Select Page

পাংকু জামাই : ডেঙ্গু আক্রান্ত ছবি!

পাংকু জামাই : ডেঙ্গু আক্রান্ত ছবি!

নাম : পাংকু জামাই
ধরন : সোশ্যাল কমেডি ড্রামা
পরিচালক : আব্দুল মান্নান
কাস্ট : শাকিব খান (আকাশ/জামাই), অপু বিশ্বাস (নুপুর), মিশা সওদাগর (হরবুজ মহাজন), পুষ্পিতা পপি (পুষ্পিতা), রেবেকা রউফ (নুপুরের মা), এ টি এম শামসুজ্জামান (নুপুরের দাদা), খালেদা আক্তার কল্পনা (আকাশের মা), দুলারী (নুপুরের দাদী), কাবিলা (আব্দুল আলিম মোকাব্বের), শিবা শানু (সিরাজ চেয়ারম্যান) প্রমুখ।
প্রযোজনা : ভাওয়াল পিকচার্স
ভাষা : বাংলা

♦ নামকরণ : ছবির গল্পটাই হলো এক ধনী বাড়ির জামাই হওয়ার দ্বন্দ্ব নিয়ে; যেখানে এক মহাজন ও দিনমজুরের মধ্যকার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট ফুটে ওঠে। দিনমজুরকে সবাই আদর করে ‘জামাই’ বলে ডাকে। একটা সিনে সেই জামাই ‘পাংকু’ (Joker) সেজে শ্বশুরবাড়ি আসে।

এত বাজে একটা নাম রাখার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পেলাম না। ‘জামাই’ রিলেটেড অন্য কোনো নামও রাখা যেতো, কিন্তু তাই বলে এমন নাম? ‘চিপোনোমা’র রিভিউতেও বলেছিলাম, এখানেও বলছি— একটি ছবির নামের ওপর ঐ ছবি কেমন হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে।

♦ কা.চি.স (কাহিনী + চিত্রনাট্য + সংলাপ) : গল্পটা বেশ সাধারণ, এই ধরনের গল্পে পূর্বে সারা দুনিয়াতে হাজার হাজার ছবি তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই ছবির ক্ষেত্রে গল্পের উপস্থাপনা কেমন হবে, সেটাই হলো দেখার বিষয়।

স্ক্রিনপ্লে অনুপাতে মোটামুটি ভালোই হয়েছে। শুরুতে যেমন টুইস্ট ছিল, ছবির শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তেও টুইস্ট রাখা হয়েছিল। মাঝে হালকা-পাতলা কমেডি সিক্যুয়েন্স ছিল।

ডায়লগ মোটামুটি ছিল। পাঞ্চলাইন ছিল, কমার্শিয়াল মুভিতে যেটা সচরাচর থাকে। অভারঅল কা.চি.স চলনসই ছিল; খুব একটা আহামরিও কিছু না, আবার একবারে খারাপও না।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫০।

♦ টিমওয়ার্ক : উপরে যা বলেছি তার মোটামুটি সবই পজেটিভ। অসন্তুষ্টি এখান থেকে শুরু। ছবিতে শাকিব খানের অভিনয় মোটামুটি ছিল। ডায়লগ ডেলিভারি, এক্সপ্রেশন ভালো ছিল। তাকে একেবারে ছবির শুরু থেকে শেষ পর্ষন্ত, এমনকি ফ্ল্যাশব্যাক সিনেও তাকে একদম ক্লিন শেভে দেখা গেছে। কী জানি হয়তো দিনমজুর আকাশ প্রতিদিন ৩০০ টাকা কামাই করতো, সেখান থেকে কিছু টাকা জমিয়ে প্রতিদিন সেভ করতো!

