Select Page

নিশো : আমাদের কালের বিস্ময়

নিশো : আমাদের কালের বিস্ময়

আমাদের বেড়ে ওঠার সময়ে আমরা যেমন নব্বই দশকীয় নাট্যসম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছি একটা সময়ে বয়স ও অভিজ্ঞতার বিকাশে একজন অভিনেতা সময়টাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে মনোযোগের সাথে নাম তার আফরান নিশো। আমরা ছোটবেলায় জাহিদ হাসান, মাহফুজ-দের দেখে বিস্মিত হতাম তাদের ক্যারেক্টার পোট্রে করার অসাধারণ দক্ষতা দেখে একালে এসে সেই বিস্ময় সময়ের পরিবর্তনে নিত্য নতুন প্রয়োজনে নিশোর মধ্যে পাই/পেয়ে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত নতুন ক্যারেক্টারে অভিনয় করে যাচ্ছে নিজেকে ভেরিয়েশন রেখে প্রমাণ করার জন্য।

‘মোর স্বপ্নের সাথী তুমি কাছে এসো
আজ ঋতু ফাল্গুনে তবু দূরে থাকো,
বৃথা যায় দিন জানি তুমি আসো নাকো
এসো গো এসো গো’

একটেল-এর বিজ্ঞাপনে হালকা-পাতলা গড়নের একটি ছেলে ফুল হাতে করে প্রেম নিবেদন করতে যায় এক মেয়েকে। ছেলেটি আফরান নিশো। সেদিনের সেই মডেল নিশো আজকে দেশে-বিদেশে অসংখ্য ভক্ত-দর্শকের প্রিয় অভিনেতা হবে তা কে জানত!

স্ট্রাগল, ক্যারেক্টার সিলেকশনে অভিনয়ের সুযোগ আছে এমন ভূমিকা দেখে বাছাই করে করে নাটক/টেলিফিল্মে আজকের বড় তারকা নিশো। তাকে দেখে দর্শক আস্থা রাখে যে ভালো গল্প ও ভালো অভিনয় দুটোর সংমিশ্রণ দেখবে তারা। একটা প্রজন্মের পরে নিশোর মতো ক্যারেক্টারের ভেরিয়েশন তার প্রজন্মে আর কেউ সেভাবে পারেনি। নিশো এখন এমন এক অভিনয়শৈলী তৈরি করেছে নিজের যে কোনো ক্যারেক্টার লিড করার সক্ষমতা তার আছে।

টাঙ্গাইল, ভুয়াপুরে জন্ম নিশোর ১৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর। পড়াশোনা যথাক্রমে ধানমন্ডি গর্ভনমেন্ট বয়েস স্কুল, ঢাকা কলেজ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।

২০০০ সালে ক্যারিয়ার শুরু র‌্যাম্প ও বিজ্ঞাপন দিয়ে। অমিতাভ রেজার নির্মাণে একটেলের বিজ্ঞাপনের পরে থাইল্যান্ডের পানীয় ‘জিনি জিনজিরা’-র আরেকটি বিজ্ঞাপনে মডেল হয় নিশো আফজাল হোসেনের পরিচালনায়। ইমরান-পূজার ‘দূরে দূরে’ গানের মিউজিক ভিডিওতে উর্মিলা শ্রাবন্তী করের বিপরীতে প্রেমের করুণ গল্প দেখিয়েছিল নিশো। মিউজিক ভিডিওটি খুব জনপ্রিয় হয়।

নিশো ভালোবেসে বিয়ে করে তৃষা নামের একটি মেয়েকে। ২০১১ সালে।

নিশোর নাটকে প্রথম ক্যামেরার সামনে আসা গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘ঘরছাড়া’ নাটকের মাধ্যমে। সেই যে ২০০৬-এ যাত্রাটা শুরু হয় আজও চলছে এক যুগ ধরে।

