ইনভিজিবল স্টোরিজ থেকে মিশন এক্সট্রিমের দীপ
ছোটবেলায় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেটা! ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পড়তে আসার পর হঠাৎ করেই বিনোদনের দুনিয়ায় ‘কিছু একটা’ করার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। একটা সময় ভর্তি হলেন প্রাচ্যনাটে। কীভাবে যেন চারুকলা থেকে প্রাচ্যনাটেই সময় দিচ্ছিলেন বেশি। সেখানে অভিনয়ের নানা ধরন ও টেকনিক শিখতে শিখতেই ভালোবেসে ফেলেন জগতটাকে।
সেই ভালোবাসার কারণেই অভিনয়টাই নেশা ও পেশা হিসেবে তার কাছে প্রায়োরিটি লিস্টে সবার উপরে। সেই লক্ষ্য ও স্বপ্ন নিয়েই একটা সময় ছেলেটা দেশের গন্ডি পেরিয়ে অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। হ্যাঁ, এতক্ষন যার কথা লিখছি বা বলছি তিনি সুদীপ বিশ্বাস দীপ।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রথম কাজেই বাজিমাত করেছেন বাংলাদেশের এই তরুণ অভিনেতা। তার অভিনীত চ্যানেল এইচবিও-এর সিরিজ ‘ইনভিজিবল স্টোরিজ’ সিঙ্গাপুরভিত্তিক দ্য কনেটেন্ট এশিয়া অ্যাওয়ার্ডসে সেরা ড্রামার খেতাব ও পেয়েছে।
এই সাফল্য বা প্রাপ্তি একদিনে আসেনি। একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় যে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি একনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন প্রাচ্যনাটের সঙ্গে। ‘ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি’ নাটকে তিনি মূল চরিত্র পোশাকশিল্পের কর্মীর শ্বশুর, শাশুড়ি, প্রেমিকসহ মোট ১২টি চরিত্রে দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন। এরপর টেলিভিশনে ওয়াহিদ তারেক পরিচালিত ডকু–ফিকশন অপারেশন কিলোবাইট, শাফায়েত মনসুর পরিচালিত আমার নাম মানুষ, ক্যাফে ৯৯৯ এবং আমরা ফিরব কবে-এর মতো প্রশংসিত এবং আলোচিত ফিকশনে দেখা গেছে তাকে।
বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমার পর্দায় দীপকে দেখা গেছে দুইবার— প্রসূন রহমান পরিচালিত ‘সুতপার ঠিকানা’ ও রায়হান রাফীর ‘দহন’-এ। সেখানে তাকে নিজের চরিত্রে বেশ সাবলীলভাবে দেখা গেছে। সামনে ‘মিশন এক্সট্রিম’–এও পাওয়া যাবে।
তবে ‘ইনভিজিবল স্টোরিজ’ সিরিজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবর জানার পর রাতারাতি আলোচনায় আসেন দীপ। ২০১৪ সালে রুহুল রবিন খান পরিচালিত ‘আইডেনটিটি’ শিরোনামে একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় তার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দরজা খুলে দেয়। ২০১৬ সালে ছবিটি সিঙ্গাপুরের এক উৎসবে দেখানো হলে সেখানে তার অভিনয় দেখে আগ্রহী হয়েছিলেন ‘ইনভিজিবল স্টোরিজ’-এর কাস্টিং ডিরেক্টর। এরপর রুহুল রবিন খানের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন সুদীপ এর সাথে। একটি স্ক্রিপ্ট পাঠানো হয় সুদীপকে, তারপর সুদীপ স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী অভিনয় করে সেই কাস্টিং ডিরেক্টরকে পাঠান। এভাবেই সিরিজটির সঙ্গে তার যুক্ত হওয়া। সিরিজে তার অভিনয় বেশ প্রশংসা কুড়ায় সারাবিশ্বের আনাচেকানাচে থেকেই। এমনকি বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেত্রী পূজা ভাট নিজের ইন্সট্রাগ্রামে সুদীপের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একজন তরুণ অভিনেতার কাছে এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি বলে জানান সুদীপ।
এবার তাকে দেখা যাবে ৩ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে যাওয়া বহুল প্রতীক্ষিত ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমায়। সুদীপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সানী সানোয়ারের এডি অরূপ। সানীর সঙ্গে দেখা করার পর গল্প ও চরিত্রটি তার পছন্দ হয়। সুদীপ বলেন, সিনেমার গল্প, মেকিং-এর আয়োজন এবং আমার চরিত্রটি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। কারণ আমি সহজেই কানেক্ট করতে পারছিলাম। তাই রাজী হয়ে যাই সিনেমাটি করতে।
এভাবেই বাস্তব জীবনের সুদীপ ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে যে কিনা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় ঘটনাচক্রে অনেক কিছুর সাথে জড়িয়ে যায়, এমন এক চরিত্র যার নাম আলিফ সেই ভূমিকায় মিলেমিশে যান।
একটা মজার কথাও শেয়ার করেছেন সুদীপ। সানী সানোয়ার তাকে বলেছিলেন, একজন বাবার অনেক সন্তান থাকলেও যেকোনো একটি সন্তান একটু বেশি আদরের থাকে, আলিফ চরিত্রটি সেই আদরের সন্তানের মতোই।
সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত বিগ বাজেটের থ্রিলারটিতে মুখ্য ভূমিকায় আছেন আরিফিন শুভ, ঐশী, সুমিত সেনগুপ্ত, নাবিলসহ অনেকে। করোনার কারণে দুইবার ডেট পেছালেও এবার মুক্তি পাচ্ছে ‘মিশন এক্সট্রিম’। সেই ছবি দীপকে কতটা আলোচনায় আনে তা-ই এখন দেখার অপেক্ষা।