Select Page

বাংলা চলচ্চিত্রের সালতামামি ২০১৬

বাংলা চলচ্চিত্রের সালতামামি ২০১৬

আবদুল্লাহ আল মানী, বিএমডিবি: ২০১৬ !!! বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য উল্লেখযোগ্য একটি বছর। বিগত ২ অথবা ৩ বছরের থেকে ২০১৬ কে বাংলা চলচ্চিত্র অংগনের মানুষেরা একটু আলাদাভাবে মনে রাখবে এটা বছরের শেষে জোর দিয়ে বলা যায়। বাংলা চলচ্চিত্রের এক নব বিপ্লবের সূচনা হয়েছে এই ২০১৬ তে। প্রশ্ন যদি করা হয় কেন? নায়ক সর্বস্ব চলচ্চিত্র থেকে ঢালিউড একটু হলেও পরিচালক সর্বস্ব হতে পেরেছে। পারিচালকের নাম দেখেও এখন মানুষ হলমূখী হচ্ছে ২০১৬ তে এটি সব থেকে বড় পাওয়া। উদাহরন সরূপ – অমিতাভ রেজা, রেদোয়ান রনি, আশিকুর রহমান, অনন্য মামুনের মত প্রতিভাবন পরিচালকের নাম চলচ্চিত্রের মূল অভিনেতাদের সাথে সাথে সমানভাবে উচ্চারিত হয়েছে।

চলচ্চিত্রের সংখ্যা হিসাবে ২০১৬ তে চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমে গিয়েছে ২০১৪ সালের থেকে প্রায় ২০ ভাগ। ২০১৪ এর দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় সে বছর মুক্তি পায় ৭৬ টি চলচ্চিত্র এবং এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ তে মুক্তি পায় ৬৩ টি চলচ্চিত্র আর চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৬ তে মুক্তি পেয়েছে মোট ৫৭ টি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমলেও মান সম্মত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে অশ্লীলতা, অফ ট্র্যাকের নির্মাতারা চলচ্চিত্রে এগিয়ে আসছেন, ভালো চলচ্চিত্র ভালো ব্যবসা করছে, নতুন প্রতিভাবান শিল্পীদের আগমন –এসবকিছু ২০১৬ বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য খুবই অর্থবহ একটি বছর।

সকালের সূর্য দেখেই বলে দেওয়া যায় দিনটি কেমন যাবে –প্রবাদটি অনেকাংশে ২০১৬ তে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঢালিউডের জন্য বছরের শুরুটি ছিল বেশ সাদামাটা।

বছর শুরু হয় সাইমন সাদিক ও মৌমিতা অভিনীত ‘মাটির পরী’। এরপর মুক্তিপায় ইমন, সম্রাট ও আলিশা প্রধান অভিনীত  প্রতিষ্ঠান মাল্টিমডিয়া প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড এর সিনেমা ‘ভুল যদি হয়’। নামের মত করেই বলা হয় আসলেই ভুল করে সিনেমা দুইটি বছরের শুরুতে মুক্তি দেওয়া হয় এবং বক্স অফিস বা হল রিপোর্ট যা বলা হোক না কেন সিনেমা দুটির সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারে নি। মুখ থুবড়ে পরে সিনেমা দুটি। এরপর ১৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় ২০১৫ এর শেষ দিকে বহুল আলোচিত সিনেমা “অঙ্গার”, যৌথ প্রযোজনার এ সিনেমার মাধ্যমে রূপালি জগতে পদার্পন করে ফাল্গুনি ইয়াসমিন জলি। বেশ আলোচনায় থাকা অঙ্গার ও চলচ্চিত্র প্রেমীদের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারেনি। কান্নাড়া সিনেমা “ময়না” এর রিমেক হিসাবে আখ্যায়িত পাওয়া আঙ্গার বছরের ৩য় ফ্লপ হিসাবে খ্যাতি লাভ করে। ২২ জানুয়ারি মুক্তি পায় অফ ট্রাকের সিনেমা “আন্ডার কনস্ট্রাকশন”, ফেমিনিজমের উপর বেস করে করা আর্ট ফিল্ম ঘরনার এই সিনেমা সিনেমা বোদ্ধাদের মাঝে বেশ আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়। সিনেমাটি প্রযোজনা করে খনা টকিজ, পরিচালক ছিলেন সৈয়দা রুবায়েত হোসেন এবং অভিনয় এ ছিলেন শাহানা গোস্বামী, রাহুল বোস, মিতা চৌধুরী, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ। সিনামার সংলাপ ও শাহানা গোস্বামীর অভিনয় আলাদাভাবে চলচ্চিত্র সমালোচকদের নজর কাড়তে সমর্থ হয়। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে, ২৯ জানুয়ারি মুক্তি পায় সনি মুভিজ ইন্টারন্যাশনালের সিনেমা সাইমন ও পরী মনি অভিনীত ‘পুড়ে যায় মন’। ফলাফল আশানুরূপ হয়নি।

