Select Page

প্রবীর মিত্রের ধর্ম প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন

প্রবীর মিত্রের ধর্ম প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন

গুগল সার্চ ইঞ্জিনে ‘প্রবীর মিত্র’ লিখতে গেলে স্বয়ংস্ক্রিয়ভাবে কিছু কি ওয়ার্ড সাজেশনে আসে। যা মূলত শীর্ষ ব্যবহারকারীদের অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে দেখানো হয়। এর মধ্যে আছে ‘প্রবীর মিত্রের ধর্ম’ বা ‘প্রবীর মিত্র কি মুসলমান’। ধর্ম যেহেতু সামাজিক বিষয়- একজন তারকার ব্যক্তিগত জীবন ও বিশ্বাস নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ থাকতে পারে, কিন্তু কখনো কখনো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা পরিবারের সদস্যদের জন্য বিব্রত হতে পারে। যেমনটা ঘটেছে বিখ্যাত এ অভিনেতার একটি ভিডিও ঘিরে।

একজন দর্শক হিসেবে ভিডিওটি এ কারণে আপত্তিকর না যে যতক্ষণ বিশ্বাসের বিষয়টি সাধারণ প্রশ্ন আকারে থাকে। কিন্তু মৃত্যু বিষয়ে জবানবন্দি হয়ে উঠা বা সন্তানদের ধর্ম গ্রহণ করবেন কিনা- এসব প্রশ্ন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর কাণ্ডজ্ঞানকে তুলে ধরে।

আজ সোমবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এ অভিনেতার ধর্ম প্রশ্নটি। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, দেশের বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। প্রমাণ হিসেবে এই অভিনেতার পুরোনো একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করা হচ্ছে।

মিডিয়া মারফত জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে প্রবীর মিত্রের পরিবার। ‘অভিনেতার মুসলমান হওয়ার খবরটি সত্য নয়’ বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে তার ছেলে মিথুন মিত্র। একাধিক গণমাধ্যমটি মন্তব্য প্রকাশ করলেও তা যাচাই করে দেখতে পারেনি।

মিথুন জানান, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন খবর। এমনটা হলে আমরাই সবাইকে জানাতাম। কেউ গুজবে কান দিবেন না।

আরও বলেন, ‘আমার মা মুসলিম ছিলেন। তবে বাবা তার সনাতন ধর্মই পালন করছেন। যারা এমন খবর ছড়াচ্ছেন তারা ঠিক কাজ করছেন না। বাবার মতো একজন অভিনেতার নামে এমন গুঞ্জন গ্রহণযোগ্য নয়। আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি, না জেনে কোনো তথ্য ছড়াবেন না।’

ভিডিওতে প্রবীর মিত্র জানান, বিয়ের প্রয়োজনে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তবে ধর্ম সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি বাধাধরা নয়। বরং সব ধর্মের উৎস একই মনে করেন। মানুষ সত্যই এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।

এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন প্রবীর মিত্র। সারাদিন বাসায় সময় কাটে। নানারকম অসুখ বাসা বেঁধেছে শরীরে।

তিনি জানান, বাবা অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। নতুন করে যোগ হয়েছে স্মৃতি ভুলে যাওয়ার সমস্যা। প্রায়ই তিনি কিছু মনে করতে পারেন না। বাবার শ্রবণশক্তিও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। উচ্চস্বরে কথা বললে উত্তর দিতে পারেন। হৃদরোগের জটিলতাও রয়েছে।

এর আগেও একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়েছিল। যা সবই পরে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এবারও অভিনেতাকে ঘিরে নতুন গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পরিবারের মানুষও বেশ বিরক্ত হয়েছেন।

ভিডিওতে তার শেষকৃত্য প্রসঙ্গ ও সন্তানদের ধর্ম প্রসঙ্গ তুলে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বোঝা উচিত যে, প্রবীর মিত্রের ধর্মের বিষয়টা শুধু ব্যক্তিপর্যায় নয়, তার সন্তানদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সামনে নিয়ে আসে। এছাড়া ‘স্বপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ’ জাতীয় শিরোনামও আপত্তিকর।

প্রবীর মিত্রের ধর্ম প্রশ্নটি আগে থেকেও আলোচিত। কিন্তু এখন তিনি যে বয়স বা শারীরিক অবস্থায় রয়েছেন, তাতে যেকোনো প্রশ্ন বা বিতর্কের ক্ষেত্রে যথাযথ আদব রাখা উচিত।

প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজান্তা ২০০০ সালে মারা যান। অভিনেতার সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা হলেন মিঠুন মিত্র, ফেরদৌস পারভীন, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম। এর মধ্যে সামিউল মারা গেছেন।

প্রসঙ্গত, থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে পা রাখেন প্রবীর মিত্র। ‘লালকুটি’ থিয়েটারে কাজ করেছেন অনেক দিন। এরপর পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। প্রবীর মিত্রের প্রথম সিনেমার নাম ‘জলছবি’। এ ছবিতে প্রয়াত অভিনেতার ফারুকেরও অভিষেক হয়েছিল।

১৯৪০ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুর জেলার নতুন বাজারে জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তবে তার শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)।

ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় তিনি ছিলেন নায়ক। এ ছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাতেও তিনি ছিলেন মূখ্য চরিত্রে। এরপর ধীরে ধীরে মনোযোগী হন চরিত্রাভিনয়ে।

তার অভিনীত অনান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সীমার’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘অঙ্গার’, ‘পুত্রবধূ’, ‘নয়নের আলো’, ‘চাষির মেয়ে’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘আবদার’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান’, ইত্যাদি।

কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। আর ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।


মন্তব্য করুন