Select Page

আলো ছড়িয়েছে ‘আলতা বানু’

আলো ছড়িয়েছে ‘আলতা বানু’

আলতা বানু
পরিচালনা : অরুণ চৌধুরী
অভিনয়ে : জাকিয়া বারী মম, আনিসুর রহমান মিলন, ফারজানা রিক্তা, সাবেরী আলম, রাইসুল ইসলাম আসাদ, দিলারা জামান, মামুনুর রশীদ, রমিজ রাজু, আহাসানুল হক, নরেশ ভুঁইয়া, তিনু করিম ও শামস সুমন।
রেটিং : ৩/ ৫

নাট্যকার ও নির্মাতা অরুণ চৌধুরী’র নামের কারণে একটা সময় ছোট ছোট ঢেউ, অন্ধ শিকারী, স্পর্শ, শুধু তোমার জন্য নাটকগুলো গোগ্রাসে গিলতাম। অরুণ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘আনন্দ ধারা’ পাক্ষিকের জন্যও অপেক্ষা করতাম দিনের পর দিন। বই মেলা থেকে তার কত বই কিনে পড়েছি। এত সফল ও জনপ্রিয় কিছু কাজ একটা সময় যিনি উপহার দিয়েছেন, তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র দেখবার জন্য আমার উন্মুখ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

যদিও আশংকাও ছিল মনে, অরুণ চৌধুরী কি চলচ্চিত্রের নামে বড় আকারের নাটক নির্মাণ করেছেন? কিছু ব্যতিক্রম বাদে অতীতে ছোটপর্দার অনেক নির্মাতা বড়পর্দায় চলচ্চিত্র নির্মাণের নামে তেমন কিছুই উপহার দিয়েছিলেন। অরুণ চৌধুরী কি সে ধারাতেই শামিল হবেন? নাকি আমাদের মনে রাখার মত পূর্ণাঙ্গ একটি চলচ্চিত্র উপহার দেবেন? যাচাই করতেই ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘আলতা বানু’ মুক্তির প্রথম দিন প্রথম শো’তে হানা দেই।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, যাত্রা ধাঁচে নির্মিত নির্মাতাদের স্বঘোষিত ‘আধুনিক রূপবান’ দাবি করা ‘প্রেমের কেন ফাঁসি’ চলচ্চিত্রও এ সপ্তাহে ১৮টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। অথচ ‘আলতা বানু’র ভাগ্যে জুটেছে ঢাকার ১টি প্রেক্ষাগৃহ (স্টার সিনেপ্লেক্সসহ সারা দেশের মোট ৫টি প্রেক্ষাগৃহ)। ‘প্রেমের কেন ফাঁসি’ ছবির নায়িকাই সে ছবির সুরকার। নায়িকার বাবা পরিচালক, মা প্রযোজক। এমন পারিবারিক (!) ছবিও সুস্থ ধারার, মৌলিক কাহিনি নির্ভর ‘আলতা বানু’র চেয়ে ৩ গুণ বেশি প্রেক্ষাগৃহ পেয়েছে-এই ব্যর্থতা আসলে কার?

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের মত নামজাদা প্রযোজনা সংস্থা ‘আলতা বানু’র প্রযোজক এবং পরিবেশক। অথচ এ ছবিটির প্রচার-প্রচারণা সে অর্থে হয়নি কেন? ঢাকার যেসব দর্শক স্টার সিনেপ্লেক্সে যাবার সামর্থ্য রাখেন না, তারা কি এ ছবিটি দেখার যোগ্যতা রাখেন না? আমরা কি চলচ্চিত্র নির্মাণ করি শুধুমাত্র পুরস্কারের জন্য কিংবা দু-চারটি উৎসব থেকে সম্মান ঝুলিতে ভরবার জন্য? ‘আলতা বানু’ দেখবার আগে এসব কষ্টবোধ, কিছুটা হতাশা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল আমাকে।

অবশ্য ২ ঘন্টা ১ মিনিট ব্যাপ্তির এ ছবিটি যখন শুরু হলো তখন সব ভুলে গেলাম। অন্য রকম এক মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেলাম। এ মায়ায় আলতা আমাদের জড়ালেন, এ মায়ায় বানু আমাদের জড়ালেন। বুঝতে দেরি হলো না, ‘আলতা বানু’ আমাদের বোনদের গল্প, মায়েদের গল্প, মেয়েদের গল্প। শুধুমাত্র দুই বোনের জীবনকে উপজীব্য করে আমাদের দেশে এর আগে কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। সে হিসেবে ফরিদুর রেজা সাগরের এই গল্প আমাকে ভীষণভাবে টেনেছে। আলতা ও বানুর পৃথিবীতে খুব সহজেই আমি একাত্ম হতে পেরেছি। চলচ্চিত্রে বৃন্দাবন দাসের প্রথম চিত্রনাট্যের পরতে পরতে ছিল বাংলার মাটির গন্ধ। ছোট বোন বানু’র হারিয়ে যাওয়া এবং তাকে খুঁজে বের করতে বড় বোন আলতার সংগ্রামী এক ভ্রমণ কাহিনিই হলো ‘আলতা বানু’।

