Select Page

নির্মাণের গল্প : দেওয়ান নজরুলের ‘আসামী হাজির’

নির্মাণের গল্প : দেওয়ান নজরুলের ‘আসামী হাজির’

ঘটনা ১. কমলাপুর রেলস্টেশনে সেট ফেলা হয়েছে। সারি সারি মালগাড়ি রাখা যেখান থেকে ওয়াগনগুলো লুট করতে আসবেন ডাকাত জগনু ও তার দল অর্থাৎ ওয়াসিম ও তার দল। এই ডাকাতি ঠেকাতে পুলিশ অফিসার সোহেল রানা ও তার দল প্রস্তুত। দৃশ্যটির জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে ২০টি ঘোড়া ভাড়া আনা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক করে ডাকাত ওয়াসিম বাহিনীর সাথে পুলিশ অফিসার সোহেল রানা’র বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের দৃশ্যটি ধারণ করার শুরু হলো গভীর রাতে। শুটিং করতে করতে সকাল হয়ে যায়। সারারাত শুটিং করতে করতে সবাই ক্লান্ত।সূর্য উঠার পর দেখা যায় সবার গায়ে মানুষের পায়খানা লাগানো। রাতে শুটিং হয়েছিল যেখানে সবাই এতো আন্তরিক ছিল যে কেউ গায়ের গন্ধটিও টের পায়নি।

ঘটনা ২. হিমছড়ি পাহাড়ে শুটিং। ডাকাত জগনু গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ পাহাড়ের উপর দিয়ে জিপ চালিয়ে জগনুকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। জগনু জিপ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। ওয়াসিম লাফ দিলেন কিন্তু কৌশলগত ভুলের কারণে পুরো জিপ উল্টে যায়। প্রায় ২/৩ শত ফুট উপর থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে। চিত্রগ্রাহক অরুণ রায় কৌশলে থেকে বের হয়ে গেলেন, পেছনে থাকা পুলিশসদস্যরা ও সামনে থাকা ড্রাইভার ও সোহেল রানা সবাই ছিটকে পড়ে। সোহেল রানা ও ওয়াসিম বেশি আহত হয়েছিলেন যার ফলে হাসপাতালে কদিন চিকিৎসা নিয়েছিলেন ।

ঘটনা ৩. সাভারের টাটি বাড়ি এলাকা দিয়ে ডাকাত জগনু (ওয়াসিম) ও তার দলবল নিয়ে যাচ্ছে। পথে বাধার সৃষ্টি করবে ডাকাত ধর্মা (জসিম) ও তার দলবল এবং দুগ্রুপে সংঘর্ষ বাঁধবে। এই দৃশ্যটি ধারনের আগে পথে আতংক সৃষ্টির জন্য ওয়াসিম যে পথ দিয়ে ঘোড়া নিয়ে আসবে সেই পথেই কিছু ছররা বোমা মাটিতে বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ঘোড়া ছুটে আসতেই বোমার সুতোয় আগুন দেয়া হয়। ওয়াসিমের ঘোড়াটি বোমার উপর যেতে না যেতেই বোমাগুলো একে একে ফুটতে শুরু করে। ঘোড়া ভয় পেয়ে পাগলের মতো লাফালফি করা শুরু করে। ওয়াসিম ঘোড়া থেকে পড়ে যান এবং ঘোড়া ওয়াসিমকে লাথি দিয়ে আরও ১৫ ফুট দূরে ছিটকে ফেলে। ওয়াসিম অজ্ঞান হয়ে যান। সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে, প্রায় সকলের ধারণা ওয়াসিম হয়তো মারা গেছেন। দ্রুত সাভার ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তৎকালীন সাভার ক্যান্টনমেন্টের মেজর জেনারেল সামাদ সাহেবের আন্তরিকতায় ওয়াসিম সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন।

এতক্ষণ যা বললাম সেই তিনটি ঘটনা আজ থেকে ৩৫ বছর আগে নির্মিত ও মেগাহিট ছবি দেওয়ান নজরুলেরআসামী হাজির’ ছবির নির্মাণের সময়ে ঘটিত। তিনটি ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের সোনালি দিনের চলচ্চিত্রের মানুষগুলো একেকটি ছবি নির্মাণে কী পরিমাণ আন্তরিক ছিলেন।

