Select Page

নব্বই দশকের প্রথম ঝড় শাবনাজ

নব্বই দশকের প্রথম ঝড় শাবনাজ

নব্বই দশকে এসেও শাবানা, ববিতা, রোজিনা, সুনেত্রা, দিতি, সুচরিতা, চম্পারা বেশ ভালোভাবেই পর্দা কাঁপাচ্ছিলেন, দিচ্ছেলেন একের পর এক সফল সব ছবিও। দর্শকরাও ভিড় করছিলেন তা দেখতে সিনেমা হলে। তারপরও কিসের যেন এক শূন্যতা কাজ করছিল সাধারণ দর্শকদের মনে!

একই ধরনের গৎবাঁধা কাহিনী আর একই মুখ বারবার দেখতে দেখতে যখন আমার মতো আরো অনেক দর্শক ক্লান্ত, ঠিক তখনই এলো স্নিগ্ধ-সুন্দর কিশোরী মুখ। তার নাম শাবনাজ। পারিবারিক নাম সাবরিনা তানিয়া। তিনি ছিলেন নব্বই দশকের বাংলা চলচ্চিত্রে ঝড় তোলা প্রথম নায়িকা।

বাংলা চলচ্চিত্রের বহু জনপ্রিয় অভিনেতাশিল্পীর আবিষ্কারক এহতেশাম সাহেব তার ‘চাঁদনী’ (০৪/১০/১৯৯১) ছবির মাধ্যমে নিয়ে এলেন শাবনাজকে, সঙ্গে সুর্দশন নায়ক নাঈম। এফডিসির চার দেয়ালের ঘেরা পরিচিত সব দৃশ্য থেকে বেরিয়ে এসে সিলেটের জাফলং-এর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে চিত্রায়িত সম্পূর্ণ টিনএজ রোমান্টিক ছবি ‘চাঁদনী’ ঝড় তুললো সারা দেশে। তরুণ থেকে মধ্যবয়সী দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়লো প্রেক্ষাগৃহে। ছবি হয়ে গেল বাম্পার হিট। এভাবে শাবনাজ-নাঈমের অভিষেকের মাধ্যমে শুরু হলো বাংলা চলচ্চিত্রে নতুনদের জোয়ার।

আসলে শাবনাজ-নাঈমদের তূমুল জনপ্রিয়তাই সে সময়ের চলচ্চিত্রের গতিধারাটাই পাল্টে গিয়েছিল। ওদের দেখানো পথ ধরেই এলো ওমর সানী (১৯৯২), সালমান শাহ, মৌসুমী, আমিন খান, শাবনূর (১৯৯৩)-দের মতো তারকারা।

চাঁদনী-রিভিউ-পোস্টার-এহতেশাম-শাবনাজ-নাঈম

এখানে একটি কথা না বললেই নয়, চলচ্চিত্রে অভিনয়কে নাক সিটকানো ভাবটা কাটিয়ে দিয়েছিল এই শাবনাজ-নাঈমরাই। তাদের মতো মার্জিত ও উচ্চবংশীয় শিক্ষিত দুজনকে দেখে অনেকেই তখন চলচ্চিত্রে আগ্রহী হয়। ওই সময়ে চলচ্চিত্রে আসা অনেকেই তাদের আইডলও মনে করতো।

যাই হোক, ‘চাঁদনী’র অভাবনীয় সাফল্যে শাবনাজ তখন লাখো তরুণের ক্রেজ, তার নতুন ছবি মানেই হল বারান্দায় দর্শকদের হুমড়ি খাওয়া ভিড়। শুধু সিনেমা নয়, শাবনাজের ভিউকার্ড কিনতেও প্রতিযোগিতা লেগে যেতো। যা এখনকার প্রজন্মের কাছে অনেকটা ঠাকুরমার গল্পের মতোই শোনাবে, অথচ এটাই ছিল বাস্তবচিত্র!

