কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে একাধিক সিনেমার ঘোষণা
সরকারি চাকরিতে বৈষম্য দূর করতে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। শত শত নিহতের ঘটনায় সে আন্দোলন শেষ পর্যন্ত একদফা দাবিতে গড়ায়— শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সেই আন্দোলনকে ঘিরে সিনেমা বানানো পরিকল্পনা করেছেন একাধিক নির্মাতা।
খিজির হায়াত খান, খন্দকার সুমন, মাবরুর রশীদ বান্নাহ ও শিহাব শাহীন
জনপ্রিয় নির্মাতা শিহাব শাহীন জানিয়েছেন, ছাত্র আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে শুরু করেছেন গল্প লেখার কাজ। মাস দুয়েকের মধ্যেই শুরু করতে চান শুটিং। শিহাব শাহীন বলেন, “অতীতে আমি অনেক কিছুই বলতে পারিনি বাক-স্বাধীনতার অভাবে। ‘গোলাম মামুন’ বা ‘সিন্ডিকেট’-এ আমার মতো করে সংলাপ বা চিত্রনাট্য করতে পারিনি। ওটিটি প্ল্যাটফরম থেকেও সাহস দেয়নি। এবার ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নির্মিতব্য ছবিটিতে সব তুলে ধরব। এখানে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমার বিশ্বাস, সেন্সর ছাড়পত্র নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আমার ছাত্র ভাইয়েরাই তত দিনে সব কিছু পরিবর্তন করে ফেলবেন। নির্মাতা শিহাব শাহীনকে তাঁর মতো করে কাজ করার পথ তৈরি করে দেবেন।”
গল্প প্রসঙ্গে শিহাব শাহীন বলেন, “মাত্র লেখা শুরু করেছি। ২০২৪ সালের প্রাধান্য তো থাকবেই, পাশাপাশি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনও যৌক্তিকভাবে আসতে পারে। এখনই বলা যাচ্ছে না চিত্রনাট্য কোন দিকে এগোবে। তবে বলতে পারেন, ছাত্র আন্দোলনের ওপর পরিপূর্ণ একটা ছবি নির্মাণ করব, যেখানে সত্যিটা উঠে আসবে, বাস্তবতা তুলে ধরব।আপাতত ‘বাক-স্বাধীনতা’ টাইটেল ধরে কাজ করছি। নাম পরিবর্তন হবে পরে।”
দেশপ্রেমের বিষয় এর আগে খিজির হায়াত খানের ছবিতে দেখা গেছে, এবারের আন্দোলনের শুরু থেকে ছাত্রদের পাশে ছিলেন তিনি। চব্বিশের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে খিজির হায়াত নির্মাণ করবেন ‘কারার ঐ লৌহ কবাট’। গল্প লেখার কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন। তবে চিত্রনাট্যে কিছুটা পরিবর্তন আসবে বলে জানান তিনি। খিজির বলেন, ‘গল্পের প্লটটি আগেই ভেবে রেখেছিলাম। কিছু পরিমার্জন-পরিবর্ধন করব। আমি সব সময় মাল্টি কাস্টিংয়ের ছবি নির্মাণ করি। প্রথম ছবি ‘জাগো’তে অভিনয় করেছিলেন একঝাঁক তারকা। ‘ওরা ৭ জন’-এও সেই ধারাবাহিকতা ছিল। নতুন ছবিতেও সেই ধারাবাহিকতা রাখতে চাই। প্রধান চরিত্রগুলোতে থাকবেন নতুন মুখ, যাঁরা ছাত্র। এবারও নিজেই প্রযোজনা করব। আগামী বছরের শুরুতে পর্দায় ছবিটি দেখতে পাবে দর্শক।’
সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও আবরারকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান মাবরুর রশীদ বান্নাহ। সরকার পতনের দিন (৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে বান্নাহ লেখেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে আমার প্রথম ঘোষণা, ফিল্ম বানাব। আমার ভাই সাঈদ, মুগ্ধ, আবরার ফাহাদকে নিয়ে।’
‘সাঁতাও’ নির্মাণ করে দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন খন্দকার সুমন। তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে সেই ছবি হলেও কোথাও নাম বলতে পারেননি। সুমন বলেন, ‘একমাত্র সেন্সর ছাড়পত্র না পাওয়ার ভয়ে এটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তিস্তা ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারত-বাংলাদেশ আলোচনা চলছে, তিস্তার পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলের ক্ষতির দিকটা তুলে ধরে ঝামেলা তৈরি করে ফেলি যদি?’ তবে সুমন এখন আর ভয় করছেন না। তিনি বাক-স্বাধীনতার বিজয় হয়েছে বলেই মনে করছেন। তাই ছাত্রদের নিয়ে তাঁর নির্মিতব্য ছবির নামও রেখেছেন ‘বিজয়’। গল্পে উঠে আসবে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের আদ্যোপান্ত। সুমন বলেন, ‘বাঙালি যতবার অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, ততবারই ছাত্ররা জেগে উঠেছেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে আজকের এই আন্দোলন—সবটাই আমার ছবিতে উঠে আসবে।’
এছাড়া ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আরো কয়েকজন নির্মাতা ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে আছেন এ কিউ খোকন, রিয়াজুল রিজু ও দেবাশীষ বিশ্বাস। এ কিউ খোকন বলেন, ‘আমি শুধু একটা চলচ্চিত্র নয়, একটা দলিল তৈরি করে যেতে চাই আগামী প্রজন্মের জন্য। বলে যেতে চাই, ছাত্ররা চাইলে কি না পারে! শিগগিরই শিল্পী-কলাকুশলী নির্বাচন শুরু করব।’ অন্যদিকে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া নির্মাতা রিয়াজুল রিজু। তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে সব কিছু দেখেছি। এটা নিয়ে ছবি নির্মাণ করাটা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।’ খবর কালের কণ্ঠ।