কবরীর উল্লেখযোগ্য দশ সিনেমা
১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন কবরী। পরের বছরই নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় বড়পর্দায়। পাঁচ দশকের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ১২০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য দশটির খবর জানুন—
এর মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র পায় নতুন তারকা কবরীকে। ১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি পরিচালনা করেছেন সুভাষ দত্ত। এতে নির্মাতা-নায়কের বিপরীতে কাজ করেন নায়িকা কবরী। বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্মাননা লাভ করেছিল এটি। ১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুট চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার পায় ছবিটি। আর দেশীয় দর্শকের কাছে কবরী রোমান্টিকতার নতুন নাম হয়ে ওঠেন। ছবিটির মাধ্যমেই তিনি পরিচিতি পান ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাতি।
এটি এমন একটি ছবি যার সব গান হিট তকমা পেয়েছিলো। ‘হেসে খেলে জীবনটা’, ‘নীল আকাশের নিচে আমি’, ‘গান হয়ে এলে’ ও ‘প্রেমের নাম বেদনা’ গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে এখনও। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। এর পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা। তৎকালীন বাঙালি পরিবারের গল্পই ছবিটির প্রধান উপজীব্য বিষয়। ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক ও কবরী।
এ ছবিতে কবরীর নায়ক ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেন জহিরুল হক। এর ‘হৈ হৈ হৈ রঙিলা’, ‘সে যে কেন এলো না’ গান দুটো এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বাংলা চলচ্চিত্রের পালাবদলে এ ছবিটি বিরাট ভূমিকা রাখে। এতে রাজ্জাক-কবরী জুটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ কালজয়ী সাহিত্যনির্ভর ছবি। যা অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭৩ সালে তৈরি হয়। কবরী এই ছবিতে রাজার ঝি চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন।
কবরী অভিনীত আলোচিত ও সফল ছবি হিসেবে ধরা হয় এটিকে। এ ছবিতেও তার নায়ক ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। গানগুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি পরিচালনা করেন রুহুল আমিন। এটি নিয়ে ২০১৩ সালের রিমেকের ঘোষণা এলেও তার কাজ আর হয়নি।
গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানাকে নিয়ে চলচ্চিত্র এটি। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কাজী আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা চরিত্রটি পর্দায় উঠে আসে। এর প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন নায়ক সোহেল রানা। চলচ্চিত্রে মাসুদ রানা অভিনয় করেন সোহেল রানা নিজেই। তার বিপরীতে ছিলেন অলিভিয়া ও কবরী। এর মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র নতুনত্বের স্বাদ পায় দর্শকরা। মুক্তিকাল ১৯৭৪ সাল।
১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কবরী-ফারুক অভিনীত এ ছবিটিকে বাংলা ভাষার অন্যতম রোমান্টিক পিস হিসেবে ধরা হয়। প্রমোদ কর ছদ্মনামে সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে দুই ভাইয়ের আলাদা হয়ে যাওয়া ও তাদের মিলনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। জনপ্রিয়তার কারণে ছবিটি ১৯৯৪ সালে রিমেক হয়েছিল। এতে অভিনয় করেন সালমান শাহ ও শাবনূর।
নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের একটি গ্রামের সহজ সরল মেয়ে নবিতুনকে নিয়ে এর গল্প। ছবিটিকে বলা যায় নারীর জীবনযুদ্ধের অন্যতম দলিল। ‘সারেং বউ’ উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে নারীর সংগ্রাম। যা সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলেন কবরী। এর মাধ্যমেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের স্বাদ পান কবরী। অভিনেত্রী হিসেবে এটাই একমাত্র জাতীয় পুরস্কার হয়ে আছে তার। ছবিটি ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায়। আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত এ ছবিতে কবরীর নায়ক ছিলেন ফারুক।
আরাধনা
রাজু সিরাজের ‘আরাধনা’ মুক্তি পায় ১৯৭৯। এর চরিত্রটিতে কবরী নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করেন। এতে মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে রুপার ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেন। এতে কবরীর নায়ক ছিলেন বুলবুল আহমেদ।
দেবদাস
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলামের কালজয়ী ছবি ‘দেবদাস’। এর পার্বতী হিসেবে হাজির হয়েছিলেন কবরী। বলাই বাহুল্য, এতে তুমুল প্রশংসিত হন তিনি ও নায়ক বুলবুল আহমেদ। বলা যায়, সাহিত্যনির্ভর এই ছবিটির পর অনেকবার দেবদাস নির্মিত হলেও কবরীর পারুকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে।
১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি ছবিটি। আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘স্মৃতিটুকু থাক’ দর্শক মনে জায়গা করে নেয়। সেলুলয়েড পর্দার বাইরেও ছবিটি অন্যভাবে আলোচিত। কারণ এই নাম ব্যবহার করেই কবরী প্রকাশিত করেন তার আত্মজীবনী। ২০১৭ সালে ‘স্মৃতিটুকু থাক’ নামে মোড়কবন্দি হয় বইটি।
/তালিকাটি বাংলা ট্রিবিউন ডটকমের জন্য তৈরি করেছেন ওয়ালিউল মুক্তা