Select Page

ডিপজল যেভাবে টিপিক্যাল ভিলেন

ডিপজল যেভাবে টিপিক্যাল ভিলেন

অনেকেই বলাবলি করে অভিনেতা ডিপজল দেশের বাণিজ্যিক ছবির নাম্বার ওয়ান ভিলেন। অনেকে তো দাবিও করে বসে। হাস্যকর দাবি তো বটেই যুক্তিহীনও। আজকে এই লেখায় বলা হবে ডিপজল কেমন ভিলেন এবং কেন ‘নাম্বার ওয়ান’ নয়।

তার আগে যারা দাবি করে ডিপজল ‘নাম্বার ওয়ান’ তাদের সে ধারণার পেছনের সমস্যাটা ফাইন্ড আউট করা যাক :

এক. তারা যখন ‘নাম্বার ওয়ান’ উপাধিটা ব্যবহার করে ডিপজলের ক্ষেত্রে তাদের মস্তিষ্কে তখন হুমায়ুন ফরীদি, রাজিব, এটিএম শামসুজ্জামান, আহমেদ শরীফ-দের মতো লিজেন্ডারি ভিলেন-দের কথা স্মরণ থাকে না। কিংবা ইচ্ছে করেই অ্যাভয়েড করে হাস্যকরভাবে। কেউ যদি বলে হুমায়ুন ফরীদি-র থেকে ডিপজল বেটার অভিনয় করে সেটা তার নির্বুদ্ধিতা তো বটেই বরং অভিনয় না বোঝাকেই মিন করে কারণ ফরীদি কোনো ছেলেখেলার বিষয় না। একইভাবে রাজিবের অভিনয়ের ধারেকাছেও ডিপজল দাঁড়ায় না। আহমেদ শরীফের ভিলেন ইমেজে ফুটে ওঠা পার্সোনালিটির সাথেও ডিপজল খাপ খায় না। এমনকি মিশা সওদাগরের প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ভিলেন হিসেবে যথেষ্ট ভেরিয়েশন আছে সেই ভেরিয়েশনের যুক্তিটার সাথেও ডিপজল ক্ষেত্রবিশেষে মিশার উপরে আসবে না।

দুই. যারা ডিপজলকে ‘নাম্বার ওয়ান’ বলে তাদের মধ্যে সস্তা বিনোদন পাবার আকাঙ্ক্ষাটা সবচেয়ে বেশি কাজ করে। সেটা হচ্ছে, অশ্লীল সংলাপ যেটা ডিপজল বলে থাকে বা তার স্টাইলে কিছু ব্যতিক্রমী উপকরণ যেমন – বিদঘুটে সংলাপ, মানুষ হত্যার নিত্যনতুন কৌশল এসব দেখে খুব সহজে গলে গিয়ে ডিপজলকে ‘নাম্বার ওয়ান’ বানিয়ে দেয়। কিন্তু ঐ স্টাইলটা যে কালজয়ী কিছু না তা আর বোঝে না।

ডিপজলের অভিনয় বা ভিলেন ইমেজ থেকে বৈশিষ্ট্য তুলে ধরলে বোঝা যাবে কিভাবে টিপিক্যাল ভিলেন হয়ে যায়।

