দরদ: Not Shakib Khan’s fault
‘দরদ’ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হলেও এটা আদ্যপ্রান্ত ভারতীয় সিনেমা বলে মনে হবে …
বেনারস শহরের দম্পতি দুলু মিয়া ও ফাতিমা। দুলু মিয়া তার বউকে অনেক ভালোবাসে। বউয়ের সব আবদার পূরণ করে, বউকে খুশি রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এদিকে বেনারস শহরেই ঘটে গেছে পরপর কয়েকটা খুন। এই খুনগুলাকে ঘিরে উঠে এসেছে বউপাগল দুলু মিয়ারই নাম। এখন দুলু মিয়া এই খুনগুলো কেন করেছে কিংবা এই খুনকে কে করাচ্ছে, পুলিশের ভূমিকাই বা কী-সে গল্প নিয়েই এগিয়েছে মেগাস্টার শাকিব খান, বলিউডের সোনাল চৌহান, কলকাতার পায়েল সরকার অভিনীত এবং অনন্য মামুন পরিচালিত সিনেমা ‘দরদ‘।
সিনেমার প্রথমার্ধ খুবই স্লো, একইসঙ্গে এই সিনেমার সবচেয়ে দুর্বল পার্ট। শুরুর সিক্যুয়েন্সটা ইন্টারেস্টিং লাগলেও এরপর শাকিব খানের সাদামাটা এন্ট্রি ফ্যানদের হতাশ করতে পারে। পরিচালক অনন্য মামুন এই অংশে গল্পটা বিল্ডআপ করার চেষ্টা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি যে ফর্মুলায় এগিয়েছেন সেটা আমরা আগেও দেখেছি। হলিউডে এই ফর্মুলা কমন। ওপার বাংলায় জিৎ অভিনীত ‘রাবণ’ সিনেমায় এই মেকিং ফর্মুলা দেখেছিলাম। তবে ‘রাবণ’ সিনেমায় এই ফর্মুলা ওয়ার্ক করলেও ‘দরদ’-এ ফেইল করেছে দুর্বল মেকিং এবং খাপছাড়া চিত্রনাট্যের কারণে। পর্দায় হচ্ছে অনেক কিছু, কিন্তু সেগুলো সিরিয়াল অনুযায়ী উপস্থাপিত হচ্ছে না। আমাদেরকে বুঝে নিতে হচ্ছে যে ‘আচ্ছা, এই দৃশ্যের পর ওটা ঘটেছে, ওটার পর আরেকটা ঘটনা’—অনেকটা এরকম।
পুরো প্রথমার্ধ জুড়ে কনফিউশন। অতীতের দৃশ্য দেখছি নাকি বর্তমানের-সেটাই বুঝে উঠতে সময় লাগছে। অবশ্য গল্পেও আহামরি কিছু ঘটছে না। ট্রেইলারে যা দেখানো হয়েছে, সেসবই ছিল প্রথমার্ধ জুড়ে। এই অংশ কোনোভাবেই আর আগ্রহ ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। তবে বিরতির অনেকক্ষণ পর আসা টুইস্ট একটু নড়ে-চড়ে বসতে সাহস জোগায়। গল্প ইন্টারেস্টিং হতে থাকে এই অংশে। কিন্তু কিছুদূর গিয়েই প্লটটা সম্পূর্ণ পরিচিত লাগতে শুরু করে। যাকগে, ‘লিপস্টিক’ বিভিন্ন শেডের হইতেই পারে। তবে এই অংশের উপস্থাপন বেশ ভালো। ইমরানের গানটা এক্ষেত্রে বেশ ইফেক্টিভ। আবার, ক্লাইমেক্সের টুইস্টটা অনেকেই আন্দাজ করে ফেলতে পারবে।
এই সিনেমায় টেকনিক্যাল ফল্ট এবং চিত্রনাট্যের দুর্বলতা আপনি না চাইতেও চোখে পড়ে যাবে। যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হলেও এটা আদ্যপ্রান্ত ভারতীয় সিনেমা বলে মনে হবে। পর্দায় বেশ কয়েকবার হিন্দি লেখার দেখা পাওয়া; শাকিব খান, এলিনা শাম্মী, ইমতু রিতেশ ছাড়া বাকিদের ভারতীয় একসেন্টে কথা বলার ব্যাপারটা এই বিষয়কে আরও স্পষ্ট করে। আরও একটা ব্যাপার বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে। পর্দায় অভিনয়শিল্পীরা বলছে বাংলা, কিন্তু লিপসিঙ্ক মিলছে না। