ঐতিহাসিক গল্পের দূর্বল উপস্থাপনা!
ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২
ধরন: হিস্টোরিকাল ড্রামা
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: ডায়েল রহমান
প্রযোজনা: ওয়াইল্ড ড্রিম মাল্টিমিডিয়া লি.
অভিনয়: আমিন খান (মহসীন উদ্দিন আহমেদ/ দুদু মিয়া), নওশীন নাহার মৌ (ময়না), আহমেদ শরীফ (মোহন ঘোষ), আমির সিরাজী (মদন ঘোষ), মামুন মুন্না (শিকদার জমিদার) ছটকু আহমেদ, জামিলুর রহমান শাখা প্রমুখ।
শুভমুক্তি: ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯
নামকরণ: ২০১২ সালে যখন এছবির কাজ শুরু হয়, তখন এছবির নাম ছিল “দুদু মিয়া”। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এছবির কাজ শেষ হওয়ার পর নাম পাল্টে “ফরায়েজী দল” এবং সম্প্রতি সেন্সর লাভের পর “ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২” নামকরণ করা হয়। শেষের নামকরণটি আমার কাছে সবথেকে বেশি যৌক্তিক মনে হয়েছে। কারণ এছবিতে ফরায়েজী আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ অব্দি সম্পূর্ণ ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়নি, তুলে ধরা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ঘটনাবলী।
কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ: সিনেমার শুরুতে ভয়েসওভারের মাধ্যমে ফরায়েজী আন্দোলনের পটভূমি, এর বিশেষত্ব, এর নামকরণের সার্থকতা, এই আন্দোলনের পথিকৃৎ হাজী শরীয়তউল্লাহ এর গৃহীত কার্যক্রম সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হয়। এরপর এছবির গল্প শুরু হয় ১৮৪০ সাল থেকে, যখন হাজী শরীয়তউল্লাহ মৃত্যুশয্যায়… বার্ধক্যজনিত কারণে হাজী শরীয়তউল্লাহ মৃত্যুবরণ করলে তার একমাত্র পুত্র হাজী মোহাম্মদ মুহসীনউদ্দীন ওরফে দুদু মিয়া ফরায়েজী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৮৪০-৪২ এই তিন বছরে দুদু মিয়া ফরায়েজী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকাকালীন যেসকল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেইসব ঘটনাবলীই এছবির মূলবিষয়বস্তু।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৯৩ সালে পাশ হওয়া চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক স্বার্থ প্রণোদিত একটি জমিদারশ্রেণি গড়ে তোলে। প্রজাদের কাছ থেকে তারা জোর করে যতটা সম্ভব অর্থ আদায় করা ব্যতীত অন্য কোনো চিন্তাই তাদের মাথায় ছিল না। তারা বহুসংখ্যক লাঠিয়াল পুষত এবং তারা জমিদারদের সাহায্যের জন্য প্রজাদের উপর নির্যাতন চালাত।
হাজী শরীয়ত উল্লাহ যখন ফরায়েজী আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন, তখনকার সময়ে এ আন্দোলনের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। তিনি শুধুমাত্র মুসলমানদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন, ফলে এই আন্দোলন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তার সুযোগ্য পুত্র দুদু মিয়া এই আন্দোলনের পরিধি আরো বড় করেন। তিনি ফরায়েজী আন্দোলনকে ধর্ম সংস্কারের আন্দোলন থেকে সমাজ সংস্কারের আন্দোলনে রূপ দেন। তিনি এই আন্দোলনে দরিদ্র কৃষকদের পাশে দাড়িয়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের জীবনমানের উন্নতির জন্য জমিদারদের আরোপিত সকলপ্রকার কর বর্জন করেন। মুসলমানদের জন্য পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পুনরায় চালু করেন। গ্রামের দরিদ্র-অসহায় মানুষদের সুরক্ষার জন্য লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন। ফরায়েজী আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি ছিল এই বঙ্গদেশ তথা পূর্ববাংলার প্রথম রাজনৈতিক দল।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা বস্তুত জমিদারদের সামন্তাধিকার প্রদান করেছিল এবং কৃষকশ্রেণিকে প্রায় ভূমিদাসে পরিণত করেছিল। জমিদারেরা ছিল সাম্প্রদায়িক চেতনার। তারা বিভিন্ন পুজা-পার্বণের সময় গরিব কৃষকদের কাছ থেকে অধিক চাঁদা আদায় করতো, মুসলমানদের ধুতি পরিধান বাধ্যতামূলক করেছিল, গরু কোরবানি ও গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছিল। এছাড়া দাড়ি রাখার ওপরও কর আরোপ করেছিল বলে শোনা যায়।
