Select Page

তারেক মাসুদ : অনেক স্বপ্নের সমাধি

তারেক মাসুদ : অনেক স্বপ্নের সমাধি

আমি তখন যায়যায়দিনে কাজ করি। তখন বর্ষাই ছিল, সম্ভবত ২০০৭ সালের আগস্টও বা জুলাই, প্রবল বর্ষণের এক সন্ধ্যায় তারেক মাসুদের মনিপুরি পাড়ার বাসায় গিয়েছিলাম তার সাক্ষাৎকার নিতে। আমরা প্রায় কাকভেজা। বৃষ্টির মধ্যে ড্রয়িং রুমের দরজা বন্ধ করে কথা বলছিলেন। বাসায় সম্ভবত তেমন কেউ ছিল না। বারান্দার দিকের দরজা খোলা ছিল। সে দরজা দিয়ে পানি এসে তার ঘরটি প্লাবিত করেছিল। এই দুর্ঘটের কথা বিশেষভাবে মনে আছে। আর মনে আছে তারেক মাসুদের স্টাইলের কথা। তার বাসার আসবাবের কথা। বসার ঘর পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, অভিজাত। তারেক মাসুদের স্টাইলের মধ্যে কোথাও সত্যজিৎ রায় আছে মনে হচ্ছিল। কথা খুব মেপে, গুছিয়ে বলেন। সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার সময় দেখলাম নিজেও রেকর্ডার অন করলেন। সাক্ষাৎকার ট্রান্সক্রিপ্ট করে তাকে একবার দেখিয়েও নিতে হয়েছিল।

তারেক মাসুদের সিনেমার মনোযোগী দর্শক অনেকের সঙ্গে আমিও। বাংলাদেশে ৮০ দশকের ঢাকায় যে ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট তৈরি হয়েছিল তার শ্রেষ্ঠ ফসল তারেক মাসুদ। বস্তুত, এরশাদ বিরোধী রাজনৈতিক তৎপরতার ভেতরে ভেতরে তরুণদের মধ্যে নতুন উত্থানের একটা চেষ্টা তখন দানা বেঁধেছিল। সিনেমায়, চিত্রে, কবিতায়, গল্পে তার প্রভাব পরে অনেক স্পষ্ট হয়েছিল। তারেক মাসুদ এ সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও যোগাযোগের অগ্রগণ্য ব্যক্তি ছিলেন।

আদম সুরত, মুক্তির গান, মুক্তির কথা, নারীর কথাসহ বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন তিনি। নাইন ইলেভেন পরবর্তী পরিস্থিতিতে তৈরি ‘মাটির ময়না’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হয়েছিল। মাটির ময়নার পর নির্মাণ করেছেন ‘অন্তর্যাত্রা’। পরে ‘নরসুন্দর’ ও ‘রানওয়ে’ নির্মাণ করেছেন। আমরা যখন কথা বলছিলাম তখন তিনি জানিয়েছিলেন ৪৭-এর দেশ বিভাগের সময়ের ওপর নির্মিতব্য নতুন মুভি (কাগজের ফুল) নিয়ে কাজ করছেন। তিন বছরের ডেস্ক ওয়ার্ক শেষ করার পর শীঘ্রই শুরু হবে এর শুটিং। বড় আয়োজনের এ মুভিটি মাটির ময়নার প্রিকোয়েল/সিকোয়েল। মাটির ময়নার আগের কাহিনী হবে সেটি।

মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও ধর্ম ও পরিচয়ের সমস্যা তারেক মাসুদের খুব আগ্রহের বিষয় ছিল। মাটির ময়না থেকে শুরু করে রানওয়ে পর্যন্ত তিনি যে আখ্যান বয়ে চলেছিলেন তা খুব একটা পছন্দ করতে পারিনি আমি। কিন্তু সেটা তাত্ত্বিক প্রশ্নে। কিন্তু চলচ্চিত্রকার হিসেবে তার চিন্তা ও তৎপরতার গ্রাহক আমরা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারেক মাসুদের গুরুত্ব অনেক। বেঁচে থাকলে হয়তো তিনি আরও অনেক সিনেমা তৈরি করতেন। কিন্তু তিনি যা তৈরি করেছেন ইতিমধ্যে সেসব কম নয়। বাংলাদেশের সিনেমাকে নতুন একটা দিশা তিনি দিয়েছেন। তার মৃত্যুর পর সে পথে সিনেমা আর আগাতে পারবে না বলেই আমার আশঙ্কা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাকে ঘিরে আমাদের একগুচ্ছ স্বপ্নে সমাধি ঘটলো। পরিচালক হিসেবে তার বেড়ে ওঠা, মুভি নির্মাণ, আগ্রহ ও অনুসন্ধান নিয়ে কথা বলেছিলেন।

সিনেমায় আপনার শুরুর দিকটা কেমন ছিল?

