পরাক্রমশালী বাংলা র্যাপ
নতুন শিল্প আপেক্ষিক আর তাতে সবসময়ই আরও নিগূঢ় নন্দনতাত্ত্বিক আলাপ এবং সময়ের হিসাব-নিকাশ থাকে; আমরা বড়জোর নতুন শিল্পভাষার খোঁজ করতে পারি। গত ১৫-২০ বছরে আমাদের আর্ট-কালচারে কী কী শিল্পভাষা যোগ হলো, পরিবর্তন কী হলো, এক্সপ্রেশনে নতুন কী দেখা যাচ্ছে এর তালাশে এই লেখা।
গত দুই দশকে আমাদের আর্ট-কালচার, শিল্পচর্চায় নতুনত্ব বলেন আর পরিবর্তন বলেন, সেটা নিয়ে এসেছে গান। স্পষ্ট করে বললে র্যাপ। হিপহপ বিটের তালে মাত্রাবদ্ধ তীব্র-তীক্ষ কথা, বোলচাল নিয়ে বাংলা র্যাপ এ সময়ের ভাষ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের মিডিয়া, শিল্পবোদ্ধারা প্রথাগত জায়গা থেকে সেটা কতটা দেখতে পারছেন? প্রথাগত চর্চা ও তার স্টেকহোল্ডাররা জনরুচি, শিল্পভাষা, জনপ্রিয়তা এবং অবশ্যই বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও আমাদের শিল্প-সাহিত্যে ঢুকে পড়া, দাপিয়ে বেড়ানো এই নতুন শিল্পভাষা ও অনুষঙ্গ নিয়ে আলাপ তুলতে পারছেন না। হয়তো রুচি ও অনভ্যস্থতা একটা কারণ। এই নতুন শিল্পভাষা আপনার বিশ্বাসঘাতক আত্মতৃপ্তির ভাষা চেতনায় আগুন ধরাতে পারে।
হিপহপ বা র্যাপ বোদ্ধা মহলে আলোচনায় না এলেও বিজ্ঞাপন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন আয়োজনে সে তার পরাক্রম নিয়ে হাজির আছে। বাংলাদেশের মানুষ আগে হিপহপ বা র্যাপ শুনত না এমন নয়। নিউ ইয়র্ক বেজড স্টইয়িক ব্লিসের ‘আবার জিগায়’-এ ক্ষেত্রে মনে করা যেতে পারে। আশরাফ বাবু, পার্থ বড়য়া আর আজম বাবু এই তিনজন ‘ত্রিরত্নের খ্যাপা’ নামের একটি অ্যালবাম করেছিল, যা কিছু শ্রোতা পেয়েছিল। মূলত শহুরে মধ্যবিত্ত। এর বাইরে প্রবাসীদের কেউ কেউ হিপহপ সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠে বাংলা হিপহপ বা র্যাপ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেসবও তেমন প্রভাব তৈরি করতে পারেনি। শুরুতে দেশের উচ্চবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্ত শহুরে শিক্ষিত তরুণদের বাইরে আসলে বাংলা র্যাপের তেমন সমঝদার মেলেনি। অন্যদিকে শুরুর দিকে এই র্যাপাররা তাদের ক্ল্যান তৈরি করতে পারেনি। তাদের সেই ‘লাইফস্টাইল’ ছিল না। তা ছাড়া সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি বলে বাণিজ্যিক সফলতা আসেনি। ফলে হারিয়ে যেতে হয়। এখনকার পরিস্থিতির বিবেচনায় তাদের ‘ওয়ানা বি’ বলা যায়।
বাংলা র্যাপের ইতিহাস নয়, এই লেখার উদ্দেশ্য মূলত হাল আমলে র্যাপের যে জোয়ার তৈরি হয়েছে সেই পর্বটি সম্পর্কে কিছু বয়ান তৈরি করা। এই পর্বের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ‘আপটাউন লোকালজ’-এর সন্ধান পাওয়া সূত্রে। এরা আমার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল তাদের নাম। হিপহপ, র্যাপ এসব পশ্চিমা ন্যারেশানে ডাউন টাউন ম্যাটার হিসেবে বা কাউন্টার কালচার হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত হয়ে আসছে। সেখানে এই দেশি র্যাপাররা নিজেদের ‘আপটাউন’-এর ‘লোকালজ’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। তাদের একটাই অ্যালবাম ‘কাহিনি সিনপাট’ শুনে আপটাউন লেকালজের শ্রেণিচেতনা আরও স্পষ্ট হয়। এরা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ‘এই সিভিল সমাজে নিজেরে কেন পাই না’ বলে। তাদের লিরিক্সে, এটিচ্যুডে দেশ, সমাজ, সিস্টেমের প্রতি যেমন প্রশ্ন ছিল, তেমনি আরও যে উপাদানে বেশ মজা পেয়েছি, সেটা হলো কাউন্টার র্যাপের উসকানি। ‘এই