Select Page

পরিপূর্ণ রোমান্টিক ছবি ‘হৃদয়ের আয়না’

পরিপূর্ণ রোমান্টিক ছবি ‘হৃদয়ের আয়না’

হৃদয়ের আয়না; পরিচালক: মোখলেসুর রহমান; অভিনয়: রিয়াজ, আয়না, রাজ্জাক, ববি, বুলবুল আহমেদ প্রমুখ; উল্লেখযোগ্য গান: তুমি চাঁদের জোছনা নও, কেন আঁখি ছলছল, যত দেখি তত ভালো লাগে; মুক্তি – ১০ অক্টোবর ১৯৯৭

আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ভালোবাসার ছবিই সম্ভবত বেশি। আমরা বোধ হয় ভালোবাসতে ভালোবাসি। ‘হৃদয়ের আয়না’ ভালোবাসার ছবি। খুব হাইপ তোলা ছবি। প্রচারণা দুর্দান্ত ছিল।

ঢালিউডে নায়ক-নায়িকার নামে ছবি অনেক আছে। অন্য ইন্ডাস্ট্রিতেও আছে। এ ধরনের ছবি নাম মূলত দর্শকের ইমোশনকে কাজে লাগাতে ব্যবহৃত হয়। দর্শক ছবি দেখতে গিয়ে নায়ক-নায়িকার নামের দিকে খেয়াল রেখে ছবির একটা পরিণতি আশা করে। যেমন- শশী পুন্নু, আশিক-প্রিয়া, চাঁদের আলো এ ছবিগুলো দর্শককে বেঁধে রাখে ঐ চিন্তাতে যেখানে নায়ক আশিক তার প্রিয়াকে পাবে কিনা এরকম একটা সমীকরণে যায়। বাকিগুলোও তেমনই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হ্যাপি এন্ডিং আশা করে দর্শক।

‘হৃদয়ের আয়না’ ভালোবাসার ছবি। রিয়াজের নাম হৃদয় আর আয়নার নাম আয়না। নায়িকার নাম ছিল জেবা চলচ্চিত্রে নাম হয় আয়না। তাদের প্রেম হয় কিন্তু পরিবার মানে না। আয়নার বাবা রাজ্জাক হয় প্রধান বাধা। রিয়াজ আয়নাকে পাবার জন্য রাজ্জাকের সামনে আসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। চলতে থাকে রিয়াজের যুদ্ধ।

ছবির কাজের জায়গা ছিল ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট। রিয়াজ তার ভালোবাসা আয়নাকে জানাতে অনেক চেষ্টা করলেও পারে না। আয়না তাকে দূরে রাখতে চায় নিজের অবস্থানের জন্য।কিন্তু যতবার ফিরিয়ে দেয় ততবার নিজেই দগ্ধ হয়। রিয়াজকে ক্যানভাসে আঁকে আর সেটা ছিঁড়ে ফেলতে চায়। ছবির সামনে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে অথচ রিয়াজকে সরাসরি ‘আপনি’ বলে। রিয়াজের সংলাপটি তখন অসাধারণ ছিল— ‘তুমি বলে যাকে কাছে টেনেছ, আপনি বলে তাকে দূরে সরিয়ে দিও না।’ তখন দুজনের এক্সপ্রেশনই অসাধারণ ছিল। এভাবে দর্শককে কানেক্ট করতে দারুণ সব ইমোশনাল সেগমেন্ট ছিল।

রিয়াজ-আয়না জুটির ইনোসেন্ট বাচ্চা বাচ্চা লুক দর্শকের জন্য দেখার মতো ছিল যাতে চোখ জুড়িয়ে যায়। সিনেমাহলের দৃশ্য সেটাই বলে।

রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদের অসাধারণ ব্যক্তিত্বময় অভিনয় সিনেমার বড় অংশ। রিয়াজ-আয়না দুজনই সেরা অভিনয় করেছে। রিয়াজের তখন প্রস্তুতি বা প্রতিষ্ঠাপর্ব ছিল ক্যারিয়ারের। তার অভিনয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা প্রথম থেকেই ছিল তাই দেশের দর্শকের কাছে রিয়াজ নামটা আজ সমাদৃত। আয়নার জন্য দুঃখটা হচ্ছে এত ভালো অভিনয় করা মেয়েটিকে ইন্ডাস্ট্রি ধরে রাখতে পারেনি।

‘হৃদয়ের আয়না’ মিউজিক্যাল ছবিও। গানগুলো অসাধারণ। স্মরণীয় এবং জনপ্রিয়। ‘তুমি চাঁদের জোছনা নও, যত দেখি তত ভালো লাগে, কেন আঁখি ছলছল’ গানগুলো রেডিও-টিভির রেগুলার প্লে লিস্টে এখনও থাকে।

রোমান্টিক সিনেমার জন্য সাধারণ অথচ প্রেজেন্টেবল স্টোরি টেলিং থাকলে সিনেমা দর্শক গ্রহণ করে। ‘হৃদয়ের আয়না’ সেই উপাদানের ছবি যার মধ্যে আছে টোটাল প্যাকেজ।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন