Select Page

খালিদ হাসান মিলুর পর প্লেব্যাকে অপরিহার্য হয়ে ওঠেনি কেউ

খালিদ হাসান মিলুর পর প্লেব্যাকে অপরিহার্য হয়ে ওঠেনি কেউ

একটা সময় দেশের সংগীতশিল্পীদের শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করা হতো কে কত বেশি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন বা ব্যস্ততা কেমন। তাই কণ্ঠশিল্পীরা নিজেকে প্রমাণের সবচেয়ে বড় জায়গা হিসেবে সিনেমায় সুযোগ পেতে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতেন এবং শিল্পীদের মধ্যে মূল প্রতিযোগিতা হতো এখানে।

৮০ ও ৯০ দশকে চলচ্চিত্রের গানে সবচেয়ে ব্যস্ত ও দাপুটে পুরুষ কণ্ঠশিল্পী ছিলেন এন্ড্রু কিশোর এবং নারীদের মধ্যে রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিন। তখনও দারুণ দারুণ গান উপহার দিয়ে যাচ্ছিলেন খুরশিদ আলম, সৈয়দ আব্দুল হাদী, সুবীর নন্দী; কিন্তু গানের সংখ্যায় এন্ড্রু ছিলেন শীর্ষে। এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে প্লেব্যাক ছাড়া অডিও ক্যাসেট, রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চের কোন অনুষ্ঠানে তাকে শ্রোতারা পেতো না। টেলিভিশনের পর্দায় তো একটা প্রজন্ম এন্ড্রু কিশোরকে না দেখতে দেখতে শৈশব, কৈশোর পার করে দিয়েছে, শুধু পর্দার আড়ালে তার গান শুনে শুনে ভক্ত হয়েছে। বিটিভিতে এন্ড্রু কিশোরের একটানা দীর্ঘ ১৫ বছরের অনুপস্থিতি ছেদ পড়ে হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’-এর মাধ্যমে।

মিলু ও হানিফ সংকেত

৯০ দশকের শুরুর দিকে এন্ড্রু কিশোরের পর যে পুরুষ কণ্ঠশিল্পী ধীরে ধীরে নিজেকে অপরিহার্য করে তোলেন; তিনি খালিদ হাসান মিলু। প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন ১৯৮২ সালে ‘কালো গোলাপ’ চলচ্চিত্রে; কিন্তু সেই সময় নিজেকে প্লেব্যাকে ব্যস্ত করতে পারেননি। মিলু প্রযোজক, পরিচালক ও সংগীত পরিচালকদের নজর কাড়েন এহতেশামের সাড়া জাগানো সুপার ডুপার হিট ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রে। নবাগত নাঈমের কণ্ঠের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে গিয়েছিলেন খালিদ হাসান মিলু, পরবর্তীতে নাঈমের প্রায় সব চলচ্চিত্রে মিলুর কণ্ঠ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এভাবে ধীরে ধীরে খালিদ হাসান মিলু প্লেব্যাকে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন।

দুই ছেলে প্রতীক ও প্রীতমের সঙ্গে খালিদ হাসান মিলু দম্পতি

প্লেব্যাকে এন্ড্রু কিশোরের পাশাপাশি খালিদ হাসান মিলুকে নিয়ে সংগীত পরিচালকেরা দারুণ সব গান সৃষ্টি করতে লাগলেন। একক ও দ্বৈত দুইভাবেই তার গান জনপ্রিয় হতে লাগলো। ১৯৯৪ সালে দিলিপ সোমের ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ চলচ্চিত্রের জন্য মিলু শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। খুব দ্রুতই এন্ড্রু কিশোর যুগের পরবর্তী প্লেব্যাকে খালিদ হাসান মিলুর যুগ শুরু হলো; কিন্তু ২০০৫ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তার অকাল মৃত্যু সবকিছু শেষ করে দেয়, যা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে থাকলো। বলতে গেলে মিলুর পর প্লেব্যাকে গত ১৫ বছরে কেউ আর অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারেনি। এমনকি প্লেব্যাক যে নেপথ্যে কণ্ঠের গান ছাড়াও আলাদা একটা শিল্প সেটা গত ১৫ বছরে ইন্ডাস্ট্রিতে আসা কোন সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পীরা বুঝতে পারেনি। এখন যা শুনি সবকিছু কিম্ভুতকিমাকার যান্ত্রিক গোলযোগ মনে হয় যেখানে ঈশ্বর প্রদত্ত কন্ঠের কোন প্রয়োজন নেই।

খালিদ হাসান মিলুর উল্লেখযোগ্য প্লেব্যাক: কন্যার বয়স যে ষোল (চাঁদনী), চাঁদনী রাতে বাঁশির সুরে (চাঁদনী রাতে), চোখে চোখে চোখ রেখে (চোখে চোখে), ওগো মা তুমি যে শুধু মা (দিল), ঘর নাই বাড়ি নাই, বড় মিষ্টি লাগে তুমি কাছে এলে (লাভ), সেই মেয়েটি আমাকে, চারিদিকে শুধু তুমি (মৌসুমী), ও ও রুবি (হিংসা), প্রেম কখনও মধুর (মহৎ), পৃথিবীর জন্ম যেদিন থেকে (জ্যোতি), পৃথিবীকে ভালোবেসে, অন্তর আগুনে অন্তর (হৃদয় আমার), তুমি আমার হৃদয়ে যদি থাকো, ভালোবাসা মানে না কোন (হৃদয় থেকে হৃদয়), শুধু একবার বলো ভালোবাসি (দেনমোহর), চিঠি লিখলাম, তুমি যেখানেই থাকো (স্নেহ), অন্তরে অন্তরে পীরিতি (অন্তরে অন্তরে), জনম জনম ওয়াদা আমার (শাসন), শোন শোন ও প্রিয়া প্রিয়া গো (রাক্ষস), এসো এসো কাছে এসো (লজ্জা), আমি নই ফেরেশতা নই দেবতা (আব্দুল্লাহ), এক দুই তিন চার আমরা সবাই (ঘাত প্রতিঘাত), কত ভালোবাসি কী যে ভালোবাসি (কে অপরাধী), এতো সুখী বলো কে আছে (শান্তি চাই), সাথী তুমি আমার জীবনে (চাওয়া থেকে পাওয়া), আমার মতো এতো সুখী (বাবা কেন চাকর), আমার ভালোবাসা সত্যি যদি হয় (জনম জনম), অনেক সাধনার পরে আমি (ভালোবাসি তোমাকে), প্রাণের চেয়ে প্রিয় ( প্রাণের চেয়ে প্রিয়) এবং মায়ের একধার দুধের দাম (বর্তমান)।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

কবি ও কাব্য

আমি ফজলে এলাহী পাপ্পু, কবি ও কাব্য নামে লিখি। স্বর্ণযুগের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র এবং বাংলা গানকে এ যুগের সকলের কাছে পৌছে দেয়ার আগ্রহে লিখি।

মন্তব্য করুন