্টার, ফিল্ম ল্যবরেটরি, ফিল্ম হসপিটাল। এগুলো  প্রত্যেকটি আমরা ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিট হিসেবে গড়ে তুলব। এর সাথে রয়েছে প্রজেক্সন হল, কনফারেন্স হল, মাল্টি পারপাস হল। ৩টা হলের এক-একটায় ৪৫০,১৫০,২০০ দর্শক বা আলোচক বসতে পারবে এমনভাবে কাজ করা হচ্ছে।

যে সুবিধা গুলো থাকবে এর মধ্যে একটি প্রজেকশন হল। এখানে 3D সিনেমা দেখার ব্যবস্থা থাকবে?

– প্রজেকশন হলের মধ্যে আধুনিক যত সুযোগ সুবিধা আছে আমরা রাখব। আমাদের এই ভবনে শুধু প্রশিক্ষনই নয় এই ভবনে ‘ফিল্ম এন্ড মিডিয়া’ বিভাগ এর শিক্ষার্থীরা আসবে, ছবি দেখবে, ছবি নিয়ে আলোচনা করবে ইত্যাদি সুযোগ গুলোও আমরা আর্কাইভ ভবনে রেখেছি।

এই ভবনে কতগুলো শুটিং ফ্লোর থাকবে এবং শুটিং ফ্লোর গুলোতে কেমন সুযোগ সুবিধা থাকবে?

-আসলে এ বিষয়টা পরিষ্কার করা দরকার, আমরা ইনডোর কোন শুটিং ফ্লোর রাখব না। ভবনের বাইরে যে জায়গাটা আছে সে জায়গা গুলোকে আমরা এমন ভাবে তৈরী করব যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতার জন্য ছবির ছোট-খাট অংশ শুটিং করে দেখতে পারবে। এরকম না যে এখানে প্রযোজক, পরিচালকরা শুটিং করতেই থাকবে।

টোটাল ২৫৫০০ বর্গফিট বেসমেন্টের ফ্লোর গুলো কি কাজে ব্যবহার করবেন?

Archive Design (2) copy

নির্মানাধীন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবন (সম্মুখভাগ)

– আমার বিল্ডিং এর টোটাল জায়গাটা হচ্ছে ২৫৫০০ বর্গফিট। বিল্ডিংটা হবে ৮ তলা। বিল্ডিং এর ৮টির প্রতিটি ফ্লোরে থাকবে। এরিয়া ৮তলা। প্রজেকশন হল ও কনফারেন্স হল হবে ৩ তলা। লাইব্রেরী হবে ৪তলা। একটার সাথে আরেকটার কোন সম্পর্ক নাই। আপনি যখন ফিল্ম এ যাবেন তখন শুধুই ফিল্ম, যখন কনফারেন্স হলে যাবেন তখন আপনার জন্য শুধুই কনফারেন্স হল। একটার সাথে আরেকটার কোন যোগাযোগ নেই। এমন ভাবেই তৈরি করা হচ্ছে।

আর্কাইভ ভবনের জায়গাটাতো একটা বস্তি ছিল। এটা উদ্ধার করলেন কিভাবে?

-ঐ জায়গাটায় প্রায় ৭৫-৮০ ঘর বস্তি ছিল। আমাদের একটা আশংকা ছিল যে বস্তিটা আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হবো কিনা। কারণ বস্তি উদ্ধার করতে গেলে অনেক সময় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে একটা সংবাদ তাদেরকে এখান থেকে সরানোর জন্য ভূমিকা রেখেছে সেটা হচ্ছে আমরা বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই প্রজেক্ট উদ্বোধন করবেন এবং ভিওিপ্রস্থ স্থাপন করবেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে ভিওিপ্রস্থ স্থাপন করবেন তো কোনো না কোনো ভাবে আপনাদেরকে এখান থেকে যেতেই হবে। তখন তারা বললেন, তাহলে আমরা এখন কোথায় যাবো? এক্ষেত্রে পিডব্লিউডিই-কে ধন্যবাদ জানাই কারন তারা আমাদেরকে এ ব্যপারে সাহায্য করেছে। তাদের নিজস্ব একটা জায়গা ছিল, তারা বললেন যে ঠিক আছে আপনারা আপাতত ঐ জায়গায় থাকেন, তারপর আপনারা চেষ্টা করেন কিছু একটা করতে। তারপরও বিভিন্ন কৌশলে, ভালভাবে বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে, ভয় বলতে এরকম যে, এখান থেকে না সরলে কিন্তু আপনাদের খুব অসুবিধা হতে পারে এসব। অবশেষে তারা আর বাড়াবাড়ি ছাড়াই আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে যায়।

বাংলা মুভি ডেটাবেজ (বিএমডিবি) উদ্যোগ সম্পর্কে বলুন।

আর আপনাদের সংগঠন বিএমডিবি যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাকে সাধুবাদ জানাই। সাধুবাদ জানাই এ কারনেই যে, আমরা যে এক-একটি কাজ করছি তার যদি তথ্যভিত্তিক কোন সংকলন না থাকে তাহলে কিন্তু খণ্ডিতভাবে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডগুলো আমরা জানতে পারবোনা। সেক্ষেত্রে নতুন নতুন কাজ আমরা সৃষ্টি করবো, আমরা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আপনাদের এই উদ্যোগ জোরদার হবে। এক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে যদি আপনারা সহযোগিতা চান সরকারও আপনাদের সহযোগিতা করবে।

 


মন্তব্য করুন