নতুনত্ব খুঁজতে গেলে হতাশ করবে ‘রাজকুমার’, তবে …
[স্পয়লার নেই]
ট্রেইলার ছাড়া ‘রাজকুমার‘ বড়পর্দায় আমার দেখা তৃতীয় সিনেমা। তন্মধ্যে দুইটাই হিমেল আশরাফ পরিচালিত এবং শাকিব খান অভিনীত সিনেমা। এখন গল্প সম্পর্কে কিছু বললেই বোধহয় স্পয়লার হয়ে যাবে। তবুও রিভিউয়ের খাতিরে ছোট করে বলছি। গ্রামের তরুণ (!) শামসুল আমেরিকা যেতে চায়। তার এই যাত্রায় জড়িয়ে যান জেনি নামক আমেরিকান তরুণী। কিন্তু এসবের পেছনে শামসুলের নির্দিষ্ট একটা উদ্দেশ্য আছে। এখন কি সেই উদ্দেশ্য এবং শেষ অব্দি শামসুল সফল হয় কিনা-সেটা নিয়েই সিনেমা ‘রাজকুমার’।
শুরুতেই বলি- গল্পে নতুনত্ব খুঁজতে গেলে আপনাকে হতাশ হতে হবে। তবে পরিচিত গল্পের উপস্থাপন ভালো হলে অভিযোগ করার জায়গা থাকেনা। কিন্তু এখানে বিরতির আগ মুহূর্ত অব্দি সিনেমা একটা নির্দিষ্ট গল্প ধরে এগোতে তো থাকে, তবে কোনোকিছুই যেন ইন্টারেস্ট ধরে রাখতে পারেনা। এরমধ্যে আপনাকে বলে না দিলেও আপনি সহজেই অনুমান করে ফেলতে পারবেন শামসুলের আমেরিকা যাওয়ার উদ্দেশ্য। এখানে শাকিব খানের যে এন্ট্রি সিন রাখা হয়েছে-সেটা জমেনি।
শুরুর দিকে শাকিব খানকে দেখতে একটু ভিন্ন লাগলেও সময়ের সাথে সাথে ব্যাপারটা মানিয়ে যায়। যাইহোক, বিরতির আগের মুহূর্তে এসে সিনেমা কিছুটা ইন্টারেস্ট বিল্ড করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে। ইমোশনের অনেক বেশি অভাব অনুভব করি সিনেমার এটুকুতে এসে। যদিও শুরু থেকেই ইমোশন ঠিকঠাকভাবে ফুঁটে ওঠেনি। প্রথমার্ধ যেমন-তেমন, দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে ইমোশনটাই দরকার ছিল। কেননা গল্প যেদিকে মোড় নিলো, সেদিকে ইমোশনটাকে ঠিকঠাকভাবে কাজে লাগাতে না পারলে দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আর হয়েছেও তাই।
একটা অযৌক্তিক ব্যাকস্টোরি এবং কান্নার শব্দ সিনেমাহলের ভেতরে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছিলো। যাদের নিয়ে কাহিনী, তাদের মধ্যকার রসায়ন পরিচালক দেখাতে পারেননি, দর্শক হিসেবে আমিও তেমন একটা কানেক্টেড ফিল করিনি। তাই সিনেমায় আসা জোরপূর্বক ক্লাইমেক্সে সবকিছু কেমন যেন ঠান্ডা অনুভব করলাম।
সিনেমায় শাকিব খানের কাজ ভালো। ওনার মুখে আঞ্চলিক ভাষা শুনতে খারাপ লাগেনি। অভিনয়েও ভালো ছিলেন তিনি। কোর্টনি কফির ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা স্বাভাবিকই লেগেছে। অভিনয়েও খুব খারাপ লাগেনি। তবে শাকিব খানের সাথে ওনার রসায়নটা আরেকটু জমলে ভালো লাগতো। আবার, রোমান্টিক গানে ওনার এক্সপ্রেশন ভালো ছিলনা।
ডিজে সোহেলকে প্রথমবার ঠিকঠাক বাংলা ও ইংরেজি বলতে শুনলাম। ভালো লেগেছে। বাকিদের মধ্যে এজাজুল ইসলাম, তারিক আনাম খান, দিলারা জামান, আহমেদ শরীফের কাজ ভালো লেগেছে। মাহিয়া মাহি, আরশ খানকে ঠিকঠাক লেগেছে। তবে আরশ খানের আলগা দাঁড়ি চোখে লাগছিলো।
মোট ৭টি গান শুনতে পাওয়া যায় এই সিনেমায়। রিয়াদের কণ্ঠে ‘মা’ এবং রেহান রসুল ও সিঁথি সাহার কণ্ঠে ‘ইশারা’ ভালো ছিল। বাকিগুলোর মধ্যে ‘আমি একাই রাজকুমার’ বাদে সবগুলোই ঠিকঠাক। যদিও লিপসিঙ্কের সমস্যা ছিল গানে। সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি ভালো। কালার গ্রেডিং ঠিকঠাক।
সবমিলিয়ে এই ছিল আমার দৃষ্টিতে ‘রাজকুমার’। চাইলে দেখে আসতে পারেন নিকটস্থ প্রেক্ষাগৃহ থেকে।