Select Page

কালজয়ী সুরস্রষ্টা আলী হোসেন

কালজয়ী সুরস্রষ্টা আলী হোসেন

পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে শাহনাজ বেগমের ( প্রয়াত শাহনাজ রহমতুল্লাহ) কণ্ঠ দেওয়া ‘হলুদ বাটো / মেন্দি বাটো / বাটো ফুলের মৌ’ শিরোনামে একটা গান প্রচলিত আছে যা আজও বিয়ে বাড়িতে গাওয়া হয়। অথচ অনেকেই জানেন না গানটির স্রষ্টা কে! আবার উপমহাদেশের বিখ্যাত গজল শিল্পী মেহেদী হাসানের কণ্ঠের ‘ঢাকো যত না/ নয়ন দুহাতে/ বাদল মেঘ ঘুমাতে দিবে না’ গানটির স্রষ্টা কে।

দুটি গানই গীতিকার ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের আর সুর করেছিলেন আলী হোসেন। শাহনাজ রহমতুল্লাহ, সৈয়দ আব্দুল হাদী, প্রবাল চৌধুরী ও উমা খানের প্লেব্যাকের গুরুও এই আলী হোসেন।

ছবির মানুষটি হলেন উপরে উল্লেখিত দুজনের একজন সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলী হোসেন। বাংলাদেশের সংগীত ভুবনে যার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

অসংখ্য কালজয়ী গানের সুরকার আলী হোসেনের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ নানার বাড়ি কুমিল্লায়। বাবা মোহাম্মদ ইয়াকুবের কাছেই গানের হাতেখড়ি আলী হোসেনের। নজরুল একাডেমিতে চাকরি করার সুবাদে একই প্রতিষ্ঠানের উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষক পিয়ারে খানের কাছেও তিনি গান শিখেছেন। এভাবেই ধীরে ধীরে গানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা।

বাবার চাকরির সুবাদে পাকিস্তানের করাচিতে তাকে পড়াশোনা করতে হয়েছিল।১৯৬৪ সালে আলী হোসেন দেশে ফিরে আসেন। ১৯৬৬ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মোস্তাফিজের ‘ডাকবাবু’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আলী হোসেনের সংগীত পরিচালনা শুরু। একই ছবিতে তিনি শাহনাজ রহমতুল্লাহকে ‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো’ ও সৈয়দ আব্দুল হাদীকে ‘চাতুরী জানে না  মোর বঁধুয়া’ গানটি দিয়ে প্লেব্যাকে নিয়ে আসেন। সিনেমা মুক্তির পর দুটো গানই জনপ্রিয় পায় তবে ‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো’ এতোটাই জনপ্রিয়তা পায় যে তা হয়ে যায় বাঙালীর বিয়ে বাড়ির এক অলেখিত অংশ।

‘ডাকবাবু’র সফলতার পর পশ্চিম পাকিস্তানের ছোট সাহেব, দাগ, আনাড়ি, কুলি ইত্যাদি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনার কাজ করেন আলী হোসেন। সেই সময় উর্দু থেকে বাংলায় যেসব চলচ্চিত্র হয়েছে, সেসব চলচ্চিত্রের বাংলা গান বেশিরভাগ তিনিই করতেন।

স্বাধীনতার আগে ও পরে একে একে আমরা আলী হোসেনের কাছ থেকে পাই— ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেও না’, ‘লেখাপড়া জানতাম যদি’, ‘আরে ও প্রাণের রাজা তুমি যে আমার’, ‘ঢাকো যতনা নয়ন দুহাতে’, ‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে এ বাতাসকে সাক্ষী রেখে’, ‘ও দুটি নয়নে স্বপনে চয়নে নিজেরে যে ভুলে যায় তুলনা খুঁজে না পায়’, ‘কে তুমি এলে গো আমার এ জীবনে’, ‘হায়রে কি সৃষ্টি’, ‘ আমি বাঘ শিকারে যাইমু’, ‘আমার স্বপ্নে দেখা সেই তোমাকে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান।

খসরু নোমান পরিচালিত ‘রাজাসাহেব’ ছবিতে মেহেদী হাসানের কণ্ঠের ‘ঢাকো যতনা নয়ন দু হাতে’ এতটা জনপ্রিয় হয় যে এ বিখ্যাত গজল শিল্পীল সব স্টেজ প্রোগ্রামে গাওয়ার অনুরোধ আসতো। পর্দায় আলমগীরের লিপে গানটি দেখার জন্য সিনেমা হলে উপচে পড়া দর্শকদের ভিড় হয়েছিল।

১৯৮৯ সালে কামাল আহমেদের ‘ব্যথার দান’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন আলী হোসেন।

সবসময় প্রচারের বাহিরে থাকায় এই কিংবদন্তি সুরকার রয়ে গেছেন পর্দার আড়ালে। পাশের দেশের গান যখন এদেশে বাজার সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তখন খান আতাউর রহমান, আলী হোসেন, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, আলাউদ্দিন আলীর মতো মানুষগুলোই তাদের গান দিয়ে তা প্রতিহত করেছিলেন। স্ত্রী সালেহা হোসেন ও একমাত্র সন্তান আসিফ হোসেনকে নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন আলী হোসেন।

আলী হোসেনের সুরারোপিত উল্লেখযোগ্য গানগুলোর লিংক –

হলুদ বাটো মেন্দি – https://youtu.be/-fJNr08Gw04

চাতুরী জানে না মোর বঁধুয়া – https://youtu.be/-zKKmlnGno8

ঢাকো যতনা নয়ন দুহাতে – https://youtu.be/lNHxRG5TQZw

অশ্রু দেয়া লেখা এ গান – https://youtu.be/RSsFwo2wo6A

আরে ও প্রাণের রাজা – https://youtu.be/9KgtmMLRtAY

ও দুটি নয়নে চয়নে স্বপনে – https://youtu.be/8e6np-L-TKs

হায়রে কি সৃষ্টি দেখে এ দৃষ্টি – https://youtu.be/sYXkR32YJLs

আমি বাঘ শিকারে যাইমু – https://youtu.be/7GIRID6zjns

আমার স্বপ্নে দেখা সেই তোমাকে – https://youtu.be/IwSyMjnDtFI

নতুন নামে ডাকো আমায় – https://youtu.be/rWseSbe3kZY

বলো না একবার এ রাত তোমার আমার – https://youtu.be/2niP7qOKIhk


মন্তব্য করুন