অপু বিশ্বাসের অভিনয় অ্যাভারেজ ছিল। এই ক্যারেক্টারে তার তেমন কিছু দেখানোর ছিল না। গল্প মূলত শাকিব ও মিশার দ্বন্দ্ব নিয়েই এগিয়েছে। মিশা সওদাগরের অভিনয় বেশ ভালো ছিল। বলা যায়, শাকিব খানের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও একে অপরকে কুপোকাত করার পন্থাগুলো উপভোগ্য ছিল।

এ টি এম শামসুজ্জামানকে অনেকদিন পর বড়পর্দায় দেখলাম। বয়সজনিত কারণে তার ডাবিং খুব একটা ভালো হয়নি। তবে ‘লুচু দাদু’র অভিনয় তিনি ভালোই করেছেন।

আমি যতদুর জানি, খালেদা আক্তার কল্পনা ও দুলারী প্রায় একই সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন। তারা প্রায় সমবয়সীও। কিন্তু এ ছবিতে কল্পনা ম্যাডাম করলেন শাকিবের মায়ের রোল, আর দুলারী ম্যাডাম করলেন অপু বিশ্বাসের দাদীর! আচ্ছা এটা মানলাম; চরিত্রের প্রযোজনে অনেক ছবিতেই এমনটা হয়। কিন্তু দুলারী ম্যাডাম ছবিতে যে চওড়া মেকআপ ব্যবহার করেছেন তাতে আমার কোনোভাবেই তাকে অপু বিশ্বাসের দাদী মনে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল তারা দুই বোন— দুলারি ম্যাডাম বড়, অপু বিশ্বাস ছোট।

আমি তার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি; একটি সিক্যুয়েন্সে দেখা যায় তিনি লাল টিপ, লাল লিপস্টিক ও লাল শাড়ি পরে আছেন। আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, এ কেমন দাদী মা? তার মনে এত রঙ কেন?? এও কী সম্ভব???

খালেদা আক্তার কল্পনারও এ চরিত্রে আলাদা কিছু দেওয়ার ছিল না। বরাবরের মতোই তিনি দুঃখ-দূর্দশায় ভরা একজন মায়ের ভুমিকায় অভিনয় করেছেন। রেবেকা রউফও মোটামুটি অভিনয় করেছেন। পুষ্পিতা পপি কিংবা শিবা শানুকে কিছু সময়ের জন্য স্ক্রিনে দেখানো হয়েছে। আসলে এ ছবিতে সাইড রোলগুলোর কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র শাকিব-মিশার ওপর ভর করেই গল্প এগিয়ে গেছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ২৫।

♦ কারিগরি : ডিরেক্টর বলেছেন তিনি এ ছবির ৭০ ভাগ কাজকে অনেক কষ্টে সম্পূর্ণে রূপদান করেছেন; যেখানে নায়কের অসহযোগিতা ছিল সবচেয়ে বেশি। আদতে মনে হয়েছে ৭০ ভাগও কমপ্লিট ছিল না।

শাকিব খানের অনেকখানি ডাবিং অন্যকে দিয়ে করানো হয়েছে। আর উনি এমন আনাড়ি ডাবিং করেছেন, কিচ্ছু বলার নেই। শাকিব খানের কাটপিস বসানো হয়েছে বহু জায়গায়। অনেক জায়গায় তো যথেষ্ট ফুটেজ না থাকায় শুধু শাকিব খানের স্টিলপিক বসানো হয়েছে। পর্দায় স্থিরচিত্র দেখাচ্ছে আর সেই ছবি জীবন্ত মানুষের মতো ডায়লগ দিচ্ছে!…. বুঝলামই না এই ছবি কীভাবে সেন্সর পার হলো।

ছবির লোকেশনে অপু বিশ্বাসের যে বাড়ি দেখানো হয়েছে তা অনেকটা ‘গরিবের ডুপ্লেক্স’ বাড়ির মতো। কার্ডবোর্ড দিয়ে বানানো তা বুঝতে বিন্দুপরিমাণ কষ্ট হয়নি; এডিটর আনাড়ি এডিটিং-এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে-ই মেয়ে ১৫ লক্ষ টাকার আংটি হাতে পরে ঘুরে, উচিত ছিল না তার বাড়িটাও তেমন দেখানো?

