জসিম উৎসব : উদযাপন ও ক্ষোভ
বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক জসিমের মৃত্যুর ১৮ বছরে তাকে স্মরণ করে এফডিসি প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো হয়ে গেল জসিম উৎসব। ১৩ ডিসেম্বর বিকাল পাঁচটায় তিনটি পর্বে অনুষ্ঠিত এ উৎসব নিয়ে কারো কারো ছিল উৎসাহ। আবারো খোদ জসিমের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা জসিম ফ্লোরে আয়োজিত উৎসবে নির্মাতা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘নায়ক জসিম চলচ্চিত্রের প্রাণের মানুষ। তাঁর অকালমৃত্যুতে আমরা বিষণ্ণ ছিলাম। জসিম যেমন বড় অভিনেতা ছিলেন, তেমনি ছিলেন বড় টেকনিশিয়ান। তাঁর মতো অভিনেতা সামনে আসবে কি না জানি না, তবে এতটুকু বলতে পারি বর্তমানে নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘জসিম আমাদের বন্ধু ছিল। আমার প্রায় ছবিতে সে কাজ করেছে। আমার জীবনের উল্লেখযোগ্য ‘কসাই’ ছবিতে সে অভিনয় করেছিল। এই ছবিটি আমি বেশ কয়েকবার রিমেক করার চিন্ত করেছিলাম, কিন্তু জসিমের অভাবে তা আর করতে পারিনি। সে অনেক পরিশ্রম করে কাজ করত। চলচ্চিত্র নিয়ে সব সময় ভাবত জসিম।’
জসিম সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করে অভিনেত্রী অঞ্জনা বলেন, ‘জসিম ভাই দিন-রাত চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবতেন। খেতে গেলে নতুন একটি চামচ দেখলে সেটি নাড়িয়ে দেখতেন, এটা কোনো ছবিতে কাজে আসবে কি না। সুন্দর গোছানো পরিবেশে নাশতা দিলে বলতেন, শটের সময় এভাবে পরিপাটি করে খাবার পরিবেশন করলে পর্দায় দেখতে ভালো লাগে। অথচ এমন লোকটিকে আমরা ভুলে গেলাম। ভালো লাগছে যে এতদিন পরে হলেও অনুষ্ঠানটি হচ্ছে। জসিম ভাই যদি আর কিছুদিন সময় দিয়ে যেতে পারতেন, তা হলে আমাদের চলচ্চিত্র আরো সমৃদ্ধ হতো।’
আরো উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজক মুশফিকুর রহমান গুলজার, অভিনেতা ওমর সানী, মিশা সওদাগর প্রমুখ। মৃত্যুর ১৮ বছর পর এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ দেন বক্তারা।
তবে জসিমের পরিবারের কেউই এ উৎসবের আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এই উৎসব নিয়ে প্রয়াত নায়ক জসিমের স্ত্রী নাসরিন ও তার তিন সন্তান সামি, রাতুল ও রাহুল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জসিমের স্ত্রী ও এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা নাসরিন বলেন, উৎসবের শেষ মুহূর্তে এসে আমাদের জানানো হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে, জসিমের পরিবার এখনও জীবিত আছে। তাকে নিয়ে কেউ ব্যবসা করুক এটা আমি কখনোই চাইবো না। আমাদের অনুমতি না নিয়ে এই উৎসব করা হয়েছে। এছাড়া যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রীর ছবি পোস্টারে বা কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে তারা অনেকেই দাওয়াত পায়নি। এ বিষয়টি জানার পর আমার খুব খারাপ লেগেছে। তিনি আরো বলেন, আমার প্রতিবেশী চিত্রনায়িকা রোজিনার ছবি এই উৎসবের পোস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি জসিমের নায়িকাও ছিলেন। তাকে আয়োজকদের মধ্য থেকে কেউই ফোন করে দাওয়াত করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি। আমাদের জানালে আমরাও সহযোগিতা করতাম। অনেক শিল্পীকে আমি নিজে দাওয়াত করতে পারতাম। অনুষ্ঠানটি আরো সুন্দর হতে পারত।
অন্যদিকে, জসিমের ছোট ছেলে রাহুল বলেন, আমি শেষ মুহূর্তে উৎসবে গিয়েছিলাম। এ বিষয়টি আমারও খারাপ লেগেছে। এভাবে না করে আমাদের জানিয়ে ভালোভাবে গুছিয়ে উৎসবটি করা উচিত ছিল। আমি অনুষ্ঠান শেষে বেশকিছু সংবাদমাধ্যমে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি।
উৎসবটির আয়োজক জসিম স্মৃতি একাডেমিনের প্রতিষ্ঠাতা সোহেল রানা জসিমের পরিবার থেকে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমি সকলকে দাওয়াত দিয়েছি। আর উৎসব শুরুর আগে জসিম ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিন ভাবীর সঙ্গেও কথা বলেছি। এছাড়া চিত্রনায়ক জায়েদ খানও অনেককে দাওয়াত দিয়েছেন। কোনো অভিযোগ তো থাকার কথা না।
আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন জসিম। খলচরিত্র দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও তিনি নায়ক হিসেবেই তুমুল সাফল্য অর্জন করেন। দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ ছবি দিয়ে তিনি চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন। প্রায় ৩০০ ছবিতে অভিনয় করা এই অভিনেতা ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সূত্র : এনটিভি অনলাইন ও মানবজমিন