Select Page

দেবী কেন দেখবেন?

দেবী কেন দেখবেন?

অনেক ছোটবেলার কথা।তখন সবে বাংলা ঋতুর নামগুলো শিখেছি।ইংরেজী ক্যালেন্ডারের কোণায় ছোট করে লেখা বাংলা মাসগুলো মিলিয়ে সেই ঋতুর বৈশিষ্ট্যও মেলাতে লাগলাম।সত্যি বলতে বৈশিষ্ট্যগুলো শিখেছিলামও অল্প কয়টাই।যেমন- বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় আর গ্রীষ্মকালে গরম পড়ে।গ্রীষ্মের কালবৈশাখীটা কিভাবে যেন চোখ এড়িয়ে যায়।তাইতো কোন এক গ্রীষ্মকালে চারপাশ কাপিয়ে বৃষ্টি হতে দেখে নতুন একটা ধারণা দাড় করাই- বৃষ্টি আসলে দুইটা ঋতুতে হয়,গ্রীষ্ম আর বর্ষা। আরো বড় যখন হলাম তখন দেখি শরতেও বৃষ্টি হয়,দেবী মর্ত্যে বাপের বাড়ি আসতে কিংবা বিসর্জনের দিন ফেরত যাবার কালেও নামে ঝুম বৃষ্টি।

এবারও এমন বৃষ্টির দেখা পেয়েই বুঝে গেলাম দেবী আসছে।দেবী দূর্গা? সেতো অবশ্যই।কিন্তু দশমীর দিন বিদায় না নিয়ে বরং বিসর্জনেই রেখে যাচ্ছেন আরেক “দেবী”কে।”অনিল বাগচী”টা না দেখেই বলছি,হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর তার সৃষ্টিকর্ম যেই সার্কাস চালাচ্ছেন জনৈক উত্তরাধিকারিণী, তার কবল থেকে মুক্ত প্রথম প্রচেষ্টা হয়তো “দেবী“।জানিনা,হয়তো শেষও হতে পারে,কারণ দুই পরিবারের এমন দ্বন্দ্বের ফাঁকে কেইবা আর সাহস করবে।তবে নুহাশ যদি বাবার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে কাজ করতে চায় তবে বিশ্বাস ভালো কিছুই হবে।

এতক্ষণ আসলেই “ধান ভানতে শিবের গীত” করলাম,কেন তা জানি না।আসলে কোনকালেই গুছিয়ে লেখার স্বভাব নেই বলেই হয়তো।যাই হোক,দেবীর প্রতি আমার একটা পজেসিভনেস সবসময় কাজ করে যার কারণ হুমায়ুনের দুটো স্ক্রীপ্ট নিয়ে আমার কাজ করার স্বপ্ন ছিল যার একটা “দেবী”।দেবী উপন্যাসকে আমরা সবাই আমাদের মতো করেই দেখেছি,কল্পনার মিসির আলীও হয়তো বিভিন্ন।তাই দেবী নিয়ে সমালোচনার জায়গা থাকবে। কালকে আমিও প্রশ্ন করে বসবো নীলুর ইন্টেনসিটি কতটুকু,রানুর মায়াহীন চোখের জায়গায় জয়ার মায়াময় চোখ কেন কিংবা একটা মিস্ট্রি থ্রিলারকে এমন হরর বানানো হলো কেন,সাউন্ডটা কানে লাগছে কেন অথবা ৮০ এর দশকের মিসির আলী বর্তমানে কেন? কোন প্রশ্নের উত্তর পাবো,কোনটার উত্তর নিজেই দাঁড় করাবো – যেমন পিরিয়ড পিস নির্মাণ ব্যয়সাধ্য বলেই গল্পটা বর্তমানের,আর যেগুলোর উত্তর পাবো না সেগুলোকে স্রেফ সমালোচনার মোড়কেই চালিয়ে দেব।তারপরও দেখবো,হয়তো বিনোদনের আশায় কিংবা শুধুই সমালোচনা করে pseudo-critic সাজবার ধান্দায়।তাও দেখবো।

