Select Page

এ লজ্জা কার!

এ লজ্জা কার!

diti

গুণী অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি মারা গেছেন রবিবার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে। সোমবার বেলা ২টা ২০ মিনিটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় নারায়ণগঞ্জে। প্রথমে সম্মত না হলেও তার পরিবার সোমবার সকালে মরদেহ নিয়ে আসে এফডিসিতে। কিন্তু সেখানে চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষের উপস্থিতি ছিল একদমই কম। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাগো নিউজ। তারই একটি অংশ প্রকাশ হলো বিএমডিবিতে।

…..প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যস্ত রুটিনের ফাঁক গলেও দিতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন স্পীকার, তথ্যমন্ত্রী। দিতির জানাজায় অংশ নিতে সোমবার এফডিসিতে নিজে উপস্থিত হয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। কিন্তু দেখা মিলল না চলচ্চিত্রের মানুষদের।

বিশেষ করে এই প্রজন্মের কয়েক ডজন নায়ক-নায়িকা ঢাকায় বসে থেকেও আসলেন না সিনিয়র-গুণী অভিনেত্রী দিতিকে শেষ বিদায় জানাতে। তাদের কেউ কেউ দায়িত্বের দায় সেড়েছেন ফেসবুকে।

আসেননি অনেক নির্মাতা, প্রযোজকেরাও। শোক বার্তা আসেনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস), কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি)’র পক্ষ থেকে। কোনো শোক বার্তা বা ব্যস্ততা দেখা যায়নি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকেও।

শুধু তাই নয় জীবনের শেষদিকে ছোট পর্দায় নিয়মিত হয়েছিলেন দিতি। কাজ করেছেন অনেক নির্মাতাদের সঙ্গে অসংখ্য খন্ড ও ধারাবাহিক নাটকে। সেইসূত্রে মিশেছিলেন বহু তারকাদের সঙ্গেও। দুঃখের বিষয় হলো সুবর্ণা মুস্তাফা, চয়নিকা চৌধুরী, বাঁধন ছাড়া আর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি মৃত দিতির পাশে।

সব মিলিয়ে দিতিকে এফিডিসিতে নিয়ে এসে যেন কিছুটা বিব্রতই করা হলো বলে মনে হলো। কেননা, রোববার রাতে (যেদিন দিতির মৃত্যু হয়) দিতির মরদেহ এফডিসিতে আনার জন্য দাবি করেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার। কিন্তু তাতে আপত্তি তুলে দিতির পরিবার। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দিতি যখন অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে পড়ে ছিলেন চলচ্চিত্রের লোকজন দিতিকে দেখতে যাননি। খোঁজ রাখেননি। সাংবাদিক ছাড়া আর কেউ দিতির পাশে ছিলো না। তারা দিতির ভালো মন্দ খবর নিয়েছেন। সেগুলো সবাইকে জানিয়েছেন। সুতারাং মরদেহ এফডিসিতে নিয়ে যাবার দরকার নেই।

কিন্তু মুশফিকুর রহমান গুলজার, ববিতা, রিয়াজ, মিশা সওদাগর, ওমর সানীদের অনুরোধে দিতির মরহেদ এফডিসিতে আনার জন্য রাজি হয় দিতির পরিবার। রাতেই এই খবরটি প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। তবু এফডিসিতে হাজির হননি চলচ্চিত্রের মানুষেরা। এই বিষয়টি চলচ্চিত্রের জন্য হতাশার বলে অভিহিত করেছেন অভিনেতা আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘দিতির মতো সিনিয়র, গুণী একজন অভিনেত্রী আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। কতোজন কতো দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী সব ব্যস্ততা ফেলে ছুটে এসেছেন দিতির জানাজায় অংশ নিতে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম চলচ্চিত্রের অনেক তারকা, বিশেষ করে এই প্রজন্মের তারকারা কেউই দিতিকে বিদায় জানাতে আসেননি। এটা আমাদের জন্য লজ্জার এবং হতাশার। আমরা সেলিব্রেটির জন্ম দিচ্ছি যেখানে সেখানে, কিন্তু মানুষ জন্মাতে পারছি কই?’

একই অভিযোগ শোনা গেল আহমেদ শরীফের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, ‘এই এফডিসি এবং চলচ্চিত্রর উন্নয়নে দিতির অবদান অস্বীকার করা যায় না। তার সুনামে ভর করে অনেক নির্মাতাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, অনেক প্রযোজক প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এ প্রজন্মের অনেক তারকাকেও দিতি নানাভাবে সাহায্য করেছেন। কিন্তু কেউ ই আজ এফডিসিতে এলেন না। এটা অবশ্যই বেদনার।’

চম্পা এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য লজ্জার। শুধু দিতির জন্যই বলছি না, গুণী মানুষদের সম্মান করাটা এখন আর চলচ্চিত্রে দেখা যায় না। আজকে এফডিসিতে জনসমুদ্র হবার কথা ছিলো। কিন্তু তা হয়নি। এটা পরিস্কার করে দিয়েছে আমাদের মানবিকতা কমছে, সামাজিকতা কমছে। বাড়ছে দায়িত্ববোধের দৈন্যতা।’

প্রসঙ্গত, রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন চিত্রনায়িকা দিতি। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান সুবর্ণা মুস্তাফা, রিয়াজ, ববিতা, চয়নিকা চৌধুরী, ওমর সানী, মৌসুমী, সুব্রত, মিশা সওদাগরসহ আরো অনেকেই।

আজ এফডিসিতে দিতিকে শেষ বিদায় জানাতে হাজির হয়েছিলেন এফসিডির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমানে বিটিভির মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ, অভিনেতা আলমগীর, ওমর সানি, অভিনেত্রী চম্পা, খালেদা আক্তার কল্পনা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, নির্মাতা এস এ হক অলিক, চিত্রনায়ক রুবেল, লাক্স তারকা বাঁধন ও নিশি, অভিনেতা মিজু আহমেদ, আহমেদ শরীফ, সংগীতশিল্পী মনির খান, অভিনেতা শিবা আলী খান প্রমুখ।


মন্তব্য করুন