Select Page

টিভি নাটকের বসন্ত বিকেল শিহাব শাহীন

টিভি নাটকের বসন্ত বিকেল শিহাব শাহীন

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও সেরা নাট্য নির্মাতাদের অন্যতম। শিহাব শাহীন। উনার নির্মিত জনপ্রিয় নাটকের সংখ্যা নেহায়েতত কম নয়। ‘ঘুর্ণি’ দিয়ে শুরু তার, তবে শিগগিরই তুমুল আলোচনায় চলে আসেন ‘রমিজের আয়না’ বানিয়ে।

কর্পোরেট জগতের যাপিত জীবন নিয়ে এই ধারাবাহিক তখনকার অনেক নাটকের ভিড়েও খুবই দর্শক নন্দিত হয়েছিল। নির্মাতা হিসেবে তিনি যেমন ছিলেন নবীন, তেমনি অভিনয়শিল্পীরা। তখনকার কোনো জনপ্রিয় তারকা না থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিক নাটক আলোচনায় আসা বেশ বড় ব্যাপার। প্রাণ রায়, অপূর্ব, তিন্নি, জেনি, হিল্লোল থেকে মহিউদ্দিন বাহার পর্যন্ত দর্শকদের কাছে অন্যরকমভাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। শিহাব শাহীনও গড়ে তোলেন নিজের আলাদা পরিচয়।

‘এক্স ফ্যাক্টর’ উনার নির্মিত অন্যতম জনপ্রিয় টেলিফিল্ম। রমিজের আয়না করতে গিয়ে সখ্যতা শুরু হয় অপূর্বের সঙ্গে। অপূর্ব তখন একেবারেই নবীন। একজন অভিনেতার ছেড়ে দেয়া চরিত্রে এসেছিলেন ওই নাটকে। সেই থেকে শুরু,এরপর তো ‘এক্স ফ্যাক্টর’ তুমুল জনপ্রিয় হলো। বের হয় একাধিক সিক্যুয়েলও। ‘রমিজের আয়না’ ও ‘এক্স ফ্যাক্টর’ অপূর্বকে নিয়ে যায় অন্য পর্যায়ে। সেই থেকে এখনো এই জুটির চলছে সুবর্ণ সময়ে। সেটা ‘ইট কাঠের খাঁচা’ই হোক বা ‘আদিত্যের মৌনতা’, ‘বিনি সুতোর টান’, ‘নিঃশব্দের আলো’ বা ‘বদলে যাওয়া মানুষ’। বহুদিন পরে তিশার সঙ্গে অপূর্ব ‘অহং’ নাটক করলেন শিহাব শাহীনের নির্মাণেই।  সামনেই আসছে ওয়েব ফিল্ম ‘মায়াশালিক’।

‘ভালোবাসি তাই’ ও ‘ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই’— এয়ারটেল নিবেদিত টেলিফিল্মগুলো বেশ প্রভাব রেখেছিল আমাদের নাটকের ভুবনে। ভালো বাজেট, তারকাবহুল অভিনয়শিল্পী, গান সব মিলিয়ে প্রায় সবগুলোই আলোচিত। এর যাত্রাটা শিহাব শাহীনের হাত ধরেই।  প্রথম দুইটা টেলিফিল্মই বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। রোমান্টিক নাটকে নতুন দশকে বলা যায় অন্যতম ধারা হয়েছিল এবং নিজেও রোমান্টিক ধারার নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

শিহাব শাহীন ও অপূর্ব

‘মনফড়িঙের গল্প’, ‘মুনসুবা জংশনের’ জনপ্রিয়তার পর শিহাব শাহীন তখন ক্যারিয়ারের সুবসন্তে। তিশা-তাহসান দুইজনের সঙ্গেই দারুণ জুটি গড়ে উঠেছিল। তাহসানের সঙ্গে চলমান থাকলেও তিশার সঙ্গে বহুদিন কোনো নাটক করেননি। এয়ারটেলের দুইটা টেলিফিল্মের পর আরিফিন শুভকে নিয়েছিলেন নিজের প্রথম সিনেমায়।