২০১৬ তে ঢালিউডের পর্দায় হাওয়া লাগে মূলত ফেব্রুয়ারী মাসে এসে।  ৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় সাকিব খান অভিনীত রাজা ৪২০। গোধূলী ফিল্মস এর প্রযোজনায় এ সিনেমাটি পরিচলনা করেন উত্তম আকাশ। সিনেমাটি ব্যবসা সফল হলেও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় তেলুগু “দামু” সিনেমা নকলের কারনে। ১২ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইস ডে কে সামনে রেখে মুক্তিপায় ত্রিভুজ প্রেমের গল্পের সিনেমা “সুইট হার্ট”। অভিনয়ে ছিলেন রিয়াজ, বিদ্যা সিনহা মীমবাপ্পী। সুইট হার্ট বলা যায় সবার হার্ট খুব সুইটভাবে জয় করতে সমর্থ হয়। সুন্দর গল্প ও মেলোডিয়াস গানের জন্য খুব সহজে দর্শক নন্দিত হয় সিনেমাটি। সিনেমার পরিচালনায় ছিনেল ওয়াজেদ আলী সুমন। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০ সেঞ্চুরি অ্যাডের ব্যনারে ও বেলাল আহমেদের পরিচালনায় মুক্তি পায় ৯০ এর পরবর্তী সময়ে সাড়া জাগানো জুটি ওমন সানী ও মৌসুমী অভিনীত ‘ভালোবাসবই তো’। সিনেমাটি বেশীর ভাগ মানুষের চোখের বাইরেই থেকে যায়। ১৯ ফেব্রুয়ারি তে মুক্তি পায় যৌথ প্রযোজনার সিনেমা “হিরো ৪২০”, বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া ও কলকাতার ওম মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। বাংলাদেশের থেকে সিনেমাটি পরিচালনা করেন সৈকত নাসির। ফেব্রুয়ারীতে সব থেকে আলোচিত ও বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা হিসাবে ছিল প্রয়াত জনপ্রিয় লেখক, হিমু-মিসির আলীর স্রষ্টা হূমায়ূন আহমেদের অন্যতম সেরা উপন্যাস “কৃষ্ণপক্ষ” কে রুপালী পর্দায় দর্শন। মেহের আফরোজ শাওন পরিচালিত, রিয়াজ ও মাহি অভিনীত কৃষ্ণপক্ষ দারুনভাবে হুমায়ূন ভক্তদের নাড়া দেয়। গল্প ও সিনেমার এন্ডিং এ ভিন্নতার জন্য একইসাথে চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের নিকট সাদবাদ ও সমালোচনার মুখে পরেন নির্মাতা।