শাবনাজের জন্ম ২৯ অক্টোবর ঢাকার মুন্সিগঞ্জে, তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেই চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। তার বাবা স ম হুমায়ূন নাট্যশিল্পী হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিলেন। গুণী পরিচালক আজিজুর রহমানের সঙ্গে বাবার পরিচয় থাকার সুবাদে পরিচালক এহতেশামের মাধ্যমে শাবনাজের পর্দায় আসা। এরপর একে একে করেন দিল, আজকের হাঙ্গামা, সোনিয়া, চোখে চোখে, অঞ্জলী, লাভ, সাক্ষাৎ, জিদ, অনুতপ্ত, টাকার অহংকার, রাগ অনূরাগ,আশা ভালোবাসা, তপস্যা, প্রেমের সমাধির মতো সফল চলচ্চিত্র।

তূমুল জনপ্রিয়তায় থাকা ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে সহকর্মী নাঈমকে বিয়ে করেন শাবনাজ। ১৯৯৪ সালে রূপালী পর্দার জুটি বাস্তবের জুটি হয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। অবশ্য ততদিনে তারা জুটি হয়ে ১২টি ছবি করে ফেলেছেন। মজার বিষয় হলো, বিয়ের পর মাত্র একটি ছবিতে জুটি হয়ে অভিনয় করেছিলেন। তাও বিয়ের পাঁচ বছর পর আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ (০৯/০২/২০০১)।

নাঈম-শাবনাজ এখন

সংসারে মনোনিবেশ করায় শাবনাজ পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে তেমন আর সময় দিতে পারেননি। ফলে আস্তে আস্তে এ জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। এর মধ্যে করে গেছেন ৩০টির মতো ছবি, যার বেশির ভাগই ছিলো সফল। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। ১৯৯৬ সালে ‘নির্মম’ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের গুণে এ স্বীকৃতি পান তিনি।

শাবনাজের সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্রটি ছিল আজিজূর রহমান পরিচালিত ‘ডাক্তার বাড়ী’ (১৩/০৭/২০০৭)। এ ছাড়া আফজাল হোসেনের বিপরীতে একটি প্যাকেজ নাটকেও অভিনয় করেছিলেন।

বর্তমানে সুখী দম্পত্তি শাবনাজ-নাঈমদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে!

নাঈম-শাবনাজের বিয়ে

শাবনাজ অভিনীত জনপ্রিয় কিছু গান: বন্ধুর বাঁশি বাজেরে আমার কানে কানে, কন্যার বয়স যে ষোল, কতদিন পরে দেখা হলো দুজনাতে (চাঁদনী), চোখেতে চোখ রেখে দিলকে চিনে নাও, তোমায় আপন করে (দিল), চোখে চোখ রেখে পাগল করেছো, পাগল এ মন মানে না (চোখে চোখে), আমারে কি ভুইলা গেছ পরাণের বন্ধু, জীবনের নৌকা চলে (প্রেমের সমাধি), কেন ডাকো বাঁশিতে আমায় (বিষের বাঁশি), এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল (আগুন জ্বলে), তুমি এসেছিলে পরশু, মনের সুতায় বোনা প্রেমেরও জালে, তোমার নাম লিখে দাও (অনুতপ্ত), গীতি আমার গীতি, তোমারে যে ভালোবাসি (তপস্যা), এই বুকে লেখা আঞ্জুমান (আঞ্জুমান), তোমাকে দেখলে একবার, লোকে বলে পাগলামী আমি বলি ভালোবাসা (অঞ্জলী), আমার নয়ন করে রাখব তোমায় (প্রতিশ্রুতি), তুমি শুধু তুমি তোমাকেই ভালোবাসলাম (বদসুরত), আমার ভালোবাসা সত্যি যদি হয় (জনম জনম), আরো আগে কেন এলে না, ব্যথা বড় ভালো লাগে যদি তুমি দাও (আশা ভালোবাসা), তুমি একটি চোর (মায়ের অধিকার) ও সুন্দর মেয়ে কাছে এলে প্রেমে তো পড়বেই পুরুষ (সোনিয়া)।

গায়েহলুদে বোন অভিনেত্রীর মৌ’র সঙ্গে শাবনাজ

শাবনাজ অভিনীত ছবি: চাঁদনী, দিল, আজকের হাঙ্গামা, সোনিয়া, চোখে চোখে, অঞ্জলী, লাভ, সাক্ষাৎ, জিদ, অনুতপ্ত, টাকার আহংকার, বিষের বাঁশি, আগুন জ্বলে, ফুল আর কাঁটা, রাগ অনুরাগ, আঞ্জুমান, আশা ভালোবাসা, তপস্যা, প্রেমের সমাধি, বদসুরত, নির্মম, মায়ের অধিকার, চিরশত্রু, আশার প্রদীপ, দেশদ্রোহী, প্রতিশ্রুতি, একটি সংসারের গল্প, ঘরে ঘরে যুদ্ধ, জনম জনম ও ডাক্তার বাড়ী।


মন্তব্য করুন