Select Page

নব্বই দশকের মিষ্টি মুখ লিমা

নব্বই দশকের মিষ্টি মুখ লিমা

লিমা..

লিমাকে নিয়ে লেখালেখি মোটেও চোখে পড়ে না। তারপরেও লিমা একটি অধ্যায় ঢালিউডে।

লিমাকে তার সময়ের দর্শক মজা করে বলত ‘মুটকি নাইকা’ (মোটা নায়িকা অর্থে)। মোটা হলেও লিমা দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী ছিল। লুক সুইট। তার সময়ের প্রথম সারির নায়কদের সাথেই সে কাজ করেছে। সেদিক থেকে বাণিজ্যিক ছবিতে লিমার অবস্থান শক্তপোক্ত ছিল। অভিনয় চমৎকার তবে কিছু ছবিতে তার স্লো ডায়লগ ডেলিভারি দেখা যেত।

জন্ম ২২ সেপ্টেম্বর, দাউদকান্দি, কুমিল্লা। বাবা মুক্তিযোদ্ধা।

প্রথম ছবি – সুখের আগুন, ১৪ বছর বয়সে।

উল্লেখযোগ্য ছবি : প্রেমগীত, হাবিলদার, কন্যাদান, প্রেমযুদ্ধ, গরিবের সংসার, জজ ব্যারিস্টার, বাংলার কমান্ডো, গরিবরাও মানুষ, ঘরের শত্রু, নীল সাগরের তীরে, সতর্ক শয়তান, দুঃসাহস, লড়াই,  চাকরানী, আত্মসাৎ, হুলিয়া, আজকের ফয়সালা, নাগ নাগিনীর প্রেম, মন ময়ূরী, অন্যায় অত্যাচার, ক্ষমতার লড়াই, ডাকাত, বাঘা বাঘিনী।

‘প্রেমগীত’ সেরা ছবি। অসাধারণ একটা ছবি। ওমর সানীর সাথে তার মিষ্টি রোমান্স আর  বেদনার গল্পটা যখন দানা বাঁধতে থাকে ছবির প্রতি দর্শক আকর্ষণ বাড়তেই থাকে। গল্পে ওমর সানী লিমার বাড়িতে আশ্রয় পায় বাবা আহমেদ শরীফের মাধ্যমে কিন্তু সেটা মেনে নিতে পারে না লিমার ভাই গাংগুয়া। আহমেদ শরীফের মৃত্যুর পর সানীকে চাকরের মতোই থাকতে হয় সে বাড়িতে। গাংগুয়া কারণে অকারণে মারত সানীকে। লিমা ও সানীর রোমান্সের মুহূর্তগুলো স্মরণীয়। বিশেষ করে সানী যখন লিমার এলোকেশ ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় আর লিমা আলতো করে তার স্পর্শ নেয় ঐ মুহূর্তটা ছবির সেরা মুহূর্ত। গানগুলোর মধ্যে ‘আমার সুরের সাথী আয়রে, আঁচল ভরা সুখ আছেরে’ এ দুটি অপূর্ব।

‘প্রেমযুদ্ধ’ ছবিতে ছিল অমর নায়ক সালমান শাহর বিপরীতে ছিল। সালমানের সাথে তার জুটি দারুণ ছিল। মা শর্মিলী আহমেদের একরোখা স্বভাবের বিপরীতে মেয়ে লিমার ভালোবাসার জন্য ঘর ছেড়ে আসার অভিনয় দেখার মতো। গানের মধ্যে ‘ওগো মোর প্রিয়া, জেনে রাখো তুমি’ এটা খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া সালমানের নিজের কণ্ঠে গাওয়া ‘তুমি আমার জীবনের এক স্বপ্ন যেন’ গানটিতে রোমান্স অসাধারণ। সালমানের সাথে ‘কন্যাদান’ ছবিতেও ছিল। প্যাথেটিক গল্পের ছবি। লঞ্চে সালমান ছেলেকে নিয়ে খেলার সময় ইটে পা পিছলে ছেলে হাত থেকে টুপ করে নদীতে পড়ে যায় আর লিমা চিৎকার দেয় ‘অপু’ বলে। তারপর লিমা অস্বাভাবিক হয়ে যায়। তার চিকিৎসা চলে এবং পরে একটি কন্যা সন্তান হলে ডাক্তার শাবানার কাছে দেয়া হয়। লিমা সুস্থ হবার পর শাবানার সাথে বিরোধ বাঁধে লিমার এবং নতুন ট্র্যাজেডির জন্ম হয়। ‘গরিবের সংসার’ ছবিতেও লিমা দারুণ ছিল। এ ছবিতে জসিম, ড্যানি সিডাক, বাপ্পারাজদের আদরের ছোটবোন ছিল লিমা। বোনটি রাগ করলে জসিম যখন গান ধরে-