দেওয়ান নজরুল নামের আমাদের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির একজন পরিচ্চালক ছিলেন যাকে ‘ডায়নামিক ডিরেক্টর’ বলা হতো যার পরিচালিত বক্সঅফিস কাঁপানো বেশকিছু চলচ্চিত্র ছিল। কেন দেওয়ান নজরুল’কে ‘ডায়নামিক ডিরেক্টর’ বলা হতো সেই কারণটা আজ আপনাদের বলছি। গত ৩/৪ দিন আগে আপনাদের পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনের অংশ দেখিয়ে ‘আসামী হাজির’ নামের বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের ছবির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। আজ আপনাদের সেই ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। জেনে নিন মান্ধাতার আমলে কী পরিমাণ শ্রম, মেধা ও আন্তরিকতা দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ দর্শকদের হলিউদের ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের ছবি আমাদের গুনি মানুষগুলো উপহার দিয়েছিল সেই তথ্য।

বাংলা ফোক ফ্যান্টাসি ছবির কাণ্ডারি ইবনে মিজানের সহকারী দেওয়ান নজরুল নিজের পরিচালিত ছবির কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ব্যক্তিগতভাবে ইবনে মিজান ও দেওয়ান নজরুল হলেন মামাতো- ফুফাতো ভাই। দেওয়ান নজরুল ‘কাঁশবন চলছবি’ নামে নিজে একটি প্রযোজনা সংস্থা খুলেন। তার সেই প্রযোজনা সংস্থা থেকেই প্রথম পরিচালিত ছবিটি নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

দেওয়ান নজরুল সিদ্ধান্ত নিলেন হলিউডের ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের ছবি বাংলাদেশে চলচ্চিত্রে যুক্ত করার। কারণ এ ধরনের  ছবি তখনও শুধু বাংলাদেশে নয় উপমহাদেশেও কেউ তখনও নির্মাণ করেনি। সেই চিন্তা থেকে বিদেশি কোন চলচ্চিত্র থেকে ধার করা গল্প না নিয়ে নিজেই একটি গল্প ও চিত্রনাট্য তৈরি করলেন যার নাম দিলেন ‘আসামী হাজির’।

এখানে উল্লেখ্য যে দেওয়ান নজরুলের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দোস্ত দুশমন’ হলেও তিনি প্রথম কাজে হাত দিয়েছিলেন ‘আসামী হাজির’ ছবিটির যার কাজ তিনি পরবর্তীতে শেষ করতে না পারায় বা মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেলে তখন ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিটি মুক্তি পায় যা বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

ইবনে মিজানের সহকারী হিসেবে কাজ করার সময়ে জনপ্রিয় তারকা ওয়াসিম, সোহেল রানা, জসিম এর সাথে দেওয়ান নজরুলের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । নিজে যখন ছবি পরিচালনা করতে এলেন তখন ওয়াসিম সোহেল রানা, জসিমকে মাথায় রেখেই ছবির গল্প তৈরি করলেন। ‘আসামী হাজির’ ছবির সহকারী প্রযোজক ছিলেন প্রয়াত প্রযোজক তাহের চৌধুরীর ছোট ভাই পণ্ডিত।

শুরুতে অলিভিয়া ছিলেন যিনি পরবর্তীতে বাদ পড়েন এবং তার জায়গায় ববিতা যুক্ত হোন। মনসুর আহমেদের সুরে ও সাবিনা ইয়াসমিন –খুরশিদ আলমের কণ্ঠের ‘প্রেম নগরের প্রেমিক আমি’ গানটি রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে দেওয়ান নজরুল তার গুরু ইবনে মিজানকে দিয়ে ছবির মহরত উদ্বোধন করান। বিশেষ কোন এক কারণে ছবিটি মহরতের পর কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং দেওয়ান নজরুল ‘দোস্ত দুশমন’ শুরু করেন। এ ছবির ব্যাপক সাফল্যর পর দেওয়ান নজরুল নিজেকে মাল্টিস্টার ও নিউ ডাইমেনশন পরিচালক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য ‘আসামী হাজির’ ছবির পুনরায় নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এই সময় প্রযোজক হিসেবে এগিয়ে আসেন ‘চিত্রদূত’এর কর্ণধার প্রয়াত বশিরুল হক। সঙ্গীত পরিচালক মনসুর আহমেদের জায়গায় আলম খান ও অলিভিয়ার জায়গায় ত্রিমাত্রিক চরিত্রের জন্য ববিতা’কে যুক্ত করে বাকি শিল্পীদের অপরিবর্তিত রাখা হয়।