আমি কাকতালীয়ই বলবো, আমার ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়নি। পড়েছি মাদ্রাসায়। ওখানে তো ছবি আঁকাই নিষিদ্ধ ছিল, সিনেমা তো তার চেয়েও বেশি। যে বয়সে মানুষ প্রচুর মুভি দেখে, সে বয়সে আমার মুভি দেখাই হয়নি। এ জন্যই হয়তো সিনেমার প্রতি আমার বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। যখন আমি মাদ্রাসা থেকে সরাসরি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে এলাম তখন কাকতালীয়ভাবে ফিল্ম সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত হলাম। এতো অল্প বয়সে ফিল্ম সোসাইটির সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুযোগ হয় না কারো। সাধারণত ইউনিভার্সিটিতে ওঠে ফিল্ম সোসাইটিতে যুক্ত হয় লোকে। কিন্তু ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারেই ফিল্ম সোসাইটির সঙ্গে আমার যোগাযোগ। আমি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়েছি।

আমার তথাকথিত বাণিজ্যিক বা জনপ্রিয় মুভি দেখার সুযোগ হয়নি। আমার শুরুটা হয়েছে ভালো মুভি দেখার মাধ্যমে আর তা ছিল সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী উপন্যাস পড়ে শুরু হয়। কিন্তু আমি মুভি দেখে বিভূতিভূষণ পড়েছি। যারা মাটির ময়না দেখেছে তারা বুঝতে পারবে এটা সত্যজিৎ রায়ের প্রতি একটা টৃবিউট। মাদ্রাসায় আমাকে মুভি সম্পর্কে যে ধারণা দেয়া হয়েছে তাতে এটা যে শুধু বেশরিয়তি ব্যাপার তাই নয়, নোংরা নাচ-গান, হাবিজাবি নিয়ে তৈরি চটুল জিনিস। বুঝলাম, সিনেমা জীবনের কতো কাছাকাছি হতে পারে। এটা আমার জীবনের একটা বিরাট টার্নিং পয়েন্ট। কিছু প্রামাণ্যচিত্র দেখারও সুযোগ হলো। এর সঙ্গে যুক্ত হলো ইতিহাস নিয়েও আমার আগ্রহ। যে বয়সে বই পাঠ করাটা চাপিয়ে দেয়া বিভীষিকা, সে বয়সে বই পাঠ থেকে বঞ্চিত ছিলাম বলে ইন্টারমিডিয়েট বয়স থেকে অমনিভোরাস (সর্বভুক) পাঠক হয়ে উঠেছিলাম, যা পাই তাই পড়ি।

আমি কিন্তু নির্গান ও নির্জ্ঞান। কিন্তু আমার পরিবার খুবই সাঙ্গীতিক, তাও আবার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। মুক্তির গানের মূল ভোকালিস্ট মাহমুদুর রহমান বেণু আমার বড় কাকার ছেলে। এ সাঙ্গীতিক পরিবেশ আমার জন্য সৌভাগ্য। মাদ্রাসায় ছবি আকা নিষিদ্ধ ছিল বলে হয়তো আর্ট কলেজের প্রতি আমার একটা অদম্য আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে আমাকে বেশি পাওয়া যেতো আমার ডিপার্টমেন্ট অপেক্ষা আর্ট কলেজে। আমার বন্ধু-বান্ধব বেশি ছিল সেখানকার। আমি হিস্টৃতে ছিলাম। কিন্তু ঢালী আল মামুন, শিশির ভট্টাচার্য, ওয়াকিল, হাবিব, নোটন- এরা আমার বন্ধু ছিল। তাদের যারা শিক্ষক ছিলেন তাদের সঙ্গেও আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তখন আর্ট কলেজে এতো নিয়মিত ছিলাম যে, ওখানকার অনেক ছাত্র মনে করতো আমি বোধহয় আর্ট কলেজের ছাত্র। ওখানকার অনেক ছাত্র অপেক্ষা আমি ছিলাম নিয়মিত। সেই সূত্রে কিন্তু সুলতানের প্রতি আমার আগ্রহ। ইউনিভার্সিটির ছাত্র অবস্থায় একজন চিত্রশিল্পীর ওপর মুভি বানানো আমার ধৃষ্টতা বা দুঃসাহস।

তখনই কি আহমদ ছফার সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা?