হুমায়ুনের “দেবী” আর অনমের “দেবী” কখনোই এক হবে না,সম্ভও নয়।টেক্সট আর মুভির মাধ্যমটাও আলাদা,বলার ধরণেও ভিন্নতা থাকবে।তাইতো আশাটা থাকবে এই পরিচিত গল্পকে অনম নিজের ফিল্ডে নিয়ে কেমন খেলা দেখাতে পারেন।

ছবি মুক্তির আগে আগে টকশোয়ে ঝড় বয়ে যায় আমার ছবির প্রতি ডেডিকেশন কতটুকু তা প্রমাণ করতে গিয়ে।জ্বর থেকে শুরু করে যেকোন মহামারিতেও ভুগতে দেখা যায় টকশোয়ে সুস্থ বসে থাকা মানুষটার।যদিও চ্যানেলভেদে জ্বর মাপার থার্মোমিটারটার রিডিং ওঠানামা করে।সেসব শুনতেও কানে আরাম দেয়,চোখে দেখিনিতো কোনদিন।”দেবীরও” এমন করার মতো শ্যুটিংকালীন ডেডিকেশনের গল্প জমা আছে কিনা জানি না।কিন্তু চোখে যেটা দেখেছি সেটা হলো প্রোমোশনের সময়ে কতটা এনার্জেটিকভাবে ছুটে চলা।প্রোমোশনের কত ইউনিক কনসেপ্ট।সবচেয়ে বড় কথা হলো,ছবিটাকে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে “দেবী” টিমের চেষ্টাটা।রিসেন্ট টাইমে আমি কোন বাংলা মুভিকেই দেখিনি প্রমোশনের জন্য এতোটা মরিয়া হতে।

দেবী কেন দেখবেন?

আগেই বলেছি,সমালোচনা করতে,হল থেকে বেরিয়ে গালি দিতে।কিংবা মিসির আলীকে প্রথমবার পর্দায় দেখার চান্সটা মিস না করতে।ট্রেইলার দেখে এক্সপেক্টেশন যেমনই থাকুক স্রেফ জয়া আহসানের স্ক্রীপ্ট চয়েস যেটার উপর চোখ বন্ধ করেই ভরসা করা যায়,তার জন্যে হলেও দেবী দেখুন।দেবী মুভির হলে চলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অন্তত এই মরা ইন্ডাস্ট্রীতে মরিয়া প্রোমাশনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হলেও।আপনার মন যদি একান্তই সমালোচনা করতে চায় জয়া কতটুকু খুকি সাজলেন তার সমালোচনা করতে,তার জন্যে হলেও দেখুন।চঞ্চলের লুক বা অভিনয় আপনার কল্পনার মিসির আলীর সাথে কতটুকু প্রতারণা করেছে তা মাপার জন্যে হলেও দেখুন।এরপর যদি অনম বিশ্বাস আর তার টিম ছবিটাকে দারুণ কিছু বানায় তাহলে সেটার প্রশংসা করেও অন্যকে ডাকুন।

মোদ্দাকথা, দেবী হলে গিয়ে দেখুন।এই ছবিটার হিট হওয়া ইন্ডাস্ট্রীর জন্য প্রচন্ড রকম দরকার।ইন্ডাস্ট্রীর একটা চেঞ্জ আমরা সবাই চাই।একরাত্রে সেটা সম্ভব না।কিন্তু যেই ছোট ছোট কন্ট্রিবিউশনগুলো মিলে একটা সময় পর একটা বড় চেঞ্জ ঘটবে তার একটা বোধহয় এই “দেবী”।তাই বলছি,দেবী দেখুন।

১৯ অক্টোবর বিসর্জনের দিনই দেবী আসছে প্রেক্ষাগৃহে


মন্তব্য করুন