Select Page

কলকাতার ‘মনপুরা’ রিমেক থেকে কানাকড়িও পাননি সেলিম

কলকাতার ‘মনপুরা’ রিমেক থেকে কানাকড়িও পাননি সেলিম

গত দুই দশকে ঢালিউডের অন্যতম সিনেমা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’। সিনেমাটি নতুন একটা ধারার সূচনা করার সম্ভাবনা থাকলেও তা আগায়নি। তবে ‘মনপুরা’ নিয়ে এখনো উচ্ছাসের কমতি নেই, যার জনপ্রিয়তা দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে সেই সময়। হয় রিমেক।

কলকাতায় ‘অচিন পাখি’ নামে নির্মিত হয় ‘মনপুরা’। কিন্তু অফিসিয়াল পুনর্নির্মাণ হলেও ওই ছবি থেকে কোনো অর্থকড়ি পাননি সেলিম।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ২৬ মার্চ ভারতে মুক্তি পায় ‘অচিন পাখি’, এতে গল্পকার হিসেবে সেলিমের নাম ছিল। পুনর্নির্মাণের জন্য সেলিমকে কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি, লভ্যাংশ থেকে তাকে পাঁচ শতাংশ দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কানাকড়িই তিনি পাননি।

অবশ্য অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘আয়নাবাজি’র তেলুগু রিমেকের প্রযোজক ঠিকই টাকা দিয়েছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী লক্ষ্মী প্রসন্ন পিকচার্সের ব্যানারে মুক্তি পেয়েছে গায়ত্রী। সিনেমার অন্যতম প্রযোজক ও কাহিনিকার গাউসুল আলম শাওন জানান, নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের বিনিময়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি সেরেছিলেন তারা।

আলোচিত বাংলাদেশি ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’-এর রিমেক (পুনর্নির্মাণ) করছে ভারতীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টার। তেলেগু ভাষায় ‘দয়া’ নামে সিরিজটি নির্মাণ করছেন তেলেগু নির্মাতা পবন সাদিনেনি। এ নিয়েই বাংলাদেশি কনটেন্টের ভারতীয় রিমেক নিয়ে নতুন করে কথা হচ্ছে।

তবে অবাক করা বিষয় হলো, ‘তাকদীর’-এর রিমেক নিয়ে নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকিকে কিছুই জানাইনি সিরিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হৈচৈ। যদিও যৌথভাবে গল্প লিখেছিলেন সৈয়দ আহমেদ শাওকি ও নেয়ামত উল্যাহ। এটি নির্মাণের আগেই গল্পের মেধাস্বত্ব ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসকে (এসভিএফ) দিয়েছেন তারা। শাওকি জানান, এসভিএফের তরফ থেকে তার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি, পুনর্নির্মাণের খবরটি সংবাদমাধ্যমে দেখেছেন।

তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। তবে আমাদের সঙ্গে কথা বললে আরও খুশি হতাম। তেলেগু সিরিজের ক্রেডিট লাইনে আমাদের নাম যাবে কি না, জানি না। তেলেগু রিমেকে বাংলাদেশি সিরিজের তথ্য থাকা উচিত। এতে বিশ্বের নজর বাংলাদেশে আসবে, বাংলাদেশি গল্প নিয়ে আগ্রহী হবে।’

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে অতীতের কিছু উদাহরণও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ঢাকার সিনেমা সবচেয়ে বেশি রিমেক হয়েছে কলকাতায়, বেশির ভাগই নব্বইয়ের দশকে। ঢাকাই সিনেমার সেই রমরমা সময়ে বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডে, টালিগঞ্জের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মতো শিল্পীরা ঢাকায় নিয়মিত কাজ করতেন। ঢাকায় যখন একের পর এক সিনেমা সফল হয়েছে, তখন কলকাতায় মৌলিক গল্পের আকাল। কলকাতার পরিচালক স্বপন সাহা ঢাকার সুপারহিট সিনেমাগুলো কলকাতায় রিমেক করা শুরু করেন।

খান আতাউর রহমানের সুজন সখী, রাজ্জাকের বাবা কেন চাকর ও সন্তান যখন শত্রু, কাজী হায়াতের দাঙ্গা, বেলাল আহমেদের নয়নের আলো, এম এ খালেকের স্বপ্নের ঠিকানা, আবদুস সামাদ খোকনের ঝিনুকমালা, সোহানুর রহমান সোহানের মা যখন বিচারক, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর চাকরানী, জজ ব্যারিস্টারসহ বেশ কয়েকটি সিনেমা রিমেক করেন স্বপন সাহা। এর বাইরে তোজাম্মেল হক বকুলের বেদের মেয়ে জোসনা, শিবলী সাদিকের মায়ের অধিকারসহ আরও কয়েকটি সিনেমা কলকাতায় পুনর্নির্মিত হয়েছে।

সেই রিমেক কীভাবে হতো, তার খানিকটা ধারণা দিলেন পরিচালক কাজী হায়াৎ। তিনি জানান, মূল ছবির গান ও ফুটেজ নিয়ে সেটার সঙ্গে আরও কিছু দৃশ্য ধারণ করে কলকাতায় রিমেক করা হতো।

ভারতীয় প্রযোজক অশোক ধানুকাও স্বীকার করলেন, নব্বইয়ের দশকে কলকাতার সিনেমার বাজার খুবই খারাপ ছিল। সিনেমার বাজেট ছিল মোটে ১০-১২ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ‘তখন ঢাকার সিনেমার সোনালি সময় ছিল। বাঘা বাঘা গল্পলেখক, চিত্রনাট্যকার ছিলেন। আমি নিজেও তখন ঢাকায় সিনেমা করেছি। ঢাকাকে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা কলকাতার ছিল না।’


Leave a reply