হ্যা। তখন সারাক্ষণ আমরা ছফাভাইয়ের কথা শুধু যে শুনেছি তাই নয়, গিলেছিও। তার বাইরের ব্যাপারটায় আমরা যতোটা না ভুলেছি তার চেয়ে বেশি তার ভেতরটা আমাদের স্পর্শ করেছে। তিনি যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শেক্সপিয়ার কোট করে যাচ্ছেন, ফাউস্ট বলে যাচ্ছেন, কালিদাস বলে যাচ্ছেন, রবীন্দ্রনাথ বলে যাচ্ছেন, ফটোগ্রাফিক মেমোরি থেকে ইতিহাস বলে যাচ্ছেন, ভলতেয়ার রুশো থেকে শুরু করে সবকিছু, সেটা আমাদের ভেতর গেথে যাচ্ছে। লাইব্রেরি চত্বরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার মনোলগ চলছে আর আমরা শুনে যাচ্ছি। সুলতান সম্পর্কে আগ্রহ ছফাভাইয়ের কারণেই।

আমার সঙ্গে যারা চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন করতেন তাদের মধ্যে অনেকে প্রতিভাবান ছিলেন বলে মনে করি। কিন্তু ক্রিজে টিকে থাকার মন-মানসিকতা তাদের ছিল না। আমাদের হয়তো স্কোর কম হয়েছে কিন্তু আমরা টিকে থেকেছি।

খসরু ভাইয়ের (মোহাম্মদ খসরু) কথা বলতে হয়। তিনি তো একটা প্রতিষ্ঠান। তার পকেট থেকেই আমরা সব বেরিয়েছি। চলচ্চিত্র সংসদের সঙ্গে ছিলাম কিন্তু কখনোই ভাবিনি মুভি নির্মাণ করবো। যে কারণে সাহিত্যের সঙ্গে আছি, লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে আছি, চিত্রকলার সঙ্গে আছি, সঙ্গীতের সঙ্গে আছি, সে কারণেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে ছিলাম। সঙ্গীতে আশির দশকে যারাই কাজ করেছেন, যারা তাত্ত্বিকভাবে বা প্র্যাকটিকালি যুক্ত ছিলেন তাদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমি সাঙ্গীতিক পরিমণ্ডলে তৎপর ছিলাম, সক্রিয় ছিলাম। সিনেমার জন্য বোধহয় এগুলো কাজে লাগে। এটা জ্যাক অফ অল ট্রেডসের মতো কাজ। চিত্রকলা, সাহিত্য সবকিছুই সামান্য জানা। এ জানার সুযোগ হয়েছিল ওই সম্পৃক্তির মাধ্যমেই। এটাই হয়তো পরে সিনেমায় আমাকে সাহায্য করেছে। যেহেতু সাহিত্য, চিত্রকলা, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে ওই সামান্যের বাইরে আমার সুযোগ হয়নি, সিনেমায় এসে সেটা কাজে লেগেছে। সুলতানকে নিয়ে মুভি করতে এসে আমি তখনো ভাবিনি, আমার পেশা হবে চলচ্চিত্র নির্মাণ।

কতো সালে আদমসুরত শুরু করেছিলেন?

শুরু করেছিলাম ১৯৮২ সালে এবং শেষ করলাম ১৯৮৯-এ। মাঝখানে ভিডিওতে একটা মুভি করেছিলাম, সোনার বেড়ি। নারী নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে ডকুমেন্টারি। তখনো অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে বিটিভির বাইরে প্রাইভেটলি ভিডিও ফরমাটে কোনো মুভি হয়নি। সুলতান বানিয়ে কিন্তু আমি রণক্লান্ত হয়ে রণে ভঙ্গও দিয়েছিলাম। মুভিটা শেষ করলাম সাত বছর লাগিয়ে। যা হয় ওই বয়সে, ক্যারিয়ারেরও স্বপ্ন নেই, নেম-ফেমেরও তোয়াক্কা করি না।