৪ মার্চ মুক্তি পায় কাজী হায়ৎ পরিচালিত রোজ ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল প্রযোজিত “ছিন্নমূল” সিনেমা। অভিনয় করেছেন মারুফ, অরিন, কাজী হায়াৎ। হিট ফ্লপের হিসাব না করাই ভালো হবে। মার্চে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য সিনেমা গুলো হল সায়মন তারিকের গুন্ডামি, মইন বিশ্বাসের “বুলেট বাবু”, শাহীন সুমনের “মিয়া বিবি রাজী”, রফিক শিকদারের “ভোলা যায় না তারে”, আফজাল হোসেনের “ছোট কাকু” এবং আব্দুল আউয়ালের “উতলা মন”। লো-বাজেটের এই সিনেমাগুলো দর্শক আকর্ষণের ব্যর্থ হয়। বলা যায় মার্চ মাসে ছিন্নমূল ছাড়া আর কোন সিনেমা তেমনভাবে আলোচনাতে আসতে পারেনি।

এপ্রিল মাসের প্রথম দিন মুক্তি পায় মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত কোর্ট থ্রিলার ঘরনার সিনেমা “মন জানে না মনের ঠিকানা”। মৌসুমী, পরীমনি ও শিরিন শিলা অভিনীত সিনেমাটি মোটামুটি দর্শক জনপ্রিয়তা পেলেও সমালোচকেরা সিনেমাটিকে হিন্দি টিভি সিরিয়াল আদালতের একটি ইপিসোডের নকল বলে অভিহিত করেন। ৮ এপ্রিল বছরের প্রথম সুপারহিটের দেখা পায় ২০১৬ সালের ঢালিউড। মুক্তি পায় সাফী উদ্দিন সাফী পরিচালিত “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী -২”। নাম এবং অভিনেতাতে মিল থাকলেও এটি “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী”র সিক্যুয়েল ছিল না। সাকিব খান ও জয়া আহসান অভিনীত সিনেমটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হলেও ক্রিকেটকে বিতর্কিত করে উপস্থাপন করার জন্য অধিক সমালোচিত হয়। কিন্তু নায়ক যেখানে সাকিব খান আর যদি থাকে এন্টারটেইন্টমেন্ট সেখান সিনেমা সুপারহিট হবে এটা অনেকটা অলিখিত নিয়ম ঢালিউডে।  ৮ এপ্রিল “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী -২” সাথে মুক্তি পায় বাপ্পী, মাহি ও ডিপজল অভিনীত, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত “অনেক দামে কেনা”। বিখ্যাত চলচ্চিত্র “সিটি লাইটস” এর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি ছিল আলোচিত এবং ব্যবসা সফল। ১৫ এপ্রিল যৌথ প্রযোজনার গৌতম ঘোষের পরিচালনায় মুক্তি পায় “শঙ্খচিল”। মুভিতে খুব সুন্দর করে দেখানো সীমান্তে ভালবাসা আবেগের কোন মুল্য নেই সেখানে দায়িত্বের কাছে হার মেনে যায় ভালোবাসা। কারণ ভালোবাসা থেকে একটি কাঁটাতার অনেক বড়। অল্প সংখ্যক হলে মুক্তি পেলেও শঙ্খচিল ২০১৬ সালের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসাবে স্থান নিয়ে নেয় এর নির্মান, থিম, সিনেম্যাটোগ্রাফী দ্বারা। এপ্রিলে সেরা ধামাকা হিসাবে আশিকুর রহমানের “মুসাফির”। ২২ এপ্রিল মুক্তি পাওয়া এসাসিনেশন ঘরনার সিনেমার ট্রেইলার রিলিজের পর থেকে অধীর অগ্রহে ছিল দর্শক। ভিন্ন গল্প , অ্যাকশন ও শ্রুতিমধুর মিউজিক সব মিলিয়ে বেশ ভালো কিছুই পেয়েছিল দর্শকরা শুভ – মারজান জুটি থেকে। ২৯ এপ্রিল মুক্তি পায় দুটি সিনেমা – “বাজে ছেলে দ্য লোফার” এবং “আইসক্রিম” । বাপ্পী ও আরশি অভিনীত “বাজে ছেলে দ্য লোফার” থ্রিলার ঘরনার সিনেমা হলেও নির্মান ও কাহিনী নকল দোষে দুষ্ট। অন্যদিকে রেদোয়ান রনি পরিচালিত “আইসক্রিম” সিনেমাটি তেমনভাবে ব্যবসা সফল না হলেও সমালোচকদের মন জয়ে সক্ষম হয়। সিনেমাটিতে অভিষেক হয় তিনটি নতুন মুখের। রাজ, তুষি ও উদয়ের ত্রিভুজ প্রেমের গল্পের মাধ্যেমে ভালোবাসার একটি দারুণ বার্তা দিয়ে গেছে আইসক্রিম সবার কাছে।

