Select Page

চলচ্চিত্র পরিচালনা নিয়ে কিছু কথা (পর্ব – ০১)

চলচ্চিত্র পরিচালনা নিয়ে কিছু কথা (পর্ব – ০১)

director

স্বত্ব কিনে নিয়ে একটা জিনিস আপনি হয়তো পেতে পারেন, কিন্তু জিনিসটা আপনি কোনদিনই সৃষ্টি করতে পারবেন না। সৃষ্টি বলতে কি বুঝিয়েছি, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

বেশিরভাগ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই ব্যাপারটা দেখা যায়। আরেক জায়গার কোন মুভির স্বত্ব কিনে, সেটাকে ভেঙ্গেচুরে আবার নির্মাণ। যেটা বলিউডে প্রচন্ড হারে দেখা যায়। হলিউডে একদম নেই বললেই চলে। আমাদের ঢাকাই সিনেমাতে ব্যাপারটা অনেক রকম চুরি করেই করা হয়। অর্থাৎ, স্বত্ব কেড়ে নিয়ে টাকা না দেওয়া ।

আমি ঠিক ওইদিকে যাবো না, আমি বলতে চাচ্ছি পরিচালকদের কথা… যারা কাজটা নির্মাণ করছেন, গড়ে তুলছেন। আরেকজনের কাজের উপর দাড় করিয়ে জিনিসটাকে দ্বিতীয়-তৃতীয়বার বিনির্মাণ করেই চলেছেন তারা। কতটুকু অ-সৃষ্টিশীল মন-মানসিকতার দৌড়াত্নে পড়লে ব্যাপারগুলো করা যায়!

আমি হলফ করে বাজি ধরে বলতে পারি, Arbaaz Khan -এর মতো চলচ্চিত্র পরিচালক তাদের গোটা জীবনে… কোনদিন একটা মৌলিক একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারবেন কিনা সন্দেহ! আর, নিজে গল্প/চিত্রনাট্য লিখে পরিচালনা করার কথা তো বাদই দিলাম।

একবার আমাদের ইফতেখার চৌধুরীর কথা-ই চিন্তা করুন…. ‘অগ্নি’র পর যারা ‘রাজত্ব‘ দেখেছেন, তাদের অনেকের কাছেই ভালো লাগে নাই নাকি! মেকিং-য়ে নাকি ‘অগ্নি’র তুলনায় যথেষ্ট দুর্বলতা ছিলো! কিন্তু কেন? একটা চলচ্চিত্রের ভুত-ভবিষ্যত তো পরিচালকের উপরেই নির্ভর করে, তাই না? কিন্তু জানেন, আমাদের এখানে ব্যাপারটা পরিচালকের উপর করে না। শুনেছি, ইফতেখার চৌধুরী নাকি প্রচন্ড ব্যস্ত পরিচালক। সময়ের অভাবে নাকি পারলে উনি একসাথে দুইটা মুভিরই কাজ করেন । ভাগ্যিস করেন না…..!!

এবং এজন্যই আগের তুলনায় আমাদের বর্তমান চলচ্চিত্র পরিচালকদের সৃষ্টিশীলতার মাত্রা দিন দিন কমে আসছে। এখন তারা দ্রুত ফ্রেম তৈরী করে শট নিয়ে আসতে পারলেই যেন বাঁচেন!! চিত্রনাট্য কিংবা গল্প লিখে সময় নষ্ট না করাই যেন ভালো। কাহিনী যিনি লিখতে পারেন, তাকে দিয়ে একটা হিট মুভির গল্প/কাহিনী চুরি করে লিখে চালিয়ে দিতে পারলেই তারা সার্থক !

চলচ্চিত্রের সংজ্ঞাটা অবশ্য স্থানভেদে বিভিন্ন রকম!! যেমন – ভারতীয় সংজ্ঞা, হলিউডি সংজ্ঞা! আমাদের এখানে অবশ্য সবকিছু মিলিয়ে-ঝিলিয়েই হয়! ওদিকে ভারতীয় সংজ্ঞাটা একটু ইন্টারেস্টিং আমার কাছে। বেশির ভাগ চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে  – গান থাকতেই হবে (দুই/তিনটা রোমান্টিক + একটা কড়া দুঃখের + একটা ধর্মীয়/মা/দেশকে নিয়ে + একটা/দুইটা ধুন্ধুমার নাচের, আইটেম যাকে বলে এখন সবাই)। কাহিনীতে অন্য কোন ব্যাপারে জোর না দেওয়ার দরকার হলেও, ধর্মীয় কোন একটা ইস্যুতে অডিয়েন্সকে প্রভাবিত করতেই হবে। তারপর, পুরো গল্পটাই নায়ক-নায়িকা কেন্দ্রিক হবে ইত্যাদি ইত্যাদি, একদম বাধা-ধরা মেকিং !

