গ্রাম নিয়ে নাটকে গ্রাম নেই
পুরনো নাটকগুলো দেখলে বোঝা যায়,তখন গ্রামের নাটক মানেই ছিল গ্রামের মানুষদের দুঃখবোধের গল্প,তাদের জীবনের গভীরতার গল্প। যে সব নাটক পেতো শৈল্পিক মর্যাদা, উদাহরণস্বরূপ; কূল নাই কিনার নাই, কূপ, চোর, নাল পিরান, এক জোনাকি, অচিন বৃক্ষ, সংশপ্তক, মাটির পিঞ্জিরার মাঝে, বীজমন্ত্রসহ আরো নাটক।
গ্রামের নাটকে মূলত কমেডি আনেন সালাউদ্দিন লাভলু, তিনি নিজেও প্রথম দিকে পুরনোরীতি অনুসরণ করতেন গোর, একজন আয়নাল লস্কর, গহর গাছী তেমন কয়েকটি নাটক। রঙের মানুষ দিয়ে গ্রাম্য কমেডি জনপ্রিয় হয়, কাছাকাছি সময়ে হুমায়ূন আহমেদ নিজেও শুরু করেন উড়ে যায় বকপক্ষী, চার দুকোনে চার, বৃক্ষমানব, সবাই গেছে বনে এইগুলো। কমেডি হলেও সবগুলোরই বিশেষ দর্শন ছিল।
আঞ্চলিক ভাষার নাটক হলেও একটা ভালো উদ্দেশ্য থাকতো যেমন; নরেশ ভূঁইয়ার গাঁও গেরামের কিসসা, সঙ্গে অরন্য আনোয়ারের নুরুল হুদা। এমনকি ছবিয়ালের সদস্য, যাদের সঙ্গে গ্রামের তেমন সংযোগ ছিল না তারাও মুড়ির টিন, মাইকের মত কাজ বানিয়েছেন। ফারুকী নিজেও করিমন বেওয়া,নিখোঁজ সংবাদ বানিয়েছে। সুমন আনোয়ার বানিয়েছেন পাঞ্জাবীওয়ালা, ফুলমতি, রাতারগুলের মতো নাটক।
আবার ফিরে আসি গ্রাম্য কমেডিতে, লাভলুর ভবের হাট, বউ, সাকিন সারিসুরি, হাড় কিপ্টে, সার্ভিস হোল্ডার, পাত্রী চাই দিয়ে আলাদা একটা ইমেজ দাঁড় করিয়ে দেন। দুঃখ আছে, অভাব আছে ঠিকই তবে তাদের হাসি-খুশির জীবন আছে। কিন্তু এই ধারা জনপ্রিয় হওয়ার বিপত্তি বেড়ে গেছে ইউটিউবের যুগে এসে। এখন গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষা কিংবা এমনি গ্রাম্য নাটকের মান একেবারেই মানের তলানিতে পৌঁছে গেছে।
চুটকি টাইপ গল্প, পারিবারিক গল্পের নামে মানহীন চিত্রনাট্য, কমেডির নামে ভাঁড়ামি, যেন গ্রামের মানুষের আর কোন কাজ নেই তারা ঝগড়া করে, একজন নিয়ে টানাটানি, উচ্চকিত অভিনয় করে, যেন আর কোন কাজ নেই। আর নামের ব্যাপারে না বলাই ভালো, যাচ্ছেতাই নাম দিয়ে নাটক বানানো হয়। এইক্ষেত্রে মোশাররফ করিমের যমজ সিরিজেরও অনেকখানি দায় আছে।
এখন গ্রাম্য ভিত্তিক কোনো ভালো কোন কাজই হয় না,অথচ আমাদের শিকড় গ্রাম। গ্রামের কাজের নামে যেইসব হয় এইগুলো গ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করে না। সাম্প্রতিক ভাবনা নিয়ে কাজ করলেও গ্রামের সমস্যা অনেক বেড়েছে যতই গ্রাম আধুনিক হয়। আর কমেডি নামে ভাঁড়ামিও নেয়া যাচ্ছে না। তাই অনুরোধ থাকবে যারা ভালো কাজ বানিয়ে সমাদৃত বা বানাতে চান গ্রামের দিকে নজর দিন।