Select Page

নূর জাহান : যে গল্প কখনো পুরনো হয় না

নূর জাহান : যে গল্প কখনো পুরনো হয় না

নূর জাহান
ধরণ : রোমান্টিক থ্রিলার
পরিচালক : অভিমন্যু মুখার্জী (ভারত)
অভিনয় : আদৃত রায় (নূর), পুজা চেরি (জাহানারা),  অপরাজিতা আঢ্য (আমেনা/জাহানের মা),  নাদের চৌধুরী (জাহানারার বাবা), সুপ্রিয় দত্ত (আলতাফ), কাঞ্চন মল্লিক, চিকন আলী (সাইফুর) প্রমুখ।

নামকরণ : গল্পের দুই প্রধান চরিত্র নূর ও জাহানারার গভীর প্রেমগাথাকে মূখ্য বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে ‘নূর জাহান’ নামটি যথার্থ।

কাচিস (কাহিনী+চিত্রনাট্য+সংলাপ) :  ছবিটি ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মারাঠি ভাষার ছবি ‘সাইরাত’ এর অফিসিয়াল রিমেক। ছবির গল্পটি একদম সাদামাটা, চিরায়ত টিনএজ প্রেমের গল্প। সারা পৃথিবীতে এমন হাজার হাজার ছবি রয়েছে। এবং এই টাইপ গল্প কখনো পুরনো হয়না (evergreen)। ছবিটি সাইরাতের রিমেক হলেও চিত্রনাট্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নূর-জাহানারার প্রেম, তাদের খুনসুটির সাথে সাইরাতের কিছু অমিল রয়েছে। তবে এতে গল্পে কোনো ছেদ পড়েনি।

সংলাপগুলো মোটামুটি ভালোই ছিল। কোনো উচ্চবাচ্য কিংবা যাত্রাপালা টাইপ সংলাপ ছিল না।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

টিমওয়ার্ক : এ ছবিতে যে যতই ভালো অভিনয় করুক না কেন, নবাগত নায়িকা পুজা চেরির অভিনয় আপনাকে তাক লাগিয়ে দেবে। একটিমাত্র কান্নার সিন ছাড়া আর কোনো সিনে তার অভিনয় দূর্বল লাগেনি। পুজার অভিনয় দেখে আপনার কোনোভাবেই মনে হবে না এটা তার প্রথম ছবি।

নূর চরিত্রটি অত্যন্ত সহজ-সরল এবং ভদ্র ; তবে পুজার তুলনায় আদৃতের অভিনয় খানিকটা দুর্বল লেগেছে। ডাবিংও অপরিপক্ক। তবে নতুন হিসেবে এসব ভুল-ত্রুটি নিঃসন্দেহে ক্ষমার যোগ্য।

অপরিজিতা আঢ্য নেগেটিভ ক্যারেক্টারে বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে তার অভিনয়ের সময় এক্সপ্রেশনের জবাব নেই। নূরের মায়ের সাথে কথা বলার সময় তার দেওয়া ডায়লগ ‘ওরে আমি কবর দিয়া ফালাবো’ এ নুরের মায়ের পাশাপাশি হলে থাকা ৪০% দর্শক ও আতকে ওঠে।

আলতা;ফ চরিত্রে অভিনয় করা সুপ্রিয় দত্ত বরাবরের মতোই ন্যাচারাল অ্যাক্টিং উপহার দিয়েছেন। নাদের চৌধুরী এবং চিকন আলী চরিত্রগুলো ছোট হলেও হতাশ করেনি। তবে কাঞ্চন মল্লিককে ভবিষ্যতে আর কোনো সিরিয়াস চরিত্রে দেখতে চাই না। এই সিলেকশনটি অত্যন্ত বাজে ছিল এবং সবার ভালো অভিনয়ের মধ্যে তার অভিনয়ের দূর্বলতা চোখে পড়েছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

কারিগরি :  ‘মন বলেছে’ গানটির কোরিওগ্রাফি হুবহু নকল করা হয়েছে তামিল ‘কাদাল’ এর একটি গান থেকে। এছাড়া টাইটেল ট্র্যাকটির কোরিওগ্রাফি ও বেশ দুর্বল মনে হয়েছে। ক্যামেরার কাজ সবমিলিয়ে মোটামুটি ছিল। কিছু কিছু সিনে সিনেমাটোগ্রাফি অসাধারণ লেগেছে। এডিটিংয়ে বেশ দুর্বলতা ছিল এবং তা বেশ চোখে পড়ার মতো।

কালার গ্রেডিং অন্য যেকোনো বাংলা ছবির তুলনায় যথেষ্ট ভালো হয়েছে। তবে পোশাক নির্বাচনে বেশ ভুল-ত্রুটি বিদ্যমান। যেমন;  ঢাকার পুলিশদের খাকি পোশাক পরানো। এমন অনেক ভুল পাওয়া যাবে লোকেশন এবং কস্টিউমের ক্ষেত্রে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মন ভরাতে পারেনি। বিশেষ করে থ্রিল সিনগুলোয় একদম জমাতে পারেনি।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪০।

বিনোদন : ছবিতে মোট ৩টি গান রয়েছে এবং সবগুলোর চিত্রায়ন হয়েছে বাংলাদেশে। গান ৩টি শ্রুতিমধুর এবং সিনের সাথে সামঞ্জস্যতা ছিল। এ ছাড়া ছবির প্রথমাংশে নূর-জাহানের খুনসুটি বেশ উপভোগ্য। সুন্দর চিত্রায়ন এবং সুন্দর অভিনয়ে আপনাকে একদম আপনার কৈশোরকালে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ছবির দ্বিতীয়ার্ধে রয়েছে বাস্তব সমাজে দুটি কিশোর-কিশোরীর টিকে থাকার লড়াই; যা আপনাকে ভাবাবে। সবমিলিয়ে এতে বিনোদনের যথেষ্ট উপাদান রয়েছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

ব্যক্তিগত : আমি সাইরাত আগেই দেখেছি এবং ছবিটি আমার বেশ ভালো লেগেছিল; যদিও ভাষাগত কিছু সমস্যা ছিল। এরপর গেলাম ‘নূর জাহান’ দেখতে। যেহেতু ‘সাইরাত’ এর সাথে এর চিত্রনাট্যে মিল পাচ্ছিলাম না, তাই কিছুটা আশংকিত ছিলাম। তবে ১৩৭ মিনিটের ছবি দেখে আমি মোটেও হতাশ হয়নি; বরং বলতে পারি এটি ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেরা ছবি (১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)।

রেটিং : ৩/৫

ছবিটি কেন দেখবেন : আপনি যদি এই ভালোবাসার দিবসে একটু প্রেমের গন্ধ পেতে চান, অথবা আপনি যদি মিউজিক্যাল রোমান্টিক মুভি পছন্দ করেন, অথবা আপনি যদি ‘সাইরাত’ না দেখে থাকেন, তাহলে এ ছবি আপনার জন্য। অথবা যদি আপনি ‘সাইরাত’ দেখেও থাকেন, তবুও এ ছবিতে আপনি ভিন্ন টেস্ট পাবেন!


মন্তব্য করুন