তবে, বেশ কিছু পরিচালকদের চলচ্চিত্রগুলোকে একদমই চলচ্চিত্রের আসল সংজ্ঞায় ফেলা যায়, মানে যারা বাধা-ধরা নিয়মে অভ্যস্ত না, যেমন – তিমাংশু ঢুলিয়া, রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা, রাজকুমার হিরানি, অনুরাগ কাশ্যাপ, বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে, জয়া আখতার, আশুতোষ গোয়ারিওর, সুজিত সিরসার, আর বাল্কি…. এনারা ! তাদের সবাইকেই আমরা চিনি বা জানি মোটামুটি! এনাদের জন্যই বিশেষ করে আমি, এখনও বলিউড চলচ্চিত্র দেখার আগ্রহ পাচ্ছি।

তবে সংজ্ঞাগত ব্যাপক পার্থক্যের জন্যই হলিউডওয়ালাদের প্রতি এতো টান আমার। ওখানেও যে চলচ্চিত্র নির্মাণের নামে ‘লুলামি’ হয়না, তা বলছি না ! কিন্তু, বেশিরভাগ পরিচালকই নিজের পরিচয়কে ‘একজন শিল্পী’ হিসেবেই ফুটিয়ে তুলতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।

থ্রিলার চলচ্চিত্র তো বিশ্বের শত পরিচালকও বানাচ্ছেন, কিন্তু “নোলান” কয়জন হতে পারেন! চিত্রনাট্য ও ডায়লগ নির্ভর চলচ্চিত্র তো অনেকেই বানাচ্ছেন, কিন্তু “ডেভিড ফিঞ্চার” কয়জন হতে পারে! মেকিং-য়ে নিজস্বতা “স্পিলবার্গ” কিংবা “ক্যামেরন” এর মতো আর কয়জন দেখাতে পারে।

আমি কোন তুলনা করছি না…. শুধু একটা হিসাব মেলাচ্ছি । হ্যা, বলতে পারেন – সবাই তো আর সমান সুযোগ পায় না। এটা কোন কারন হতে পারে না। কারন Olympus Has Fallen এর পরিচালক Antoine Fuqua মুভিটা বানাতে মাত্র ৭০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন! মাত্র বললাম মুভিটার মেকিং অনুযায়ী। আর ওদিকে একই genre এর White House Down বানাতে Roland Emmerich খরচ করেছেন ১৫০ মিলিয়ন !!!!!

দুইটা মুভিই যদি আপনি দেখে থাকেন, স্বাভাবিকভাবেই বলেন তো কোনটা বেশি জোস হইসে ! আমার কাছে Olympus Has Fallen টা শতগুন ভালো লাগছে, মেকিংটা জোড়ালো ছিলো, আয়োজনও যথেষ্ট ছিলো এবং তুলনামূলকভাবে কম বাজেট পাবার পরও পরিচালক Antoine Fuqua অনেক ডিটেইলস ব্যাপারও দেখাতে পেরেছেন ।

এটা কার সার্থকতা….. প্রশ্ন রইলো !

ভাই হ্যা…. এটা স্বীকার অবশ্যই করতে হবে… অন্যান্যদের তুলনায় আমাদের পরিচালকেরা সুযোগ-সুবিধা অনেক কম পান। এর যথার্থ কিছু কারনও আছে…. আমাদের বাজার বেশি বড় না, আমরা এখনও এনালগ যুগে পড়ে আছি, আমাদের অভিনয় শিল্পীরা নাকি কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না…. ইত্যাদি ইত্যাদি হাজার হাজার কারন! আবার অনেকেই বলেন, ভালো প্রডিউসার খুজে পান না, যাও পান, পাওয়ার পর প্রডিউসারের পছন্দ অনুযায়ী চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে হয়। এক্ষেত্রে আমি বলবো আমাদের কনফিডেন্সের অভাব! আমরা প্রডিউসার কে ঠিক বোঝাতেই পারি না যে, আমরা কি চাচ্ছি আসলে। যখন প্রডিউসার বুঝতে পারে যে আমাকে দিয়ে আদৌ কাজ হবে না, তখনই কিন্তু সে কাজটা নিজের মতো করে শেষ করতে চায়। আর আমাদের অগত্যা তাদের মতো করেই কাজটা করতে হয়!

তাই বলবো…. নিজেদের শিল্পীসত্তা টাকে ফুটিয়ে তোলা উচিত । নিজের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও লোভকে নিয়ন্ত্রন করে শুধু কাজে মনোযোগ দিলেই মনে হয় আমাদের চলচ্চিত্র পরিচালকদের আমরা যথার্থ সম্মান দিতে পারবো।


৩ টি মন্তব্য

  1. Solayman Asif

    আমার মনে হয় আমাদের দেশে ক্রিয়েটিভ মুভি দর্শক অব্যশই হলে গিয়ে দেখেন, বাজেট মুখ্য বিষয় না। আমাদের দেশের পরিচালকবৃন্দ যদি সৃজনশীল মুভি করেন তাহলে দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা দেখবে আর প্রডিউসারাও আগ্রহী হবেন।

  2. বাজেট টা সব সময় মূখ্য না ! 🙂 কারন, অনেক কম বাজেটেও ‘অনেক” ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব, যদি বানানো যায় !! প্রকৃষ্ট উদাহরন – ফারুকী স্যার, গিয়াস উদ্দিন সেলিম স্যার, তারেক মাসুদ স্যার, তানভীর মোকাম্মেল স্যার দের চলচ্চিত্র 🙂

    • Moulovi Nezam

      বাজেট আসলে একটা বড় সমস্যা। কারণ কার পকেট থেকে টাকা আসছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদু-মধু প্রযোজক অপরিচিত রাস্তায় হাটতে আগ্রহী হননা। বরং পরিচিত রাস্তায় অল্প সময়ে টাকা তুলে আনা এবং সম্ভব হলে দেড়/দুই গুণ তুলে আনাই তাদের মূল লক্ষ্য।

      আমাদের নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশীদের সিনেমায় বিনিয়োগে নিয়ে আসা দরকার। শুধু ছবি প্রযোজনা নয়, বরং হলগুলোর মানোন্নয়ন, সিনেমা ডিস্ট্রিবিউশন এসব বিজনেস এ বিনিয়োগ ও প্রসার করতে পারেন তারা।

মন্তব্য করুন