‘এফডিসিতে প্রযোজকদের ১২০ রুম’— পীরজাদা হারুনকে মামলা ও নিষিদ্ধের হুমকি
বিএফডিসি ও প্রযোজকদের নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করার অভিযোগে অভিনেতা পীরজাদা শহীদুল হারুনকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন করে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাকে আলটিমেটাম দিয়েছেন। তিন দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে হারুনকে, নইলে এফডিসিতে অবাঞ্ছিত করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।
সম্প্রতি সমকালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পীরজাদা হারুন বলেন, ‘একসময় এফডিসি থেকে অভিনেতা রাজীবকে সরিয়ে অতিরিক্ত সচিবকে এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি এফডিসি সম্পর্কে অবগত না থাকায় দেখভালের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেন। তখন দেখি, ১২০টি রুম আছে বিভিন্ন প্রযোজকের নামে। সেখানে মাদক, নারী ব্যবসাসহ অনেক কিছুই হতো। এমডিকে অবগত করে তখন রুমগুলো দখলমুক্ত করি। এখন আবার সেই রুমগুলো দখল হয়েছে। এগুলো বন্ধ করা দরকার।’
এমন বক্তব্যের কারণে গত ২৪ আগস্ট পীরজাদা হারুনকে বয়কটের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করে চলচ্চিত্র-সংশ্লিস্ট সংগঠনগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন বলেন, ‘প্রযোজকেরা সিনেমায় লগ্নি করছেন বলেই এতগুলো মানুষ কাজ করতে পারে। সেই প্রযোজকদের যদি ঢালাওভাবে বলা হয় এফডিসিতে তারা নেশা করেন, নারীসঙ্গ করেন—এটা নিন্দনীয় ও লজ্জার। আজ যদি এই কথার প্রতিবাদ না করি তাহলে পুরো দেশবাসীর কাছে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’
ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি ও প্রযোজক সামসুল আলম বলেন, ‘৪০ বছরের ক্যারিয়ারে আমি কখনো দেখিনি এখানে প্রযোজকদের জন্য ১২০টি রুম আছে। তাঁকে অনুরোধ করব, এফডিসিতে এসে তাঁর কথার প্রমাণ তিনি দিয়ে যাবেন। উনি চলচ্চিত্রের সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আগামী তিন দিনের মধ্যে তিনি এসে প্রকাশ্যে সবার কাছে ক্ষমা না চাইলে তাকে এফডিসিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে।’
পরিচালক সমিতির বয়কট ও তিন দিনের আলটিমেটাম প্রসঙ্গে পীরজাদা হারুন বলেন, ‘আমি কোনো মিথ্যা কথা বলিনি। সেই সময়ের ফাইল দেখলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ ছাড়া শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময়েও মদ খেয়ে উল্লাস করার খবর প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। আমি বলিনি সবাই এর সঙ্গে জড়িত। চলচ্চিত্রের ভালোর জন্যই আমি বলেছি, এই সমস্ত কর্মকাণ্ড থেকে এফডিসিকে মুক্ত করা দরকার। আর বয়কট নিয়ে ভাবছি না, কারণ গত জুলাই মাসে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চলচ্চিত্রে আর কাজ করব না।’
এর আগে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন পীরজাদা হারুন।
নিপুণ আক্তার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছেন, এমন অভিযোগ আগেই উঠেছিল। বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে ২০২২ সালে কম জল ঘোলা হয়নি। সেবার নির্বাচনে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রাথমিক ভোট গণনায় জায়েদ খান জয়ী হন। কিন্তু এই ফলাফল মেনে নেননি সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত প্রার্থী নিপুণ আক্তার।
পরবর্তীকালে আদালতের নির্দেশে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন তিনি। জানা যায়, শিল্পী সমিতিতে নিপুণের দাপটের পেছনে এক রাজনীতিবিদের সরাসরি প্রভাব ছিল।
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে পীরজাদা হারুন বলেন, ‘নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী দেখাতে অনেক ওপর থেকে এক ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকেন। তিনি সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে সরাসরি প্রভাব খাটাতেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন বলা যায়। তিনি নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি সরাসরি “না” বলে দিই।’
পরবর্তী সময় মুঠোফোনে ভয়ও দেখানো হয়, এমনকি বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখানো হয় উল্লেখ করে হারুন বলেন, ‘তখন একের পর এক ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হয় যে তুলে নিয়ে যাবে। এখন যে আয়নাঘরের কথা শুনছি, তখন সে রকম কোনো আয়নাঘরের কথা শোনা থাকলে হয়তো সৎ থাকা সম্ভব হতো না। সেই রকম ভয় দেখানো হয়েছিল। পরে একটা জায়গায় যেতে বলেন, যেখানে বড় অঙ্কের টাকা রাখা ছিল। যখন রাজি হলাম না, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। সেটা চলে গেল কোর্টে। তখন নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাকে বানিয়ে দেওয়া হলো অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। নানা কাণ্ডে আমাকে ছোট করা হলো, এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হলো।’
পীরজাদা হারুন আরো বলেন, ‘২০২২ সালের নির্বাচনে যখন ভোট গণনা করা হচ্ছিল তখন শেখ সেলিম ১৭ থেকে ১৯ বার আমাকে ফোন করেছিলেন। আমার সঙ্গে তার কয়েকবার কথাও হয়েছে। ওই রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আমাকে ফোন করেছিলেন। তাদের দুজনের উদ্দেশ্যই ছিল এক।’
পরে ঘটনা মামলায় গড়ায়। আদালত থেকে রায় নিয়ে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসে নিপুণ। তিনি পুরো সময় দায়িত্ব পালন করেন।
দুই বছর পর ২০২৪-২৬ সালের নির্বাচন হয় গত ১৯ এপ্রিল, সেই নির্বাচনে হেরে যান নিপুণ। সভাপতি পদে জয়ী হন মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ডিপজল। সেদিন রাতেই বিজয়ীদের ফুলের মালা দেন নিপুণ। কিন্তু ২৫ দিন পরই মত পরিবর্তন করে নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ পুরো কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন নিপুণ। তবে বেশি সুবিধা করতে পারেননি। খবর আজকের পত্রিকা, কালের কণ্ঠ ও প্রথম আলো