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখার পর বুঝলাম যে তারা আসলে হিন্দিতে ডায়লগ দিচ্ছে আর সেটারই বাংলা ডাবিং শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাপারটা এমন যেএকজনের হিন্দিতে ডায়লগ দিচ্ছে, অন্যজন সেই হিন্দি কথার উত্তরেই বাংলা ডায়লগ দিচ্ছে। এই ব্যাপারটা প্রথমার্ধে একটু বেশিই ঘটেছে। বোঝাই যাচ্ছে- বাংলা এবং হিন্দি ভাষার মিশ্রণেই শুট করা হয়েছে পুরো সিনেমা। গানগুলোর ক্ষেত্রে তো পুরোটাই হিন্দিতে শুট করা। কেবল বাংলা ভার্সনটা বসিয়ে দিয়েছে সেখানে। এটাকে প্যান ইন্ডিয়ান ফ্লেভার বলা যাবে কি-না সেই প্রশ্নে যাচ্ছি না।
আবার, অন্য দেশের সিনেমা থেকে অ্যাডাপ্ট করা পায়েল সরকারের চরিত্রটির গর্ভবতী হয়ে সিনেমায় একটু পরপর সময় ক্ষেপণ করা ছাড়া অন্য কোনো কারণ দেখছি না। একটা ইনভেস্টিগেশনের শুরুতে যেটা করার কথা, সেই কাজটাই করা হচ্ছে বিরতির পর-এতোটা সময় অপচয়ের ঠিকঠাক কারণ খুঁজে পেলাম না। তালা ভাঙতে গিয়ে পাশেই হাতুড়ি পেয়ে যাওয়াটা মিরাকলই বটে। হাসপাতালে হাত দেখার সায়েন্সটাও আমি বুঝিনি। যেমনটা বুঝিনি ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশি একসেন্টে কথা বলার ব্যাপারটা। যাইহোক, যৌথ প্রযোজনার ইজ্জত বোধহয় এই কয়েকজনের একসেন্ট দিয়েই রক্ষা করলো।
অভিনয়ে শাকিব খান বেশ ভালো কাজ করেছেন। তবে ছোটবেলা থেকেই একজন মানুষ ভারতে থাকার পরও সাবলীলভাবে বাংলাদেশি একসেন্টে কথা বলার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে পারছি না। যাইহোক, সিনেমায় সোনাল চৌহানও যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। ট্রেইলার দেখার পর ভেবেছিলাম সোনালের বাংলা যথেষ্ট বিরক্তই করবে পুরো সিনেমায়। তবে সিনেমা হলে এই ব্যাপারটা তেমন একটা প্রভাব ফেলেনি। শাকিব-সোনালের কেমিস্ট্রিও ভালো ছিল, পর্দায় দেখতে ভালো লেগেছে। তবে চিত্রনাট্যের দুর্বলতা, দুর্বল মেকিং এবং বাকি ফল্টগুলো এতোটা নজরে পড়ছিলো যে অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়ও সেগুলো ঢাকতে পারেনি। পায়েল সরকার ভালো কাজ করলেও ইনভেস্টিগেশন পার্ট তেমন ইফেক্টিভ ছিল না। বাকি অভিনয়শিল্পীরা চরিত্র অনুযায়ী ঠিকঠাকই বলবো।
সিনেমার গানগুলো তেমন মনে রাখার মতো না। তারপরও ইমরান এই ডিপার্টমেন্টকে একেবারে ডুবে যেতে দেননি। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহার ঠিকভাবে করা হয়নি, বাকি সিনেমাটোগ্রাফি মোটামুটি।
সবমিলিয়ে এই ছিল আমার দৃষ্টিতে ‘দরদ’। শাকিব খানের হার্ডকোর ফ্যান হলে ‘দরদ’ আপনি এমনিতেই দেখবেন। বাকিরা নিজ দায়িত্বে দেখতে পারেন।