সুলতান ভাইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ তার বোহেমিয়ান লাইফ নয়। আমার জীবন সুলতান ভাইয়ের চেয়ে কম বোহেমিয়ান ছিল না। আজ দিনে খাবার আছে তো রাতে নেই। এখন এখানে আছি তো এই নেই, এভাবে কেটেছে। আমাদের বন্ধু-বান্ধবও ও রকম ছিল। সুলতান ভাইয়ের ওপর মুভি করার একটা কারণ ছিল আর তা হলো, তার সংস্পর্শে থাকা। নানা লোকোৎসবে যেতাম। বিজয় সরকার তখন জীবিত, তার গানের অনুষ্ঠানে যেতাম। বিচিত্র সব লোকমেলায় যাওয়া হতো। গ্রামে বড় হয়েছি, কিন্তু গ্রামটাকে আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারিনি গ্রামের ছেলে হিসেবে। দ্বিতীয়বার যখন সুলতানের চোখ দিয়ে গ্রাম দেখেছি তখন আমি প্রকৃত গ্রামবাংলাকে আবিষ্কার করেছি। মুভিটা হয়ে গিয়েছিল বাইপ্রডাক্ট।

মুভির শেষ পর্যায়ে ক্যাথরিনের সঙ্গে আমার পরিচয়। সুলতান মুভিটা হয়তো বোহেমিয়ানপনাতেই শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচয়ের পর ওই ফিল্মটা শেষ করতে আমার ওপর তাগাদা ছিল। ও মুভির শেষ পর্যায়ে যুক্ত হলো। ও জানে না কিছু। কিন্তু আমার সম্পাদক অসুস্থ ছিলেন বলে ও বললো, দেখি না কি হয়। এভাবেই ও আমার মতো কচু গাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয়ে গেল। আরেকটা কাকতালীয় ঘটনায় আমার জীবনে ক্যাথরিনের আবির্ভাব। সেই কাকতালীয় ঘটনার অংশ হিসেবে আমেরিকায় যাওয়া। আমেরিকায় না গেলে লিয়ার লেভিনের সঙ্গে পরিচয় হতো না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিশ ঘণ্টার ফুটেজ পাওয়াও যেতো না। আশির দশকে আমার বন্ধু তানভীর, মোরশেদ সবাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেছিলেন। আমি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করিনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমার আলাদা দুর্বলতা ছিল, তা-ও নয়। আমি কাকতালীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের মুভি নির্মাতা।

কিন্তু ব্যাপারটা তো ঘটে গেছে। আপনি একটি না, বেশ কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মুভি বানিয়েছেন।

হ্যা, তা ঠিক। মাটির ময়না হয়তো প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধেরই মুভি। মুক্তিযুদ্ধ তো শুধু ওই নয় মাস নয়, এর পটভূমি ১৯৬৯, ১৯৭০ সালের। মুক্তির গান কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মুভি নয়, যুদ্ধের মুভি তো নয়ই। মুক্তিযুদ্ধের অনুষঙ্গ। আমি কিন্তু এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের যে মূল বিষয় যুদ্ধ, তা নিয়ে কোনো মুভি বানাইনি। মুক্তির গান হচ্ছে যুদ্ধের সবচেয়ে প্রান্তিক বিষয়, অর্থাৎ বন্দুকের ধারে-কাছেও নয়। গান দিয়ে যুদ্ধ। যারা সাংস্কৃতিক কর্মী তাদের তো সবচেয়ে পেছনের ভূমিকা। এই আলোচিত ও অনালোকিত দিকটা আমি তুলে ধরেছি। মুক্তির কথা কি? মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্নভঙ্গ, সেটা নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ করে কি হলো, সেই যে তিক্ততা, বিটারনেস। আবার নারীর কথা, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে। যাদের মুক্তিযুদ্ধে কোনো অংশগ্রহণ নেই বলে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত তাদের নিয়ে। অর্থাৎ আমরা সেন্ট্রাল বিষয়ের আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করেছি। সেটা কিন্তু অসচেতন নয়, সচেতন চেষ্টা।

অনেকে মাটির ময়নাকে ইসলাম বিষয়ক, মাদ্রাসা বিষয়ক মনে করে। মুভিটা শেষ হয়েছে নাইন-ইলেভেনের আগে। আমি জানতাম না নাইন-ইলেভেন হবে। নাইন-ইলেভেন না হলে এটা আন্তর্জাতিক কেন দেশীয় প্রাসঙ্গিকতা পেতো কি না সন্দেহ। কিন্তু হঠাৎ করে এটা নাইন-ইলেভেনের পর টপিকাল হয়ে গেল।

কেউ যদি খেয়াল করে তবে দেখবে, এটা নিজের শৈশবের সঙ্গে এক ধরনের বোঝাপড়া। কামিং অফ এজ, সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা। গ্রামবাংলার সংস্কৃতির প্রতি একটা টৃবিউট। উগ্রতা বনাম সহনশীলতার সম্পর্ক।