মামা এই’ গানটিতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তারা কাউকে উদ্দেশ্য করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করছে। ফলে এটাও স্পষ্ট হয় যে, র্যাপের একটা কালচার ভালো মতোই শুরু হয়ে গিয়েছে। তাদের অ্যালবামে দেয়ালে দেয়ালে স্প্রে দিয়ে বিভিন্ন লেখার বিষয় উঠে আসে। দেয়ালে এমন গ্রাফিতির মাধ্যমে বাংলাদেশি র্যাপাররা নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় এবং প্রচার চালায়। এ ছাড়া, তাদের ভাষা এতটাই স্থানিক, সময়জাত আর দৃঢ় যে সহজেই একটা জেনারেশন কানেক্ট করে ফেলে। বিশেষ করে ‘আই হেইট পলিটিকসের’ গভীর রাজনীতির ভেতরে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম। এই লোকালজদের মধ্যে ছিলেন তাউড়া ছাফা, বিগ স্পেড, মিস্টার ফ্লেক্স, ব্ল্যাক জ্যাং।
আপটাউন লোকোলজ-এর শিরোনাম গান ‘কাহিনি সিনপাটে’ স্থানীয় র্যাপার হিসেবে তাদের জার্নি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। গানের কথাগুলো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের সমালোচনা এবং বিপত্তি মোকাবিলার সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ধারণা দেয়। গানটি ২০০৯ সালের একটি রেফারেন্স দিয়ে শুরু হয়, যখন বাংলাদেশে হিপহপ চর্চা সবেমাত্র গতি পেতে শুরু করেছিল। গানটির কয়েকটি লাইন এমন
‘বহু দিন বয়া পোলাপানগো খোমা মাপতাছি
বাপের পাপের কামানো টাকা উড়ানোর পাট দেখতাছি
মেইনস্ট্রিমে ওঠার আগে মাইনষের মন কইরালাইসি জয়
কেউ ভালা কথা কয় নাইলে কেউ মাথায় টেনশন লয়
যুক্তি দিয়া কথা কয়া আমি তোগোরে বুঝায়ে যাই
অহন এইটা র্যাপ হয়া গেলে আমার কিছু করার নাই।’
‘সিভিল সমাজ’ গানে বাংলাদেশের সামাজিক অবিচার এবং দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সমাজে যে অসাম্য এবং অন্যায় ভরা সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, এ অবস্থা পরিবর্তনে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, যারা ন্যায়বিচার পেতে লড়ছে, তাদের অসহায়ত্বের কথা বলা হয়েছে। এই গানের কথায় এমন ধারণাও দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের অবস্থা পাঁচ বছর পরপর বদল হয় এবং যে-ই ক্ষমতায় আসুক না কেন সাধারণ মানুষের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না।
মেইনস্ট্রিমে আসার আগে আপটাউন লোকালজের সদস্য ব্ল্যাক জ্যাং, তাউড়া ছাফাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্র্যাক ছিল কিছু। যার মধ্যে ‘ঠোলার পোলা’ নামের একটা গানের জন্য তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেডকোয়ার্টারেও জবাবদিহি করতে হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। গানগুলো মেমোরি কার্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল আর ২০০৯-এ অ্যালবাম রিলিজ হলে গান বাজত এফএমে।
আপটাউন লোকালজ ভেঙে যাওয়ার পর ছাফা, দেশি এমসি মাগজের সঙ্গে নতুন করে দল গোছায়। জালালি নামে দলটির আত্মপ্রকাশের আগেই ‘এলাকা’ নামের একটি ট্র্যাকও প্রকাশ করে ইউটিউবে। পরে ছাফার অংশ বাদ দিয়ে আবার একই ট্র্যাক রেকর্ড করে জালালি সেট নামের হিপহপ দলটি। বেশ কিছু গান আনে তারা ইউটিউবে। এসব ট্র্যাকে র্যাপ ব্যাটেলের সঙ্গে পরিচয় হয় বাংলা গানের শ্রোতাদের। তাউড়া ছাফার ‘ভবের বাত্তি’, জালালি সেটের ‘বনবাসের সাধন’ যার যার ক্ল্যানের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। জালালি সেট সদস্য শাফায়েত মমতাজের সঙ্গে ‘লোকাল বাসের’ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পায়। জালালি সেট মেইনস্ট্রিমে জায়গা করে নেয়। অন্যদিকে ‘ভব’ নামে হিপহপ ক্ল্যান তৈরি করে বেশ কিছু ট্র্যাক রিলিজ করেন তাউড়া ছাফা।