বডি ল্যাংগুয়েজ – ডিপজলের বডি ল্যাংগুয়েজ একই রকমের। তার যতগুলো ছবিতে ভিলেনের ভূমিকা আছে খেয়াল করলে দেখা যায় একইভাবে বডি মুভমেন্ট দেখিয়ে নায়ক, নায়িকা ও অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের সাথে অভিনয় করে থাকে।
ডায়লগ ডেলিভারি – ডিপজলের ডায়লগ ডেলিভারিতে কোনো বৈচিত্র্য নেই। সব ডায়লগ একই স্টাইলে ডেলিভারি দেয়। স্লো মোশনে ডায়লগ বলে যা বিরক্তিকর।
চোখের ব্যবহার – ডিপজল ভিলেনের ভূমিকার সব ছবিতেই একইভাবে চোখ বড় বড় করে কথা বলে। ‘বড় চোখ বের করলেই বড় ভিলেন হওয়া যায়’ এটা তার ভক্তরা মে বি মনে করে বা অনেক দর্শক মনে করে কিন্তু এটা ভুল। চোখের ব্যবহার একজন হুমায়ুন ফরীদি, রাজিব, আহমেদ শরীফের যত শৈল্পিক থাকে ডিপজল তার ধারেকাছেও থাকে না।
বীভৎসতা – ভিলেন হিসেবে ডিপজলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছবিতে বীভৎসতা দেখানো। যত নিষ্ঠুর উপায়ে মানুষ হত্যার দৃশ্য দেখাতে পারবে ততই দর্শক ধরা যাবে মনে করত। কিন্তু এটা একইভাবে কাজে লাগিয়ে ভিন্ন কিছু হয়ে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত। ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ছবিতে হুমায়ুন ফরীদি মেয়েদের তিল কাটার মাধ্যমে যেভাবে সাইকো থ্রিলারের ভিলেন হয়ে ওঠেন কিংবা রাজিব যেভাবে ‘দাঙ্গা’ ছবিতে চোখ ওঠানো ও জিভ কেটে নেয়ার দৃশ্য সরাসরি না দেখিয়েও অভিনয়ের মাধ্যমে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেন, ‘ভালো মানুষ’ ছবিতে এটিএম শামসুজ্জামান কোনো ভায়োলেন্স ছাড়াই নারী পাচারকারীর চরিত্রে সমুদ্রসৈকতে নায়িকাকে যখন বলেন ‘একা নাকি’ সেখানে যে ম্যাজিকটা ক্রিয়েট হয় ডিপজলের ক্ষেত্রে এসব বৈচিত্র্যের ছিটেফোঁটাও নেই। ৫. ভুল উচ্চারণ – ডিপজলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তার ভুল উচ্চারণ। অনেকে হয়তো এটাকে তার নিজস্বতা বলবে কিন্তু সব ছবিতে এ জিনিস ব্যবহৃত হয়ে সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। ক্রিয়াপদের ‘করেছিলো’-র উচ্চারণ ডিপজলের মুখে হয়ে যায় ‘করচোলো।’ শুনতে তো বিদঘুটে লাগেই বিরক্তিও ঘটায় বেশি বেশি রিপিট হলে।

অভিনয়, স্টাইলে বৈচিত্র্যহীন এসব বৈশিষ্ট্য বলে দেয় ডিপজল একজন টিপিক্যাল ভিলেন।

এভাবে খুঁজলে তার দুর্বলতা আরো পাওয়া যাবে। সস্তা হাস্যরসের বিনোদন বা ট্রলের মজা নিতে চাওয়াটা ক্ষণিকের আনন্দ হতে পারে কিন্তু কালজয়ী কিছু না। ডিপজলের ভিলেন পরিচয়ে কালজয়ী উপাদান নেই আছে ট্রলের উপাদান। একজন হুমায়ুন ফরীদি, রাজিব, আহমেদ শরীফের ভিলেন ইমেজের বৈচিত্র্যময় ক্যারিয়ারের পাশে ডিপজল মানায়ও না। তাই তাঁদেরকে রেখে যারা ডিপজল-কে ‘নাম্বার ওয়ান ভিলেন’ বলে প্রচার করে আদতে তারা ‘নাম্বার ওয়ান’ উপাধিটাকে জাস্ট কলঙ্কিত করে। ‘নাম্বার ওয়ান’ কোনো সহজ বিষয় না এটা বিশেষ কিছু ডিপজল সেখানে টিপিক্যাল ভিলেন ছাড়া কিছু না।


মন্তব্য করুন