Select Page

‘দিন দ্য ডে’ দেখে কনফিউজড

‘দিন দ্য ডে’ দেখে কনফিউজড

যে সিনেমাটার ভেতর গল্পের কোন কারিশমা নেই, অভিনয়ের ছিটেফোটা নেই সেটা নিয়ে মুভি সমালোচনা আসলেও ভীষণ কঠিন ব্যাপারে। তাই আজ কোন রিভিউ নয়, একেবারেই ব্যক্তিগত মতামিত দেব ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমাটি নিয়ে।

দুই ঘন্টা তেইশ মিনিট নয় সেকেন্ড ধরে চোখের সামনে তিনটা দেশ সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছে— একবার ইরান, একবার আফগানিস্তান, একবার বাংলাদেশ। এর মধ্যে তুরস্ক কখন ইন করেছে, আর কখন আউট করেছে সেটা আমি ধরতে পারিনি।

গল্পের সেতু গাঁথতে চাইছিলাম, ছটকু আহমেদ যেহেতু চিত্রনাট্য করেছেন তিনি অভিজ্ঞ মানুষ; নিশ্চয় জানেন, সিনেমায় গল্প বুনতে হয় অনেকটা ফুলের মালা গাঁথার মতো একটার পর আর একটা (প্রচলিত বাংলা সিনেমায়)। অবশ্য কেউ এই সাধারণ নিয়ম মানবেন আবার কেউ ভাঙতেই পারেন; কিন্তু ইরানি পরিচালক মোর্তেজা অতাশ জমজম, আমাদের অনন্ত জলিল এবং ছটকু আহমেদ মিলে যে ককটেল বানিয়েছেন তা দেখে এটাকে সিনেমা বলতে পারি নাকি অ্যাকশান ডকিউমেন্ট বলতে পারি তা নিয়ে বিরাট কনফিউজড আমি।

সিনেমাতে ১০০ কোটি খরচ হয়েছে নাকি হয়নি তা নিয়ে পুরনো বিতর্কে আর যাব না, তবে এটা নিয়ে দূর্দান্ত মার্কেটিং হয়েছে; দফায় দফায় নিজেদের নিয়ে জাহির করার যে প্রবণতা জলিল আর বর্ষার দেখছি সেটা সত্যি বিস্ময়কর! একটি সিনেমার সাথে আর একটি সিনেমার কোনভাবেই তুলনা চলে না, কারণ সমস্ত সৃষ্টি আলাদা আলাদা। কেউ যদি সত্যি সত্যি হাসতে বা বিনোদন পেতে টিকিট কেটে হলে যাওয়া পছন্দ করেন তার মধ্যে কোন রকম নেতিবাচক কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। আমি হলে যাবার আগ থেকেই বুঝে গেছি আমার ৩৫০ টাকা, সাথে যাতায়াত ভাড়া আর খাবারের টাকাটা অপচয় হবে, সেটা আমি জেনেই হলে গেছি। অতএব, ‘দিন দ্য ডে’ ব্যবসাসফল ছবি, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, দ্বিতীয় সপ্তাহেও পুরো হাউজফুল চলছে।

একবার দেখে যে বিষয়গুলো চোখে লাগল—

এক. বাংলাদেশ পুলিশকে দেশের বাইরে মিশনে পাঠানোর যে প্রক্রিয়া সেটা পরিচালক-চিত্রনাট্যকার দেখে নিতে পারতেন। পুলিশের চুল + ড্রেস + প্রেজেন্টেশন + রুলস, এমন বিষয়ে অনেক সচেতন হতে হবে, যা মন চায় তাই দেখানো উচিৎ নয়, দেশের পুলিশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

দুই. বাংলা সাবটাইটেল দেওয়া থাকলেও বিদেশি অভিনেতারা কেন বাংলায় কথা বলেছেন বুঝিনি।

তিন. একজন লেডি অফিসারকে আরো দক্ষ এবং বিচক্ষণভাবে উপস্থাপন করা যেত; কিন্তু পুরুষকে বেশি চৌকষ দেখাতে গিয়ে নারী চরিত্র ম্লান লেগেছে।

চার. বারবার ফ্লাশব্যাক দেখানোতে গল্পের মূল বিষয়টা ধরতে ব্যর্থ হয়েছে আমার মতো অনেক দর্শক।

পাঁচ. ভিএফএক্স দেখে অনেক সময় আমার মনে হয়েছে টিভিতে কার্টূন দেখছি, কোটি টাকার প্রজেক্টের কাছে আরো অনেক চাওয়া ছিল বিশেষ করে গানের দৃশ্যগুলোতে।

অনন্ত জলিল প্রতি সিনেমায় বাংলাদেশ নিয়ে বেশ পজেটিভ ভাইভ দেন, বিষয়টা ব্যক্তিগতভাবে আমি পছন্দ করি। এটা তিনি চিত্রনাট্যের সংলাপের মাধ্যমে দেন, কিন্তু চিত্রনাট্যকার অনেক বলিষ্ঠ হলে সেটা গল্পে বের করে আনতে পারেন। সিনেমা মানেই তো গল্পের মধ্য দিয়ে সবটা বলে দেওয়া, সেজন্য আলাদা করে দর্শককে পড়া বোঝানোর মতো বাড়তি উপকরণ দেওয়ার দরকার হয় না।