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এখানে এই হিপহপ চর্চা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু অঞ্চলে র্যাপ হচ্ছে। এমনকি তাদের তৎপরতায় যার যার ক্ল্যানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে একটা ডায়ালগও তৈরি করছে নিজেদের মধ্যে। আপটাউন লোকালজের কথায় যেমন ঢাকার ভাষা ছিল, তেমনি অন্য জেলার র্যাপাররাও তাদের কথায় আঞ্চলিক ভাষা, বুলি নিয়ে অবলীলায় নিজস্বতার নিশানা রেখে যাচ্ছেন। অন্যদিকে গাল্লিবয় রানা, তাবিব মাহমুদ, আলি হাসানদের র্যাপে ডেভেলপমেন্ট ডিসকোর্স, মধ্যবিত্তের স্ট্রাগল উঠে এসেছে। এর বাইরে লাল মিয়া ঘরানার র্যাপাররা প্রচলিত রাজনৈতিক বয়ান নিয়ে হাজির হয়েছে। বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, র্যাপ ব্যাটেলের ময়দানে মেয়েরাও থেমে নেই, আরও লক্ষ্যনীয় তাদের মধ্যে আলোচিতরা ঢাকার নন।
গত দুই দশকের বাংলা র্যাপের এই জয়যাত্রার অভিঘাত প্রথমত বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি এবং পরে মিডিয়া এড়াতে পারেনি। যতটা নজরে পড়েছে, তাতে ফাস্ট ফরোয়ার্ডের মতো করে একটা চিত্র হাজির করা যায় ততদিনে আপটাউন লোকালজ ভেঙে গিয়েছে, জালালি সেট আর তাউড়া ছাফার ট্র্যাকে র্যাপ ব্যাটেলের স্বাদ পেতে শুরু করেছে শ্রোতারা, অন্যদিকে রয়েল বেঙ্গল মব, নিজাম রাব্বি, সাইপার প্রমুখের ট্র্যাকও মুক্তি পাচ্ছে… পুরো ঘটনাটা হচ্ছে ইউটিউবের ময়দানে, মাঝে মধ্যে এফএম রেডিওতে। কোনো কোনোটি কয়েক মিলিয়ন ভিউ, হাজার হাজার কমেন্ট নিয়ে কাল্ট হয়ে উঠছে মেইনস্ট্রিমের তোয়াক্কা না করে। বিজ্ঞাপনে শোনা যেতে লাগল হিপহপ বিট। এমন অবস্থায় কোনো এক পহেলা বৈশাখে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বাঙালিদের শুভেচ্ছা জানাতে হিপহপ বিটের ব্যবহার করে। এর পরপরই দেশের বহুল জনপ্রিয় একটি গণমাধ্যম তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর থিম সং করে হিপহপ বিটের তালে পুরনো একটি কবিতায়। এরপর তো বন্ধু তুই লোকাল বাস… রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণাতেও হিপহিপ বিট শোনা যাচ্ছে।
উল্লিখিত চিত্রে ভুলভাল থাকলেও এতে স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠা একটি শিল্পভাষার যে ক্ষমতা দেখা গেছে, তা স্পষ্ট। এই শিল্পভাষা এতটাই জ্যান্ত যে, সে প্রাতিষ্ঠানিকতার দেয়াল ভেঙে ঢুকে পড়েছে। প্রচলিত সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও র্যাপাররা সাম্প্রতিক শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে ভালোই খোঁজ খবর রাখেন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর প্রমাণ জালালি সেটের দুই সদস্যের র্যাপ ব্যাটেল, যা তাদের ক্ল্যানের মধ্যে দল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছিল। ওই ব্যাটেলে শাফায়েত ‘গল্লি কবি’ ট্যাগ দিয়ে গ্যাংস্টার হিসেবে কবি মারজুক রাসেলকে নিয়ে হাজির হয়। গানটির কথায় সাম্প্রতিক শিল্প-সাহিত্য চর্চার কিছু ক্রিটিকের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
