Select Page

দিঘীর ক্যারিয়ার নিয়ে কেন শঙ্কা?

দিঘীর ক্যারিয়ার নিয়ে কেন শঙ্কা?

প্রার্থনা ফারদিন দিঘী। শিশুশিল্পী হিসেবে খ্যাতির চূড়ায় আরোহন। তারপর বিরতি নিয়ে হাজির হচ্ছেন পরিপূর্ণ নায়িকা হিসেবে। কিন্তু এই পর্বে তার ছবি নির্বাচন নিয়ে চমক দেখছেন না অনেকে। যেমন চমক ছিল পূজা চেরির ক্ষেত্রে।

এর মাঝে কোনো ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে একসঙ্গে ৪-৫টি ছবি থেকে দিঘীর বাদ পড়া নিয়ে উঠেছে গুঞ্জন। একই দিনে (২৯ জানুয়ারি) এ সব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দুটি সংবাদমাধ্যম।

কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘শুরুর আগেই শেষ’। অন্যদিকে যুগান্তরের এফ আই দীপুর প্রতিবেদন ‌ অঙ্কুরেই বিনাশ হচ্ছেন না তো দীঘি?’

এর মধ্যে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, “একসঙ্গে পাঁচটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। মালেক আফসারীর ‘ধামাকা’, কাজী হায়াতের ‘যোগ্য সন্তান’, শাহীন সুমনের ‘গ্যাংস্টার’, শামীম আহমেদ রনীর ‘টুঙ্গািপাড়ার মিয়া ভাই’, ‘বুবুজান’ ও ‘লাইভ’ ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল তাঁর। এর মধ্যে কেবল ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’-এর শুটিং শেষ হয়েছে। নতুন খবর—বাকি ছবিগুলোতে থাকছেন না দীঘি! এর মধ্যেই ‘লাইভ’ ও ‘গ্যাংস্টার’ ছবিতে দীঘির পরিবর্তে যুক্ত হয়েছেন মাহিয়া মাহি। শুটিংও শুরু করেছেন তিনি। অন্যদিকে মালেক আফসারীর ‘ধামাকা’ এবং কাজী হায়াতের ‘যোগ্য সন্তান’ হবে কি না তা নিয়ে নির্মাতারাই সংশয়ে। মালেক আফসারী বলেন, ‘আমি চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর গল্প তৈরি করেছি। শান্ত খান ও দীঘিকে প্রস্তুতও করেছি। কিন্তু প্রযোজক আর আগ্রহ দেখাননি।’ কাজী হায়াত বলেন, ‘ছবির গল্প, গান, এমনকি কলাকুশলী চূড়ান্ত করার পর প্রযোজকের কাছ থেকে আর কোনো সাড়া পাইনি। আদৌ ছবিটা হবে কি না জানি না।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকের শুটিংয়ে দীঘি রয়েছেন মুম্বাইয়ে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে  তিনি বলেন, ‘আমি একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। বাকিগুলো নিয়ে কথা চলছিল। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।”

অন্য দিকে যুগান্তরের প্রতিবেদনটি শুধু তথ্য-উপাত্ত নয়। বরং প্রতিবেদকের মতামত রয়েছে। সেখানে সিনে ইন্ডাস্ট্রির নায়িকা বিষয়ে কিছু মন্তব্য রয়েছে। এসেছে ‘কাস্টিং কাউচ’ প্রসঙ্গটিও। কিন্তু কেন?

এফ আই দীপুর দীর্ঘ লেখাটি এমন— “বাবা জানো, আমাদের একটা ময়না পাখি আছে না, সে আজকে আমার নাম ধরে ডেকেছে’- এমন সংলাপে নির্মিত গ্রামীণফোনের দর্শকপ্রিয় একটি বিজ্ঞাপনের কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। আরও মনে আছে সেই সংলাপে অভিনয় করা সেই ছোট্ট মেয়েটির কথা। নাম তার প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। বাবা অভিনেতা সুব্রত ও মা এক সময়ের নায়িকা দোয়েল। মা গত হয়েছেন বেশ আগে, বাবাই এখন তার সব। বিজ্ঞাপনই ছোট্ট দীঘিকে রাতারাতি তারকার খ্যাতি এনে দেয়। এরপর কাজী হায়াতের পরিচালনায় ‘কাবুলীওয়ালা’ ছবিতে ছোট্ট মিনি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে। প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন দীঘি। এরপর ২০০৮ সালে ‘১ টাকার বউ’ এবং ২০১০ ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’ ছবিতে অভিনয় করে একই পুরস্কার তার ঝুলিতে ভরেন। শিশুশিল্পী হিসাবে আরও অভিনয় করেছেন ‘দাদীমা’, ‘লীলা মন্থন’, ‘দ্য স্পিড’, ‘রিকশাওয়ালার ছেলে’, ‘অবুঝ শিশু’, ‘বাবা আমার বাবা’, ‘সাজঘর’, ‘চাচ্চু’সহ কয়েকটি ছবিতে। এতগুলো ছবিতে অভিনয় করা সেই দীঘি কিন্তু এখন আর ছোট্টটি নেই। টিনএজ পার করে ফেলেছেন। বড় হয়ে নায়িকা হিসাবেও তার পথচলা শুরু হয়েছে। মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ নামে একটি ছবিতে অভিনয়ও করছেন। অন্যদিকে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘তুমি আছ তুমি নেই’ নামে আরও একটি ছবির কাজ শেষ করেছেন বলে জানা গেছে।