কস্টিউম ডিজাইন ও মেকআপ নিম্নমানের হয়েছে। শাকিব ও অপু যে চুল নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন, একদিক থেকে ভাবলে থিম অনুসারে ঠিক আছে। কিন্তু ওগুলো ব্যবহার করে পোস্টার তৈরি করা একরকম বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাওয়ার মতো।

একটি সিনে দেখানো হয়েছে বৃষ্টিতে সকল দিনমজুরেরা রাস্তায় বসে আছে। স্ক্রিনে দেখলাম তখন কড়া রোদ! ওকে মানলাম। রোদ আর বৃষ্টি একসাথে হচ্ছে। কিন্তু না, পরে বুঝলাম তখন আসলে রোদই ছিল; ক্যামেরার ওপর দিয়ে শুধুমাত্র শাকিব খান ও প্রাইভেট কারের ওপর পানি ফেলা হচ্ছে। কষ্ট করে বুঝা লাগেনি, তারাই হঠাৎ করে পানি ফেলার যন্ত্রটা দেখিয়ে দিলেন!

সিনেমাটোগ্রাফি নিম্নমানের ছিল। এডিটিং চরম জঘন্য! গানের কোরিওগ্রাফি মোটামুটি পর্যায়ের। কালার গ্রেডিং বাজে হয়েছে। ফাইট, কোরিওগ্রাফিও বাজে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ১০।

♦ বিনোদন : কমেডি সিনগুলোয় জমজমাট কিছু ছিল না যেটা দেখে দম ফাটিয়ে হাসি আসবে। সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানো না হলেও নরমাল কমেডিও পরিমাণে কম ছিল। ছবিতে ৩টি গান আছে। ‘আলতা দুধে’ ছাড়া বাকি ২টি মোটেও শ্রুতিমধুর ছিল না। গল্পে হালকা টুইস্ট ছিল কিন্তু বাজে মেকিং সেটাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। শাকিব-মিশার জামাই হওয়ার লড়াইটা উপভোগ্য ছিল। সব মিলিয়ে এ ছবি একদমই ভালো নয় বিনোদনের জন্য।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ২০।

♦ ব্যক্তিগত : শাকিব-অপুর শেষ ছবি বলেই দেখতে গিয়েছিলাম। এছাড়া ঈদের মোটামুটি সব ছবিই দেখা হলো, এটা পাশের হলে চলছে, ভাবলাম এটাও দেখে আসি। এছাড়া শাকিব খানের রিকশাচালক ফ্যানরা কেমন এটাও একটু দেখতে চেয়েছিলাম। তারা তো আর ফেসবুকের রিভিউ দেখে হলে আসে না, পোস্টার দেখে হলে আসে। এক দিনমজুর বলছিল, ‘গত বছর রাজনীতি দেইক্কা যেই মজাডা পাইছি, এইডা দেইক্কা ভাল্লাগে নাই। শাকিব্রেই কেমন জানি লাগতাসে।’

এ ছবি শাকিবের ‘কথিত’ রিকশাচালক ফ্যানদেরও ভালো লাগেনি। শাকিব ভক্তদের কপাল খুবই ভালো যে এই ঈদে ‘সুপার হিরো’ মুক্তি পেয়েছে। নাহলে বাকি দুটি বস্তাপচা গিলে বদহজম হতো।

রেটিং : ০.৭৫/৫

♦ ছবিটি কেন দেখবেন : আপনি যদি শাকিব-অপু জুটির ডাইহার্ড ফ্যান হন, তবে এ ছবি আপনার জন্য। আপনার যদি শাকিব-অপু-মিশার জুটিবদ্ধ ছবিগুলো ভালো লেগে থাকে তবেও এ ছবি আপনার জন্য।


মন্তব্য করুন