Select Page

কাঙ্ক্ষিত আকাশের স্বপ্নে শিশুতোষ ছবি

কাঙ্ক্ষিত আকাশের স্বপ্নে শিশুতোষ ছবি

পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি – আকাশ কত দূরে
পরিচালনা – সামিয়া জামান
শ্রেষ্ঠাংশে – নায়করাজ রাজ্জাক, শর্মিলী আহমেদ, ফারিয়া শাহরিন, মুস্তফা প্রকাশ, আরেফ সৈয়দ, শর্মিমালা, মিশা সওদাগর প্রমুখ।
উল্লেখযোগ্য গান – ভালোবাসি এটাই শেষকথা
মুক্তি – ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

জীবনযাপনের কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা বা মৌলিক অধিকার না পেয়ে কত শিশু শৈশবেই সামাজিক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে তার খোঁজ ক’জন রাখে! এই বাস্তবতার উপরে নির্মিত বক্তব্যধর্মী শিশুতোষ ছবি ‘আকাশ কত দূরে।’ নির্মাণ করেছেন সামিয়া জামান যিনি ‘রাণী কুঠির বাকি ইতিহাস’ নামে আরো একটি ভালো ছবি নির্মাণ করেছেন।

‘আকাশ কত দূরে’ নামটির মধ্যেই একটা তাৎপর্য আছে। ছোট বয়সেই একটা শিশু যে স্বপ্নগুলো দেখতে থাকে তার আয়োজনটা যেন আকাশের মতো বিশাল থাকে কিন্তু সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সব শিশুর পক্ষে সমান হয় না। ছিন্নমূল, পথে পথে মানুষ হওয়া সেসব শিশুর জীবনবাস্তবতাই কাঙ্ক্ষিত আকাশের স্বপ্ন হয়ে গুমরে কাঁদে। সেই স্বপ্নগুলো পূরণ না হলে কি কি সামাজিক প্রভাব পড়তে পারে তারই একটা চিত্র দেখানো হয়েছে এ ছবিতে।

ফারিয়াকে মিশা সওদাগর আশ্রয় দিয়েছিল কুড়িয়ে পেয়ে। না কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে তাকে আশ্রয় দেয়নি। মিশার কিশোর অপরাধ গ্যাং-এর সাথে ফারিয়া জড়িয়ে পড়ে। নানা জায়গা থেকে ছিন্নমূল শিশুকে কৌশলে নিজের দলে নিয়ে আসে মিশা তারপর চলে তাকে অপরাধ শেখানোর বিভিন্ন কৌশল। এভাবে একদিন নতুন একটা ছেলে আসে ঘটনাক্রমে। তাকে ফারিয়া নিজের ভাইয়ের মতো আদর করে। ছেলেটিও কিশোর অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে কিন্তু তার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটে যা দলের আর কোনো শিশুর সাথে ঘটেনি। কি সেটা? ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটাই।

কিশোর অপরাধের পেছনের বাস্তবতা কেমন হয়, কেন ও কীভাবে একটি ভালো ছেলেও এই অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে তার একটা নমুনা দেখানো হয়েছে ছবিতে। অনেকটা সরেজমিনে দেখানো বলা যায়। এদিক থেকে ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ এমনকি কিশোর অপরাধে জড়ানোর পরেও ঐ কোমলমতি শিশুদের মনোজগতেও যে মানবিকতা, নীতিবোধ বলে কিছু থাকতে পারে ছবিতে তাও দেখানো হয়েছে। এটি ছিল ছবির মেসেজ।

ফারিয়া ছবিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র করেছে। তার চরিত্রটি মমতাময়ী। মমতা দিয়ে কিশোর অপরাধে জড়ানো একটি ছেলের মধ্যে যে ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব ফারিয়ার চরিত্রটি দেখিয়েছে। তার অভিনয় চমৎকার তবে কণ্ঠটা অন্যের ডাবিং হওয়ায় শুনতে অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে। কিশোর অপরাধের গ্যাং-এ নতুন যোগ দেয়া সেই ছেলেটির অভিনয় কিছু কিছু জায়গা বাদে ভালো ছিল বরং তার বাইরে যারা ছিল তাদের অভিনয় ক্ষেত্রবিশেষে বেটার ছিল। ফারিয়ার প্রেমিক চরিত্রে মুস্তফা প্রকাশ ন্যাচারাল। মুস্তফার আলাদা একটা পরিচয় প্রকাশ হয় এবং ফারিয়ার সাথে তার পরিচয় কিছুটা ভিন্নভাবে হয়। কিশোর গ্যাং-এর লিডার চরিত্রে মিশা সওদাগর অন্য দশটি ছবির থেকে কিছুটা ভিন্নভাবে ছিল এ ছবিতে। নায়করাজ রাজ্জাক ও শর্মিলী আহমেদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিল। বাকি চরিত্রগুলো প্রয়োজনমাফিক।

‘এই ঘাসফুল রঙিন ফড়িং
সবই তোমারই জন্য,
এই সাদাবক পাহাড় নদী
সবই তোমারই জন্য
ভালোবাসি এটাই শেষ কথা
এরপর আর কিছু নেই’
ফারিয়া-মুস্তফা প্রকাশের রসায়নে রোমান্টিক এ গানটি ছবির সেরা গান। গানের কথা, সুর, শিল্পীদের গায়কী, লোকেশন ও ফারিয়া-মুস্তফার দারুণ অভিনয়ে গানটি পরিপূর্ণ রোমান্টিক।

শিশুতোষ ছবি আমাদের দেশে অন্য সব জনরার থেকে কম। ডিজিটাল সময়ের শিশুতোষ ছবির মধ্যে ‘আকাশ কত দূরে’ নিঃসন্দেহে সুন্দর ছবি। যে কাঙ্ক্ষিত আকাশের স্বপ্ন শিশুদের দেখানো হয়েছে এ ছবিতে সমাজের সব শিশুর জন্য তাই যেন বাস্তবে হয় এটাই প্রত্যাশা।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন