Select Page

দি ডিরেক্টর : একটি লাল চাদরের ফাঁদ

দি ডিরেক্টর : একটি লাল চাদরের ফাঁদ

কামু ভাইয়ের সিনেমা ‘দি ডিরেক্টর‘ অবশেষে দেখে ফেললাম। কোথাও বাহিরে ছিলাম বলে এতদিন দেখা হয়নি। অনেকদিন, অনেকদিন এই সিনেমা দেখার অপেক্ষা করে ছিলাম, ১০/১২ বছর তো হবেই। এই সিনেমারে মুক্তি নিয়ে কতো কিছু হলো, আন্দোলন, মানববন্ধন। মানববন্ধনে আমিও ছিলাম।

কামুভাই মানে কামরুজ্জামান কামু। তার সঙ্গে কখনো আলাপ-পরিচয় আমার হয়নি বা নিজে গিয়ে আলাপ করিনি। কিন্তু তারপরও তাকে আমি কামুভাই বলছি, এর কারণ ‘কার মালা হতে খসে পড়া ফুল রক্তের চেয়ে গাঢ়?’ মানে তার গানের কথা। তার কবিতা পড়ার আগে আমি তার লেখা গান শুনেছি সঞ্জীব চৌধুরীর কণ্ঠে।

কামুভাইয়ের সিনেমা এক নিশ্বাসে দেখলাম যেন। সময় কোন দিক দিয়ে গেল টের পেলাম না। কেবল রয়ে গেল অতৃপ্তি। ‘দি ডিরেক্টর’ মূলত সেই চিরন্তন অতৃপ্তির কাহিনিই বয়ান করে। এইটা মূলত কোনো সিনেমা নয়, এইটা একটা কবিতা। একটি লাল চাদরের আখ্যান, লাল চাদরের প্রতিশ্রুতি এইখানে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মানে ‘হাতের উপর হাতের পরশ রবে না।’ লাল চাদরের ফাঁদে পড়ে নায়ক না হতে পারে ডিরেক্টর, না হতে পারে সফল ক্রিমিনাল।

পুলিশ যখন পেটায় তখন চিৎকার করে কামু বলে, ‘আমি কবি, আমাকে ছেড়ে দাও’ তখন নিজেকে কামু মনে হয়, কবিও মনে হয়। এই সিনেমার সব থেকে শক্তিশালী সংলাপ যেটা আমাকে তীব্রভাবে হন্ট করে, ‘তোমরা কবি ও ক্রিমিনালের পার্থক্য বোঝো না।’

এ সিনেমায় যখন কামুভাই বাচ্চাদের মতো করে হাসে—তখন মনে হয় এই সিনেমা স্বার্থক, আর স্বপ্নে ভরপুর, তখন প্রতিটি ফ্রেম হয়ে ওঠে কচুরিপানা ফুলের বন।

কামুভাই যখন গাছের গায়ে চাবির রিং-এর ছুরি দিয়ে কেটে লিখে ‘কামু+পূর্ণি’, তখন শৈশবের প্রেমের স্মৃতি মনে পড়ে যায়।
আর কামুভাই যখন বাচ্চাদের মতো করে হেসে বলে, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করবো পূর্ণিমা’, তখন সিনেমাটা একটা কবিতা হয়ে ওঠে। আর লাল চাদর কাঁধে কামভাই হয়ে উঠেন একটি মাছরাঙাপাখি।

এটা অতুলনীয় এক সিনেমা মানে দেশ-বিদেশের কোনো সিনেমার সঙ্গে তুলনা করে এই সিনেমা দেখা যাবে না। এই সিনেমা দেখতে হলে আগে থেকে কবি কামুকে জানতে হবে মানে তার কবিতা, তার স্বপ্ন এইসব সম্পর্কে জ্ঞাত হতে হবে।

https://www.youtube.com/watch?v=WjF4SvXC2bY&fbclid=IwAR085fdqTzycKMCFLmgq1d_5toiiI4EPwPPVBvpR_2lWTuyzL2S9YKxraow

তবে সিনেমাটা না বোঝার কিছু নাই। একেবারে সহজ স্টিরিও-টিপিকাল প্রেমেরে গল্প। কামুভাইকে না চিনলেও সিনেমা দেখা বোঝা যাবে। এই সিনেমা দেখতে দেখতে কখনো মনে হয় ভিডিও গেম খেলছি, কখনো মনে হয় কমিক-স্ট্রিপ পড়ছি। যেনো কামুভাই যা ইচ্ছা তা করেছেন। যেনো এইটা তার একটা ছেলেখেলা। মনে হচ্ছিলো এর স্ক্রিপ্ট তার মাথার ভিতরেই ছিলো, কাগজে লিখেননি। দেখতে দেখতে কখনো মনে হয় এটা আমি বানিয়েছি। কিংবা আমি বানালেও এমনই বানাতাম।

আপতত শেষ কথা হলো এই সিনেমা দেখতে হবে কামুভাইয়ের প্রতি গভীর মমতা ও ভালোবাসা নিয়ে। তার সরল হাসিই এই সিনেমার প্রধান সুর ও সংহতি।

(খসড়া)


Leave a reply