ফরায়েজী আন্দোলনের পথিকৃৎ হাজী শরীয়তউল্লাহ ইন্তেকাল করলে মুসলিমদের আন্দোলন কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে গ্রামের নব্য জমিদারেরা কৃষকদের ওপর আবারো জুলুম অত্যাচার করা শুরু করে, তাদেরকে অল্প পাপে গুরু দন্ড দিতে থাকে। সেসময় দেশে থাকা ইংরেজ শাসকদের সাথে তাদের যথেষ্ট ভালো বন্ধুত্ব ছিল, তাই কলকাতার আদালত ছিল দরিদ্র কৃষকদের আওতার বাইরে। এমন একটি কঠিন পরিস্থিতিতে জমিদারদের যৌক্তিক পথে আনার জন্য শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়া দুদু মিয়ার আর কোন উপায় ছিল না। তাই তিনি ১৯৪১ সালে কানাইপুরের শিকদার জমিদার বাড়ী ও ১৯৪২ সালে ফরিদপুরের ঘোষ জমিদার বাড়ীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এরূপ এক সংঘর্ষে জমিদার মদন ঘোষ নিহত হন। পরবর্তীতে ১১৭ জন ফরায়েজী আন্দোলনকারী গ্রেফতার হন এবং তাদের মধ্যে ২২ জন দায়রা জজ কর্তৃক ৭ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হন। দুদু মিয়া সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব থাকার ফলে তারা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।
এই ছিল ১৯৪০-৪২ সালের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। “ফরায়েজী আন্দোলন” ছবিতে এই তিন বছরে যেসব বিষয় ঘটনাবহুল ছিল তার প্রায় পুরোটাই তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। এর জন্য পরিচালক ডায়েল রহমান চিত্রনাট্যকার হিসেবে একটি বড় ধন্যবাদ ডিজার্ভ করেন। ডায়েল রহমান নিজেই এই চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন, সেইসাথে আমাদের দেশের অন্যতম সমাদৃত ও জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার ছটকু আহমেদ এই ছবির চিত্রনাট্য গঠন করতে সাহায্য করেছেন। হাজী শরীয়তউল্লাহ এর ইন্তেকাল পরবর্তী অস্থির অবস্থা, দুদু মিয়ার নেতৃত্ব প্রদান, ধর্ম সংস্কারের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারে হাত দেওয়া, জমিদার এবং ইংরেজদের মধ্যকার একের পর এক ষড়যন্ত্র, তাদের ফতোয়ার বিরুদ্ধে দুদু মিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, লাঠিয়াল বাহিনী গঠন ও এর প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সবশেষে জমিদার বাড়ী আক্রমণ… এগুলোর সবকিছুই “ফরায়েজী আন্দোলন” এ দেখতে পাওয়া যায়।
গল্প ও চিত্রনাট্যে ফুল মার্ক পেলেও এছবির সংলাপে বেশ খানিকটা ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। সংলাপ লেখার গতানুগতিক ধারা ভঙ্গ করে যদি চমক জাগানিয়া কিছু সংলাপ সংযুক্ত করা যেতো, সেক্ষেত্রে এছবির সংলাপগুলি সিনেমাহল থেকে বেরিয়েও মনে রাখা যাবে.. এমন কিছু হতো।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০
পরিচালনা: যতদুর জানি এটি পরিচালক ডায়েল রহমানের দ্বিতীয় ছবি, এর আগে “হৈমন্তী” নামে একটি ছবি পরিচালনা করেছেন। ছোটপর্দায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নাটক নির্মাণের জন্য তিনি পরিচিত। এর আগে তিনি “যোধা আকবর”, “সিরাজউদ্দৌলা”, “শিরি ফরহাদ” সহ আরো বেশকিছু বড় আয়োজনের নাটক বানাতে সক্ষম হয়েছেন।