এই ভ্রমণের মাঝেই পরিচালক আমাদের দেখিয়েছেন নারীদের জীবন, সামাজিক অবক্ষয় ও কুসংস্কারের পৈশাচিক এক গল্প। এখনো যে গ্রাম বাংলার মানুষ কুসংস্কারের যাতাকলে নিজেদের বলিদান করেন, মেয়েদের জীবন যে এখনো অনেক ক্ষেত্রে কচুরিপাতার পানির মত টালমাটাল-সে গল্পই আমরা দেখেছি ‘আলতা বানু’তে। শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যাওয়া গ্রামগুলোতে যে এখনো দৃষ্টিভঙ্গির বদল হয়নি, সেটি আমরা দেখেছি ‘আলতা বানু’ তে। অবশ্য শুধু কুসংস্কার-ই নয়, সাইবার ক্রাইম, কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়িন, জঙ্গিবাদ, নারী পাচার-এরকম আরো অনেক সামাজিক সমস্যা এ ছবিতে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সময়টা ২০১৮ হলেও এই আধুনিক সময়েও কিছু সামাজিক ব্যাধি আমাদের জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।

অবশ্য সামাজিক সমস্যা দেখাতে গিয়ে মূল গল্প থেকে নির্মাতা সরে যাননি। শুরু থেকে শেষ আমরা নির্মাতা কিংবা গল্পকারের চোখ দিয়ে দেখলেও শেষ পরিণতি কিংবা শেষ দৃশ্য লিখবার দায়িত্ব দর্শকদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর এখানেই ‘আলতা বানু’র সাফল্য। পরিচালক ও কাহিনিকারদের সাধুবাদ জানাই দর্শকদের একাত্ম করে গল্প রচনার জন্য। যাদের বোন আছে, তারা এ ছবিটি দেখবার পর আবেগী হতে পারবেন। দেশের মানুষ ও মানুষের মানবিক সম্পর্কগুলো দর্শক সহজেই সংযোগ করতে পারবেন।

এ ছবির বেশ কিছু দৃশ্য যেমন আমাকে আবেগী করেছে, মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে কষ্টে, হতাশায় বৃষ্টির পানিতে আলতা’র (মম) মেহেদীর রঙ মুছে ফেলার প্রাণান্তকর চেষ্টার দৃশ্যে অস্ফুটস্বরেই বলে উঠেছি ‘বাহ’! যে দৃশ্যে সোহেল রানার (মিলন) কাজিন (রমিজ রাজু) বানুকে (রিক্তা) ব্ল্যাকমেইল করে কিংবা বানু যখন সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবাকে উচিত কথা শুনিয়ে আসে কিংবা যে দৃশ্যে সোহেল রানা আলতা’কে জানায় তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয় কিংবা বহুদিন পর আলতাকে ফিরে পেয়ে পুকুর ঘাটে বসে সোহেল রানা ও আলতার কথোপকথন-প্রতিটি দৃশ্যই আমাকে মুগ্ধ করেছে। শেষ ক্লাইমেক্সটির কথাও না বললেই নয়।

সংলাপ রচয়িতাও এ ছবিতে মেজাজ বুঝে সংলাপ লিখেছেন। বিশেষ করে খুব সহজ-স্বাভাবিক সংলাপগুলোও আমার ভেতর ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পেরেছে। যেমন: বাবায় বলতেন কখনো কোনো কাজে হার মানবি না। হার মানোনের নাম জীবন না। কিংবা আলতা যখন শেষ ক্লাইমেক্সের আগে সোহেল রানাকে বলেন, শইলের ওজন কমাইয়া নেই। এ দৃশ্যে আলতার মনোস্তাত্বিক অনুভূতিগুলো আমাকে নাড়া দিয়েছে।