মে মাসের শুরুটা হয় অনন্য মামুনের “অস্তিত্ব”র হাত ধরে। তিশা ও আরিফিন শুভ অভিনীত সিনেমাতে মানবতা ও মনুষ্যত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যদিও সিনেমাটি দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার স্বীকার হয়। তবে সিনেমাতে আরিফিন শুভ ও তিশার অভিনয় ব্যপকভাবে আলোচিত হয়। ‘অজান্তে ভালোবাসা’, চুয়াডাঙা চলচ্চিত্র, ১৩ মে। পরিচালক এজে রানা। অভিনয় করেছেন সাইমন ও আলিশা। ‘রুদ্র’, পার্পল রেইন ফিল্মস, ১৩ মে। পরিচালক সায়েম জাফর ইমামি। অভিনয়ে এবিএম সুমন ও পিয়া বিপাশা। রুদ্র নিয়ে অনেক আশার বানী শোনা গেলেও তা দর্শকদের মনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ২৬ মে মুক্তি পায় এনআর ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল প্রযোজিত ‘দিওয়ানা মন’। সিনেমার পরিচালক নূরুল ইসলাম প্রীতম। অভিনয় করেছেন রাফি সালমান, ওমর সানি, জাভেদ, ড্যানি রাজ।

জুলাই মাসে পবিত্র ঈদে মুক্তি পায় বিগ বাজেটের একাধিক সিনেমা। যেখান শাকিব খান অভিনীত সিনেমা মুক্তি পায় তিনিটি – শিকারি, সম্রাট, রানা পাগলা। অন্যদিকে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা “বাদশা দ্য ডন” এর মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অংগনে পা রাখেন কলকাতার সুপারস্টার জিৎ। শিকারি ও বাদশা দুটি সিনেমা হিট হিসাবে নাম লেখায়, অনেকদিন পর বাংলাদেশের হল মালিকেরা লাভের মুখ দেখে মূলত ঈদ-উল- ফিতরে এই সিনেমা দুটির মধ্যে দিয়ে। একের পর এক শো হাউজফুল চলছে, সিনেমার টিকেট ব্ল্যাক হয়েছে। এসব কিছু বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন অনেকদিন দেখে নি। ডাবিং, এডিটিং ও অন্যান্য টেকনিক্যাল দিক বিচার করলে বাদশা দ্য ডন সবার থেকে এগিয়ে তারপর শিকারি। অর্থ বা বাজেট এখানে বড় একটি উপাদন হিসাবে কাজ করেছে। এজন্য সম্পূর্ণ দেশীয় সিনেমা সম্রাট ও রানা পাগলা এদিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। ঈদে মুক্তি পায় “দর্পন বিসর্জন” নামে আর একটি সিনেমা কিন্তু হাই ভোল্টেজের চার সিনেমার জন্য সিনেমাটি অনেকাংশে ফিকে হয়ে যায়।

