এস এম পারভেজ: ঢাকায় চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় পথিকৃৎ, ছিলেন প্রযোজক-পরিচালকও
যখন পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি, সেই সময়ে সিনেমা বিষয়ক পত্রিকা ‘চিত্রালী’ প্রকাশ করে দুঃসাহসের পরিচয় দেন এস এম পারভেজ। সম্পাদনাতেই থেমে থাকেননি হাতে-কলমে যুক্ত ছিলেন নির্মাণেও। প্রযোজনা ও পরিচালনায় এসেছে তার নাম।
সৈয়দ মোহাম্মদ পারভেজ বা এস এম পারভেজের জন্ম ১৯৩৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, কলকাতায়। তার পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ বায়েজিদ। এস এম পারভেজ ১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন এস এম পারভেজ। ওই বছরই তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার ফিচার লেখক হিসেবে শুরু করেন সাংবাদিকতা জীবন। পরের বছর বের হয় চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’। ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। ওই সময় পত্রিকাটি দেশের সাহিত্য, চলচ্চিত্র, শিল্প ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ‘চিত্রালী’ প্রথম প্রকাশের তিন বছর মুক্তি পায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে এ সাময়িকীর ভূমিকা অবশ্যই স্মরণযোগ্য।
১৯৫৯ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘মাটির পাহাড়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রযোজনায় আত্মপ্রকাশ করেন এস এম পারভেজ। ছবিটি ব্যবসাসফল না হওয়ায় আর্থিক দৈন্যে পড়ে যান। বাধ্য হয়ে চিত্রালীর প্রকাশনাসত্ব অবজারভার গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি চিত্রালীর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৭ সালে সাপ্তাহিক কিশোর বাংলার সম্পাদক হন।
প্রযোজক হিসেবে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েনি পারভেজ। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কারওঁয়া’। দ্বিতীয় ছবি ছিল ১৯৬৬ সালের ‘বেগানা’। দুটোই উর্দুতে নির্মিত।
চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে একাধিক দেশে ভ্রমণ করেছেন তিনি। মস্কো, তাসখন্দ, দিল্লি ও করাচিতে অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র উৎসবে অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ডের চলচ্চিত্র কেন্দ্রগুলোও পরিদর্শন করেছেন। তদানীন্তন পাকিস্তান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্যোক্তাদের অন্যতম এস এম পারভেজ। ১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৬ থেকে টানা তিন বছর তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কমিটি ও বিচারকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সরবোর্ডের সদস্য ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মৃত্যুর আগপর্যন্ত বাচসাসের সভাপতি ছিলেন। ছিলেন কিশোর সংগঠন চাঁদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা ও চিত্রালী পাঠক-পাঠিকা চলচ্চিত্র সংসদের (চিপাচস) প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
লেখা ও ছবি ঋণ: আজাদ আবুল কাশেম