যেহেতু ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের ছবি সেহেতু ছবির অভিনেতা অভিনেত্রীদের পোশাক, সেট, চলাফেরা, গানের ধরন সবকিছুতেই বৈচিত্র্য আনা হয়। ছবিতে ওয়াসিম জগনু-মগনু ও ববিতা হাসু-রাসু দুজনেই দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন। সোহেল রানা ছিলেন পুলিশ অফিসার আর জসিম হলেন ডাকু সর্দার ধর্মা। এই ছবির চিত্রগ্রহণের জন্য কিছু আলাদা ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বা নরমাল আই লেবেল ৫০-এর লেন্স ব্যবহার করা হয় এবং ওয়েস্টার্ন অ্যাঙ্গেল অধিকাংশ চিত্র ধারণ করা হয়। ক্যামেরা ও সাউন্ডে রিভার্স ফরওয়ার্ড টেনে দৃশ্যগুলো ধারণ করা হয়। দ্বৈত চরিত্রের একসাথের দৃশ্য ধারনের সময় ক্যামেরায় ‘মাসকি’ করা হয়। উল্লেখ্য যে নতুন করে ‘আসামী হাজির’ ছবির কাজ শুরু করার মহরতের অনুষ্ঠানে দেওয়ান নজরুলের সাথে তার স্ত্রী শাহিন হোসেনের প্রথম পরিচয় হয়েছিল যেখান থেকেই পরবর্তীতে দুজনের সম্পর্ক তৈরি হয় যা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় ।

ছবিতে ওয়াসিমের জগনু চরিত্রটি ছিল দুর্ধর্ষ ডাকাত ও মগনু চরিত্রটি ছিল হাবাগোবা কমেডি চরিত্রের যারা ছবিতে যমজ দুই ভাই এবং ববিতার রাসু চরিত্রটি ছিল পুলিশ অফিসার সোহেল রানা’র স্ত্রী ও হাসু ছিল মগনু’র প্রেমিকা চরিত্রে যারা যমজ দুই বোন। ডাকাত জগনুকে পুলিশে খুঁজছে আর হাবাগোবা মগনু শহরে আসে হারানো প্রেমিকার খোঁজে। ছোটবেলায় দুই ভাইয়ের বিচ্ছেদ ঘটেছিল এবং দুজন আলাদা আলদা পরিবেশে বড় হয়। আগেই বলেছি যে এই ছবিটি ছিল ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের সেই কারণে সেট ডিজাইনও করা হয়েছিল ওয়েস্টার্ন শহরের আদলে যা এফডিসির ৪ নং ফ্লোরে নির্মাণ করা হয়। এই ছবির কাহিনী ও চিত্রনাট্য এতোটাই জটিল ছিল যে দর্শক একটিবারের জন্যও পর্দার সামনে থেকে সরে যায়নি যা দেওয়ান নজরুলের বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। চিত্রনাট্য কী রকম জটিল ছিল তার দুটি উদাহরণ দিই যা হলো ছবিতে সোহেল রানা’র স্ত্রী রাসু (ববিতা) সোহেল রানার সাথে বেড়াতে যায় যেখানে ডাকু ধর্মা (জসিম) সদলবলে হামলা চালায় । ববিতা পাহাড় থেকে পরে হারিয়ে যায় কিন্তু পরিচালক ববিতাকে কোন দৃশ্যে মৃত না দেখিয়েই হাসু (ববিতা) চরিত্রটি দিয়ে দর্শকদের মনে বিশ্বাস করান যে ববিতা মারা গেছে। হাসুকে রাসুকে ভেবে সোহেল রানা ভালোবেসে ফেলে আর হাসুও সোহেল রানার বাড়ীতে আশ্রয় পেয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখে। অন্যদিকে পুলিশ ভুল করে হাবাগোবা মগনুকে জগনুকে গ্রেফতার করে কিন্তু যখন দুইভাই একজন আরেকজনকে বাঁচাতে নিজেকে জগনু বলে দাবি করে তখন বিপাকে পরে যায়।