তবে সব মুগ্ধতার বিপরীতে এ ছবিটি নিয়ে আমার ভেতর বেশ কিছু অভিযোগও জমা হয়েছে। যেমন: এ ছবির বেশ কিছু দৃশ্যে অভিনয়শিল্পীদের গ্রাম্য-শহুরে ভাষা এবং টান কিছু ক্ষেত্রে যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। এ বিষয়টির ওপর আরেকটু যত্নশীল হওয়া যেত। একটি দৃশ্যে সাবেরী আলম যখন লাঞ্চব্রেকে মিলনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, সে দৃশ্যে মিলন খুব স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিলেন। অথচ ফোন রাখবার আগে সাবেরী আলম বলেন, কি ব্যাপার? তোমার গলা এমন লাগে ক্যান? টিয়া পাখির কারবারি করেন যে লোক, তার ডাবিং কিংবা মহাজনের শিষ্য কিশোর অভিনেতার ডাবিংও শ্রুতিকটু লেগেছে। এ ছবির প্রথম ভাগও হুট করেই শেষ হয়ে যায়। পর্দায় হঠাৎ ভেসে ওঠে ‘বিরতি’। আমি ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো চলচ্চিত্রের বিরতির আগের দৃশ্যটিকে একটু বিশেষভাবে দেখতে চাই। ‘আলতা বানু’ তে সেটি পাইনি। তাছাড়া ছবির শেষ দৃশ্যে মম’র উদ্দেশ্যে বলা মিলনের সংলাপগুলো মম’র ঐরকম মানসিক পরিস্থিতিতে কতটা যথার্থ ছিল, প্রশ্ন থেকেই যায়।

নির্মাতা অরুণ চৌধুরী তার প্রথম ছবিতে আমাদের মুহূর্মুহু হাত তালি পেয়েছেন। জ্ঞান বিতরণ না করে দর্শকদের খুব সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সরল একটি গল্প বলেছেন তিনি। এ গল্প সর্বস্তরের দর্শকের বিনোদন যোগাতে সক্ষম হবে কিনা জানিনা, তবে আমার দৃষ্টিতে একটি আধুনিক বাংলা চলচ্চিত্রই নির্মাণ করেছেন তিনি। যথাযথ সুযোগ পেলে অরুণ চৌধুরী যে আরো ভালো কিছু দেখাতে সক্ষম, তা ‘আলতা বানু’ তে বিলক্ষণ বোঝা গেছে।

এ ছবিতে রয়েছে তিনটি গান। ঐশীর গাওয়া ‘জীবন খোঁজে’ গানটি ছবি শেষ হবার পরও মাথায় চেপে বসে। ঐশী এবং গানের গীতিকার, সুরকারকে এ ক্ষেত্রে ধন্যবাদ। ফরিদ আহমেদের মত গুণী সংগীত পরিচালক এ ছবিতে কাজ করেছেন। তবে ছবিতে সংগীতকে এক প্রকার অবহেলাই করা হয়েছে। নির্মাতারা চাইলে হৃদয়গ্রাহী গান ব্যবহার করে ছবিটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারতেন। বিশেষ করে ‘কেন পিরিতি’ গানের কথার সঙ্গে দৃশ্যায়নগুলো ছিল একদমই বেমানান।

তবে এ ছবির যতটুকু দুর্বলতা আছে, সব ভুলিয়ে দিয়েছেন এ ছবির অভিনয়শিল্পীরা। শুরুতেই বলতে হয়, ‘আলতা বানু’ ছবির আত্মা, এ ছবির প্রাণ ‘আলতা বেগম’ অর্থাৎ জাকিয়া বারী মম’র কথা। মম যদি তার প্রথম ছবি ‘দারুচিনি দ্বীপ’ এর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে পারেন, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এর জন্য দর্শক ও সমালোচকের রায়ে জোড়া মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেতে পারেন, তাহলে ‘আলতা বানু’র জন্য তিনি সর্বোচ্চ পুরস্কার পাবার যোগ্যতা রাখেন। একজন অভিনয়শিল্পীর অভিনয় তখনই মন ছুঁয়ে যায়, যখন সেটিকে অভিনয় মনে না হয়। মম এ ছবিতে ভুলিয়ে দিয়েছেন মম’কে। পুরোটা সময় জুড়ে তিনি ‘আলতা’ হয়েই ছিলেন। ‘আলতা’ চরিত্রের অসহায়ত্ব এবং দৃঢ়তা দুটিই একসঙ্গে খেলা করেছে মম’র অভিনয়ে। খুব সাধারণ দৃশ্য, যেমন: সোহেল রানা’র (মিলন) ছবি দেখে আলতার লাজুক হাসি কিংবা সোহেল রানার কাছ থেকে বিয়ে ভাঙার খবর শোনা, এমনকি বোন বানুর সঙ্গে বড় বোনের রসায়ন প্রতিটি ধাপেই মম ছিলেন বিশ্বাসযোগ্য, চরিত্রের প্রতি বিশ্বস্ত। বিশেষ করে ছবির ক্লাইমেক্সে মৃত্যু সংবাদ শুনবার পর থেকে শেষ পর্যন্ত মম’র অভিনয় ছিল ভীষণ পরিমিত। দুর্বল যে কোনো অভিনয়শিল্পী এই দৃশ্যগুলোতে অতি-অভিনয় করতে পারতেন। তবে মম বলেই সবকিছু ছিল ভীষণ জীবন্ত। বাস্তবিক। এ ক্ষেত্রে নির্মাতাকেও ধন্যবাদ জানাই।