‘ও তুই কাঁদিস নারে বোন আমি সইতে পারি না

তুই কেন জানিস না

তিনটি ভাইয়ের তুই একবোন।’

পারিবারিক বন্ধনের চমৎকার গান। গানটিতে আমরা ফিল করি আমরা আমাদের বোনকে কতটা ভালোবাসি। আদরের বোনটি পরে অন্ধ হয়ে যায়। তার জন্য ভাইদের সংগ্রাম শুরু হয়। ড্যানি স্বার্থপর হয়ে যায়। ছবির গল্প তখন বাস্তব গল্প হয়ে যায়। লিমার বিপরীতে ছিল শাহিন আলম। ‘জজ ব্যারিস্টার’ ছবিটিও মনে রাখার মতো। বাপ্পারাজের বিপরীতে ছিল। শাবানা-আলমগীরের মেয়ে থাকে। মেয়ে হারিয়ে যায়। শেষের দিকে মেয়ের জন্য সংগ্রাম শুরু হয়।

‘বাংলার কমান্ডো’ ছবিতে তার অভিনয় চমৎকার ছিল বাপ্পারাজের বিপরীতে। বড়ভাই আলীরাজের জিভ কেটে নেয় হুমায়ুন ফরীদি। সেই থেকে আলীরাজের দেখাশোনা তাকেই করতে হয়। একটা সিকোয়েন্স খুব টাচি ছিল। বাপ্পারাজ মাউথ অর্গান বাজানোর জন্য লিমাদের বাড়ির বারান্দায় বসতেই গান ধরে লিমা। লিমার লিপে ছবির চমৎকার গান –

‘জীবন আমার সাদা কাগজ

সাদাই রয়ে গেল।’

‘সতর্ক শয়তান’ ছবিতে লিমা রুবেলের বিপরীতে ছিল। রুবেলের জন্মদিনে মজা করতে আসে এবং চমৎকার একটি গান ছিল যেখানে শুরুতে লিমাই বলে –

‘বুড়ো খোকার জন্মদিনে

এসেছে এ বুড়ি,

একটু দেরি হলো বলে

আই অ্যাম ভেরি সরি।’

‘নীল সাগরের তীরে’ ছবিতে রুবেলের বিপরীতে ছিল। হুমায়ুন ফরীদির মেয়ে থাকে। ফরীদি স্বার্থের জন্য লিমাকে হত্যা করতে চায়। ছবিটি কক্সবাজারে শ্যুট করা হয়েছিল সম্পূর্ণ।

‘হাবিলদার’ ছবিতে ডিপজল ছিল লিমার নায়ক। তখন ডিপজলের নাম ছিল ডিপু। লিমার কস্টিউম আকর্ষণীয় এ ছবিতে।

‘জজ ব্যারিস্টার’ ছবিতে বাপ্পারাজ-লিমার ‘আমি রিকশাওয়ালা আমি যে দিলওয়ালা’ গানটি দারুণ। এছাড়া লিমার লিপে ‘ভাগ্য আমার কোথায় এলো রে’ গানটিও ভালো।

লিমার জুটি গড়ে উঠেছিল রুবেল ও বাপ্পারাজের সাথে। রুবেলের সাথেই ছবি বেশি।

লিমা ক্যারিয়ারে ভালো অবস্থানে থাকাতেই ফিল্ম ছেড়ে দেয়। সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল। অবশ্য খারাপ সময়ে ছেড়ে দেয়ার চেয়ে ভালো অবস্থান থাকাতেই ছেড়ে দেয়া ভালো। বর্তমানে দেশেই থাকে। বিউটি পার্লার চালান। যতদূর জানা যায়, বিয়ে করেননি।

লিমা রুচিশীল ছবির ভালো অভিনেত্রী এবং সেটাই ছিল তার নিজস্বতা। আজকের দিনে বাণিজ্যিক ছবির লিডিং নায়িকারাও লিমার প্রতিভার মতো না অনেকেই। তার অভিনয় থেকেও শেখার আছে বর্তমান নায়িকাদের।


মন্তব্য করুন