আগেই বলেছি, “ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২” এ মূল ইতিহাসে যা ছিল তার প্রায় পুরোটাই তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু সমস্যা হলো উপস্থাপন করার ধরণ কিছুটা অগোছালো রকমের। সিক্যুয়েন্সের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা এর অন্যতম প্রধান একটি কারণ। গল্প তার মেইন প্লট থেকে যখন ছোট ছোট সাবপ্লটে স্থানান্তরিত হয়, সেসব স্থানের সংযোগস্থলে যদি কিছু গ্যাপ থাকে তবে সিনেমা দেখতে বসলে মনে হয় যেনো গল্প তার নিঃশ্বাস বা দম ছেড়ে দিয়েছে। “ফরায়েজী আন্দোলন” এর ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে কিছু প্যাচওয়ার্কের দরকার ছিল। সেইসাথে পরিচালক কিংবা চিত্রনাট্যকার যাকেই দোষারোপ করিনা কেন, ছবিকে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য উপভোগ্য করতে গিয়ে এমন কিছু বেহুদা বিষয় সংযোগ করা হয়েছে, যা ছবিকে মূল রাস্তা থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া শেষের দিকে এসে গল্প উপস্থাপনার দিক থেকে টাইমলাইন ভঙ্গ করা হয়েছে বলে মনে হলো। ছবিতে দেখা যায় ফরায়েজী দল সব জমিদারবাড়ীতে একইসাথে বা একইসময়ে আক্রমণ করে, অথচ ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় আক্রমণগুলোর মাঝে সময়ের বিস্তর ফাঁরাক ছিল। এদিক থেকে সবমিলিয়ে আমি পরিচালক ডায়েল রহমানের ওপর ভীষণ হতাশ।
অভিনয়: ছবির মূল চরিত্র অর্থাৎ দুদু মিয়ার চরিত্রটি রূপদান করেছেন আমিন খান। দুদু মিয়ার চরিত্রে যে বিচক্ষণতা, বলিষ্ঠতা এবং প্রতিবাদী মনোভাব ছিল পর্দায় দেখানো আমিন খানের চরিত্রে সেটা পাওয়া গেছে। তার দীর্ঘদেহ এবং পুরুষালি কন্ঠস্বর চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করেছে। যে সমস্যাটি আমার চোখে পড়েছে সেটা হলো এছবিতে দেখানো তার লুক, যদিও আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারছি না দুদু মিয়ার এরকম বড় গোঁফ ছিল কিনা। কিন্তু একজন হাজী মানুষের মুখে কোনো দাঁড়ি ছিল না, এর বদলে মুখে বিশাল বড় গোঁফ আর গালে ক্লিন শেভ… এটা মেনে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। গণ্যমান্য ঐতিহাসিকেরাই হয়তো ভালো ধারণা দিতে পারবেন দুদু মিয়া দেখতে কেমন ছিল।
সিনেমায় আমির সিরাজী, আহমেদ শরীফ, মামুন মুন্নাসহ প্রায় চার-পাঁচজনকে জমিদারের চরিত্রে দেখা গেছে। তাদের কস্টিউম এবং নাদুসনুদুস স্বাস্থ্য দেখে প্রকৃতপক্ষে তাদের সত্যিকারের জমিদার মনে হয়েছে, কস্টিউম ডিজাইনার এবং মেকআপম্যানের প্রশংসা এক্ষেত্রে করতেই হয়! তবে তাদের সবার অভিনয় গড়পড়তা ধরনের ছিল।
নওশীনের রূপদান করা এছবির মূল নারীচরিত্র ছবির অন্যতম অযথা সংযোগও বটে! এচরিত্রটির গুরুত্ব একদমই নেই, চরিত্রটি না থাকলেও গল্প কিংবা চলচ্চিত্রের আহামরি কোনো ক্ষতি হতো না। বরং সিনেমায় এই চরিত্রটির প্রবেশের মাধ্যমে সিনেমার গতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সিনেমায় গ্রামবাসীর ভুমিকায় ছোটছোট চরিত্রে অভিনয় করা সবার অভিনয় মোটামুটি লেগেছে। কেউ কেউ বেশ ভালো করেছেন, আবার কেউ কেউ অভারএ্যাকটিং করেছেন।
ছবিতে নিঝুম রুবিনা একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এছাড়া আহমেদ শরীফ এবং নওশীন তাদের নিজ নিজ চরিত্রের ডাবিং করেননি বলে মনে হলো। ইংরেজদের চরিত্রে অভিনয় করা ছটকু আহমেদ সহ অন্যান্যদের অভিনয় খুবই দূর্বল লেগেছে। তারা যখন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তখন তারা কি বলে সেটা কেন জানি বোঝা যায় না। ইংরেজী ভাষা হলে বোঝা যেতো, ভুলভাল ইংরেজী বলেই হয়তো বোঝা যায় না(!) ডায়েল রহমান অবশ্য এখানে একটু বুদ্ধি খাটিয়েছেন দূর্বলতা ঢাকার… ইংরেজী ডায়লগগুলোর সময়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে ভয়েসওভার বসিয়ে দিয়েছেন যেটি পরিস্থিতি বর্ণনা করছিল। এতে করে কিছুটা হলেও দূর্বলতা ঢাকা গেছে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪০
