কখনো আশা করিনি আমার ছবি কান উৎসবে প্রদর্শিত হবে
আগামী ১৩ এপ্রিল পর্দা উঠছে ৬৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের। এ আসরে প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম স্পোর্টসফিল্ম ‘জাগো‘-খ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা খিজির হায়াত খানের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আই ফর অ্যান আই’। কানের মত বিখ্যাত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে – এ নিয়ে দেশীয় মিডিয়া এখনো নীরব। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বনিকবার্তার কথা বলেছেন খিজির হায়াত খান। বিএমডিবির পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি এখানে তুলে ধরা হল।
‘আই ফর অ্যান আই’ প্রসঙ্গে…
পড়াশোনার জন্য ২০০০ সাল থেকে ১০-১২ বছর আমেরিকা ও কানাডায় ছিলাম। সে সময় ৯/১১ ঘটল। তার পর থেকেই নর্থ আমেরিকায় খেয়াল করলাম মুসলিমদের সঙ্গে সবাই অন্য রকম আচরণ করছে। ‘মুসলিম’ শুনলেই অন্যভাবে তাকাচ্ছে। ওই সময়েই ইরানের এক নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানীকে খুন করা হয়। ঘটনাটি আমাকে খুব নাড়া দেয়। দেশের বাইরে থাকা মানুষগুলোর এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাইকোলজিক্যাল প্রেশার নিয়ে কিছু একটা করা উচিত মনে করেই ‘আই ফর অ্যান আই’-এর ভাবনা শুরু।
ভাবনার বাস্তবায়ন ও উৎসবে প্রদর্শনের অনুভূতি?
স্বল্পদৈর্ঘ্য এ চলচ্চিত্রের লেখক ক্যারেন এবং চরিত্রায়নে ছিলেন মমোনা। এ দুজনই আবার যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন। পুরো কাজটি হয়েছে কানাডায়। শুধু পরিচালক বাংলাদেশী। কানাডার স্থানীয় টেলিভিশন ‘টেলাস’-এর ছোট একটা গ্র্যান্ট ও নিজস্ব অর্থায়নেই তৈরি হয় এটি। আমি তো ভাই ফ্লপ পরিচালক! কখনো আশা করিনি আমার একটি ছবি কান উৎসবে প্রদর্শিত হবে। তাই আমার মতো মানুষের এত বড় প্রাপ্তিতে শুধু বলতে পারি, ‘আই অ্যাম সারপ্রাইজড!’
বর্তমান কাজ প্রসঙ্গে?
আমার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’। এর পর নির্মাণ করি ‘জাগো’ চলচ্চিত্রটি। তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘প্রতিরুদ্ধ’ নিয়ে কাজ করছি। এটি একটি ফিচার ফিল্ম। মূলত আত্মতৃপ্তির জন্যই কাজটি হাতে নেয়া।
প্রতিরুদ্ধ কবে নাগাদ দর্শকদের কাছে পৌঁছাবে?
চলচ্চিত্র ব্যাপারটাই অনেক বড় একটি জিনিস। প্রতিরুদ্ধ সম্পূর্ণভাবেই নিজস্ব প্রযোজনা ও অর্থায়নে নির্মিতব্য একটি কাজ। তাই দেশের আর্থরাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আশা করছি, এ বছরের শেষ নাগাদ মুক্তি পাবে। আসলে নিজস্ব অর্থায়নে হওয়ায় আমার বিশেষ তাড়া নেই। গত পাঁচ বছর প্রায় ডুব দিয়েই ছিলাম। আমার অনুপ্রেরণায় আছেন জেমস ক্যামেরন। আমি একটা গল্প আমার মতো করেই বলতে চাই, এবার তা যত সময় লাগুক।
বাংলা সিনেমা কেন শৈল্পিক ও ব্যবসায়িক সমন্বয় ঘটিয়ে জুতসই অবস্থানে আসতে পারছে না?
অনেক জটিল একটি ব্যাপার। আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলতে পারি। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প এক ধরনের ‘দুষ্টচক্রে’ ঘুরপাক খাচ্ছে। ভালো ছবি হয় না তাই দর্শক হলে যায় না; দর্শক নেই বলে সিনেমার টাকা ওঠে না; টাকা নেই বলে মানসম্পন্ন ছবি নেই— এই চক্রেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সিনেমার মৃতপ্রায় অবস্থার জন্য আমি সবচেয়ে বেশি দোষারোপ করব বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা সব সরকারকে। কোনো কাজকেই তারা সম্পূর্ণ করছে না। বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসতে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করে না কেউই। এফডিসি যে লক্ষ্যে যাত্রা করেছিল, এখন কি তা সে অবস্থানে আছে? মুখে সবাই অনেক বড় বড় কথা বললেও কার্যত তার প্রতিফলন ঘটে না। ১৭ কোটি মানুষের জন্য হাতে গোনা কয়েকটি সিনে কমপ্লেক্স।
সম্ভাব্য সমাধান—
ঠিক মানুষটিকে ঠিক জায়গায় বসাতে হবে। তা সম্ভব না হলে আমার তৈরি নীতিমালা বাস্তবায়িত হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে একদিনের জন্য আমাকে ক্ষমতা দেয়া হোক; আগামী ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে সফলভাবে সচল করার শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছি (হাসি)। মূলত প্রতিটি জেলায় ন্যূনতম একটি করে সিনেমা কমপ্লেক্স সরকারি তত্ত্বাবধানে নির্মাণ সবচেয়ে জরুরি। পাশাপাশি এগুলোর সঠিক পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। চলচ্চিত্র নির্মাণের সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তার পর দেশী চলচ্চিত্রের সমান তালে বিদেশী চলচ্চিত্র আসুক— আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, দর্শক আমাদেরই থাকবে।