Select Page

দেখে এলাম মুসাফির

দেখে এলাম মুসাফির

Musafir banner with hall list with arifin shuvo marjan jenifa tiger roby shimul khan misha shawdagorবেশ খানিক বিরতির পরে দেশীয় সিনেমা দেখলাম। এই মুসাফির নিয়ে প্রচন্ড আশাবাদী ছিলাম। কেন? কারণ ট্রেইলার দেখার পর থেকেই একটা কেমন যেন ভাবনা কাজ করতো। এই সিনেমাটা বোধহয় অন্য রকম হবে! তাছাড়া আশিকুর রহমান সিনেমাটা রিলিজে দেরি করেছেন। কবে আসবে কবে আসবে একটা ভাব ছিলো। দেখার ইচ্ছে ছিলো প্রথম দিনেই কিন্তু ব্যস্ততা থাকায় পারিনি। দ্বিতীয় দিনে দেখলাম। হাইপড থাকার কারণে একটা হালকা অস্থিরতা ছিলো কিন্তু হলে ঢোকার আগে সেই হাইপড ভাবটা কাটিয়ে নিলাম নিজ থেকেই। কারণ আগে কিছু সিনেমা নিয়েও এমন আশাবাদী ভাব চলে এসেছিলো কিন্তু পরে মার খেয়েছি হলে বসে পুরা রানটাইম ধরেই। নিজেকে তৈরি করে নিয়েছিলাম যে হয়তো অতটা ভালো নাও হতে পারে। কিন্তু আশংকা সত্য হয়নি। ভালো লেগেছে। আতশ কাঁচ নিয়ে দেখতে যাবার ইচ্ছে থাকলে যেতে মানা করবো আমি। তবে কয়েক জায়গায় কিছু ভুল আছে যেগুলো চোখে লাগবে। ওসব বাদে চমৎকার একটা বাংলা সিনেমা এই মুসাফির। না গুণগান করতে বসিনি। যা দেখে এসেছি তাই বলবো। জাস্ট পড়ে যান।

সিনেমার গল্প শুরুতে মনে হবে চিরাচরিত ঘরানার। আস্তে আস্তে দুইটা বা তিনটা বাঁকের সংযোগস্থলে যখন এসে পৌছবেন তখন মনে হবে যে গল্পটা ভালো। তবে এক্ষেত্রে যদি আশিকুর রহমান একটু খেয়াল রেখে সিনেমার দৈর্ঘ্যটা কিছু অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য বাদ দিয়ে কমিয়ে আনতেন তবে সুপার-ডুপার একটা কিছু হত। যা হয়েছে তাও কম হয়নি। আরেকটা ব্যাপার, হলের টিকিট কাউন্টারে কিন্তু লাইন ছিলো গতকাল। আজকেও অনেকটা তেমনই। দর্শকরা টিকিট নিতেও শারীরিক পরিশ্রম করেছে আবার হলে ঢোকার সময়ও ভীড় ঠেলে হলে ঢুকতে গায়ের জোর খাটিয়ে ঢুকেছে। সীট খালি যায়নি একটাও। পুরা হাউসফুল যাকে বলে!

একটু সিনেমার কাহিনী নিয়ে বলি। সানি ১০ বছর ধরে জেল খাটছে তার প্রেমিকার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। পুলিশের কাছে ভুল ইনফো দিয়ে তাকে ড্রাগ চোরাচালান মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় তার প্রেমিকা। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ঐ বিশ্বাসঘাতিনীকে নিজ হাতে শেষ করার আগুনে জেলের শেষ রাতটা কাটায় সানি। পাশের সেলের ফাঁসির আসামী তাকে একটা নাম্বার দেয় যেন জেল থেকে বেরুলেই সে একটা কাজ পেয়ে যায়। ঐ কাজটা করতে গিয়ে সিক্রেট সার্ভিসের হাতে ধরা পড়ে সানি। সিক্রেট সার্ভিসের সহকারী প্রধান এক নারী এজেন্টকে ধরে এনে দেবার শর্তে মুক্তি দেবার কথা দেন সানিকে। আর ঐ মেয়েটিকে খুঁজতে গিয়েই সানি ফেঁসে যায় আরও বড় একটা জালে। হয়ে যায় মুসাফির!

হালকা করে প্রথম ১০ মিনিট বলে দিলাম এখন বিষয় হলো সিনেমার অন্যান্য দিক। আমার যেটা মনে হয়েছে এই সিনেমায় বাজেট কম ছিলো। কিন্তু এই সীমিত বাজেটেই আশিকুর রহমান যা দেখিয়েছেন তা লাখ লাখ টাকা খরচ করে অনন্ত জলিল বা ইফতাকার চৌধুরীও বানাতে পারেননা। সবচে বড় কথা হলো সিনেমার গল্পটা। কিছু জায়গায় স্লো হয়ে গেলেও বেশ কয়েকটা সারপ্রাইজ সহকারে সিনেমাটা এগিয়েছে। আরো বড় কথা হলো, আমার দেখা বাংলা সাম্প্রতিক সিনেমাগুলোর মাঝে এটাই এন্ডিংয়ে লেজেগোবরে করে ফেলেনি। সুন্দর ফিনিশিং দিয়েছে! আগেও বলেছি যদি খালি রানটাইমটা ২০-২৫ মিনিট কমিয়ে আনা যেত তবে বলা যেত আমাদের সিনেমার অ্যাকশন থ্রিলার স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তবে দেখে আসা মুসাফির জানান দিয়েছে যে ‘ধৈর্য্য ধরো, হবে সামনে।’

সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যগুলো বেশিরভাগই নজর কাড়ে। যদিও ট্রেনের ছাদে ফাইটের সিনটায় বোঝা যাচ্ছিলো যে পুওর কাজ হয়েছে ওটায় তবে ওটা ছাড়া বাদবাকি সবই মানানসই লেভেলের। কথা হলো মুভিমিসটেকডটকমের মত ভুল যদি অনন্ত জলিলের, ইফাতাকার চৌ এর সিনেমায় ধরি তবে এটায় কেন নয়? হ্যাঁ, এটায়ও ভুল আছে। নায়িকার পেশা অনুযায়ী তার কথাবার্তা কাজের ধরণ মিলছিলোনা তেমন। কিন্তু নায়িকা মারজান জেনিফাকে দেখেই পোলাপাইনে তার দোষ ধরার কথা ভুলে গিয়েছিলো। তাকিয়ে জাস্ট দেখেই যাচ্ছে ভুল ধরবে কখন? ময়মনসিংহের ছেলে শুভ হিরোইক লুকে জাস্ট বোম্বাস্টিং! কিন্তু খালি লুক দিয়েতো আর হয়না, একটু ডায়লগ ডেলিভারিও জানতে হয়। এইক্ষেত্রে শুভ কিছুটা উন্নতি করেছে বলেই মনে হলো। ভিলেনের রোলে টাইগার রবি ও সিক্রেট সার্ভিসের ডেপুটি হিসেবে মিশা সওদাগর ভালো দেখিয়েছেন। নায়িকার ডেব্যু সিনেমা তাই তাকে কিছু বলতে চাইনা তবে তিনি তার রূপ দিয়ে দর্শক ঠান্ডা (পড়ুন গরম) করে রেখেছিলেন ঠিকই। হলে কেউ সিনেমা নিয়ে অভিযোগ করেনি। ডায়লগের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক ছিলো কমেডি সিনগুলোতে। হল ফাটিয়ে হেসেছে দর্শকরা! তালি আর সিটি বাজার হুল্লোড়ে অনেক সময় খালি দৃশ্য ভেসে গেছে স্ক্রীণে ডায়লগ শুনতে পাইনি।

এবার গান। সিনেমায় গান ছিলো। প্রয়োজন অনুযায়ী। এবং প্রত্যেকটা গানই দৃষ্টিনন্দন। সবচে ভালো লেগেছে ‘আলতো ছোঁয়াতে’ গানটা। সবাই উপভোগ করেছে গানগুলো। গানের পাশাপাশি কস্টিউম আর দেশিয় লোকেশনের কম্বিনেশন ভালো ছিলো। একটু প্রশংসা করছি এই কারণে যে এই সিনেমায় বাজেট মনে হয় অন্যান্য প্রোডাকশন হাউসগুলোর চাইতে কম ছিলো। এই সীমাবদ্ধতায় যা দেখেছি, যদি জাজ বা মনসুন এর মত খরচ করা প্রোডাকশন হাউস এই সিনেমায় ইনভেস্ট করতো তাহলে কী হত ভাবতে গিয়েই এই প্রশংসাটুকু করছি।

টিকিট কাউন্টারে কথা বলে জানলাম ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আরো হবে। আশাবাদী সবাই। আতশ কাঁচ না নিয়ে জাস্ট একটা সিনেমা দেখতে যাচ্ছি ভেবে কেউ যদি যায়, চমকিত হবে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যে এটা বাংলা সিনেমা। হয়তো অনন্ত জলিলের মত বুকে হাত ঢুকিয়ে কলজে ছিঁড়ে এনে দেখাবেনা, কিংবা ইফতাকার চৌ এর আজগুবি বিরক্তিকর সিন দিয়ে ভরা থাকবেনা আবার হলিউডি সেই লেভেলের মারদাঙ্গা চোখধাঁধানো সিজিআই দিয়ে ভেলকিও দেখানো হবেনা। কিন্তু ভালো লাগবে, যদি নিজেদের সিনেমার পারিপার্শ্বিকতা আর একটু একটু করে এগিয়ে যাবার কথা মাথায় রাখেন। তো হলে গিয়ে দেখে আসুন সবাই। এই বছরটায় মুসাফিরের মত আরো কিছু সিনেমা আসুক। সবাই হলমুখী হোক। গলায় ‘তোর ঐ দু-হাতের আলতো ছোঁয়াতে’ ভাঁজতে ভাঁজতে বের হোক।


Leave a reply