Select Page

ঢালিউডে বন্ধুত্বের দশ ছবি

ঢালিউডে বন্ধুত্বের দশ ছবি

বন্ধুত্বের আবেদন চিরকালীন। বন্ধুত্বের রসায়ন ঘিরে দেশ-বিদেশে নির্মিত হয়েছে অগণিত সিনেমা। বাংলাদেশে নির্মিত অন্যতম সেরা দশ বন্ধুত্বের গল্পের ছবি নিয়ে এই আয়োজন।

দোস্ত দুশমন (১৯৭৭)

বলিউডের অন্যতম ধ্রুপদী ব্যবসাসফল ছবি ‘শোলে’র (১৯৭৫) বাংলা ভার্সন বানিয়েছেন দেওয়ান নজরুল। ‘শোলে’র জয়-ভীরু এই ছবিতে হয়ে গেল জনি-রাজা। দুই বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা ও ওয়াসিম। দুই বন্ধুর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে ‘দোস্ত আমরা দুজন’ গানটিও জনপ্রিয়তা পায়। গেয়েছেন খুরশীদ আলম ও ফাহিম। এটি ছিল ওই বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। পরে ১৯৯৫ সালে এই ছবি ‘বাংলার কমান্ডো’ নামে পুনর্নির্মাণ করেন প্রযোজক-পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন। এখানে দুই বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন বাপ্পারাজ ও আমিন খান।

বন্ধু (১৯৭৮)

রাজ্জাক ও উজ্জলের বন্ধুত্বের ছবিটি নির্মাণ করেন দিলীপ বিশ্বাস। জমিদারপুত্রের চরিত্রে অভিনয় করেন উজ্জল, দাসির ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের চিত্রনাট্যে ছবিতে দেখানো হয় শ্রেণিবৈষম্যের কাঁটা পেরিয়ে বন্ধুত্ব জয়ের গল্প। ‘বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাব’—সুবীর নন্দীর গাওয়া এই গান এখনো অনেকের মুখে মুখে ফেরে।

জিঞ্জির (১৯৭৯)

‘বন্ধু’ ছবির সাফল্যের পর গাজী মাজহারুল আনোয়ার-দিলীপ বিশ্বাস জুটি পরের বছরই আরো বড় পরিসরে তিন বন্ধুর গল্প নিয়ে হাজির হন। প্রথমবারের মতো একই ছবিতে অভিনয় করেন রাজ্জাক, সোহেল রানা ও আলমগীর। বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল এই ছবির ‘সুমন রাজন মোহন, বন্ধু আমরা তিনজন’ গানটিও শ্রোতাপ্রিয় হয়। নব্বইয়ের দশকের শেষে রিয়াজ-ফেরদৌস-শাকিল খানকে নিয়ে ছবিটি রিমেক করবেন ভেবেছিলেন দিলীপ বিশ্বাস। তা আর করা হয়নি।

পুরস্কার (১৯৮৩)

সৈয়দ শামসুল হকের গল্পে কিশোর অপরাধ নিয়ে দেশের প্রথম চলচ্চিত্র। সি বি জামানের পরিচালনায় ছবিতে ফুটে ওঠে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত কিশোরদের জীবনযাপন ও তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বের গল্প। অভিনয়ে বুলবুল আহমেদ, জয়শ্রী কবির, সুমন সাহা, শাকিল। আবিদা সুলতানার গাওয়া ছবির গান ‘হারজিৎ চিরদিন থাকবে’ এখনো সমান জনপ্রিয়।

ভাই বন্ধু (১৯৮৬)

‘আমার ভাইয়ের মতো বন্ধুকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। সেই বন্ধুকে আমি ফেরত চাই’,  ছবির শেষের দিকে বন্ধু ইলিয়াস কাঞ্চনকে উদ্দেশ্য করে জাফর ইকবালের মুখের এই  সংলাপ দর্শককে কাঁদিয়েছে। ইলিয়াস কাঞ্চন ও জাফর ইকবাল দুজনের ক্যারিয়ারের অন্যতম জনপ্রিয় ছবিটির পরিচালক দারাশিকো। এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’ এ ছবিরই।

