Select Page

ভারতের সঙ্গে একই দিনে সিনেমা মুক্তিতে ইতিবাচক সাড়া সরকারের

ভারতের সঙ্গে একই দিনে সিনেমা মুক্তিতে ইতিবাচক সাড়া সরকারের

কয়েক বছর ধরেই মন্দা সময় অতিক্রম করছে দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। এর মাঝে করোনা এসে পুরো একটি বছর পিছিয়ে দিল। অথচ ধারণা করা হয়েছিল ২০২০ সাল হলো ঢাকাই চলচ্চিত্রের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর।

সাত মাস বন্ধের পর সরকার গত ১৬ অক্টোবর থেকে সিনেমা হল খোলার অনুমতি দিলেও লোকসানের শঙ্কায় চলচ্চিত্র মুক্তি দিচ্ছেন না বেশিরভাগ প্রযোজক। ফলে সিনেমা হল খোলা থাকলেও চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে না প্রেক্ষাগৃহে।

এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে বলিউড চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি চেয়েছেন হল মালিকরা। গত সপ্তাহে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে হল মালিকরা বলিউড চলচ্চিত্র আমদানির প্রস্তাব তুলে ধরেন। তথ্যমন্ত্রী এবং বৈঠকে উপস্থিত চলচ্চিত্র সংগঠনের নেতারা ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানিতে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক চলচ্চিত্র সংগঠনের সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু সরাসরি মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য প্রকাশ করেনি তারা। এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরে বিস্তারিত লিখেছেন পাভেল রহমান

যদিও বলা হচ্ছে, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কাছ থেকে সম্মতিপত্র চেয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে বছরে ১০টি ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতারা মৌখিকভাবে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তাদের লিখিতভাবে সম্মতির কথা জানাতে বলা হয়েছে। পরে বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস  সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নব্বই দশকে দেশে ১২৩৮টি সিনেমা হল ছিল। ১৯৯৬ সাল থেকে সিনেমা হল বন্ধ হওয়া শুরু হয়। ২০০২ সালে আমরা সরকারের কাছে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির দাবি জানিয়েছিলাম। ২০১০ সালে ফারুক খান সাহেব বাণিজ্যমন্ত্রী থাকার সময় ৩টি ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবাদের কারণে সেটি স্থগিত হয়। পরে সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের কয়েকটি চলচ্চিত্র ভারতে মুক্তি পায় এবং ভারতের কয়েকটি চলচ্চিত্র বাংলাদেশে মুক্তি পায়। এখন করোনার ধাক্কার দেশের সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রযোজকরা চলচ্চিত্র মুক্তি দিচ্ছেন না। এভাবে চললে বাকি সিনেমা হলগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য তথ্যমন্ত্রীকে আমরা ১০টি চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি চেয়েছি। প্রযোজক, পরিচালক সমিতিও আমাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে।’

চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘করোনাকালে সিনেমা হলগুলো বাঁচানোর জন্য ভারতীয় সিনেমা আমদানির বিষয়টিকে আমরা সমর্থন করছি। কারণ সিনেমা হল না বাঁচলে, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে না। আমরাও মনে করি, সরকার যদি করোনাকালের বিবেচনায় সিনেমা মুক্তির অনুমতি দেয়, আমাদের আপত্তি থাকবে না। আমাদের এই সম্মতি করোনার সংকটকালের জন্য।’

ভারতীয় সিনেমা আমদানি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, এবার আমদানির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। তবে অনুমতি দেওয়ার আগে তাদের কিছু শর্ত রয়েছে বলে জানান। গুলজার বলেন, ‘সিনেমা ছাড়া তো হল বাঁচবে না। সিনেমার অভাবে হলগুলো খুলতে পারছেন না হল মালিকরা। এই অবস্থায় হলগুলো বাঁচাতে আমরাও মনে করছি, ভারতীয় তথা উপমহাদেশের সিনেমা আমদানির অনুমতি দেওয়া হোক। তবে এ বিষয়ে আরও আলোচনা করতে হবে। সেখানে আমরা কিছু শর্ত তুলে ধরব। ভারতীয় সিনেমা মুক্তির বিষয়ে একটা নীতিমালা প্রণয়ন করার পর অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আমরা প্রস্তাব রাখব।’

ভারতীয় চলচ্চিত্র মুক্তি দিলেই কি হলমুখী হবেন দর্শক? এমন প্রশ্নও রয়েছে অনেকের মনে। ২০১৫ সালে দেশের ৫০টি সিনেমা হলে বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান অভিনীত ‘ওয়ান্টেড’ মুক্তি দেওয়া হলেও ছবিটি বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলতে পারেনি। সাফটা চুক্তির আওতায় কয়েক দশকে ভারত থেকে আমদানি করা ‘যুদ্ধশিশু’, ‘খোকা’, ‘খোকা ৪২০’, ‘বেপরোয়া’, ‘বেলা শেষে’, ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’, ‘ইয়েতি অভিযান’, ‘পোস্ত’, ‘জিও পাগলা’, ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’, ‘বিসর্জন’-এর মতো ছবিগুলোও দর্শক টানতে পারেনি। তবে প্রদর্শক সমিতির নেতা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘সাফটা চুক্তির আওতায় সব পুরনো চলচ্চিত্র আমদানি করা হয়েছে। যেগুলো ইউটিউবের মাধ্যমে দর্শক আগেই দেখে ফেলেছে। এবার নতুন চলচ্চিত্র আমদানি করতে হবে। যেগুলো ভারতের সঙ্গে একই দিনে বাংলাদেশে মুক্তি পাবে।’

মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও কয়েক বছর আগেই অনুমতি দেওয়া দরকার ছিল। তিন বছর আগে ভারতীয় সিনেমা আমদানির পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমাকে মার খেতে হয়েছিল। তখন যদি অনুমতি দেওয়া হতো, তবে সিনেমা হলগুলো একটু চাঙ্গা থাকত। করোনার ধাক্কায় বেশ কয়েকটি হল বন্ধ হওয়ার পথে। এখন বলিউড সিনেমা এলে কিছু দর্শক হবে। হয়তো হলগুলো বাঁচবে। তবে করোনার এই সময়ে বলিউড সিনেমাও দর্শক টানতে পারবে কি না সন্দেহ থেকেই যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়েব প্লাটফর্মে সিনেমা মুক্তি দিচ্ছে। ফলে সিনেমা হলে দর্শক আনা বড় চ্যালেঞ্জ।’

বাংলাদেশে উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই। ১৯৬৫ সাল থেকেই বন্ধ ছিল ভারতীয় সিনেমার প্রদর্শন। তবে বাংলাদেশে আমেরিকার ইংরেজি চলচ্চিত্র নিয়মিতই আসছে, তবে তার প্রদর্শনী স্টার সিনেপ্লেক্স ও যমুনা ব্লকবাস্টারের মধ্যে সীমিত। এবার ভারতীয় চলচ্চিত্র মুক্তির মাধ্যমে সংকট কাটাতে চান চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।


মন্তব্য করুন