Select Page

ঈদের ছবি : যা দেখেছি, যা দেখছি…

ঈদের ছবি : যা দেখেছি, যা দেখছি…


মনে পড়ে খুব ছোটবেলায় ঈদের ছবি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। ১৯৯৩ সালে সালমান শাহ-মৌসুমী জুটির ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখার জন্য ঐ ছোট্টবেলাতেই দিন গুণতাম। এখনো স্পষ্ট মনে আছে, মৌসুমী-সালমান শাহ জুটির সঙ্গে ঐ একই ঈদে অভিষেক হয়েছিল নায়িকা শাহনাজ (হিংসা), সোনিয়া’র (প্রেম শক্তি)।

১৯৯৪ সালের ঈদ ছিল আরেকভাবে স্পেশাল। শাবনূর-সালমান শাহ জুটির ১ম ছবি ‌’তুমি আমার’ মুক্তি পেয়েছিল সে ঈদে। ১৯৯৫ সালে ঈদে মৌসুমী-সালমান শাহ জুটির শেষ ছবি ‘দেনমোহর’, মৌসুমী-ওমরসানি জুটির ‘ক্ষুধা’ দেখেছিলাম প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে। একই বছর কোরবানীর ঈদে ঢাকায় মুক্তি পায়নি শাবনূর-সালমান শাহ জুটির ‘স্বপ্নের ঠিকানা’। হতাশ হয়েছিলাম। তবে একই ঈদে প্রিয় নায়িকা মৌসুমীর তিন ছবি ভাংচুর, মুক্তির সংগ্রাম, সংসারের সুখ দু:খ হলে গিয়ে দেখেছিলাম।

১৯৯৬ সাল-এর রোজার ঈদ ছিল নানা দিক দিয়ে স্পেশাল। তখন আমি স্কুলের ছাত্র। অথচ সে বয়সেই আমি প্রিয় নায়িকা মৌসুমীর , স্বজন, ঘাত প্রতিঘাত, হারানো প্রেম, শাবনূর-সালমানের বিচার হবে হলে গিয়ে দেখেছিলাম। এভাবেই ১৯৯৬ এর কোরবানীর ঈদে রাক্ষস, স্ত্রী হত্যা….

১৯৯৭ সালের রোজার ঈদে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৯টি ছবি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল। তার মধ্যে নায়িকা মৌসুমীর ছবিই ছিল ৫টি: জজ সাহেব, শান্তি চাই, গোলাগুলি, মিথ্যার অহংকার, রূপসী রাজকন্যা। শেষ ছবিটি ছাড়া প্রতিটি ছবিই দেখেছিলাম।

পরবর্তী বছরগুলোতে এই ঈদেই স্বামী কেন আসামী, বিয়ের ফুল, নারীর মন, এই মন চায় যে, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, ঢাকাইয়া মাস্তান, কুখ্যাত খুনী, প্রেম, প্রেম পিয়াসী, স্বপ্নের পুরুষ, ভালোবাসি তোমাকে, এ বাঁধন যাবেনা ছিড়ে, আশা আমার আশা, ফুলের মত বউ, বউয়ের সাথে যুদ্ধ, ব্যাচেলর, রং নাম্বার, কাল সকালে, রংবাজ, অহংকার, সোনা বন্ধু, নবাব, বস টু, রাজনীতি, শিকারী, বাদশাহ, হিরো দ্য সুপারস্টার, নাম্বার ওয়ান শাকিব খান, মাই নেইম ইজ খান, ভালোবাসা আজকাল, অগ্নি টু, হানিমুন, আই ডোন্ট কেয়ার, পদ্ম পাতার জল, এক বুক ভালোবাসা, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, ফুল এন্ড ফাইনাল, কি প্রেম দেখাইলা, প্রেমিক নাম্বার ওয়ান, ঢাকার কিং, আমার প্রাণের প্রিয়া, আমার আছে জল, বসগিরি, শ্যুটার, কিস্তিমাত ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি…………..কত ছবি দেখেছিলাম !!!!!!!!!

কাট টু ২০১৮

ঈদ হয়তো ২ দিন পর কিংবা ৩ দিন পর। অথচ আজও জানিনা, ঠিক কটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে এবারের ঈদে? ৩টি-৪টি-নাকি ৫টি? যে ছবিগুলো মুক্তি পাবে সেগুলোর হল লিস্টও পাইনি এখন পর্যন্ত ! যে ছবিগুলো মুক্তি পাচ্ছে, তার মধ্যে ২টি ছবির ট্রেলার দেখে নিজেই শিওরে উঠেছি। প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে পুরোটা সময় সুস্থ থাকতে পারবো তো?

প্রশ্ন হলো, আমাদের ঈদের ছবির আনন্দ/ উত্তেজনা কমিয়ে দেবার জন্য আসলে দায়ী কে/ কারা? একসময় দেশে এত এত প্রেক্ষাগৃহ ছিল। ৯টি ছবিও মুক্তি পেত। এর মধ্যে অধিকাংশ ছবিও সফল হবার নজীর আছে। এক শাবানা, মৌসুমী’দের ৫টি ছবি মুক্তি পাবারও নজীর আছে। অথচ এখন…..?????

এখন নায়ক বলেন, আমার অমুক ছবি দেখবেন না। কারণ ছবিটিতে আমি আমার কাজ শেষই করিনি। কিন্তু প্রযোজকের অনেক তাড়া। ঈদে মুক্তি দিয়ে লোকসানের অংক তুলে ফেলতেই হবে।

এখন প্রথম সারির প্রযোজক, অনেক ব্যবসাসফল ছবির প্রযোজক বিনা অনুমতিতে দেশের বাইরে গিয়ে শুটিং করে এসে বিপাকে পড়েন। যে কোনো নতুন প্রযোজক এই ভুলটি করলে ক্ষমা করে যায়। কিন্তু দর্শকদের হার্টবিট বাড়িয়ে দেয়া অনেক সফল ছবির প্রযোজক কেন এমনটি করতে গেলেন?

এসব সমস্যার প্রতিকার/ সমাধান কি আদৌ কারো কাছে আছে?
দর্শক সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না কেন? তার কোনো সদুত্তর কি আদৌ কারো কাছে আছে?


Leave a reply