উল্লেখযোগ্য নাটক/টেলিফিল্ম : সুখের আকাশ, যদি তুমি জানতে, ডুবুরি, পেন্ডুলাম, উত্তরাধিকার, অচেনা মানুষ, মানবজমিন, টার্ন ওভার, এক হাজার টাকা, লেটস ফ্লাই, কাঠপোকা, যেমন খুশি তেমন সাজো, দ্য মেটামরফোসিস, সম্বোধন তিন প্রকার, তবুও জীবন, নীল রঙের গল্প, পারফিউম, অপেক্ষার ফটোগ্রাফি, বিপ্রতীপ, স্বপ্নকুহক, সন্ধ্যাকমল, ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার, আউট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিরকুট, অতঃপর জীবনের গল্প, ইন দ্য ডার্কনেস, জীবনসঙ্গী, ফেরার পথ নেই, হোম টিউটর, এবার তোরা মানুষ হ, লায়লা তুমি কি আমাকে মিস করো, সব গল্প রূপকথা নয়, স্বৈরাচার কিংবা প্রেমিকা, দ্য প্রেস, ডিয়ার বাংলাদেশ, বুকের বাঁ পাশে, ট্যাটু সিরিজ, একটি এক মাসের গল্প, দ্য পেইন্টার, শাড়ি, যোগ-বিয়োগ, আঙুরবালা, ছেলেটা বেয়াদব, ছেলেরাও কাঁদে, বিশ্বাস, সুখী পরিবার, লালাই, এ জীবনের অর্থ কি, অপেক্ষার গল্প, ভিতর বাহির, সাইন্সের ছেলে আর্টসের মেয়ে, শোক হোক শক্তি, রোমিও জুলিয়েট, জীবন এখানে এমন, দ্বৈরথ, নিঃশব্দে সুর, অনুভবে, লাল নীল হলুদ বাতি, ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, ধূসর রেখার ওপারে, কাঁচের দেয়াল, রাণীবালা, শঙ্খনীল, প্রতীক্ষা, নীরবতা, সংযোজন, সোলমেট, রেডরোজ, নো, উচ্চতর হিসাববিজ্ঞান, নীল রৌদ্রের ঘ্রাণ, তুমি না থাকলে, সমর্পণ, শেষ চিঠি, এক বৈশাখে, কতটা পথ পেরুলে, ক্লাসলেস মোখলেস, বাবুর্চিয়ানা।

তার অভিনীত কয়েকটি শর্টফিল্ম : ব্রা-দার, আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প, বাঁক, কমপ্লিকেটেড।

একজন নিশোকে আপনি কোনোভাবেই তার ক্যারিয়ারের প্রথমদিকের নাটকের সাথে আজকের নাটক/টেলিফিল্মকে মেলাতে পারবেন না। তার কাজের ভেরিয়েশনে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভাবে পর্যায় ভাগ করা যাবে।

প্রথম পর্যায় – প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করা
দ্বিতীয় পর্যায় – গল্পকে কেন্দ্র করে অভিনয়ের সুযোগ আছে এমন কাজ করা
তৃতীয় পর্যায় – নিজেকে অতিক্রমের সাধনা

নিজেকে অতিক্রমের সাধনা তার এখন চলছে। সম্প্রতি ‘ব্রা-দার’ শর্টফিল্ম কিংবা ‘হোম টিউটর, ফেরার পথ নেই, ছেলেরাও কাঁদে, লালাই, লায়লা তুমি কি আমাকে মিস করো, উচ্চতর হিসাববিজ্ঞান’ এগুলো সেই সাধনার অংশ হয়ে আছে। গল্পকে কেন্দ্র করে অভিনয়ের সুযোগ আছে এমন একটি মাস্টারপিস কাজ ‘দ্য প্রেস।’ এই নাটকে নিশো-র অভিনয় বলে দেয় ক্লাস অ্যাক্টরের গুণ তার ভেতর আছে।

নিশো চলচ্চিত্রে আসবে কিনা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে ভক্ত-দর্শকের অনেক দিনের দাবি এটা। তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটলেও সাদামাটা কোনো চরিত্রে ঘটবে না অবশ্যই ইউনিক কিছু হবে।

নিশো সেই অভিনেতা যে দিনকে দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, ক্যারেক্টার তার জন্য তৈরি হচ্ছে বিভিন্নভাবে, কো-আর্টিস্টকে চ্যালেন্জে পড়তে হচ্ছে তার সাথে অভিনয়ে পেরে উঠতে।

নিশো দিনদিন যে বিস্ময় তৈরি করে যাচ্ছে তাতে আমাদের জীবদ্দশায় একটা স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে আফরান নিশো নামের অভিনেতার অভিনয় দেখে যাওয়া। নিজেকে উত্তরণের সাধনাটা আরো রেয়ার ক্যারেক্টারাইজেশনে করে গেলে আমরা পরের প্রজন্মকে মাথা তুলে বলতে পারব ‘আমাদের একজন আফরান নিশো আছে।’


মন্তব্য করুন