তেমনি অন্তর্যাত্রা, অনেকে বলে এটা প্রবাসীদের নিয়ে মুভি। যেহেতু এখন পর্যন্ত প্রবাসীদের নিয়ে কোনো মুভি হয়নি সেহেতু কেউ বলতে পারে। কিন্তু এটা প্রবাসীদের নিয়ে মুভি নয়। এটা এক ধরনের শেকড় সন্ধান, এক ধরনের আত্মপরিচয় খোজার ব্যাপার এবং সম্পর্ক নিয়ে তৈরি। মাটির ময়নার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কোথাও হয়তো একটা গাঢ় সম্পর্ক আছে।

আমার মনে হয়েছে, এই প্রথম আপনি পুরোপুরি ফিচার ফিল্মের দিকে গেলেন। মাটির ময়না অটোবায়োগ্রাফিকাল বলে অনেকটা ডকুমেন্টারি। এর আগের মুভিগুলোও ডকুমেন্টারি। আদমসুরত থেকে মাটির ময়না পর্যন্ত আপনার কি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্কুলিং হয়েছিল?

এক ধরনের আনলার্নিং হয়েছিল। ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ আছেন, জেমস লিহি আছেন। জেমস লিহি বৃটিশ। ফাদারের মধ্যে যেমন কানাডার কিছুই নেই, আমাদের থেকে অনেক বেশি তিনি দক্ষিণ এশিয়ান বা ইনডিয়ান তেমনি জেমস লিহির অস্থিমজ্জায় ছিল আফৃকান সিনেমা, ল্যাটিন আমেরিকান সিনেমা। তার একটা মাসব্যাপী কর্মশালা হয়েছিল ঢাকায়। সেটা আমার চোখ একদম খুলে দিয়েছিল। আমার সঙ্গে যারা ছিলেন সবারই কম-বেশি চোখ খুলে দিয়েছে।

সিনেমা তাত্ত্বিকভাবে দেখা, রাজনৈতিকভাবে দেখা, শৈল্পিকভাবে দেখা, নৃতাত্ত্বিকভাবে দেখা এ মাল্টিপার্সপেক্টিভ, মাল্টিপ্লিসিটি ব্যাপারটার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। যেটার এখন চর্চা হচ্ছে সেটা আমরা ১৫-২০ বছর আগে জানার সুযোগ পেয়েছিলাম। এ ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ জাক লাঁকা বোঝালেন। সিনেমার সঙ্গে লাঁকার কি সম্পর্ক। আমি সৌভাগ্যবান নই? কোথায় একটা মাদ্রাসা পড়া গ্রামের ছেলে। এখানে ছোটখাটো মাদ্রাসায় আজান দেয়ার কথা অথবা মৌলবি হওয়ার কথা।

যে দুর্ভাগা দেশে সিনেমার কোনো স্কুল নেই সে দেশে আমি সিনেমা বানাচ্ছি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পুনার স্কলারশিপও যোগাড় করেছিলাম কিন্তু এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর প্রথমেই সব ইনডিয়ান স্কলারশিপ বাতিল করে দিলেন। সঙ্গে আমারটাও গেল। সৌভাগ্যক্রমে আমি কলকাতায় গিয়ে ফাদার প্রতিষ্ঠিত সিনেমা শিক্ষা কেন্দ্রে চিত্রবাণীর এক মাসের কোর্স করেছি। ওখানে যারা এখন একাডেমিকভাবে সিনেমার বড় পন্ডিত তাদের সঙ্গে চিত্রবাণীতে কোর্স করার সুযোগ পেয়েছি।

এখন তো আমেরিকার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পুরোটাই কর্পরেট। এমন কি বৃটিশ কাউন্সিলও আংশিকভাবে কর্পরেট হয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবসা। কিন্তু তখন তারা নানা চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক পণ্ডিত আনতো। চিত্রকলা, কবিতা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের ব্যাপক কর্মশালা করার সুযোগ হতো। কিন্তু এখনকার তরুণরা এগুলো থেকে বঞ্চিত। আশির দশক পর্যন্ত গ্যেটে ইন্সটিটিউট ক্ষীণভাবে হলেও চলচ্চিত্র শিক্ষা বা চোখ খুলে দেয়ার মতো কর্মশালাগুলোর আয়োজন করতো। এখন তাও করে না। নিবুনিবুভাবে আলিয়স ফ্রসেজ আছে। তাও খুব ক্ষীণ।

‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

আপনার মুভি দেখে কিন্তু মনে হয় এর পেছনে দীর্ঘ একাডেমিক প্রস্তুতি আছে।

না, সে রকম কিছু ছিল না। কিন্তু আগ্রহটা ছিল। চলচ্চিত্রকে একাডেমিকভাবে শেখার, শিল্প-সাহিত্যকে একাডেমিকভাবে বোঝার একটা আগ্রহ ছিল। এখনকার তরুণরা পুরনো মুভি দেখার প্রয়োজনও বোধহয় অনুভব করে না। সময় কোথায়? কিন্তু আমরা তখন জনপ্রিয় মুভিও দেখতাম। আলমগীর কবির যখন আমাদের কোর্স নিতেন তখন ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট দেখতে বলতেন। ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ যখন শোলে নিয়ে বলতেন তখন আমরা ভাবতাম, এ কি, শোলে কেন?

পরে দেখলাম, সত্যজিৎ রায়কে যখন জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, আপনি শিখেছেন কোথায়? তিনি বলেছেন, জন ফোর্ডের কাছে। পুরো কাউবয় সিনেমা! তিনি বলছেন, আমি ক্রাফটটা শিখেছি ওখান থেকে। ক্রাফটটা তো বড় জিনিস। পরিচালনা তো কেউ শেখাতে পারবে না। তিনি ১৯৪৮ সালে একটা লেখা লিখেছিলেন, মুভি বানানোর প্রায় চার-পাচ বছর আগে। নাম হোয়াট ইজ রং উইথ ইনডিয়ান সিনেমা। ওখানে তিনি মেলোড্রামাটিক অভিনয়, জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন সিনেমার কথা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেই প্রত্যয় থেকেই তিনি পথের পাঁচালী তৈরি করলেন। পথের পাঁচালী থেকে বাংলাদেশ তো দূরের কথা পশ্চিমবঙ্গের সত্যজিত পরবর্তী নির্মাতারাও সেই রিয়েলিটি থেকে শিখতে পারেননি। অপেশাদার শিল্পীর কাছ থেকে কি অসাধারণ ন্যাচারাল অভিনয় আদায় করেছেন।

বিশাল প্রদীপের কাছ থেকে নিজেকে আলোকিত করার যে সুযোগ পেয়েছি সেটা কিন্তু এক ধরনের সৌভাগ্য। সচেতনভাবে যদি চাইতাম ‘আমি শিখবো’, তাহলে হতো না। সুলতান ভাইয়ের সঙ্গে সময় অপচয় করে শিখেছি। ওয়ার্কশপগুলো করেছি। এগুলো সবই কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এগুলো কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নয় যে, কালকে টেলিভিশনে নাটক বানাবো বা সিনেমার ডিরেক্টর হবো। মুভি নির্মাণের প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে হঠাত আবিষ্কার করেছি যে, আমার নেশাটা পেশা হয়ে গেছে।

কখনোই ভাবিনি নির্মাতা হবো। বিনয় করে বলছি বলে নয়। এটা এ কারণে যে, চাকরি আমার দ্বারা হবে না, এটা অনেক আগেই বুঝে গিয়েছি, ব্যবসা হবে না বুঝে গিয়েছি। আমার দক্ষতা বা ক্ষমতা কোথায় আমি কখনোই বুঝতে পারিনি। কালকেও যদি আয়-রোজগার ও শান্তি পাওয়ার মতো কাজ পেয়ে যাই তবে সিনেমাকে আজই ত্যাগ করতে রাজি আছি। এটা খুবই একটা এক্সট্রোভার্ট মাধ্যম। এর প্রধান প্রক্রিয়াটা নাথিং কৃয়েটিভ, খুবই প্রোজেইক। মুভির চিত্রনাট্যের সময় আমি একটু আনন্দ পাই আর মুভির শেষ পর্যায়ে সম্পাদনার শেষে গিয়ে একটা কৃয়েটিভ আনন্দ পাই। কিন্তু মাঝখানেরটা একটা আর্মি রান করানোর মতো কাজ। অনেকে এনজয় করে সেটা। আমি এনজয় করি না। ক্রাউড হ্যান্ডল করা, ম্যানেজমেন্ট, অর্থ ম্যানেজমেন্ট সবকিছু মিলিয়ে। আর শুটিংয়ের সময় আমি যে আমিকে পাই সে আমি না। আমার সঙ্গে যারা কাজ করে তারা জানে আমি খুব আনপ্লেজেন্ট মানুষ। আমি ডিমান্ডিং। আমি জানি, আমি যদি এখন ভালো মানুষের মতো, ‘না না ঠিক আছে, কিছু হবে না, অসুবিধা নাই, এখন করো নাই পরে হবে,’ বলি তাহলে হবে না। আই অ্যাম রেডি টু বৃং হেল টু মাই কাস্টস অ্যান্ড ক্রুজ। আমি যদি এখন তাদের কাছে জনপ্রিয় ও ভালো মানুষ হতে চাই তবে হয়তো জনপ্রিয়ই হবো কিন্তু পরে তো আমি এটা সম্পাদনার টেবিলে মেরামত করতে পারবো না। ফলে আই বিকাম ভেরি ডিমান্ডিং। আর এ প্রক্রিয়ায় আমি খুব আগলি পারসনে পরিণত হই। এটা আমি পছন্দ করি না। ওটা আমি নই।