এ রকম অনেক দ্বন্ধমুখর ও টান টান উত্তেজনা ভরপুর ছিল পুরো ছবিটা। ছবিতে দেওয়ান নজরুলের লেখা, আলম খানের সুর করা ও ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং সাবিনার কণ্ঠে ‘আমার পৃথিবী তুমি’ শিরোনামে একটি দারুণ গান ছিলো যা আজো গুনগুন করে গাই। গানটি শুনলে মনে হবে কোন আধুনিক গানের ডুয়েট অ্যালবামের গান যা সত্যি অসাধারণ ।

কেউ কী উপরের ঘটনাগুলোর মতো কোন ঘটনা এখনকার নির্মিত কোন ছবির বেলায় ঘটেছে বলে জানাতে পারবেন ? কিংবা দর্শকদের জন্য নির্মিত এখনকার কোন চলচ্চিত্রের নির্মাণে পেছনে সবাইকে এতো আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান পেয়েছেন বলে প্রমাণ দেখাতে পারবেন?

উপরের উল্লেখিত ঘটনাগুলো আমরা পর্দায় দেখিনি কিন্তু দৃশ্যগুলো দেখেছিলাম যে দৃশ্যগুলো দেখে সেদিনই অনুমান করেছিলাম কি কষ্টটা না সেদিন করেছিলেন পর্দার মানুষগুলো বাংলাদেশের দর্শকদের একটি হলিউডের ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের ছবি উপহার দেয়ার জন্য।

শৈশবে পরিবারের সাথে সাদাকালো এই ছবিটি লালকুঠি সিনেমা হলে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল যা আজো চোখে ঝাপসা ঝাপসা ভাসে। এই ছবিটি দেখতে সেইসময় নাকি দর্শকদের সাথে বিভিন্ন সিনেমা হলে হল কর্তৃপক্ষের সাথে সংঘর্ষের ঘটনার কথা শুনেছিলাম যার সত্যতা আহমেদ জিয়াদের লিখা ‘ চলচ্চিত্র নির্মাণের নেপথ্য কথকতা’ বইটিতে পেয়েছিলাম।

আজ সেই ছবিটির কথা চিন্তা করলে হিসাব করে পাইনা ঐ ছবিটিকে নতুন করে নির্মাণ করতে কত টাকা লাগবে? আজ এতো এতো মানুষ আসে চলচ্চিত্রকে উল্টায় ফেলবেন বলে ঘোড়ার আণ্ডা সিনেমা বানান বাবুদের মতো নকলবাজ কাহিনীকারদের কাহিনী দিয়ে অথচ নতুন করে একটি ‘আসামী হাজির’ ছবি নির্মাণ করে দেখাতে পারেন না।

আজকের দর্শকরা বলে আমাদের প্রবীণ নির্মাতারা নাকি আধুনিক ছবি নির্মাণ করতে পারবেন না, অথচ ওরা জানে না যে আমাদের প্রবীণরা আজ থেকে ৩৫ বছর আগে সেই সময়ে যে আধুনিক ছবি নির্মাণ করেছিলেন সেটা আজকের কেউই এখনও নির্মাণ করে দেখাতে পারেননি। মুক্তির পাওয়ার প্রথম দিন গুলিস্তান সিনেমা হলে ছবিটির ব্যানার দেখেই হাজার হাজার দর্শকের ভিড় করে। একসময় দর্শক হলের কলাপসিবল গেইট ভেঙ্গে ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে। শুধু ঢাকার গুলিস্তান সিনেমায় নয় এমন ঘটনা তখন দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে ঘটেছিল ছবিটি দেখার জন্য। এভাবেই কলাকুশলীদের মেধা, শ্রম ও আন্তরিকতায় এবং দর্শকদের ভালবাসায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘আসামী হাজির’ ছবিটি নিউ ডায়মেনশন সৃষ্টি করেছিল।

তথ্যসূত্র : চলচ্চিত্র নির্মাণের নেপথ্যর কথকতা, আহমেদ জিয়াদ।
কৃতজ্ঞতায় : জুবায়েদ দীপ
পোস্টার : সাদাকালো সোনালী অতীত


মন্তব্য করুন