Select Page

চলচ্চিত্রের আফজাল হোসেন

চলচ্চিত্রের আফজাল হোসেন

আফজাল হোসেন বাংলাদেশের বিনোদনজগতের সুপরিচিত একটি নাম। অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হলেও এ প্রজন্মের অনেকের অজানা থাকতে পারে যে তিনি বিজ্ঞাপন নির্মাতাও এবং এক্ষেত্রে আদর্শ ছিলেন। নব্বই দশক ও তার পরবর্তী সময়ে যারা মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠিত বা শুরু করেছিলেন তাদের অনেকেরই হাতেখড়ি হয়েছিল আফজাল হোসেনের সাথে।

নাটকে তিনি সুবর্ণা মুস্তাফার সাথে লিজেন্ডারি জুটি উপহার দিয়েছিলেন। আশি, নব্বই দশকের নাটকে তাঁরা ছিলেন বহুল জনপ্রিয় জুটি। ওটিটি আসার পর তাঁর অভিনীত ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান, পেট কাটা ষ, কারাগার, বোধ’ কাজগুলোও দর্শক সমাদৃত হয়েছে।

আফজাল হোসেন চলচ্চিত্রে খুব কম কাজ করেছেন। মাত্র চারটি চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন – নতুন বউ, দুই জীবন, পালাবি কোথায় ও ঢাকা অ্যাটাক।

‘নতুন বউ’ ১৯৮৩ সালের ছবি। পরিচালক আব্দুল লতিফ বাচ্চু। মূলত আশির দশকে আফজাল হোসেন-সুবর্ণা মুস্তাফা জুটির নাটকের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এ ছবিটিও নির্মিত হয় জুটি করে। সুবর্ণার পাশাপাশি ববিতাও ছিল। ববিতার সাথে আফজালের সম্পর্কের পর পরিস্থিতির কারণে সুবর্ণার সাথে বিয়ে হয়। এরপর সন্তান আসলে দাম্পত্য অশান্তির সৃষ্টি হয়। সন্তানকে অস্বীকার করে আফজাল পরে ভুল ভাঙে এবং নিজেই খুঁজে বের করে সুবর্ণাকে। তাদের জুটির অভিনয় ও রসায়ন নাটকের মতোই ভালো ছিল ছবিটিতে।

‘দুই জীবন’ ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন। রোমান্টিক ফ্যামিলি ড্রামা ঘরানার ছবি। বুলবুল আহমেদ-কবরীর প্রেম থাকলেও বিচ্ছেদের পর দুজনের বিয়ে হয় অন্যের সাথে। বুলবুল আহমেদের ছেলে আফজাল এবং কবরীর মেয়ে দিতি। আফজাল-দিতির প্রেম ও বিয়ের দিকে সম্পর্ক গড়ানোর সময় পারিবারিক বাধা আসে।বুলবুল আহমেদ ও কবরীর দ্বিতীয়বার দেখা হয় এবং তারা সন্তানদের সুখের জন্য নিজেদের পুরনো অতীত ভুলে যাবার সিদ্ধান্তে আসে। কবরীর স্বামী আদিলের পক্ষ থেকে বাধা আসে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা টিকে না। ছবির গানগুলো সব কালজয়ী। মিউজিক্যাল ছবিও বলা যায়। আফজাল-দিতির লিপে ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’ এবং ‘তুমি আজ কথা দিয়েছ’ গান দুটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

‘পালাবি কোথায়’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা কমেডি ছবি। ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় শহীদুল ইসলাম খোকনের পরিচালনায়। এ ছবিতে আফজাল হোসেন অতিথি চরিত্রে ছিলেন। হুমায়ুন ফরীদি অফিসকে নিজের মনমতো ব্যবহার করতেন এবং তাঁর নারী কর্মচারীদের হেনস্থা করতেন। এ বিষয়ে ছবির শেষের দিকে কোম্পানির ওপর লেভেলের বস আফজাল হোসেন আসেন ভিজিট করতে। তাঁকে অফিসের অনেক বিষয়ে তথ্য দেন শাবানা, সুবর্ণা মুস্তাফা ও চম্পা। সুবর্ণা বস আফজাল হোসেনকে পছন্দ করতেন মনে মনে ছবির শেষে তা প্রকাশ পায়। আফজাল হোসেনকে খুব স্মার্ট লেগেছে এ ছবিতে।

‘ঢাকা অ্যাটাক’ তাঁর অভিনীত সর্বশেষ ছবি। ২০১৭ সালে দীপঙ্কর দীপনের পরিচালনায় মুক্তি পায়। এ ছবিতে তিনি পুলিশের বড়কর্তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আরিফিন শুভর সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপের বিভিন্ন অগ্রগতিকে তিনি সরেজমিনে জেনে সিদ্ধান্ত দেন।

২০২২ সালে তিনি একুশে পদক পান।

আফজাল হোসেন আরো চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারতেন এটা সম্ভবত তাঁর দর্শকেরও চাওয়া। তাঁর মতো একজন অভিনেতা এত কম ছবিতে কাজ করাটা আক্ষেপের। অবশ্যই চলচ্চিত্রে অনেককিছু পাওয়ার ছিল তাঁর কাছে।


মন্তব্য করুন