‘নীলপরী নীলাঞ্জনা’ এখন পর্যন্ত উনার নির্মিত সবচেয়ে জনপ্রিয় কোনো কাজ। শুধুমাত্র উনার নির্মাণ হিসেবে নয়, নাট্যজগতেই অন্যতম সেরা জনপ্রিয় নাটক। সিনেমা, ওয়েব সিরিজ বানালেও এই টেলিফিল্মের মতো জনপ্রিয় আর কিছু হয়নি। তাহসান-মম জুটির সুন্দর রসায়ন এর থেকে যেন আর ভালো হতে পারে না। এই টেলিফিল্ম দিয়েই শুরু হয় শিহাবের সঙ্গে মমর জুটি। নিজের প্রথম সিনেমা ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ থেকে  ‘ভালোবাসার চতুষ্কোণ’, ‘নীল প্রজাপতি’, ‘শেষ পর্যন্ত’, ‘রূপকথা এখন আর হয় না’ অনেক নাটকই হয়েছে। তাহসানে সঙ্গে ‘অপরিনামদর্শী’, ‘মুম্বাসা’, ‘ভালোবাসার পংক্তিমালা’, ‘অনন্ত অধরা’, ‘অবুঝ দিনের গল্প’, ‘এই শহরে কেউ নেই’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘জ্যাকসন বেলাল’ থেকে ‘রুনু ভাই’ নাটকের সংখ্যা দিন দিন বেশ বেড়ে চলছে।

‘দ্বিতীয় কৈশোর’ ওয়েব ফিল্মে একসঙ্গে নিয়েছিলেন সময়ের তিন জনপ্রিয় তারকা তাহসান, অপূর্ব ও নিশোকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোকিত হন নিশো; ইদানীংকালে ‘মরীচিকা’ ও ‘সিন্ডিকেট’ ওয়েব সিরিজের সুবাদে আফরান নিশোর পরিচিতি ঘটেছে ভিন্ন ভাবে।

মেরিল প্রথম আলোর আসরে পাঁচটি বিভাগে পুরস্কৃত হয় ‘ছুঁয়ে দিলে মন’

শিহাব শাহীনের নায়িকারা হবেন স্নিগ্ধ, মিষ্টিকন্যার প্রেমিকা। এই ধারা প্রথম ভাঙেন ‘এক হৃদয়হীনা’তে, অর্ষাকে দিয়েছিলেন একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। আর ওয়েব সিরিজ ‘আগস্ট ১৪’তে তো তাসনুভা তিশার চরিত্র সব ছাপিয়ে গেছে, বেশ আলোচিত ছিল তার অভিনয়।

রোমান্টিক নাটকে এখনো গান অপরিহার্য। এখানে শিহাব শাহীন হচ্ছেন সবচেয়ে সচেতন। হাবিবের ‘দূরের মানুষ’ থেকে তাহসানের ‘কেন হঠাৎ তুমি এলে, মেঘের পরে’ বা পলবাশা সিদ্দিকীর গান। এমনকি ‘তোর জন্য হবো বন্য’ গানটারও করেছিলেন অভিনব ব্যবহার।

শিহাব শাহীন এখনো আমাদের উনার নির্মাণ উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আজকের দিনে এসে উনার যে অবস্থান হয়েছে, তাতে সাম্প্রতিক কালে বেশিরভাগ নাটকেই হতাশ করছে, সেইগুলা অন্য সাধারণ মানের নির্মাতাদের নাটক থেকে আলাদা করা যায় না। তবে একটাই প্রত্যাশা থাকবে শিহাব শাহীন ফিরে আসুক নিজের ছন্দে। টিভি নাটক থেকে ওটিটি কিংবা সিনেমায় ছড়িয়ে পড়ুক বসন্ত।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন