বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বক্তব্য জমা দিয়েও সেন্সরে আটক ‘কাঠগোলাপ’!
ফিকশনে কত কিছুই তো ঘটে। যার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে দেখা বোকামি। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে মিল থাকলেও সেন্সর বোর্ডে দুই মাস আটকে আছে ‘কাঠগোলাপ’। অদ্ভুত সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে রয়েছে সাজ্জাদ খানের দ্বিতীয় ছবিটি।
এরই মধ্যে দেশের বাইরের উৎসবে অংশ নিয়ে প্রসংশিত হয়েছে ‘কাঠগোলাপ’। ছবির গল্প প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, “এটা প্রেমের ছবি, কিন্তু অন্যরকম প্রেমের ছবি। এতে আমরা অনেকগুলো মানুষের জীবনের গল্প বলেছি। কাঠগোলাপ যেমন প্রচুর সুবাস দেয়, আমাদের এ মানুষগুলোও সবার অনেক কাজে লাগে। কিন্তু কোথায় জানি একধরনের স্থবিরতা কাজ করে। আর এ থেকেই তৈরি হয় সংকট। আমরা সম্পর্কের এমন অনেক ধরনের স্থর দেখেছি, নানাবিধি সমস্যা দেখেছি। কিন্তু সম্পর্কের এমন সংকটের কথা ‘কাঠগোলাপে’ বলেছি যা আগে কেউ বলেনি।”
সারাবাংলা ডটনেটে আহমেদ জামান শিমুলের করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ছবির গল্প সেন্সর বোর্ডের মোটামুটি সকল সদস্যের কাছে প্রশংসিত হলেও একটু বেঁকে বসেছেন ভাইস-চেয়ারম্যান। তিনি এর ব্যাখা চেয়েছেন। তবে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে নয়, মৌখিকভাবে। এমনটাই দাবি করেছেন ছবির প্রযোজক-পরিচালক।
‘কাঠগোলাপ’ প্রযোজক ফরমান আলী বলেন, আমরা ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিই ২১ সেপ্টেম্বর। ২৪ সেপ্টেম্বর বোর্ড ছবিটি দেখে। বোর্ড সদস্য খোরশেদ আলম খসরু আমাকে ফোন করে জানান, আপনাদের ছবি তো অনেক সুন্দর হয়েছে, ছবি আনকাট পাশ। দুই একদিনের মধ্যে সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন। এরপর যখন সার্টিফিকেট পেতে দেরি হচ্ছিল তখন ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা দুইবার সরাসরি দেখা করি। ছবির বিষয়বস্তু ব্যাখা করি। উনি মনযোগ সহকারে আমাদের কথা শোনেন। উনি বলেন, আপনারা মানুষের জীবনের যে সংকট বা রোগের বিষয়টা ছবিতে এনেছেন তা আদৌ পৃথিবীতে আছে কিনা তা কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভিমত জমা দেন। তার কথা অনুযায়ী আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আলাউদ্দিন খানের বক্তব্য পেশ করি। তাও প্রায় মাস খানেক হয়ে গেছে। আমাদের কিছুই জানাচ্ছেন না।
প্রযোজক জানালেন, শুধু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বক্তব্য নয়, ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে বিশ্বে ছবি গবেষণা হয়েছে, প্রামাণ্যচিত্র বা ছবি নির্মিত হয়েছে তার সবই সেন্সর বোর্ডে সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এরপরও সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘসূত্রতা দুঃখজনক।
সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহ ‘কাঠগোলাপ’-এর সেন্সর সার্টিফিকেট পেতে দেরি হাওয়ার ঘটনাকে ‘প্রক্রিয়াগত’ কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ছবির ক্ষেত্রে আমাদের কিছু অবজারভেশন থাকে। যার কারণে প্রক্রিয়াগত কারণে সার্টিফিকেট দিতে দেরি হয়। এর মানে এ না যে ছবিটি সেন্সর পাবে না।’
বোর্ডের সদস্য খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ছবিটি আটকে আছে ব্যাপারটা এভাবে দেখা ঠিক না। এতে মানব সম্পর্কের এমন একটা দিক দেখানো হয়েছে যার সঙ্গে আমরা পরিচিত না। তার সম্পর্কে প্রযোজক-পরিচালক বিভিন্ন রেফারেন্স ডকুমেন্টস আমাদের দিয়েছেন। এরপর বোর্ডের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাদের ছবিটি দেখিয়ে তাদের অভিমত নিতে বলেছেন।
তিনি জানান, এমনিতে ছবিটিকে বিনা কর্তনে সেন্সর সার্টিফিকেট দিতে বোর্ডের সকল সদস্যরা একমত আছেন। তবে ছবির বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মত নিতে চাচ্ছে, কারণ─কোনভাবে যাতে এ ছবির মাধ্যমে সমাজে কোনো ভুল মেসেজ না যায়। বোর্ড যাতে ভবিষ্যতে কোনো কারণে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।
পরিচালক সাজ্জাদ খান বলেন, আমাদের সেন্সর আইন অনুযায়ী তো ‘জাওয়ান’ কিংবা ‘অ্যাভাটার’ সেন্সর পাওয়ার কথা না। কিন্তু সেগুলো পেয়ে যায়। অথচ আমাদের ছবিতে দেশ বা সমাজবিরোধী কোন বক্তব্য দৃশ্য নেই। এভাবে হলে তো নতুন গল্প বলতে কোনো নির্মাতাই সাহস পাবে না। তাছাড়া এতদিন ধরে সেন্সরে আটকে থাকলে ছবির মেরিটও তো নষ্ট হয়ে যায়।
সাজ্জাদ খানের প্রথম ছবি ‘সাহস’ সেন্সর বোর্ড প্রদর্শন অনুপযুক্ত ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে ছবিটি নতুন করে জমা দিয়ে সেন্সর পেয়েছিল। এরপর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না দিয়ে সরাসরি ওটিটি রিলিজ করেন নির্মাতা।
কাঠগোলাপের কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন অপূর্ণ রুবেল। এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কেয়া, সুজন হাবিব, মেঘলা মুক্তা, দিলরুবা দোয়েল, জামশেদ শামীম।