‘পাঠান’ কলকাতায় যা করেছে, আমাদের মাথায় আছে তো?
ভারতীয় ছবি আমদানি প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এক সাক্ষাৎকারে কলকাতার অভিনতা সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘যদি বাংলাদেশের দরজা খুলে যায়- তবে বাংলা ছবির প্রভূত উন্নতি হবে। কিন্তু এটা তো বাংলাতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। হিন্দি, তামিল, তেলুগু আসবে। সেগুলোও বাঙালিরা পছন্দ করবেন। দিনশেষে দুই বাংলাই কিন্তু মার খাবে। তাহলে যে কারণে ভাষা আন্দোলন হয়েছে, যে কারণে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, সেটা তো বিফলে যাবে।’
সম্প্রতি ‘পাঠান’ সিনেমাকে ঘিরে বাংলাদেশে আবারও ভারতীয় তথা বলিউড সিনেমা আমদানি নিয়ে কথা উঠেছে। আইনি জটিলতায় আপাতত আটকে থাকলেও প্রায় সব পক্ষই আমদানি প্রসঙ্গে একমত। তবে এ বিষয়ে যথাযথ নীতিমালা নিয়ে এখনো সুস্পষ্ট কথা উঠেনি। অথচ নীতিমালা করেও নিজেদের সিনেমাকে সুরক্ষা দিতে পারছে না কলকাতা। কাবেরী অন্তর্ধান বা প্রজাপতির মতো ছবি টানা হাউসফুল গেলেও হল থেকে নেমে গেছে।
একই সাক্ষাৎকারে সব্যসাচী বলেন, ‘একটা মাল্টিপ্লেক্সে বাংলা ছবির স্ক্রিনিং যদি হয় ৫টা তবে হিন্দি ছবির স্ক্রিনিং হয় ২০টা। তার মানে কী, হিন্দি ছবিটাই দেখছে বেশি মানুষ। বাংলাটা মার খাচ্ছে। হিন্দিটা না থাকলে হয়তো ২৫টা স্ক্রিনই বাংলার হতো। কিন্তু আমাদের (বাংলা ছবি) যদি কুড়িটা শো দেয়, সেটা কি দর্শক দেখবে? হয়তো এত স্ক্রিনই থাকতো না হিন্দি ছবি না এলে।’
এদিকে কলকাতার সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি ফেব্রুয়ারিতেও স্থানীয় ছবির জন্য সুখবর নেই।
সেখানে বলা হয়, ‘পাঠান’-এর মুক্তি বাংলা ছবির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। শাহরুখ খানের ছবিটির মুক্তির আগের সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত তিনটি বাংলা ছবির মধ্যে দুটি ছবি একেবারেই দর্শক টানতে পারেনি। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত একটি ছবি দেখতে কিছু দর্শক এসেছেন। সমস্যা হলো, সে ছবি যথেষ্ট সংখ্যক শো না পাওয়ায়, ব্যবসার অঙ্ক আশাপ্রদ হয়নি।
এদিকে ভারতজুড়ে ‘পাঠান’ ঝড় থামতে এখনও দেরি রয়েছে। সোমবার বাংলার বিভিন্ন সিনেমা হলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ‘পাঠান’-এর শো হাউজফুল। বেহালার এক নামী হলে ‘পাঠান’ ছবির নয়টি শো এবং একটি ‘প্রজাপতি’ ছবির শো ছিল। আগামী সপ্তাহেও তেমনটাই থাকতে পারে।
দক্ষিণ কলকাতার এক নামী সিনেমা হলের কর্ণধারের বক্তব্য, “আগামী এক সপ্তাহ নয়, বরং এখন থেকে আরও তিন সপ্তাহ ‘পাঠান’ চালাতে চাই। এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে কার্তিক আরিয়ান অভিনীত নতুন ছবি মুক্তি পাবে। সেই ছবিকে কীভাবে জায়গা দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনা শুরু করেছি’।
ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত চারটি বাংলা ছবির মুক্তি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনেমা হল মালিকের বক্তব্য, ‘এই চারটে বাংলা ছবি ক’টা শো পাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কা আছে যেখানে, সে দিকে এই মুহূর্তে এগোব না। কারণ ‘পাঠান’-এর মতো শক্তিশালী ছবি রয়েছে হাতে’।
মোটের উপর, ‘পাঠান’ মুক্তির পর বাংলা ছবি সিনেমা হল পাচ্ছে না বলে যে চর্চা শুরু হয়েছিল, সেই ধারা বজায় থাকবে ফেব্রুয়ারি মাসেও।
এই যখন কলকাতার অবস্থা, যে ইন্ডাস্ট্রি এখনো নানা স্বাদের অল্প কিছু হিট সিনেমা উপহার দিতে সক্ষম, সেখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরো গুরুতর।