র্যাপ খুব তীব্র এবং লাইফস্টাইল সমর্পিত মাধ্যম বলে মনে হয়। আর তা যখন ক্ল্যান ও ব্যাটেল নির্দেশ করে তখন সেটা হয়ে ওঠে জ্যান্ত…। ফলে এর অনেক সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক দায় মেটাতে হয়। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান চলতি বছরের ৩০ জুন এক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে র্যাপ নিয়ে। সেখানে বলা হয়, গত তিন বছরে, যুক্তরাজ্যে অন্তত ২৪০ জন ব্যক্তি, যাদের বেশির ভাগই কালো এবং তরুণ, আদালতে তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে তাদের সংগীত রুচির ওপর ভিত্তি করে, বিশেষত র্যাপ, গ্রাইম অথবা ড্রিল। এই ধারা ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন’, জাতিগত বিদ্বেষ এবং আদালতে শিল্পকলার ভূমিকাকে একটি বিপজ্জনক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। র্যাপসংগীত নিয়ে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২০ সালে অন্তত ৭০টি বিচারকাজে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে র্যাপ গানের কথা, মিউজিক ভিডিও এবং অডিও রেকর্ডিং ব্যবহার করা হয়েছে। এটা গত ১৫ বছরে যা করা হয়েছে (এ সময়েই প্রথম র্যাপ গানকে বিচারে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়) তার প্রায় ৫ গুণ বেশি। যদিও এটাই যে একমাত্র সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে তা নয়, তবুও এটা খুবই আশঙ্কার কথা যে, সত্যিকারের কোনো অপরাধের সঙ্গে এভাবে র্যাপ সংগীতকে মেলানো হচ্ছে। অথচ র্যাপ, গ্রাইম এবং ড্রিল শিল্পীরা নিয়মিতই টপচার্টে স্থান করে নিচ্ছে। তারপরও আদালতের নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, গ্যাং সদস্যরা নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড্রিল মিউজিক ব্যবহার করে গ্যাং কালচারের বিস্তার ঘটাচ্ছে। বিষয়টা উল্লেখ করলাম এ কারণে যে, বাংলাদেশেও গ্যাং কালচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মধ্যে র্যাপ, হিপহপ বেশ জনপ্রিয় এবং ধারণা করাই যায় যে, তারা বিভিন্ন ক্ল্যানেরও অংশ বা সমর্থক।
শেষ করব পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমারের র্যাপারদের নিয়ে ভাইসের দুটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে। প্রথমটি ২০১৪ সালের। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের র্যাপাররা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। অন্যদিকে, চলতি বছরের গত মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিলিটারির সঙ্গে যুদ্ধে মিয়ানমারে একদল হিপহপ আর্টিস্টের অস্ত্র হচ্ছে মিউজিক। তারা র্যাপসংগীত ব্যবহার করছে, মুখোশ পরা চেহারা, ছদ্মনাম, অ্যাগ্রেসিভ বিট এবং আবেগী লিরিকস দিয়ে লড়ছে সামরিক জান্তার সঙ্গে। মিয়ানমারের র্যাপার জায়ার থ’য়ের মতে, মিয়ানমারের র্যাপাররা ২০১১ সালে গণতান্ত্রিক সরকারের পতনের পরেও রাজনীতি নিয়ে ততটা মাথা ঘামাননি, এখন তারা জেলে যাওয়ার ভয় অগ্রাহ্য করে প্রতিবাদ করছেন।
এই বিপরীত ‘জাজমেন্টাল’ শিরোনামের প্রতিবেদন দুটি বিশ্লেষণের দাবি রাখে ১০ বছরের ব্যবধানে দেশটির ঘোলাটে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আরও অবনতি এবং এর মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা একটা জেনারেশন কীভাবে শিল্পকে অস্তিত্বের হাতিয়ার হিসেবে ধারণ করে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তা ছাড়া, বিষয়টি যেহেতু র্যাপ আর তা জীবন ও লাইফস্টাইল সংলগ্ন, ফলে সে বাস্তবতাকে এড়িয়ে কেবল শিল্প করে পালিয়ে যেতে পারে না; কেউ-ই না।