বন্ধু আমার (১৯৯২)

‘একটাই কথা আছে বাংলাতে, মুখ আর বুক বলে একসাথে, সে হলো বন্ধু, বন্ধু আমার, বন্ধু আমার’, ভারতের বাপ্পী লাহিড়ী ও মুন্না আজিজের গাওয়া গানটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বন্ধুত্ব নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় গান। সময়ের সঙ্গে এই গানের জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে। নানা সাংঘাতের মধ্যে বহু বছর পর দুই বন্ধুর মিলনকে কেন্দ্র করে ছবির গল্প। নায়ক জাফর ইকবালের মৃত্যুর পর মুক্তি পায় আওকাত হোসেনের ছবিটি। ফারুক ও জাফর ইকবালের বন্ধুত্বের গল্প ছুঁয়ে যায় দর্শক মন।

দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬)

মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলামের এই ছবি দর্শক-সমালোচকদের খুব প্রিয়। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর বাবার সঙ্গে থাকে দীপু। বাবার খেয়ালি মন আর চাকরির জন্য প্রায়ই নতুন স্কুলে ভর্তি হতে হয় দীপুকে। নতুন স্কুলে দীপুর পরিচয় হয় তারিকের, মারামারি আর অকারণ ঝগড়া করা যার স্বভাব। ঘটনাচক্রে দীপু আর তারিক হয়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই জুটি পরাজিত করে দেশদ্রোহী এক ডাকাতদলকে। দীপু চরিত্রে অভিনয় করে সেরা শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার পায় অরুণ সাহা।

ব্যাচেলর (২০০৪)

ঢাকা শহরের একদল অবিবাহিত বন্ধুর দৈনন্দিন জীবনযাত্রার টানাপড়েনের গল্প নিয়ে ছবিটি। আনিসুল হকের রচনায় নির্মাণ করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা আলাদা গল্প। দিন শেষে নিজেদের সব মান-অভিমান ভুলে আবার তারা একত্রিত হয়, আড্ডায় মেতে ওঠে। বিভিন্ন বয়সী বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন হুমায়ুন ফরীদি, ফেরদৌস, আহমেদ রুবেল, হাসান মাসুদ, আরমান পারভেজ মুরাদ ও মারজুক রাসেল।

দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭)

হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে তৌকীর আহমেদের ছবি। তারুণ্যের জয়গান, ভালোবাসা, পারিবারিক সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যেও ছবিতে ফুটে উঠেছে বন্ধুত্ব। রিয়াজ, জাকিয়া বারী মম, মোশাররফ করিম, বিন্দু, মামনুন ইমন, মুনমুনসহ অনেক তারকাসমৃদ্ধ ছবিটি অনেকের প্রিয়।

আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১)

মফস্বল শহরের স্কুলের ছাত্র রাশেদ আর তার বন্ধুরা মিলে উদ্ধার করে এক বন্দি মুক্তিযোদ্ধাকে। এরপর মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে যায় রাশেদও এবং রাজাকারের গুলিতে শহীদ হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক বছর পর বন্ধু ইবু তার ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে আসে কিশোরবেলার স্মৃতিমাখা সেই স্থানে, তখন মনে পড়ে রাশেদকে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলামের এই ছবি। রাশেদের ভূমিকায় চৌধুরী জাওয়াতা আফনান। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।

এই দশটি ছাড়াও বন্ধুত্বের গল্পে আরো বেশ কিছু ছবি নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘লালু ভুলু’, ‘অভিযান’, ‘নারীর মন’, ‘জাগো’ ও ‘মেঘের কোলে রোদ’।

*লেখাটি কালের কণ্ঠের সাপ্তাহিক আয়োজন রঙের মেলায় প্রথম প্রকাশিত


About The Author

হৃদয় সাহা

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

Leave a reply