Select Page

ঝকঝকে তকতকে ‘দ্বিতীয় কৈশোর’

ঝকঝকে তকতকে ‘দ্বিতীয় কৈশোর’

যতো চাও বাঁধিতে বাঁধা যে পরে না, সময়ের আয়না ছাড়ে না ছাড়ে না। হ্যা ঠিক আমাদের জীবনটাই কিন্তু এমন! কেউ গড়তে চায় কেউ গড়তে চায় না। কেউ আটকে রাখতে চায় কেউ আটকে থাকতে চায় না। এমন এক চাওয়া পাওয়ার গল্প “দ্বিতীয় কৈশোর”।

ওয়েব ফিল্মের সাথে আমাদের পরিচিতি কম, যদিও নেটফ্লিক্সের বদৌলতে বিদেশী ভাষার বিভিন্ন ওয়েব ফিল্মের সাথে আমাদের পরিচয় রয়েছে। তবে দেশীয় ওয়েব ফিল্মের চাহিদা দিনদিন বেশ বাড়ছে। কিছুদিন আগে এই ওয়েব ফিল্মের ট্রেইলার দেখে বেশ লাগলো। আরো বেশি আগ্রহ জন্মালো ছোট পর্দার তিন রাঘব বোয়াল অভিনেতাদের দেখে।

ফিল্মের শুরুতেই একদম ঝকঝকে তকতকে দৃশ্যপট দেখে এমনি আগ্রহের জন্ম হয়ে গিয়েছিলো। সাথে বেশ ক্লাসিক কালার গ্রেডিং বেশ ভালোই চোখের প্রশান্তি দিচ্ছিলো। ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন “ছুঁয়ে দিলে মন” খ্যাত “শিহাব শাহিন”। ১০২ মিনিয়ের দৈর্ঘ্যের এই ফিল্ম নিয়ে শিহাব শাহিন আগেই বিভিন্ন পত্রিকায় বলেছিলেন,’নির্মাণের দিক বিবেচনা করলে চলচ্চিত্রের বেশ ঝাঁজ পাওয়া যাবে, সাথে থাকবে আধুনিক ঘরণার আইডিয়া এবং কন্টেন্ট’। শিহান শাহিন যদি নাও বলে থাকেন আমি নিজেই বলছি এই ওয়েব ফিল্মটি দর্শকপ্রিয়তা পাবে একশত ভাগ।

অভিনয়ের দিক দিয়ে দেখা মিলবে তিন রাঘব বোয়াল অভিনেতাদের। এর আগে দর্শক উনাদের একসাথে দেখে নি, তাই হয়তো অনেকে ভাববেন কেমন না কেমন হয়! কিন্তু দেখার পর আপনি বেশ তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন। অপূর্ব ভাইকে সেই আগের চিরাচরিত রোলে রেখে শাহিন সাহেব বেশ বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়েছেন। অন্য দিকে তাহসান ভাই কে সকলে স্বামী হিসেবে দেখে বেশ অভ্যস্ত! কিন্তু এখানে বেশ ভিন্নধর্মী স্বামীর চরিত্রে তাঁর দেখা মিলবে। কেউ কারো থেকে কম যান নি তবে আলাদা ভাবে নিশো ভাই কেনো জানি সবার থেকেই কিঞ্চিত এগিয়ে, বেশ শক্ত রোল পেলেও ফুটিয়ে তুলেছেন নরম তুলতুলে ভাবে। তাঁর চুল ঝাঁকানো দেখে অনেকের চুল রাখতে ইচ্ছা করবে কিংবা তাঁর ধুমপান করা দেখে অনেকের ধুমপান করতেও ইচ্ছা হতে পারে। এছাড়া সাপোর্টিং রোলে সানজিদা প্রীতি এবং রাইসা অর্পার চরিত্র গুলোকে লেগেছে একদম জীবন্ত। সব মিলিয়ে অভিনয় সকলের একদম পাক্কা। আমার মন ভরে গিয়েছে।

কাহিনীসংক্ষেপ : ত্রিশের কোঠায় থাকা তিন যুবকের ভিন্নধর্মী সংকটময় সময় গুলোর আলোকপাত হবে এই গল্পে। এই তিন যুবক তাদের নিজের জীবন কে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দেখেন, এবং প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব গুলোও তাদের ভিন্ন ভিন্ন সূত্রের! কেউ চিন্তা করে বিয়ে মানেই ঝামেলা, কেউ বা চিন্তা করে বাচ্চা মানেই ঝামেলা, আবার কেউ নিজের জীবিকা বাঁচাতে নিজের আপনজনকেই করতে পারেন বলিদান! এসব নিয়েই এই গল্প, যদিও আমি কিছুটা টুইষ্ট রেখেছি এই সামান্য লেখায়! যাতে আপনারা মজা পান প্রথম কিংবা শেষটুক দেখে।

আমার মতে কিছু জিনিষ ফিল্মের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে
দায়িত্ব এমন এক জিনিষ যা আপনাকে বিশ কিংবা ত্রিশ যেকোনো কোঠায় নিতে হতে পারে। কিন্তু নিতে আপনাকে হবেই, যেহেতু আপনাকে কেউ না কেউ দায়িত্ব নিয়ে বড় করেছেন।
আপনি যতোই বহু প্রেমে লিপ্ত থাকেন না কেনো! দিন শেষে আপনাকে ভিড়তে হবে একজনের কাছেই যে কিনা আপনাকেই ভালোবাসে।
যদি আপনার ভেতর মনুষ্যত্ব থেকে থাকে তাহলে হাজার মণিমাণিক্যর বিনিময়ে হলেও কখনোই আপনি আপনার রক্তকে অস্বীকার করতে পারবেন না।
আপনি যতোই নিজের বয়সকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখুন কৈশোর পাড় করে মধ্যবয়সে আপনাকে আসতেই হবে এবং বৃদ্ধবয়স আপনাকে মেনে অবশ্যই নিতে হবে।

সবশেষে বলবো “দ্বিতীয় কৈশোর” একটি ভালো কাজ, আমাদের উচিৎ ভালো কাজকে মূল্য দেওয়া। ঐ দু-চার স্ক্রিনশট দেখে যদি আমরা ভালো কাজকে বানিয়ে দেই উন্মুক্ত চলচ্চিত্র তাহলে তো সমস্যা! আমাদের উচিৎ কোনো কিছুর পুরোটা দেখে কিংবা জেনে সামাজিক মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করা। তো যাই হোক বায়স্কোপ অ্যাপ নামিয়ে সহজেই দেখতে পাবেন এই ওয়েব ফিল্মটি। আশা করছি আপনার টাকা বৃথা যাবে না। আর অনুরোধ পাইরেসি করে নিজেদের সামান্য অর্থের জন্য গুণী কলাকুশলীবৃন্দদের অনুৎসাহিত করবেন না। আপনাদের এই পাইরেসির কারণে ফ্রি ফ্রি খেতে খেতে অনেকের অভ্যাস এমন হয়ে গেছে লেখা দেখলেই লিংক লিংক করে! আমার মতে এটা আমাদের যেকোনো বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির জন্য হুমকি স্বরুপ। হ্যাপি পেইড ওয়াচিং।

এক নজরে দ্বিতীয় কৈশোর 
রচনা ও পরিচালক : শিহাব শাহিন
শ্রেষ্ঠাংশে : আবুল হায়াত, আফরান নিশো, তাহসান, অপূর্ব, সানজীদা প্রীতি, রাইসা অর্পা, নাজিয়া হক অর্ষা, রিফাত জাহান প্রমুখ।
ধরন : ড্রামা
ব্যাপ্তিকাল : ১০২ মিনিট
মুক্তি : ২৭ জানুয়ারি,২০১৯
ভাষা : বাংলা
বায়স্কোপ রেটিং : ৩.৩/৫
ব্যক্তিগত মতামত : ৪.৫/৫


মন্তব্য করুন