স্বস্তি নিয়ে সিনেমা হল ছাড়তে দেয় না ‘কি দারুণ দেখতে’
শনিবারে দেখে ফেললাম বাপ্পি – মাহির নতুন সিনেমা কি দারুণ দেখতে। ২০১৪ সালে এটাই সিনেমা হলে গিয়ে দেখা প্রথম সিনেমা। বাপ্পি মাহির সিনেমা আমি এর আগে দেখিনি । তাই তাদের অভিনয় কেমন ছিল আগে বা কেমন উন্নতি হয়েছে আমি বলতে পারবো না। কিন্তু সিনেমা দেখতে বসে প্রথম হাফ খারাপ লাগেনি। সেকেন্ড হাফ গতানুগতিক হলেও দর্শকদের হাততালি আর উল্লাস দেখে বুঝলাম তাদের কাছে অন্তত খারাপ লাগেনি।
আলোচনা সমালোচনার আগে কাহিনী পাঠকদের বলে নিই, ছোট আপন (বাপ্পি) নদী-ভাংগনে ঘর-বাড়ী হারিয়ে দাদার সাথে ঢাকা আসা মাত্রই দাদাকে হারায়। ঘটনা ক্রমে তার আশ্রয় হয় চিটার সোহেল খান এর বাসায়।
ছেলেপুলেহীন সোহেল খান আর তার স্ত্রী আপন কে পুত্র স্নেহে পালন করে। আপন তাদের কে মা-বাবা বলে ডাকে। সোহেল খান চিট করে আপনকে দেশের সেরা কলেজ ‘সাহাদাত ডিগ্রী কলেজ’ এ ভর্তি করিয়ে দেয়। হঠাত একদিন আপনের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তাররা ক্যান্সার বলে ঘোষনা দেন এবং বলেন চিকিৎসার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা লাগবে।
টাকা যোগাড়ের জন্য কোন উপায় না দেখে আপন টিভিতে দেখা, বড় লোকের মেয়েদের সাথে প্রেম করলে মেয়ের বাপ টাকা অফার করে মেরে জীবন থেকে সরে আসার জন্য, এই নীতিতে বিশ্বাস করে মেয়ে পটাতে নামে।
এদিকে মাহি বড়লোক ভাইয়ের (ওমর সানি) একমাত্র বোন, যে কিনা ক্রেজি লাভারদের হাত থেকে বাছার জন্য মেকাপ করে নিজের সুন্দর চেহারা ঢেকে রাখে এবং সেও সাহাদাত ডিগ্রী কলেজে পড়ে। আপন এর শিকার প্রতিটি মেয়ের সাথে বাপির অভিনয় সে দেখে এবং টাকার ভাগ চায়। আপন নিজেকে বাচানোর জন্য রাজি হয়।
এদিকে একদিন মেকাপ ছাড়া মাহিকে দেখে আপন তার প্রেমে পরে, আস্তে আস্তে সে বুঝতে পারে তার চিটিং পার্টনার আর এই মেয়ে একই মেয়ে। তখন আপন মাহিকে প্রেম অফার করে। মাহি তাকে সাফ জানিয়ে দেয় কোন চিটারের সাথে সে প্রেম করবে না।
এদিকে কলেজের ক্ষমতা নিয়ে লড়ায়ে নামে আগুন যার পেছনে আছে তার ভাই (মিশা সদাগর) আর সাগর। একদিন আগুনকে বাচাতে গিয়ে মাহি নজরে পরে যায় আগুনের। পরের টুকু প্রেম নিয়ে সংঘাত।
সংক্ষেপে এই হয় কি দারুন দেখতের ২.৩০ ঘন্টার সারাংশ।
সিনেমার প্রথম অংশ কমেডি এব খারাপ লাগেনি। পরিচালক সম্পুর্ন কমেডি করলেই আরো ভাল করতেন। অনেক দিন বাংলা পিওর কমেডি সিনেমা পাইনি।
ছরির কন্টিনিউটি ভাল হয়েছে, অন্তত আমার চোখে কোন কিছু খারাপ লাগে নাই। লাইটিং নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমার কাছে পুরোটাই বেশি উজ্জ্বল মনে হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তেমন ভাল লাগে নাই। ছবিতে আরেকটা জিনিস চোখে পড়েছে – সেটা হল প্রায় সব চরিত্রের এন্ট্রি নাটকীয়ভাবে ক্যামেরা টেনে দেখানো।
অভিনয়ঃ বাপ্পি বাদে প্রায় সবার অভিনয় ভাল বলা চলে। বাপি মনে হয় এখন হাসি আর কান্না ছাড়া কোন অভিনয় জানে না।
গানঃ বিপাশার আইটেম গান ছাড়া আর সব গান বেশ ভালই। আইটেম গান এবং বিপাশার পারফরমেন্স দুটোই অপ্রয়োজনিয় বলে মনে হয়েছে।
সংলাপঃ ছবির সংলাপ গতানুগতিক। আরো ভাল হতে পারত।
ছবির ফাঁকফোকর নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, কোটিপতির বোন হওয়া সত্তেও মাহির চিট করা টাকার ভাগের কি দরকার। সেও কেন চিটে অংশ নিল।
কলেজের ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ে আগুনের পেছনে ছিল তার রাজনীতিবিদ ভাই, সাগরের পেছনে কে ছিল। কোন ব্যাকাপ না নিয়ে সে কেমনে পারে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দিতে।
সিনেমার সবচেয়ে বাজে দিক সম্ভবত এই মেসেজ দেওয়া যে, তুমি যদি সুন্দরী হও তাহলে পৃথিবীটা তোমার। কালো মেকাপ করা মাহি আর মেকাপ ছাড়া মাহির মধ্যে তফাত শুধু কালো রঙটুকুই। সাদা মাহির জন্য সিনেমাতে ছেলেদের লাইন আর কালো মাহির জন্য সোহেল খানের মুখে (কি কাইল্লার কাইল্লা) ডায়ালগ সিনেমা হলেই আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। পরিচালক কিন্তু ইচ্ছা করলেই এই সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারতেন। আপন যদি তার পার্টনার কালো মাহির প্রেমে পড়ত আর পরে জানতে পারত আসল ঘটনা তাহলেই আর সামস্যা টুকু থাকতো না । প্রেমের মহত্ত্বই এতে প্রকাশ পেত।
এই কারনেই সিনেমা শেষে ঠিক স্বস্থি নিয়ে হল থেকে বের হওয়া যায় না।
আমার মনে হয় ছবির কাহিনীটা নিয়ে একটু স্ট্যাডি করলে অনেক ভালো একটা ছবি হতো কি দারুণ দেখতে। অনেক নতুনত্ব যেমন ছবির কাহিণীতে আছে তেমনি আবার বাংলা ছবির চিরায়ত বেমানান দৃশ্যগুলোও আছে। একটা টুইস্ট জমে ওঠার আগেই সেটার রহস্য উন্মোচিত না হলে ছবিটা আরো জমজমাট হয়ে উঠত।