কারিগরি: কারিগরি দিক থেকে ফরায়েজী আন্দোলন খুবই দূর্বল এবং নিম্নমানের। হ্যাঁ এটা সত্য, এছবির কাজ যখন শুরু হয়েছিল তখন আমাদের দেশে সবেমাত্র ডিজিটাল ছবি মুক্তির প্রচলন শুরু হয়েছিল। তবে সিনেমাসংশ্লিষ্টদের এটা পরিকল্পনায় রাখা উচিত ছিল, ইতিহাস নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করতে হলে সময়ের থেকে পাঁচ বছর এগিয়ে থাকবে এমন টেকনিক্যাল ওয়ার্ক দেখাতে হয়, যাতে করে পরবর্তীতে ছবিটি সময়োপযোগী নির্মাণ হিসেবে দর্শকমন জয় করতে পারে।
কারিগরিদিক গুলোর মধ্যে একমাত্র ইতিবাচক দিক ছিল এছবির লোকেশন এবং সিনেমায় দেখানোর সবার কস্টিউম, মেকআপ। কোরিওগ্রাফার হাবিবের এক্ষেত্রে বেশ কৃতিত্ব আছে, প্রায় পৌনে দুইশ বছর আগের সময়টা তুলে ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। এগুলো বাদ দিলে সিনেমার বাকি দিকগুলি খুবই বাজে। ক্যামেরাওয়ার্ক ভালো না, এডিটিং ভয়াবহ রকমের খারাপ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কিছু জায়গায় ভালো কিন্তু সাউন্ড ডিজাইন খুবই বাজে এবং সামঞ্জস্যহৗন। এককথায় এছবির কারিগরি দিকগুলির ব্যর্থতা ছবিটিকে মানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ২০
বিনোদন ও সামাজিক বার্তা: সিনেমায় মোট গান রয়েছে তিনটি। নিঝুম রুবিনা একটি গানে বাঈজীর ভুমিকায় পারফর্ম করেছেন। গানটি বেশ সুন্দর, সেইসাথে জমিদারদের আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলবার জন্য এছবিতে গানটি প্রয়োজনীয় ছিল। আসিফ ও রাজীবের গাওয়া “দিশেহারা পথহারা” গানটি কৃষকদের বিপদ থেকে বের হয়ে আসতে অনুপ্রেরণা যোগায়, গানটি সত্যিই অনেক ভালোলেগেছে। কণা ও রাজীবের গাওয়া “দুর আকাশের ঐ তারা” গানটি আমার সবথেকে ফালতু লেগেছে। সেইসাথে পুরো ছবিতে সিরিয়াস মুডে থাকা দুদু মিয়ার এরকম উদ্যম নৃত্য আমার একদমই হজম হয়নি; যদিও গানটিকে ফিকশনাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
এছবি থেকে সবথেকে বড় প্রাপ্তি হলো ইতিহাসকে ফিকশনালভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে বিকৃতি করা হয়নি। রিসেন্টলি উপমহাদেশের ছবিগুলোতে ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে একদম উল্টেপাল্টে মিথ্যাকে সত্য করে দেওয়া হয়, এছবির ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। এর পাশাপাশি এছবি আমাদের নিজস্ব ইতিহাস সম্পর্কে এদেশের মানুষকে ঘাটাঘাটি করার সুযোগ করে দিচ্ছে। হয়তো কারো কারো ক্ষেত্রে এছবি ফরায়েজী আন্দোলন সম্পর্কে জানার পরিধি বাড়াতেও সাহায্য করবে! এছাড়া দুদু মিয়ার জীবনাচরণ থেকে আমাদের সমাজের উপেক্ষিত মানুষেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার প্রেরণা পাবে। শোষণ-নিপীড়ন থেকে রেহাই পাওয়ার পথ খুজেঁ পেতে পারে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫০
ব্যক্তিগত: “ফরায়েজী আন্দোলন” নিয়ে আমার প্রত্যাশা ছিল একদম শুন্য। একেতো নির্মাতার আগের ছবি আমার ভাল্লাগেনি, এরওপর এবার তিনি এমন একটি সিনেমা নিয়ে আসছেন যেটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ৭-৮ বছর আগে। সেহিসেবে আমি শুধু প্রত্যাশা করেছিলাম যেনো ইতিহাস বিকৃতি না করা হয়। সেদিক থেকে আমার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো দুদু মিয়ার জীবনের একটি অংশকে তুলে ধরার জন্য ডকুমেন্টারি হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু ছবির নির্মাণ যেহেতু দূর্বল, ডিটেইলিং এর যথেষ্ট অভাব আছে… আদৌ দর্শকেরা এছবিকে মনে রাখবে কিনা সেব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।
রেটিং: ৪.৫/১০
ছবিটি কেন দেখবেন: আমিন খানের ভক্তদের জন্য এছবিটি ভালো উপভোগ্য হবে। বহুদিন পর তারা তাদের প্রিয় নায়ককে মূলচরিত্রে বড়পর্দায় দেখতে পারবেন। এছাড়া ঐতিহাসিক ঘটনাবলী নিয়ে তৈরি যাদের ভালোলাগে, তারা একবার “ফরায়েজী আন্দোলন” দেখে আসতে পারেন। সিনেমা দেখার পাশাপাশি বাংলার ইতিহাস নিয়েও কিছুটা চর্চা করার সুযোগ হবে!