পরিশেষে, এতো এতো কষ্টের টাকায় বানানো একটি সিনেমায় যদি তেমন দক্ষ একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে কাস্ট করা হতো তাহলে ‘দিন দ্য ডে’ অন্যরকম একটা ফ্লেভার পেতো। অনন্ত জলিল ও বর্ষার প্রতি অনুরোধ— পর্দায় নায়ক-নায়িকা না হয়ে, পর্দার পেছনে কাজ করলে খুব কী ক্ষতি হয়ে যাবে আপনাদের, দর্শকের মনোযোগ যে আপনারা এই জীবনে পেয়ে গেছেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

ভুল ইংরেজি উচ্চারণ, অদ্ভুত ভঙ্গি দেখতে দেখতে এখন একঘেয়ে হয়ে গেছে সব। আসুন, নতুনদের কাজ করবার জায়গাটা ছেড়ে দেই এবার, অনেক তো হলো! বাংলা সিনেমা যুগ যুগ বেঁচে থাকুক নতুন শিল্পীদের হাত ধরে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

রোদেলা নীলা একজন স্বাধীনচেতা মানুষ, তার কবিতায়, তার প্রবন্ধে অথবা গল্পের প্রত্যেকটি শব্দের মধ্যে আছে আধুনিকতার ছোঁয়া এবং নিজের মুক্ত চিন্তাকে মেলে ধরবার আকাঙ্ক্ষা। কবিতা তার প্রিয় বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি, এর বাইরেও তিনি নিয়মিত আর্টিকেল লেখেন দেশের এবং দেশের বাইরের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। ঘুরতে পছন্দ করেন বলেই তার গল্পের ভাঁজে ভাঁজে আছে ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য অজানা অনেক তথ্য। বেতার বাংলা পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে প্রথম প্রকশিত হয় তার লেখা গল্প- নীল শাড়ি। এরপর থেকে তার গল্প কবিতা প্রবন্ধ জায়গা করে নেয় দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ,দৈনিক নয়া দিগন্ত, অনন্যা পাক্ষিক ম্যাগাজিন, মাসিক রোদসী, ত্রৈমাসিক পত্রিকা জয়তী, নিউ ইওর্কের দেশ পত্রিকা থেকে আরম্ভ করে বহু অনলাইন প্লাটফর্মে। এর বাইরেও বাংলা ব্লগ গুলোতে তার সারাক্ষণ পদচারণা থাকে । শব্দনিড় ব্লগ, সামহোয়্যারইন ব্লগ, বিডিনিউজ২৪ ব্লগ, মুভি ডাটা বেজ ব্লগে নিয়মিত লিখে আসছেন কবি এবং কথা সাহিত্যিক রোদেলা নীলা। শুধু বাংলাদেশে নয়, পাশের দেশ ভারতের কোলকাতাতেও তার অনেক ভক্ত পাঠক রয়েছে। ২৬শে ফেব্রুয়ারী ১৯৭৭ সালে ঢাকায় কবি’র জন্ম, বাবা মরহুম আব্দুল হামিদ ; পেশায় ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা। তাদের আদি নিবাস টাঙ্গাইলে হলেও ঢাকাতেই লেখকের বেড়ে ওঠা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাশ করেছেন। মা মাজেদা বেগম সব সময় লেখালেখির বিরোধিতা করে আসলেও প্রকাশিত সব বই খুঁটিয়ে পড়েন এবং ভুল ধরে দেন । লেখকের ইচ্ছে আছে কিছু পয়সা কড়ি জমাতে পারলে জীবনের শেষ সময়টা বিশ্ব ঘুরে কাটাবেন। রোদেলা নীলা’র প্রকাশিত বই : কবিতা : ফাগুনঝরা রোদ্দুর(২০১০) ,ভাষাচিত্র প্রকাশনী পঞ্চপত্রের উপপাদ্য (২০১২) , এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী দ্বৈত কবিতার বই – নীলপদ্ম (২০১৫) ,যমুনা প্রকাশনী। নিমগ্ন গোধুলি ( ২০১৬) , অন্যধারা প্রকাশনী চায়ের কাপে অপেক্ষা (২০১৯) , বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড একক গল্প গুচ্ছ : রোদ্দুরের গল্প (২০১৫ ), আলপনা প্রকাশনী চলতি পথের গপ্পো (২০১৬) , বিদ্যা প্রকাশ গল্পগুলো কাল্পনিক নয় ( ২০২২) , কারুবাক প্রকাশনী ভ্রমণ গল্প : পিয়াইন নদীর স্রোতে (২০১৬) , জয়তী প্রকাশনী মেঘ বালিকার দেশে (২০১৭) , মহাকাল প্রকাশনী ময়ামায়া থেকে কাশ্মীর(২০২৩),কারুবাক প্রকাশনী

মন্তব্য করুন