আগষ্টে সবার চোখ ছিল ১২ আগষ্ট মুক্তিপ্রাপ্ত “নিয়তি” সিনেমার উপর। সিনেমার গান ও ট্রেইলারে দর্শকদের আগেই মুগ্ধ করেছিল নিয়তি। সিনেমা রিলেজের পর সমালোচকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পায় আরিফিন শুভ ও ফাল্গুনি জলি অভিনীত সিনেমাটি। তবে আবারো দূর্দান্ত অভিনয় করে সমালোচকদের নজর কাড়েন আরিফিন শুভ। অঙ্গারে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে নিয়তিতে নিজের চরিত্রকে খুব দূর্দন্তভাবে ফুটিয়ে তোলেন জলি। তবে আগষ্টের সেরা সিনেমা তৌকির আহমেদ পরিচালিত “ইমপ্রেস টেলিফিল্ম”র সিনেমা “অজ্ঞাতনামা”। বিদেশে অবস্থানরত বিদেশী শ্রমিকদের অনিশ্চয়ত জীবন ও মানব পাচারের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পুঁজি করে এগিয়ে চলে অজ্ঞাতনামা। শুধুমাত্র প্রচারণার অভাবে ২০১৬ সালের সেরা সিনেমাটি সবার ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে গেলো। সিনেমাটি কত দূর্দান্ত ছিল তা বছরের শেষদিকে ইউটিউব রিলিজের পর সবার মন্তব্য দেখে বোঝা যায়। এ মাঝে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য দুটি সিনেমা হল মাস্তানি ও আড়াল। সিনেমাটি দুটি রীতিমত ফ্লপ।

২ সেপ্টেম্বর মুক্তিপায় নারগিস আক্তার পরিচালিত “পৌষ মাসের পিরিতি”। অভিনয় করেন পপি, টনি ডায়েস, আহমেদ রুবেল, প্রিয়াঙ্কা। এ মাসে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে মুক্তি পায় বিগ বাজেটের ৩ টি। সিনেমা শাকিব খান ও নবাগত শবনম ইয়াসমিন বুবলি অভিনীত ‘বসগিরি’ ও “শুটার”। অন্যদিকে মুক্তি পায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হাই ভোল্টেজ সিনেমা “রক্ত”। অভিনয় করেন নবাগত রোশান ও পরী মনি। রক্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল শুধুমাত্র একশন কন্যা মাহির পার পরী মনি একশনে কেমন করে তা দেখার জন্য। তবে সব কিছু ছাপিয়ে রক্ততে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়ে নবাগত রোশান। অসাধারন ভয়েস ও অভিনয় দিয়ে সবার নজর কাড়েন তিনি। ২০১৬ এর নবাগত নায়কদের মধ্যে তিনি সেরা এ নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। শাকিব খানের বসগিরি নিম্নমানের কাহিনীর জন্য আবারো সমালোচিত হয়, তবে নাচে ও গ্ল্যামারে নবাগত বুবলি নতুন পরিচালকদের নজরে আসেন। অন্যদিকে নিম্নমানের নির্মানের জন্য শুটার ব্যপকভাবে সমালোচিত হয়।

সেপ্টেমবরের শেষ দিকে ৩০ তারিখ মুক্তি পায় বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজার মনস্ত্বাত্তিক থ্রিলার সিনেমা “আয়নাবাজি”। বলা যায় শেষ ১০ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন সিনেমা এতো হাইপ ক্রিয়েট করতে পারেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্লকবাস্টার সিনেমাও বলা যায় আয়নাবাজিকে। টানা ২ সপ্তাহ ঢাকা সহ দেশের অন্য হলগুলোতে হাউজফুল হিসাবে চলছে। পাইরেসি হবার পরেও তার উত্তেজনা কমেছিলনা একটুও। আয়নাবাজি দেখিয়েছে ভালো প্রচারণা ও গল্প থাকলে মাল্টিস্টার না থাকলে একটি সিনেমা কিভাবে হিট করা যায়, ব্লকবাস্টার করা যায়। আয়নাবাজিতে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী, নাবিল। ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত ‘এক রাস্তা’, দি অ্যাড্রেস। অভিনয় করেন বাপ্পী, ববি, আনিসুর রহমান মিলন।

৭ অক্টোবর মুক্তি পায় যৌথ প্রযোজনার “প্রেম কি বুঝিনি” সিনেমাটি। তেলুগু ১০০% লাভ সিনেমার রিমেক এই সিনেমাতে অভিনয় করে কলকাতার ওম ও শুভশ্রী গাঙ্গুলী। ১৪ অক্টোবর মুক্তি পায় পি এ কাজল পরিচালিত সাইমন সাদিক ও অহনা অভিনীত “চোখের দেখা”।