আপনার পরের মুভি কী নিয়ে?

কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করে আপনার পরের মুভি কবে শুরু হচ্ছে তখন হাসি। মানুষ মুভি নির্মাণ বলতে মনে করে শুটিংটা। কিন্তু আমি মনে করি প্রস্তুতির বাস্তবায়ন হয় শুটিংয়ের মাধ্যমে।

গত তিন বছর যে মুভিটা নিয়ে প্রধানত কাজ করছি সেটা ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের প্রেক্ষাপটে বড় আয়োজনের বড় আয়তনের একটি কাহিনী। যেটা বাজেটে মাটির ময়নাকে ১৪ গুণ ছাড়িয়ে যাবে। এই সিনেমার প্রস্তুতির ফাকে কিন্তু অন্তর্বর্তী কাজ হিসেবে অন্তর্যাত্রা তৈরি হলো।

এর কাহিনী কি আপনারই?

সব মুভির ভেতরই যেমন আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা থাকে এটাতেও তেমনি থাকবে। অভিজ্ঞতার বাইরে যাই না আমি। অন্তর্যাত্রাও কিন্তু আমাদের নিজেদের যাত্রা। যদিও এটা ১৯৪৭-এর কিন্তু এক অর্থে মাটির ময়নার সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে। এটা একটা পৃকুয়াল। এই যে কাজী আমার বাবা, তার তরুণ বয়সের ফায়ারব্রান্ড, র‌্যাডিকাল অবস্থা নিয়ে। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতায় ছিলেন। এই তরুণ কাজীর গল্প।

নাম ঠিক হয়েছে?

হয়েছে। কিন্তু বলবো না। ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগটা এক বিচিত্র কারণে ওভারশ্যাডোড। ১৯৭১ আমাদের আচ্ছন্ন করেছে বলে ১৯৪৭ নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি। কিন্তু এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। কিন্তু ১৯৪৭ খুবই কানেকটেড। এমন কি আজকের বাংলাদেশের সঙ্গেও কানেকটেড। এ মুভিটি তৈরি হলে মাটির ময়না মুভিটি সিকোয়েল হয়ে যাবে। মাটির ময়না মুভিটি বুঝতে সুবিধা হবে। এই যে আমরা খণ্ড খণ্ডভাবে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন সময় তুলে ধরি হিউম্যান স্টোরির ব্যাকড্রপ হিসেবে তার মধ্যে কিন্তু অখ- প্রয়াস আছে আমাদের। যদি বেচে থাকি তবে আমার ইচ্ছা আছে আর্লি ইস্ট ইনডিয়া কম্পানির দিকে ফিরে যাওয়ার। ফাউন্ডেশন অফ ইস্ট ইনডিয়া কম্পানি। যেটা আজকের বিশ্বে খুবই প্রাসঙ্গিক। গ্লোবালাইজেশন, ইউনিপোলার ওয়ার্ল্ড হচ্ছে, মার্কেটভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠছে।

১৯৪৭ সালের মুভিটাই শেষ করতে পারবো কি না জানি না। এ বছরের আগস্টে শুটিং শুরু হবে আশা করছি। স্কৃপ্ট রেডি। তিন বছর লেগেছে, রিসার্চ হয়েছে প্রচুর। কলকাতাসহ অনেক জায়গায় শুটিং হবে। আয়োজনে এটা একসঙ্গে ইনডিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে রিলিজ করার ইচ্ছা আছে।

যতোদূর বুঝতে পেরেছি আপনার স্কুলিংটা সত্যজিৎ রায় ঘরানার? অন্তর্যাত্রা দেখে এটা আমার আরো বেশি মনে হয়েছে।

