টিভি নাটকের প্রিয়মুখ তারিন
‘আমি কবি, তুমি কবিতা, তুমি আমার প্রথম প্রেম, প্রথম প্রেম ওগো সুস্মিতা’ টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠা সেই বিজ্ঞাপনের মডেল সুস্মিতা ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন নাট্যঙ্গনের শীর্ষ অভিনেত্রী। তিনি বাংলা নাটকের মায়াবিনী কন্যা খ্যাত ‘তারিন’।
আশির দশকের মাঝামাঝি, ‘নতুন কুঁড়ি’র মাধ্যমে সুপরিচিতি ঘটে শিশু শিল্পী হিসেবে, ঐ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর নাটকে অভিনয়ের সুযোগ আসে, জনপ্রিয় দুই ধারাবাহিক ‘এইসব দিনরাত্রি’ ও ‘সংশপ্তক”-এ শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন।
নব্বই দশকের শেষে, তৌকীর আহমেদের বিপরীতে এটিএন বাংলার প্রথম নাটক ‘কাঁঠাল বাগানের বুড়ি’ নাটক দিয়ে প্রধান চরিত্রে অভিনয়। তখনই মডেলিং জগতে বেশ নজর কাড়েন তারিন, ক্যারিয়ারে রয়েছে বেশকিছু জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন।
অরুণচৌধুরীর ‘কাগজের ফুল’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের পর মোহন খানের ‘বেলাভূমি’ ধারাবাহিকে অনেক তারকার ভিড়ে খল চরিত্রে বেশ নজর কাড়েন তারিন, চয়নিকা চৌধুরীর ‘কথা ছিল অন্যরকম’ ও ‘মায়া’ এই দুই নাটক তারিনের ক্যারিয়ারে অন্যতম বড় অর্জন।
আঞ্চলিক ভাষার নাটকের ইতিহাসে তারিন অভিনীত ‘গাঁও গেরামের কিসসা’ একটি মাইলফলক। পুরান ঢাকার ভাষা নিয়ে নির্মিত প্রথম নাটক ‘জোনাকির গল্প’তেও তারিন ছিল নাম ভূমিকায়। এ ছাড়া প্যাকেজ সংবাদ, হিতংকর, ধূসর অ্যালবাম, বউ চোর, কাগজের ভুল, প্রিয় বান্ধবী, আজকের অতিথি, অগ্নিবলাকা থেকে হাউজ হাসব্যান্ড, হ্যালো চেয়ারম্যান সাব, দেবদাস, মঙ্গলী, দুই বোন, নির্ঝরনী, চোখের বালি, মধ্যাহ্ন ভোজ কি হবে, শূন্যস্থান পূর্ণ, শেষ কথাটি, গোল্লাছুট, অধর্ম, জলকনা, ইট খাটের খাঁচা, ভূত অদ্ভুত, শোধবোধ, রাত্রির ফুল, নূপুর, আমার বউ দারোগা, তুমি আমার মাসহ আরো বহু জনপ্রিয় নাটকের কল্যাণে হয়ে উঠেন গত দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী।
মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে গড়া জুটিও গত দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি। এ ছাড়া কাজ করেছেন আফজাল হোসেন, জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, টনি ডায়েস, রিয়াজ থেকে অপূর্ব, মোশাররফ করিম পর্যন্ত।
প্রযোজক হিসেবে ইনসমনিয়া, নাকফুল, সন্ধিক্ষণ, সবুজ ভেলভেটের মতো আলোচিত নাটকের জন্য রয়েছে সুখ্যাতি, মাঝে বিরতি দিয়ে আবার অভিনয় জগতে ফিরেছেন,কাজ করেছেন সাংরিলা, বেবী আপা, ক্ষরণ, বিকেল বেলার গল্প, চুপ, ভাই কিছু ভাবছে!, ননাই, একদিন ছুটির নিমন্ত্রণেসহ আরো বেশকিছু নাটক।
নাটক ও মডেলিং এর বাইরে সংগীত ও চলচ্চিত্র জগতেও রয়েছে পদচারণা। গানের প্রতিভা নতুন কুঁড়িতেই প্রকাশ পায়, এরপর বের করেন একক এলব্যাম ‘আকাশ দিব কাকে’। ইত্যাদিতেও নিজ কন্ঠে গান করেন। সজল খালেদের চলচ্চিত্র ‘কাজলের দিনরাত্রি’তে অভিনয় করে প্রশংসিত হন, জাতীয় পুরস্কারে মনোনীতও হন কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। এছাড়া ডাবিং শিল্পী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে, শাবনূর ও ভারতের প্রিয়াঙ্কা ত্রিদেবীর একটি ছবিতে তাদের হয়ে ডাবিং করেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও রয়েছে সুপরিচিত। অভিনয়,গান,নৃত্য সহ সর্বপ্রতিভার অধিকারী তারিন। সম্প্রতি কলকাতায় ব্রাত্য বসুর নির্মাণে একটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন, পাশাপাশি সাম্প্রতিক কালে তাকে দেখা গেছে মধুচক্র, সাহসিকা, অনাত্মীয় দম্পতি, উত্তরাধিকার টিভি ফিকশন গুলোতে।
বর্ণিল ক্যারিয়ারে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে দর্শক জরিপে পুরস্কার জিতেছেন দুইবার, এছাড়া সমালোচক বিভাগেও একবার পুরস্কার অর্জন করেছেন। মডেলিং ও একাধিকবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তবে জয়ী হননি।এছাড়া অর্জন করেছেন বাচসাসসহ আরো বেসরকারী পুরস্কার।
১৯৭৬ সালের আজকের এইদিনে জন্মগ্রহণ করা এই প্রিয় অভিনেত্রী আজ পেরোচ্ছেন জীবনের ৪৬টি বছর।