এ দুটি ছবির কোনোটিই নায়িকা হিসাবে দীঘিকে ক্যারিয়ার গড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। হয়তো হবেও না। তাহলে কোন ছবিটি তাকে নায়িকার আসন গড়ে দিতে পারে কিংবা পারত? এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। এর জন্য একটু পেছন ফিরে যেতে হবে। করোনাকালের মধ্যে আলোচিত নায়ক-প্রযোজক অনন্ত জলিলের প্রযোজনা সংস্থা থেকে নায়ক ইমনকে নিয়ে একটি ছবি তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন; যে ছবিতে অনন্তর উপস্থিতি শুধু অতিথি চরিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ইমনকে চুক্তিবদ্ধও করা হয়েছিল তখন। নায়িকা হিসাবে দীঘির সঙ্গে কথা হয়। জানা গেছে, এর জন্য তিন লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়ার কথাও বলা হয় প্রযোজনা সংস্থা থেকে; কিন্তু সেই পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজি হননি দীঘি। তার বাবার বক্তব্য ছিল, দীঘি এর বেশি পারিশ্রমিকের যোগ্য। কথাটি মিথ্যা নয়। হয়তো যোগ্য; কিন্তু সেটি ছিল শিশুশিল্পী হিসাবে বা বিজ্ঞাপনের জন্য। পরিচিতি থাকলেও নায়িকা হিসাবে দীঘি পরীক্ষিত নয়। তা ছাড়া নায়িকা হিসাবে অভিষেক ছবিতে এত টাকা পারিশ্রমিক খুব কম নায়িকাই পেয়েছেন। হয়তো পায়ওনি। সবচেয়ে বড় কথা, অনন্ত জলিলের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে থাকলে ক্যারিয়ারটা অন্যরকম হতে পারত দীঘির। কারণ, সেখানে তথাকথিত ফিল্মের কাস্টিং কাউচের কোনো বিষয় ছিল না। নিরাপদেই কাজ করা সম্ভব ছিল। হয়তো সে সবের প্রতি দীঘি বা তার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই। কাজ করলেই হলো।

কিন্তু সে কাজটি ছেড়ে দিয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে দীঘির ক্যারিয়ার দাঁড়াচ্ছে?

মাস ছয়েক আগে একসঙ্গে পাঁচ ছবিতে দীঘির চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা শোনা গেছে। সবক’টি ছবিই শাপলা মিডিয়া নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা থেকে নির্মিত হওয়ার কথা। যার মালিক ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিতর্কিত সেলিম খান। এ প্রতিষ্ঠানের ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ নামে ছবি দিয়ে অভিষেক ঘটে দীঘির। কিন্তু বাকি ছবিগুলো থেকে নাকি তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এমনটাও শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ‘যোগ্য সন্তান’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করার নির্মাতা কাজী হায়াতের। ওই ছবিটি আর হবে না বলে তিনি জানান। ‘ধামাকা’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করার কথা মালেক আফসারীর। তিনিও নিশ্চিত নন আদৌ কাজটি হবে কি না। আরও জানা গেছে, দীঘিকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অন্য নায়িকা নিয়ে বাকি ছবিগুলোর কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তবে কী দীঘি কাস্টিং কাউচের শিকার? কারণ, একই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এর আগেও একজন নবাগতা নায়িকা ব্যাংককে ব্যক্তিগত সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ উপেক্ষা করেছিলেন। ফলে ছবিতে তার চরিত্র ছোট হয়ে যায়। দীঘিও কি তেমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন? যার কারণে তাকে বাদ পড়তে হয়েছে? এগুলো প্রশ্ন। উত্তর জানা নেই। কিন্তু দীঘি যে শুরুতেই ভুল করেছেন সেটা বলা যায়। কারণ, শুরুতেই যেসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে নায়িকা হিসাবে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল পরীক্ষিত এবং ক্লিন ইমেজের। কাজ করলে হয়তো তখন ক্যারিয়ারটা ঘুরে যেতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াল? অর্থই যে সবকিছু নয়, সেটা নিশ্চয়ই দীঘি কিংবা তার বাবা বুঝতে পেরেছেন এতদিনে। তবে, অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যাচ্ছেন না তো তিনি? এখনো সময় আছে। সতর্ক হলেই হয়তো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।”


মন্তব্য করুন