‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’র রিভিউ/ চিত্রপরিচালক রাজ্জাকের চিন্তার উন্নতি
[১৯৮৬ সালের ৬ জুন মুক্তি পায় তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’ ছবিটি। বাবার রাজ্জাকের পরিচালনায় এই ছবিতে অভিষেক বাপ্পারাজের। মূল চরিত্রের শাবানা, এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে আরো ছিলেন নবাগতা অরুণা বিশ্বাস। সিনেমাটি সেই সময় বেশ জনপ্রিয়তা পায় ও প্রশংসিত হয়। ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’ মুক্তির পর সেই ছবির সংক্ষিপ্ত রিভিউ প্রকাশ হয় সেই সময়ের প্রধান সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য়। মাহমুদা চৌধরীর সেই লেখাটি বিএমডিবির পাঠকের জন্য প্রকাশ হলো।]
ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর নামে দীর্ঘকাল ধরে চলছে মস্তিষ্কবিহীন আর মাসলম্যানদের দৌরাত্ম্য! ভালো কিছু করতে চাইলেও, সংঘবদ্ধভাবে চলে বানচালের ষড়যন্ত্র। এই যখন অবস্থা তখন দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পর হঠাৎ বর্ষণের স্বস্তি নিয়ে এল ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’।
এক কথায় এই ছবি নিবিষ্টভাবে বসে দেখতে অসুবিধা হয় না। ছোট-বড় সকল শিল্পাঁই ভালো অভিনয় করেছেন। সাজসজ্জা মোটামুটি সময়ানুগত। বাণিজ্যিক ছবির উৎকট শাবানাও অভিনয়ে বেশ উতরে গেছেন। সব জায়গায় সমান না হলেও বাপ্পার সাবলীলতা দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে স্থান নির্দিষ্ট করার জন্য পিতার অন্ধ অনুকরণ না করে নিজস্ব ধারা তৈরি করতে হবে।
করেও রাজাক উপন্যাস বর্ণিত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেননি। হিন্দু বাড়িতে গাছ, তারাশঙ্করের পাত্র-পাত্রীদের সংলাপে আঞ্চলিক টান থাকাটাই বাঞ্ছনীয় ছিল। এমন বিশুদ্ধ ভাষা কানে লাগে।
ঢাকার ছবির তুলনার এ ছবির আলোকসম্পাত উন্নত। বিশেষ করে ভালো লেগেছে পাঞ্চায়েতের দৃশ্যটি। মহিউদ্দীন ফারুক, বিজয় সেনের মতো সহকারীর সহযোগিতা লাভ … এত অভাব? মাটির ঘর এবং দরজা-জানালয় আলপনা আঙিনায় দেশী ফলের গাছ—এসবই বড় প্রয়োজনীয় ছিল। পেতল কাঁসার তৈজসগুলোও বড় শ্রীহীন। পরাশ্রিত বিধবাদের সাদা শাড়ি একটু ম্লান হলেই বা ক্ষতি ছিল কী?
অতিরিক্ত গানের সংযোজনে গল্পের কম্পপেক্টনেস ক্ষুণ্ন হয়েছে। সম্পাদনায় গোঁজামিল নজর এড়ায়নি। এসব সত্ত্বেও চিত্রপরিচালক রাজ্জাকের চিন্তাবৃত্তির উন্নতি সুখপ্রদ। ‘রংবাজ’, ‘অভিযান’, ‘অনন্ত প্রেম’ থেকে তিনি হয়েছেন সাহিত্যমনা (যদিও দুটোই রিমেক।) তথাপি আমরা অশা করব, ভবিষতে তিনি হবেন সমকালীন। একজন দায়িত্বশীল শিল্পীর মতো তিনি অনুসন্ধান করবেন নতুন পথের। যা সমাজের জন্য মানুষের জন্য হবে প্রয়োজনীয় ও উপকারী।
*মূল লেখায় কোনো শিরোনাম ছিল না। ব্যবহৃত শিরোনাম বিএমডিবির দেয়া।