ভালোবাসাপুর’, জ্যাকফ্রুট মাল্টিমিডিয়া, ১১ নভেম্বর। পরিচালক এখলাস আবেদীন। অভিনয় করেছেন মনিরাজ খান, অর্ণা, সাদেক বাচ্চু, সুব্রত, জলি। ‘যদি তুমি জানতে’, ইউরোবাংলা এন্টারটেইনমেন্ট, ১৮ নভেম্বর। পরিচালক নদী ফিরোজ। অভিনয় করেছেন তানিয়া বৃষ্টি, আশরাফ টিটু ও রাইসুল ইসলাম আসাদ।

পৃথিবীর নিয়তি’, মাল্টি লিংকেজ প্রডাকশন, ২ ডিসেম্বর। পরিচালক শেখ শামীম। অভিনয় করেছেন রুবেল, রাবিনা বৃষ্টি, রাশেদ প্রমুখ। ৯ ডিসেম্বর মুক্তি পায় শাকিব খানপরী মনি অভিনীত ‘ধুমকেতু’, । পরিচালক শফিক হাসান। ‘লাল সবুজের সুর’, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, ১৬ ডিসেম্বর। পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার। সরকারি অনুদানের এ ছবিতে অভিনয় করেন ওমর সানী, সুব্রত, সেরা জামান, রফিকুল্লাহ সেলিম, ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায় অনন্য মামুনের এ বছরের দ্বিতীয় সিনেমা ‘আমি তোমার হতে চাই’, । অভিনয় করেছন বাপ্পী ও মীম। সিনেমাটি দর্শকদের কাছে বেশ ভালো রেসপন্স লাভ করে। এসএ হক অলিক পরিচালতি ‘এক পৃথিবী প্রেম’ মুক্তি পায় ২৩ ডিসেম্বর। অভিনয় করেন আসিফ নূর ও আইরিন। সাফিউদ্দীন সাফি পরিচালিত ‘মিসড কল’ মুক্তি পায় ৩০ ডিসেম্বর। অভিনয়ে বাপ্পী, মিশা সওদাগর

বছরের শুরুটি ঠিক যেভাবে হয়েছিল বছরের শেষটি বলা যায় অনেকাংশে সেভাবেই হয়েছে। আমি শুধু তোমার হতে চাই ছাড়া ডিসেম্বরে ভালো তেমন কোন সিনেমা ছিল না। যদিও এ বছর মুসাফির, অস্তিত্ত্ব, নিয়তি, শিকারি, বসগিরি, বাদশা, আয়নাবাজি খুব ভালো ব্যবসা করেছে। সবদিক দিয়ে ২০১৬ বাংলা সিনেমার জন্য বেশ দারুণ একটি বছর। তারপর ও ভালো কিছু সিনেমা শুধুমাত্র প্রচরণার অভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। নোংরা পলিটিক্স ও পাইরেসির স্বীকার হয়ে অনেক প্রযোজক হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ। ২০১৬ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শুধু ভালো কাহিনী ও পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনা থাকলে ভালো চলচ্চিত্র আমাদের মানুষ গ্রহন করবে। শুধু দরকার ভালো গল্প ও মনিটরিং ব্যহস্থার। সমালোচকদের আলোচনা ও সমালোচনা, হল রিপোর্ট ও মানুষের ভালোলাগা বিবেচনা করলে ২০১৬ এর সেরা দশ সিনেমা হলঃ

অজ্ঞাতনামা, আয়নাবাজি, কৃষ্ণপক্ষ, আন্ডার কস্ট্রাকশন, মুসাফির, বাদশা দ্য ডন, শিকারি, অস্তিত্ব, নিয়তি, বসগিরি।

২০১৬ এর ধারাবাহিতকা বজায় রেখে ঢালিউ ২০১৭ তে জ্বলে উঠবে আপন মহিমায়, আমরা আবারো দেখা পাবো আয়নাবাজির মত ক্রাইম থ্রিলার, অজ্ঞাতনামার মত দারুণ সিনেমা ও মুসাফিরের মত ওয়েল মেকিং কমপ্যাক্ট সিনেমা।


১ টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন