টান: এই কি ঢাকাই সিনেমার বুবলি?
রায়হান রাফীর পরিচালনায় জমজমাট ট্রেলার দেখে একটা আগ্রহ তো ছিলোই, তাই রিলিজ হওয়া মাত্রই ওয়েবফিল্ম ‘টান’ দেখে নিলাম। এর গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয় বা নির্মাণ নিয়ে অন্য একদিন ভালোলাগা বা মন্দলাগার বিষয়গুলো লিখবো। তবে ১০৫ মিনিটের ‘টান’ দেখার পর লিখতেই হচ্ছে ঢাকার মেইনস্ট্রিম ঘরানার চিত্রনায়িকা শবনম বুবলিকে নিয়ে।
অবনী রূপে বুবলি নিজের ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত সেরা অভিনয় উপহার দিলেন নিঃসন্দেহে।
টেলিভিশনের একজন সংবাদ পাঠিকা থেকে চিত্রনায়িকা হিসেবে তিনি যাত্রা শুরু করেন সুপারস্টার শাকিব খানের হাত ধরে। প্রথম সিনেমা মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের কাছে আলাদাভাবে আলোচনায় আসা বুবলিকে আমরা গত পাঁচ বছরে গতানুগতিক সিনেমার নায়িকা চরিত্রেই দেখে আসছি। তার গ্ল্যামার, ফিটনেস বা সৌন্দর্য্য নিয়ে আলোচনা বা প্রশংসা থাকলেও অভিনেত্রী হিসেবে বুবলি তেমন আলোচনায় বা পছন্দের লিস্টে সেভাবে ছিলেন না। তবে প্রথম ওয়েবফিল্মে এমনই সারপ্রাইজ হিসেবে উপস্থিত হলেন যে এই সময়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় এবং দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে অবলীলায় তার নাম উচ্চারিত হলে অবাক হবার কিছু নাই।
গল্প বা চরিত্র সম্পর্কে কোনো স্পয়লার না দিয়ে ছোট্ট করে লিখতে বা বলতে গেলে এটুকু বলা যায়, বোনের বাসায় থেকে ছোট একটা চাকরি করা একটি তরুণী যে কিনা একটা সময় তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যেয়ে বিয়ে এবং সংসারজীবন শুরু করেন। স্বামীর বেশকিছু খারাপ দিক জানা সত্ত্বেও ভালোবাসার টানে হাজার বাধা-বিপত্তির মাঝেও সংসার টিকিয়ে রাখার যুদ্ধটা নিজের মতোই সামলানো অবনী চরিত্রে বুবলী যে অভিনয় দক্ষতার প্রদর্শন করলেন তা এককথায় অনবদ্য। একবারের জন্য ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা বুবলিকে অবনীর ধারেকাছেও আসতে দেননি।
গল্প, চরিত্র এবং নির্মাতা পেলে আমাদের অভিনেত্রীরা যে প্রতিনিয়ত নিজেদের ভাঙ্গতে পারেন বা তাদের সেই দক্ষতাটা আছে সেটা নতুন ভাবে জানান দিলেন বুবলি।
রায়হান রাফির পরিচালনায় এর আগে ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’য় নাজিফা তুষি এবং তমা মির্জা বা ‘অক্সিজেন’ এ মাহিয়া মাহী আবার তমা মির্জাকে নিয়ে ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ নামক ফিকশনে রীতিমতো জাদু দেখিয়েছেন। প্রতিটি ফিকশনেই নারী চরিত্রগুলোর ব্যতিক্রমী এবং অসাধারণ সুন্দর পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে। ‘ক্ল্যাইমেক্স কিং’ খেতাব প্রাপ্ত এই নির্মাতা চেনা গন্ডির বাইরে যেয়ে এই প্রজন্মের অভিনেত্রীদের নিয়ে এমনিভাবে এক্সপেরিমেন্টাল চরিত্রে হাজির করে যাচ্ছেন তা প্রশংসার যোগ্য।
এই সময়ের ক্রেজ সিয়াম আহমেদ বা শক্তিশালী অভিনেতা সোহেল মন্ডলের সাথে স্ক্রিনে বুবলি আমাদের চমকে দিয়েছেন শুধু তাই নয় বরং অবনীরূপে তিনি প্রমাণ করেছেন এই ইন্ডাস্ট্রিকে তার দেবার আছে অনেক কিছু এবং তিনি পুরোপুরি যোগ্য যেকোনো চরিত্রে নিজের সেরাটা দেবার জন্য। পুরো ওয়েবফিল্মে অবনী চরিত্রের শক্তিশালী যে ইম্প্যাক্ট লক্ষ্য করা যায় তাতে অন্যভাবে বলা যায় এই ‘টান’ বুবলির বা এটা বুবলির ‘টান’। নতুন বছরে শুধু একজন নায়িকা নয় বরং একজন পরিপক্ক অভিনেত্রী হিসেবেও তার যাত্রা হলো।
এবার তাকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব গল্পকার এবং নির্মাতাদের। আশা করি সামনের দিনে গতানুগতিক চরিত্রের বাইরে শক্তিশালী এবং ব্যতিক্রমী চরিত্রে বুবলি আমাদের এভাবেই চমক দিয়ে যাবেন।