আফসোস, তিন বছর পর মম’র মত অভিনেত্রীকে বড়পর্দায় দেখতে হলো। অন্য কোনো পরিচালক কিংবা প্রযোজক কেন মম’র মত অভিনেত্রীকে বড়পর্দায় ব্যবহার করছেন না কিংবা করতে পারছেন না-প্রশ্ন থেকেই যায়।

‘বানু’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারজানা রিক্তা। যাকে এর আগে বাপ্পারাজ ও তাহের শিপনের চলচ্চিত্রে দেখেছিলাম। তবে এবারই প্রথম রিক্তা আমাদের নজর কেড়েছেন। ‘মন কেড়েছেন’ বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। ‘বানু’ চরিত্রে রিক্তা যথেষ্ট ভীষণ সাবলীল ছিলেন। ডানপিটে, দৃঢ় চিত্তের ২০/২১ বছরের যুবতীর চরিত্রে তিনি শতভাগ আন্তরিক ছিলেন। রিক্তা যখন বলেন, ‘আলতা পিলাস বানু’, দর্শক হাসেন। রিক্তা যখন বোনের বিয়ে ভেঙে যাবার পর সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে হট্টগোল করেন, প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন, দর্শক হাততালি দেন। আর এখানেই ‘বানু’ ও রিক্তার সাফল্য। রিক্তাকে বাংলা চলচ্চিত্রে আরো নিয়মিত দেখতে চাই।

‘আলতা বানু’ ছবির নায়ক আনিসুর রহমান মিলন। এটা নির্জলা সত্য, ‘আলতা বানু’ মিলনের ছবি নয়। ছবি জুড়ে রাজত্ব করার সুযোগ তিনি পাননি। তবে ‘আলতা’ এবং ‘বানু’র চরিত্র গল্পের মূল ফোকাস হলেও ‘সোহেল রানা’কে পার্শ্ব চরিত্র হতে দেননি মেধাবী অভিনেতা মিলন। নিজের ক্যারিশমা দিয়ে এ চরিত্রটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। নিজের মেধার সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন। যে কোনো দুর্বল অভিনেতা খুব সহজে এ চরিত্রে হারিয়ে যেতে পারতেন। তবে মিলন নিজের প্রতিভা দিয়ে নিজেকে ধরে রেখেছেন। বটবৃক্ষের মত ছায়া দিয়েছেন মম’কে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, মিলনের মত সহশিল্পী না পেলে মম’র অভিনয় এ ছবিতে খেই হারাতে পারতো। দুটি মানুষ যে দূরে থেকেও আপন হতে পারে কিংবা শুধু কাছে এসে হাত ধরে থাকলেই যে কাছে আসা যায় না, অদৃশ্যভাবেও রসায়ন তৈরি করা যায়-এটি আমরা এ ছবিতে দেখেছি আলতা ও সোহেল রানার চরিত্রে। ছোট ছোট ম্যানারিজম দিয়ে, যেমন কথায় কথায় লিপবাম দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেবার মুদ্রাদোষের মাধ্যমে মিলন সাধারণ চরিত্রকেও অসাধারণ করেছেন, আর দশটা চরিত্র থেকে ‘সোহেল রানা’কে স্বতন্ত্র করেছেন। অন্য চলচ্চিত্র নির্মাতারা নিয়মিতভাবে এমন অভিনেতাকে কেন ব্যবহার করছেন না-জানতে ইচ্ছে হয়।

সাবেরী আলম এ ছবিতে মম’র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছেন। সাবেরী আলম গুণী অভিনেত্রী সন্দেহ নেই। তবে ‘আলতা বানু’ ছবিতে তিনি আমাকে বিস্মিত করেছেন। এ ধরনের চরিত্রে তার মত শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ বলা অভিনেত্রীকে এতটা বাস্তবিকভাবে পাওয়াটা ছিল আমাদের মত দর্শকদের জন্য বড় পাওনা। সাবেরী আলমের রূপসজ্জা ও পোশাক আমাকে মুগ্ধ করেছে।

এ ছবিতে চরিত্রের প্রয়োজনে আরো অনেক গুণী অভিনয়শিল্পীদের আমরা দেখেছি। দিলারা জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, মামুনুর রশীদ, আহসানুল হক, শামীমা নাজনীন, নরেশ ভুঁইয়া, শামস সুমন, ইকবাল, রমিজ রাজু, তিনু করিম প্রায় প্রত্যেকেই নিজের আসনে ছিলেন উজ্জ্বল। গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রত্যেকে নিজেদের অবস্থানে ছিলেন আন্তরিক।

*রিভিউটি সমকাল ২৬ এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত


মন্তব্য করুন