ভেরি মাচ। কেন মাটির ময়নাও তো। মাটির ময়নার যে স্ট্রাকচারটা, তাতে এক ধরনের ফুয়িডিটি আছে কিন্তু সেটা সত্যজিৎ রায়ের মুভির মধ্যেও থাকে। তার ব্যাকগ্রাউন্ড গ্রাফিক আর্ট। ওই গ্রাফিক কমপ্যাক্টনেস আছে তার মুভির মধ্যে। খুব স্ট্রাকচারড, ভেরি স্লো পেসড একদম মেজারড। আমি মেজারমেন্ট ছাড়া মুভি করি না। আমি ঋত্বিকে মতো রাগেড মুভি করি না, ওটারও গ্রাফিক বিউটি আছে। আমি ওটাকে ছোট-বড় করবো না। আমার মুভিতে এ পর্যন্ত রাগেডনেসের দিকে নয়, সিমপ্লিসিটির দিকে গিয়েছি। কোনো জায়গায় যেন চটক, কোনো জায়গায় যেন গিমিক, কোনো জায়গায় যেন একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এটা আমি অ্যাভয়েড করি। কিন্তু আমার রুচির যারা উল্টো মুভি করে আমি তাদের সবচেয়ে পছন্দ করি। অনেকে আমাকে বলে, আপনি কেন লিখে, বলে ফারুকির মুভির প্রশংসা করেন। আমি ঠিক ওই টেমপারামেন্টের নই। কিন্তু সবাই আমার মতো হবে কেন। হোয়াই নট উই সেলিব্রেট ডাইভারসিটি? এই জিনিসটাকে আমি চলচ্চিত্র সংস্কৃতিতে প্রয়োজনীয় মনে করি। আমাদের টলারেন্স বাড়াতে হবে। আমি সত্যজিতের মতো মুভি বানাবো কিন্তু ঋত্বিককে আমি ফেলে দেবো কেন?

সত্যজিৎ রায় ছাড়া আপনার স্কুলিংয়ের ভেতর আর কোন কোন ডিরেক্টরকে আপনি অন্তর্ভুক্ত করতে চান?

আমার শৈশবের কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক, আমাকে ধর্মের সঙ্গে ডিল করতে হয়েছে। শৈশবে আমি এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। তরুণ বয়সে নিজের মধ্যে অ্যান্টিরিলিজিয়াস রিঅ্যাকশন হয়েছে। বাই দি টাইম আমি যখন মাটির ময়না মুভি করলাম তখন আমি দেশের বাইরে। আমি যখন ক্যাথরিনকে এ গল্প বললাম তখন সে বললো এটা নিয়ে মুভি করো। আমার মধ্যে যে ভাবনাটা এলো সেটা কিন্তু দেশ থেকে দূরে থাকার কারণে পাওয়া একটা বাড়তি পার্সপেক্টিভ। দূর থেকে যখন দেখলাম তখন বুঝলাম যে সবকিছুই তো রিঅ্যাক্টিভভাবে দেখা ঠিক নয়। এটাকে নির্মোহভাবে নৃতাত্ত্বিকভাবেও তো দেখা যায়। ধর্মটাকে যদি আমি সংস্কৃতি হিসেবে, ওই সময়ের একটা পারিপার্শ্বিকতা হিসেবে দেখি, চলচ্চিত্রের ম্যাটারিয়াল হিসেবে দেখি, তখন ধর্মকে একহাত দেখে নিতে হবে, এ চলচ্চিত্রের মানসিকতা আর ওইভাবে কাজ করে না। আপনি যদি আবার মুভিটা দেখেন তবে বুঝতে পারবেন এই নাইন-ইলেভেন না হলে সেকুলারিস্টরা এটাকে প্রোইসলামিক মুভি হিসেবে চিহ্নিত করতো।

আব্বাস কিরোস্তামির প্রভাব আমার ওপর আছে, তার সিমপ্লিসিটির কারণে। যেসব চলচ্চিত্রকারের ছোটবেলা ধর্মের মধ্য দিয়ে কেটেছে এবং যারা ধর্ম সংশ্লিষ্ট শৈশবকে মুভির কাজে লাগিয়েছে তাদের মুভির সঙ্গে আমি নিজেকে রিলেট করতে পারি। বার্গম্যান, বুনুয়েল, কার্ল ড্রায়ার, ওজু, ব্রেসো। আমার এখনকার অবস্থান হলো, আমি ধর্ম বিরোধী নই। ধর্মাসক্তও নই। কিন্তু আমি এক্সট্রিমলি ইন্টারেস্টেড ইন রিলিজিয়ন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মাহবুব মোর্শেদ

লেখক ও সাংবাদিক

মন্তব্য করুন