অ্যান্ড্রু কিশোরের জীবনের গল্প সমাপ্ত
… জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প… না সব শেষ হয়ে গেছে। কোনো গল্প নেই। … মেলেছি পিঞ্জর উড়েছে ডানা… হ্যাঁ, অ্যান্ড্রু কিশোরের জীবন পাখি উড়ে গেছে। অনেক দিন ক্যানসারে ভুগে সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজশাহীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বাংলাদেশের প্লেব্যাক সম্রাট।তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। পাশে ছিলেন স্ত্রী ও স্বজনরা।
এ শিল্পী ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীত পাঠ গ্রহণ শুরু করেন অ্যান্ড্রু কিশোর। মুক্তিযুদ্ধের পর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
অ্যান্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমার ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানটি। এরপর ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’তে কণ্ঠ দেন। এর পর বেশ কিছু গান তাকে ভীষণ পরিচিত করে তোলে। তবে তুমুল জনপ্রিয়তা পান বেলাল আহমেদের ‘নয়নের মনি’ সিনেমার গান দিয়ে। ওই সিনেমার পুরো অ্যালবামই হিট, পরে কলকাতায় রিমেকও হয়।
সব মিলিয়ে কয়েক হাজার সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে— জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙের ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি।
শরীরে নানা ধরনের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এই সংগীতশিল্পী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে নন-হজকিন লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীন তার চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানে কয়েক মাস একনাগাড়ে চিকিৎসা চলে। জুলাইয়ে তিনি দেশে ফেরেন। চলে যান জন্মস্থান রাজশাহীতে।
অ্যান্ড্রু কিশোর বড় ভাল লোক ছিল, সারেন্ডার, ক্ষতিপূরণ, পদ্মা মেঘনা যমুনা, কবুল, আজ গায়ে হলুদ, সাজঘর, কি যাদু করিলা সিনেমায় কণ্ঠ দিয়ে মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এ ছাড়া বাচসাস, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী লিপিকা এবং দুই সন্তান সংজ্ঞা ও সপ্তককে রেখে গেছেন অ্যান্ড্রু কিশোর।